মায়াবন বিহারিণী : মিদহাদ আহমেদ | Mayabon Biharini - Midhad Ahmed

◑নাম: মায়াবন বিহারিণী 
◑লেখক: মিদহাদ আহমেদ
◑প্রচ্ছদ: সাদিয়া রিফা
◑প্রকাশনী: উচ্ছ্বাস প্রহর (অনলাইন ওয়েবসাইট) 
◑প্রথম প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
◑পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৯৬
◑মুদ্রিত মূল্য: ৬০/-
মায়াবন বিহারিণী "বিশ্বাস"- শুধু একটি শব্দ নয়, যে কোনো সম্পর্কের মূল ভিত্তি। যেখানে বিশ্বাস নেই সেখানে কোনো সম্পর্কই টেকে না। কিন্তু কারো বিশ্বাস অর্জন করা কি এতটাই সোজা? আবার যখন বিশ্বাস ভেঙে যায়, সে ব্যক্তিটির অবস্থা কেমন হয়? যে তার সবটুকু দিয়ে তার প্রিয়জনকে বিশ্বাস করেছিল... 

বিশ্বাসের উপর থেকেই যখন বিশ্বাস উঠে যায়; কোথায় হারিয়ে যায় সম্পর্কগুলো? কোথায় হারিয়ে যায় সম্পর্কে জড়িয়ে থাকা মানুষগুলো? 

               ● মায়াবন বিহারিণী আখ্যান

অবন্তী স্বপ্ন দেখে তারও সুখের সংসার হবে। তার সমস্ত দুনিয়া জুড়ে থাকে আসিফ। কিন্তু কেন যেন মনে হয় অবন্তীর ভালোবাসার মূল্যায়ন করে না আসিফ। তাহলে কি ভালোবাসার অভিনয় করে চলেছে আসিফ নাকি অবন্তীর বুঝার ভুল...

হঠাৎ একদিন আসিফের ফ্ল্যাটের সামনে পাওয়া যায় বক্স ভরতি পোলাও ও চিরকুট! কেউ একজন তার প্রিয়জনকে পাঠিয়েছে। অবন্তীর বিশ্বাস টলে উঠে, তাহলে কি এতদিন সে ভুল মানুষকে ভালোবেসে এসেছে! নাকি আছে কোনো রহস্য? এইদিকে অবন্তীর বিয়ে তার পরিবার ঠিক করে ফেলেছে। অবন্তীর ইচ্ছা-অনিচ্ছার যেন কোনো মূল্যই নেই। আবার আসিফের চালচলনও সুবিধার মনে হচ্ছে না। হঠাৎ একদিন এক নম্বর থেকে কল আসে, আসিফ সম্পর্কে এক অজানা তথ্য দেয়। অবন্তীর কাছে দুনিয়া অন্ধকার হয়ে আসতে থাকে। কী করবে এখন সে? নুসরাতই বা কে?

               ●  মায়াবন বিহারিণী পর্যালোচনা ও প্রতিক্রিয়া —

কলেবরে ছোট উপন্যাস "মায়াবন বিহারিণী"। বিশ্বাসের বাঁধনে আবদ্ধ কিছু জীবন। হঠাৎই বিশ্বাসের সে বাঁধনে ছেদ পড়ে- কী হবে এর পরিণতি এই নিয়েই মূলত কাহিনী। 

কাহিনীর শুরু অবন্তী-আসিফের ভালোবাসার সম্পর্ক দিয়ে। কিন্তু সেখানে আবির্ভাব ঘটে তৃতীয় পক্ষের, নুসরাত। আসিফ কি তাদের জীবন নিয়ে খেলছে? কেন? রাফির পরিবারের সাথে ইমতিয়াজের সম্পর্ক কী? এইসব প্রশ্নই ভাবাবে পাঠককে। শেষে আসিফকে নিয়ে যে টুইস্টটা তা তো কাহিনীর মোড়ই ঘুরিয়ে দেয়। তবে কিছু জায়গায় প্রশ্ন থেকেই যায়-
যদি চার বছর বয়সে আসিফ কিডন্যাপ হয় তাহলে তার আগের নাম কীভাবে মনে থাকে? 
আবার সে কিডন্যাপারের হাত থেকে ছাড়া পেল কীভাবে? 
এ সম্পর্কে কিছুই লেখা নেই।

