Title | মুরতাদ |
Author | ইকবাল খন্দকার |
Publisher | মেধা পাবলিকেশন্স |
Quality | হার্ডকভার এবং সর্ট পিডিএফট |
Edition | 1st Published, 2021 |
Country | বাংলাদেশ |
Language | বাংলা |
ঘটনা ২ঃ আমাদের স্থানীয় বড় মসজিদে ভোরবেলা উঠে কুরআন শিক্ষার জন্য যেতাম। নোয়াখালীর এক হুজুর আমাদের 'আমপাড়া' পড়াতেন। আমার স্পষ্ট মনে আছে, মানুষটা খুবই পরহেযগার ছিল। দুর-দুরান্ত থেকে অনেকেই বিভিন্ন রোগ-বালাইয়ের জন্য হুজুরের কাছে পানিপড়া নিতে আসতো। প্রসবকালীন ব্যথা নিবারণের জন্য একদিন এক হিন্দু লোকের বাড়ি যেতে হয় হুজুরকে। হুজুরের পানিপড়ায় কাজও হয়। ডেলিভারি সম্পন্ন হওয়ার পর ঐ হিন্দু লোকটা জোরজবরদস্তি করে কিছু খাবার খাওয়ায় হুজুরকে। ঘটনা জানাজানি হয়ে গেলে এলাকার একদল মুসুল্লী ঘোষণা দেয়, যে ইমাম হিন্দু বাড়িতে খাবার খেতে পারে তার পিছনে আজ থেকে আমরা আর নামায পড়বো না। এবং ঐদিনই উনাকে মসজিদের ইমামতি থেকে বাদ দেয়া হয়।
ঘটনা দুটি আশি থেকে নব্বই দশকের মাঝামাঝি বা শেষদিকের। এরকম অসংখ্য উপমা দেয়া যাবে তখনকার সময়ে ধর্মান্ধ কিছু মানুষের কার্যকলাপ নিয়ে। হোক সেটা মুসলিম কিংবা হিন্দু ধর্মের। এ সময়ের মৌলিকতাবাদী জনপ্রিয় লেখক ইকবাল খন্দকার রচিত 'মুরতাদ' বইটি যখন পড়ছিলাম, তখন মনের অজান্তেই স্মৃতির দুয়ারে কড়া নাড়ছিল বাল্যকালে আমার চোখের সামনে সংঘটিত ঘটনা দুটি। আশি কিংবা নব্বই দশকের এরকমই কিছু স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে রচিত হয়েছে 'মুরতাদ' উপন্যাসটি।
আফ্রাদবাড়ি এবং গাজীবাড়ির মুসুল্লীদের ইমাম আবু বকর। ধর্মীয় দিক থেকে খুবই পরহেযগার এবং ব্যক্তিগত জীবনে সাদাসিধে মানুষ তিনি। বাল্যকাল থেকেই নানান চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে আজকে তার এ অবস্থান। বহু প্রতিকূলতার কারণে আবু বকর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় তেমন একটা শিক্ষিত হতে না পারলেও ধর্মীয় বিষয়ে বেশ ভালই জ্ঞান রাখেন তিনি। তার ইচ্ছা ছেলে মাসুদ এবং মেয়ে মানসুরাকে তিনি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করাবেন। মেয়েকে কলেজে ভর্তি করিয়ে আরেক বিপাকে পড়েন আবু বকর। এ নিয়ে এলাকার লোকজন নানান কথাবার্তা বলতে থাকেন।
এদিকে অাফ্রাদবাড়ি এবং গাজীবাড়ির মধ্যে দীর্ঘদিনের অন্তর্দ্বন্দ্বের মাশুল দিতে হয় মসজিদের ইমাম হিসেবে আবু বকরকে। স্থানীয় প্রভাব আর ধর্মান্ধতায় দুই গোষ্ঠীর হাতে জিম্মি হয়ে যায় গোটা সমাজ।
