মনশ্চক্ষু লেখকঃ সাদমান সাঈদ চৌধুরী (রিভিউ)

বইয়ের নামঃ মনশ্চক্ষু 
লেখকঃ সাদমান সাঈদ চৌধুরী 
বইয়ের ধরনঃ থ্রিলার/গোয়েন্দা/রহস্য উপন্যাস 
রেটিংঃ ১০/১০ 

বইয়ের মূল চরিত্রঃ স্টিফেন, সারাহ, ইফরা,ইরিত্রা, মেয়র, সুলতান আহমেদ, আজমল আলী,নার্গিস আক্তার,পারুল,ইশা,আলী আরো অনেকে 

সারসংক্ষেপঃ এটি একটি রোমাঞ্চকর হত্যা কাহিনী। প্রথমে ছোট্ট একটি সুন্দর পরিবার দেখতে পাই। যেই পরিবার ছোট্ট একটি মেয়ে ও তার কুকুরছানাকে ঘিরে পুরো কাহিনী। শহরে হঠাৎ করে কিছু হত্যা শুরু হয় যাদের প্রথমে আত্নহত্যা বলে মনে হলেও এইগুলা পরিকল্পিত খুন। ক্রাইম ইনভেস্টিগেটরের চিফ স্টিফেন এই হত্যার তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে একের পর এক চাঞ্চল্যকর সব টুইস্ট। ক্ললেস এই হত্যাগুলো তদন্ত করতে গিয়ে গোটা এফএসি হয়রান হয়ে যায়। কারন যখনি তারা মনে করে তারা খুনির মাইন্ড পড়ে ফেলেছে তখনি খুনি উলটা ধাবার চাল দিয়ে বসে। পুরো ধাবা বোর্ডকে নাড়িয়ে দিয়ে চাল ফেলে খুনি। কিন্তু আমাদের স্টিফেন কম কিসে? সেও খেলে খুনির মন মতো চাল, আর যেই চালে কুপোকাত হয় খুনি। একের পর এক টুইস্ট আপনাকে বাধ্য করবে বইটি শেষ অবধি পড়তে। মাথা ঘুরানো সব টুইস্ট, সব কাহিনী আপনাকে বাধ্য করবে স্তব্ধিত হতে। কাহিনীর শেষ লাইন অবধি পড়তেই হবে আপনাকে এরকম একটি বই এটি। 

আমার বইটি ধারুন লেগেছে আর আমি বলবো এটি একটি হাইলি রেকমেন্ড বই। আপনার এক মূহুর্তের জন্য বিরক্তি মনে হবে না। সারাহ স্টিফেনের খুনসুটি, এক নিরিহী মা থেকে হয়ে উঠা নরপশু, একটি বাচ্চা মেয়ের নৃশংস মৃত্যু, প্রিয়জনহারা পরিবারের আর্তনাদ, রক্ষকের ভক্ষক হয়ে উঠা, সবকিছু জাস্ট মুগ্ধ করে। 

কিছু মুগ্ধকর লাইন 
১ঃ সুইসাইড মূলত তারাই করে যাদের নিজেকে ভেঙেচুরে জমা দেয়ার মতো কেউ নেই। নিজেকে চূর্ণবিচূর্ণ করে জমা রাখার মানুষের অভাবেই তারা মৃত্যু বেছে নেয় 
২ঃএকজন ব্যক্তি দ্বিতীয় জনের ভালো করতে গিয়ে অটোমেটিক তৃত্বীয় জনের দোশমন হয়ে যায়
৩ঃ অপূর্ণ প্রণয় খুব বেশিতে ঘৃণা করতে পারবেন ভুলে যেতে পারবেন না 
৪ঃ মেয়েদের পৃথিবীতে সবচেয়ে ভরসার স্হানটুকু বাবা
৫ঃসম্পর্কে ভালোবাসা ও গুরুত্ব একে অপরের পরিপূরক 
৬ঃ মায়ের কন্ঠস্বর জীবনযুদ্ধে বটবৃক্ষ হওয়া মানুষেকেও সেকেন্ডের মধ্যে পুনরায় লাজুক লতায় পরিণত করে 
৭ঃমানুষের কান্না মাঝেমাঝে কালবৈশাখীর পাষানভার করা আকাশের চেয়েও ভারি হয়ে যায় 
৮ঃ পিছুটানবিহীন ব্যাক্তির চেয়ে ভয়ংকর আর কিছুই হতে পারে না

