বই : রক্তাক্ত খাম
লেখক : অলিন্দ্রিয়া রুহি
সম্পাদক : যাবেদ খান আবু বকর
প্রচ্ছদক : আদনান আহমেদ রিজন
প্রকাশনা : বর্ণলিপি প্রকাশনী
পৃষ্ঠা : ১২৮
মূল্য : ২৫০ টাকা
রেটিং : ৪.৮/৫
জনরা : রিভেঞ্জ থ্রিলার
• ভাবনাঃ একজন বিজনেসম্যান যখন মেয়ে লোভী হয়, তখন তার কামনা শীর্ষ পর্যায়ে চলে যায়। টাকার গরমে খুন করাটাও যেন পানি ভাত হয়ে যায়। অপরদিকে একটা স্বাভাবিক জীবন-যাপন করা মেয়ের পরিবারের প্রত্যেকটা সদস্যকে তারই ভালোবাসার মানুষ তার সাথেই ছলনা করে হত্যা করে! আর তা জানার পর সেই মেয়েটির উপর হওয়া ভয়ানক অত্যাচার সহ্য করাটা কতটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায় তা এই গল্পটি না পড়লে অনুভব করা সম্ভব না। তাছাড়া একটা মেয়েকে প্রতিশোধের নেশায় কোথা থেকে কোথায় এনে দাঁড় করায় পরিস্থিতি তা কল্পনা করাও বড্ড কঠিন! এরকম বিভিন্ন চরিত্রের চরিত্রায়নের মাধ্যমে গল্পকে আগুয়ান করা হয়েছে। শেষ অবধি কি সকল রহস্য, উত্তেজনা ধরে রাখতে সক্ষম হবে বা হয়েছে?
• পর্যালোচনাঃ গল্পটি থেকে মোটামুটি বেশ কিছু বিষয় উপলব্ধি করতে পেরেছি। একজন ভুল মানুষকে বিশ্বাস, ভালোবাসা যে কতটা ভয়ানক হতে পারে। তা এই গল্পটা পড়লেই বুঝা যায়। অপরদিকে প্রতিশোধের নেশায় সাদামাটা একটা মেয়েও ভয়ানক খুনির রূপ নিতে পারে। কিংবা খেলতে পারে ভয়ানক খেল! যা আপনার আমার ভাবনার বাহিরে। তাছাড়া কাউকে ভালোবাসলে তার ব্যাকগ্রাউন্ড না জেনে ভালোবাসা যে কতটা বোকামো! তা কল্পনা করাও দায়। আমরা মানুষের বাহিরটাই দেখতে পাই। কিন্তু ভেতরটা যে কতটা প্যাঁচালো। তা চিন্তাও করতে পারি না।
আমি যখন গল্পটা শুরু করেছি, তখন প্রায় রাত। কিছুটা বিরক্তি নিয়েই পড়ছিলাম। লেখকের প্রথম বই। কিন্তু প্রথম হোঁচট খাই তখন, যখন লেখক বর্তমানেই অতীতের ঘটনাকে সমানতালে চালিয়েছেন। বিষয়টা আমি প্রথমে ধরতে পারিনি। গড়গড় করে পড়েই যাচ্ছিলাম। কিন্তু পৃষ্ঠা দুই পড়ার পর মস্তিষ্কে নতুন স্বাদ অনুভব করি। লেখকের এরকম গুণ দেখে তার প্রশংসা না করে পারলাম না। বর্তমানের সাথে অতীতের ঘটনাকে এত সূক্ষ্মভাবে তাল মিলিয়ে গল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন লেখক, যেন তিনি এর আগেও এরকম বেশ কয়েকটা বই লিখেছিলেন।