কোনো এক দৃশ্যপটে নিজের জীবন বাঁচাতে সুনীল কুমার নামে এক হিন্দু লোকের রক্ত নিতে হয় ইমাম আবু বকরকে। আর এটাই তার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়। গাজীবাড়ির আবদুস সোবাহান এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে তিলকে তাল বানানোর নিমিত্তে মরিয়া হয়ে উঠে। ধর্মান্ধতার ঘোরে একের একের এক দিতে থাকে মনগড়া ফতোয়া। তার নেতৃত্বে ফোলেফেঁপে উঠে দুই গোষ্ঠীর লোকজন। তাকে 'মুরতাদ' বলে আখ্যা দেয়া হয়। শুধু তাই নয়, ষড়যন্ত্রের জাল প্রসারিত হতে থাকে চূড়ান্ত সীমানা অব্দি। অপবাদ দেয়া হয় মসজিদের মাইক, ব্যাটারী ও দানবক্স চুরির।
পুরো তল্লাটের লোকজন নিয়ে মসজিদের আঙিনায় আয়োজন করা হয় বিচার শালিসের। একতরফা রায় দেয়া হয় আবু বকরের বিরুদ্ধে। বাস্তবতার এক কঠিন অধ্যায়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আবু বকর।
Read More ⤵️
আশি কিংবা নব্বই দশকের দিকে এরকম অসংখ্য পরহেযগার ইমামকে ধর্মান্ধতার বলি হতে হয়। আমৃত্যু অপবাদ বয়ে বেড়াতে হয় 'মুরতাদ' আখ্যার। লেখক ইকবাল খন্দকার তৎকালীন সমাজের ধর্মান্ধ কিছু প্রভাবশালী মানুষের মনগড়া কর্মকান্ড অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন 'মুরতাদ' উপন্যাসে। মূল গল্পে প্রবেশের পূর্বে তিনি প্রতিটি দৃশ্যপটের বর্ণনা দিয়েছেন খুবই নিখুতভাবে। যদিও উপন্যাসের প্রথমদিকে গল্পের গতি ছিল একেবারেই মন্থর। চমৎকার বর্ণনাশৈলী আর ঝরঝরে বাক্য বুননের কারণে পড়তে গিয়ে তেমন একটা খারাপ লাগেনি আমার। কিন্তু মূল গল্পে প্রবেশের পর আপনাকে এগিয়ে যেতে হবে দুর্দান্ত গতিতে। যা আপনাকে উপন্যাসের শেষ পৃষ্টায় নিয়ে যাবে ঘটনার শেষ পরিণাম জানার নিমিত্তে।
গল্প হিসেবে 'মুরতাদ' ছিল দারুণ এবং বাস্তবতার আলোকে নির্মিত। এ ধরণের প্লট নিয়ে ইদানিং রচিত কোনো বই আমার দৃষ্টিতে আসেনি। 'মুরতাদ' উপন্যাসের গল্প নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র তৈরি হলে আরও বেশি উপভোগ্য হবে বলে আমি মনে করি।
এই বইটির আরেকটি চমৎকার দিক হচ্ছে, আপনি চিরুনি অভিযান চালিয়েও একটা ভুল বানান খুঁজে পাবেন না। মেধা পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত বইটির কাগজের মান খুবই উন্নতমানের। ক্রিম কালারের পিচ্চিল কাগজে প্রিন্ট এবং বাঁধাই প্রশংসারযোগ্য। 'মুরতাদ'র প্রচ্ছদ আর লেটারিং আমার কাছে সত্যিই আরেক বিস্ময়। প্রিয় পাঠক, অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে সৃষ্ট ইকবাল খন্দকারের 'মুরতাদ' উপন্যাসে আপনাকে স্বাগতম।
Review Credit 💕 Harun Ar Rashid
বইঃ মুরতাদ
লেখকঃ ইকবাল খন্দকার
প্রকাশনীঃ মেধা পাবলিকেশন্স
প্রচ্ছদঃ মিজান স্বপন
পৃষ্টা সংখ্যাঃ ১২৮
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....