সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর । আমরা তাঁর গুণগান করি । তাঁর কাছে সাহায্য চাই । জীবনে চলার পথ নির্দেশনাও চাই তাঁর কাছে । সমস্ত ভুল ত্রুটির জন্য তাঁর কাছেই ক্ষমা চাই । আমাদের নফসের প্ররোচনা এবং অসৎ কর্ম থেকে আশ্রয় চাই তাঁর কাছে । আল্লাহ যাকে সঠিক পথ দেখান সে - ই সঠিক পথ পায় । আর তিনি যাদেরকে ভুল পথে চালান তারা পাবে না কোনো অভিভাবক ও পথ প্রদর্শক । আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি , আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই । তাঁর কোনো শরীক নেই । আর আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি , মুহাম্মদ আনোয়ার তাঁর বান্দা ও রসূল । হে আল্লাহ ! তুমি জিবরাঈল , মীকাঈল ও ইসরাফীলের প্রভু । আকাশসমূহ ও পৃথিবীর স্রষ্টা । দৃশ্য ও অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী । তোমার বান্দাদের যাবতীয় বিরোধ তুমি নিরসন করো ! বিরোধপূর্ণ বিষয়ে আমাদের সঠিক পথ নির্দেশনা দাও । তুমি যাকে চাও তাকে সোজা - সরল পথ দেখাও । ,
আজ একথা কারোর অজানা নেই যে , পাশ্চাত্য চিন্তা দর্শন মুসলমানদের মন মস্তিষ্কে বিপুল প্রভাব বিস্তার করেছে । এর ফলে তাদের চিন্তা , বিশ্বাস ও মননে নানান বিভ্রাট ও বিকৃতি দেখা দিয়েছে । তাদের মধ্যে আজ এমন লোকের সন্ধান পাওয়া যাবে , যারা ইসলাম ও কমিউনিজম , ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ বা জাতীয়তাবাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখে না এবং এই জাতীয়তাবাদী চেতনার মতো জাহেলী গোষ্ঠীপ্রীতির ভিত্তিতে বন্ধুত্ব স্থাপন ও সম্পর্কচ্ছেদেও দ্বিধান্বিত নয় । এই সংগে তারা ইসলামের বিশ্বজনীন আবেদনকে অর্থহীন ও গোঁড়ামি মনে করে । যেমন আমরা পাশ্চাত্য দেশগুলোতে বসবাসকারী মুসলমানদের একটি অংশকে দেখি তারা সে দেশীয় সমাজের যাবতীয় অশ্লীল ও অসৎ কাজে পুরোপুরি অংশগ্রহণ করছে । এসব তারা প্রকাশ্যে করে যাচ্ছে এবং এ ব্যাপারে কোনো লজ্জাও অনুভব করছে না । বরং এগুলোর ব্যাপারে তাদেরকে সতর্ক করতে গেলে তারা উল্টো ক্রোধ প্রকাশ করে । এমন কি অবস্থা এমন চরম পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে , সাম্য ও ব্যক্তি স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে একদল মুসলিম মেয়ে অমুসলিম পুরুষদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে শুরু করেছে । ফলে তারা মুসলিম সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পুরোপুরি পাপ পংকিলতায় ডুবে যাচ্ছে ।
মোটকথা , আদর্শিক , বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্বের ফলে যেসব ঘটনাবলী আমাদের সামনে আসছে , তা ইসলামী বিশ্বাস ও বিধানের মর্মমূলেই আঘাত হানছে । এর ফলে নিত্যদিন তা ইসলামী বিধানের সাথে জীবন ও রাষ্ট্রের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নবতর কৌশলে শরীয়তের কর্তৃত্ব খর্ব করে চলেছে । এ অবস্থায় দ্বীনের যেসব অতি প্রয়োজনীয় মৌলিক বিষয়ে একজন মুসলমানের অজ্ঞ থাকার কোনো অবকাশ নেই এবং যেসব বিষয় তাকে পথভ্রষ্টদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে দেয় , সেগুলো সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে । বিশেষ করে আকিদা বিশ্বাস ও হালাল হারামের মতো বড় বড় বিষয়গুলো যেগুলোর ওপর শরীয়তের পুরো কাঠামোটিই নির্মিত হয়েছে , সেগুলো সম্পর্কে পুরোপুরি জানা এবং সেগুলোর ওপর অবিচল থাকা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য একান্ত অপরিহার্য । কারণ দুনিয়ার জীবনে ইসলামকে সঠিকভাবে মেনে চলা এবং আখেরাতে তার নাজাত লাভের নিশ্চয়তা এরই ওপর নির্ভর করছে ।