প্লট প্রথমে আমার কাছে সাদামাটাই মনে হয়েছিল। দুজন খুন হওয়া, পুলিশ এসে তদন্ত। এটা হরহামেশাই সব গল্পে দেখা যায়। উৎসুক ছিলাম, এই বইতে নতুন কী পাওয়া যায়! নতুন পেতে শুরু করলাম অতীতকে সাবলীলভাবে উপস্থাপন। পাশাপাশি একজন যুবতী নারীর জীবন মুহূর্তের মাঝে ভালোবাসায় কানায় কানায় ভরে যাওয়া। আচমকা আসা ঝড়ে সব ভেঙে নিয়ে যাওয়া! ঘটনার বহমান রেখেছিল প্রতিটি চরিত্রই। খুনের ঘটনাগুলো যেন আরও জট বেঁধে যাচ্ছিল প্রতিনিয়ত।
সবশেষে সকল জট ছাড়িয়ে দেন লেখক। কিন্তু কিছু প্রশ্ন রেখে দেন। সেটা শেষ অধ্যায় গিয়ে ভয়ানক ভারী ফেলে মস্তিষ্কে। দুটো চরিত্র, দুজনের গল্প, প্রতিশোধ একত্রিত হলো কী করে! গল্পের শেষটা ছিল অসাধারণ! খুন, পাকড়াও এগুলো স্বাভাবিক হলেও স্বাভাবিকের মাঝে এক অস্বাভাবিককে জন্ম দিয়েছে গল্পে। গল্পের সম্পূর্ণ মোড় মুহূর্তেই ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে লেখক। নতুন লেখনীতে এরকম টুইস্ট সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।
শেষ অংশে গিয়ে খুনের আগে পরিচয় জাহির করাটা যেন মুহূর্তের মাঝে ভিন্ন রাজ্যে নিয়ে গিয়েছিল। এক মুহূর্তের জন্য ভাবনায় পড়ে গিয়েছিলাম, কী ভাবলাম, আর কী হলো! এরকম দোটানায় ফেলে দিয়ে লেখক একটা অস্বাভাবিক অনুভূতির জন্ম দিয়েছেন। যেটা শেষ অবধি না পড়া পর্যন্ত উপলব্ধি করা সম্ভব না।
• চরিত্রায়নঃ চরিত্রগুলো যেন একেকটা তার নিজ নিজ অবস্থানে পারফেক্ট ছিল। তবে কিছু চরিত্রকে আরও বিল্ডাপ করার প্রয়োজন ছিল। কিছু সাইট ক্যারেক্টর ছিল। যেগুলোর ভূমিকা আরও স্পষ্ট করা প্রয়োজন ছিল। তবে শেষ দিকের চরিত্রায়নে প্রশ্ন রাখার কারণটা সঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না। লেখক কি তবে ওরকম কারণটা পাঠকদের নিজেসের মতো করে ভেবে নেওয়ার জন্যই এভাবে রেখেছেন? যদি তাই হয়, তবে আরও দারুণ একটি কাজ করেছেন তিনি। তার প্রথম বই হিসেবে তেমন কোনো ভুলই নজরে আসেনি। যেটা খুব ভালো লেগেছে।
• প্রোডাকশনঃ প্রচ্ছদক আদনান আহমেদ রিজন ভাইয়ের প্রচ্ছদ এমনিতেই বেশ সুন্দর হয়। বর্ণলিপির প্রচ্ছদ প্রিন্টিং-এ প্রচ্ছদটা বেশ লেগেছে। প্রচ্ছদ দেখেই নির্বাচন করে নিয়েছিলাম, বইটা পড়ব। সেই থেকেই আগ্রহ হওয়া। কম্পোজ, প্রুফ মোটামুটি সবই ঠিক ছিল। ওভার অল বইটা পড়ে বেশ মজা পেয়েছি। রাত এগারোটা বাজে বসে ভোর সাড়ে চারটায় বই শেষ করেছি। ঘোর লাগা এ অনুভূতিতে হারিয়ে গিয়েছিলাম। আমার মতে একজন থ্রিলার পাঠককে ট্রাই করে দেখা উচিত। অন্তত হতাশ হবে না বলে ভরসা করা যায়।
Review Credit 💕 Saiyeda Rahman
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....