লেখকের কাছে অনুরোধ ২টিঃ ১ শ্রেয়ার কাহিনি সামনে আনুন আর ২ স্টিফেন সারার মিল করুন।

Review Credit 💕 Tasfia Jannat Aza

বই: মনশ্চক্ষু 
লেখক: সাদিমান সাঈদ চৌধুরী 
প্রকাশনী: তাম্রলিপি
পৃষ্ঠা: ২০৮
মূল্য: ৩৩০ টাকা (মুদ্রিত মূল্য ৪৪০ টাকা)

প্রায় এক বছর আগের কথা, কোনো এক স্নিগ্ধ সকালে স্কুল পড়ুয়া পিচ্চি ইফরার দেখা হয় ছোট্ট এক কুকুরছানার সঙ্গে। যে কুকুরছানাটি বাসায় এনে পোষা শুরু করে সে। ছোটদের কুকুরের প্রতি মায়া নতুন কিছু নয় অবশ্য।

উপরের অংশটি খুব মায়াময় একটি অংশ, তাই না? এবার অন্যদিকে আসি, হিন্দু মিথোলজি অনুসারে, একজন মানুষের দুটো অংশ থাকে। প্রথমটা ‘দেবদূত', অর্থাৎ ভালো ও মায়াময় দিক। আর দ্বিতীয়টি 'অপদেবতা', অর্থাৎ খারাপ ও নৃশংস দিক। আমরা সাধারণত জীবনভর প্রথম দিকটিই বয়ে বেড়াই। কিন্তু দ্বিতীয় দিক?

দ্বিতীয় দিকটি কখন বেরিয়ে আসে? মানুষ কখন দেবদূতের পোশাক খুলে অপদেবতায় পরিণত হয়? তার সাথে খুব খারাপ কিছু হলে? এমনকিছু, যা সওয়া যায় না? অথবা এমন কোনো ক্ষত, যা কাটিয়ে ওঠা যায় না? তাহলে কতটুকু খারাপ হতে পারে মানুষ? কোন পর্যায়ের অপদেবতা হতে পারে?

স্টিফেন কোনো এক কারণে আই.সি.ইউ'তে ভর্তি আছে আপাতত। সেখানেই তার কানে ভেসে আসলো এক নৃশংস ঘটনা, ভোরবেলায় ফ্লাইওভারের নিচে ময়লার স্তুপে এক লোকের লাশ পাওয়া যায়। যে লাশকে আকাশ থেকে ঘিরে আছে চিলের ঝাঁক এবং পাতালে থানা পুলিশের ঝাঁক। লাশের চেহারা এমনভাবে পোড়ানো হয়েছে, ভিক্টিম শনাক্ত করার জো নেই। লাশের শরীরের কিছু অংশও নেই। পুরো শরীর কামড়ে খেয়েছে কুকুর। এই বিভৎস পরিস্থিতি দেখে হাসপাতালে থাকা স্টিফেনের সাথেই যোগাযোগ করতে হলো ডিআইজি আনোয়ার হোসাইনের। কিন্তু, অনেক প্রশ্ন এখনো থেকেই যায়।

স্টিফেন কেন'ই বা আই.সি.ইউ'তে ভর্তি?

লাশের কিছু দেহাংশ না থাকার তর্কশাস্ত্র'ই বা কী? এসব প্রশ্ন কাটিয়ে উঠতে উঠতে খবর আসলো, আলোচিত ইসলামিক বক্তা মহিউদ্দীন আল আজহারী মাহফিল শেষ করে ফেরার পথে হলেন নিখোঁজ! এই খবরে উত্তাল শহর। ক্রুদ্ধ তার সমর্থকগণ।

বিভৎস সেই লাশের রহস্যের মাঝে যেন আরো জড়ালো এক গোলকধাঁধায় পড়লো এস.সি.এফ। কিন্তু... এসব কি এখানেই থেমে যাবে?

এই প্রশ্নের জবাব আছে শুধু একজনের কাছে। একজন ভবঘুরে স্বভাবের মানুষ। যাকে কখনো কেউ দেখেনি। যার নাম জানা নেই কারো। যে মানুষটার আঁখিযুগল ভালোবাসে লাশ দেখতে ভালোবাসে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে, যখন কুকুর খুবলে খায় তারাই খুন করা লাশগুলোকে। তাকেই যদি ধরে নেই অপদেবতা, তাহলে খুনের তৃষ্ণা কি মিটবে এই অপদেবতার?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