মুসলিম মিল্লাতের মধ্যে যে বিভ্রান্ত চিন্তার প্রসার ঘটেছে , তার সংস্কার সাধনও এর মাধ্যমে সহজ হবে । তাছাড়া পাশ্চাত্যবাদিতার ধ্বজাধারীরা তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করে অধুনা ইসলামের মূলে আঘাত হানার যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এটি হবে তার একটি চূড়ান্ত জবাব । ইবনে আবদুল বার মুসলমানদের সামষ্টিক ও ব্যক্তি পর্যায়ে যা কিছু জানা দরকার এবং যে বিষয় তাদের কারোর অজানা থাকা উচিত নয় , সে সম্পর্কে বলেছেন , মুসলমানদের যেসব ফরয বিষয় জানা একান্ত অপরিহার্য সেগুলোর মধ্য থেকে ব্যক্তি মুসলিমকে একান্তভাবে যা জানতেই হবে তা হচ্ছে যেমন - আল্লাহ এক , তাঁর কোনো শরীক নেই , তাঁর কোনো সাদৃশ্য ও দৃষ্টান্ত নেই , তিনি কারোর পিতা নন , কেউ তাঁর পুত্রও নয় , কেউ তাঁর সমকক্ষও নয় , সবকিছু তাঁরই সৃষ্টি , তাঁর দিকেই সবকিছু ফিরে যাবে , তিনিই জীবনদাতা ও মৃত্যুদাতা এবং তিনি চিরঞ্জীব , তাঁর মৃত্যু নেই - এ বিষয়গুলোর সাক্ষ্য দান করতে হবে কণ্ঠে উচ্চারণ করে এবং মনে মনে এগুলোকে স্বীকার করে নিতে হবে ।
এ ব্যাপারে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত স্বীকৃত বিষয়গুলো হচ্ছে , আল্লাহ তাঁর নাম ও গুণাবলী থেকে কখনো আলাদা হন না , তিনি সবকিছুর শুরু , তাঁর কোনো শেষ নেই মানে শরীয়ত সম্মত এ বিষয়গুলোকে দুটি পর্যায়ভুক্ত করা যেতে পারে , প্রথম পর্যায় , এ পর্যায়ে একজন ব্যক্তি মুসলিমকে ইসলামী আকীদা বিশ্বাস ও শরীয়ত সম্পর্কিত যে সব জ্ঞান লাভ করতে হবে , যে সব বিষয় সম্পর্কে তার কোনোক্রমেই অজ্ঞ থাকা চলবে না । দ্বিতীয় পর্যায় , এ পর্যায়ে দলগত ও পেশাগতভাবে জনগোষ্ঠিকে সেসব জ্ঞান লাভ করতে হবে । যেমন ব্যবসায়ী , চিকিৎসক ও এই ধরনের আরো বিভিন্ন শ্রেণীর লোকদের এবং সৈনিক , সীমান্তরক্ষী , ইসলাম প্রচারক ও এই ধরনের আরো বিভিন্ন শ্রেণীর লোকদের ইসলামের মর্মবাণী , তার তাৎপর্য এবং ইসলামী আইন ও তার নিজস্ব পেশা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ইসলামের বৈশিষ্ট্য সংক্রান্ত জ্ঞান লাভ করা একান্ত অপরিহার্য । ,
আমরা মনে করি রেডিও , টেলিভিশন , পত্র - পত্রিকা যাবতীয় প্রচার মাধ্যমে এ বিষয়গুলো সর্বসাধারণের কাছে পৌছিয়ে দিতে হবে । এ কিতাবে আমরা বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপনার ক্ষেত্রে কেবলমাত্র সহীহ ও হাসান হাদীসের সাহায্য গ্রহণ করেছি । অবশ্য ফিকহী আলোচনার ক্ষেত্রে একদল আলেম দুর্বল হাদীসের সাহায্য নেয়ার অবকাশও রেখেছেন । কিন্তু বিপুল পরিমাণ সহী হাদীস থাকার কারণে আমরা সে দিকে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করিনি ! আল্লাহর সন্তুষ্টিই আমাদের কাম্য । তিনিই একমাত্র সঠিক পথ প্রদর্শক ।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....