গল্পের শুরুতে চরিত্রগুলোর মধ্যে ওভার এক্টিং এর প্রবনতা ছিল। যে কারণে প্রথমে বেশ বিরক্তই হয়েছি। তবে কাহিনীর সমাপ্তি ভালো ছিল। না সম্পূর্ণ হ্যাপি এন্ডিং না ট্রাজেডিক।

"মায়াবন বিহারিণী"- পাঠকদের কিছু মেসেজ দেয় -
কাউকে মাত্রারিক্ত ভালোবাসা উচিত নয়। 
প্রত্যেক সম্পর্কের সীমা আছে। যখন কেউ সেই সীমা অতিক্রম করে তখন তার জন্য যেমন পরিণতি সুখকর হয় না তেমনি তার প্রিয়জনদেরও কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়।
পরিবার থেকে আপন কেউ নেই। মা-বাবা-ভাই-বোনদের সাথে যতই ঝগড়া হোক না কেন দিনশেষে তারাই পাশে দাড়ায়।

               ● মায়াবন বিহারিণী লেখনশৈলী ও বর্ণনা —

সহজভাবেই কাহিনী বর্ণনার চেষ্টা করেছেন লেখক। তবে বর্ণনাশৈলী ও লেখনী এখনও কিছুটা অপক্ব বলে মনে হয়েছে। পারিপার্শ্বিক বর্ণনা, কল্পপটের আলোচনা তুলনামূলক কম। কাহিনী ভালো ছিল কিন্তু ভালোভাবে ফুটে উঠে নায় বিষয়বস্তু। 

               ● মায়াবন বিহারিণী চরিত্রায়ন —

বেশ কিছু চরিত্রের বর্ণনা রয়েছে। সবচেয়ে ভালো লেগেছে "রাফি" চরিত্রেকে। সে তুলনায় প্রধান চরিত্র "অবন্তী"- কে বেশ বিরক্তই লেগেছে। এছাড়া আছে নুসরাত, আসিফ, রেশমিসহ আরও অনেকে।

               ● মায়াবন বিহারিণী ওয়েবসাইট —

"উচ্ছ্বাস প্রহর"- অনলাইন ওয়েবসাইট। নতুন লেখকদের লেখাকে পাঠকমহলের কাছে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার দারুণ কাজ করে চলেছে। পিডিএফ বা ইবুক আকারে পাবলিশ করে লেখকদের বই উচ্ছ্বাস প্রহর তাদের ওয়েবসাইটে। 

               ● মায়াবন বিহারিণী বানান ও সম্পাদনা —

বইয়ের সম্পাদনার অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। প্রচুর বানান ভুল ও টাইপিং মিস্টেক। 
বেগ(ব্যাগ), হাতে(হাত), চজ্জা(লজ্জা), প্লান(প্ল্যান), এখনন(এখন), চিহ(ছিহ), করুবে(করবে), চুর(চোর), গালছে(লাগছে), গারিয়েছে(হারিয়েছে), এভবে(এভাবে), আদিকে(এদিকে), কুলে(কোলে), ভালোবাসা(ভালোবাসে) এমন আরও ভুল রয়েছে। 

নামেও সমস্যা আছে-
পৃষ্ঠা- ৪৩: বিছানায় বসে থাকা অবন্তী ও নুসরাতের(রেশমির) মা রাহেলা বেগমও কান্না শুরু করে দিলেন। 

এছাড়া বিরামচিহ্নের ব্যবহারেও কিছু ত্রুটি রয়েছে। 

               ● মায়াবন বিহারিণী প্রচ্ছদ ও নামলিপি —

প্রচ্ছদ নান্দনিক তবে নামলিপি সাদামাটা। প্রচ্ছদের কালার কম্বিনেশন সুন্দর। 

আশা করি ত্রুটিগুলো দ্রুতই সংশোধন করা হবে। রোমান্টিক উপন্যাস প্রিয় পাঠকেরা চাইলে "মায়াবন বিহারিণী" পড়ে দেখতে পারেন।

Review Credit 💕 Rafia Rahman

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