লেখক : মাওলানা কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক
প্রকাশনী : মাকতাবাতুল ফুরকান
বিষয় : তাবেই ও অলি-আওলিয়া
কভার : হার্ড কভার
ভাষা : বাংলা
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সান্নিধ্যে সাহাবায়ে কেরাম যেমন এক অতুলনীয় জীবন গড়ে তোলার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন, তেমনি তাদের সান্নিধ্যে থেকেও একদল মানুষ নিজেদের জীবনকেও অভূতপূর্বভাবে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে রাঙিয়েছিলেন―তারাই ছিলেন তাবয়েী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং সাহাবায়ে কেরামের পরে তাবেয়ীদের সর্বোত্তম মানুষ বলেছেন। মূলত তাদের জীবন যেমন বিস্ময়কর, তেমনি পরবর্তী প্রজন্মের জন্যও অনুপম দৃষ্টান্ত, এক অনুসরণীয় আলোকবর্তিকা।সঙ্গতকারণেই মুসলিম হিসেবে আমরা যদি দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতা অর্জন করতে চাই, তাহলে কুরআন-সুন্নাহর পাশাপাশি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগের পরবর্তী প্রজন্ম তাবেয়ীদের জীবনীও অধ্যয়ন করা প্রয়োজন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে না দেখে তারা যেভাবে সুন্নাতের অনুসরণ-অনুকরণে নিজেদের পরিশুদ্ধ করেছিলেন, আমাদেরও একইভাবে ঈমান-আমলে পরিশুদ্ধতা অর্জন করতে হবে। আর এ লক্ষ্যেই সাত্রিশজন তাবেয়ীর জীবনী দিয়ে গ্রন্থটি সাজানো হয়েছে। এতে তাদের দুনিয়াবিমুখতা, চেষ্টা-সাধনা, ইবাদত-বন্দেগী এবং পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের পরিচয় পাওয়া যাবে। আশা করা যায়, সব শ্রেণির পাঠকের জন্যই দ্বীন ও ঈমানের পথে আগে বাড়ার ক্ষেত্রে গ্রন্থটি সহায়ক হয়ে উঠবে।
প্রকাশকের কথা
الحمد للہ و کفی وسلام على عباده الذين اصطفی
মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে ইতোমধ্যে সীরাত, সাহাবায়ে কেরাম ও নারী তাবেয়ীদের জীবনী প্রকাশিত হয়েছে। আল্লহামদুলিল্লাহ, শুরু থেকে মুসলিম মনীষীগণের জীবনী প্রকাশ করার ক্ষেত্রে এ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান যে ঐকান্তিক আগ্রহ ও প্রচেষ্টার স্বাক্ষর রেখেছে, তাতে এবার যোগ হচ্ছে কয়েকজন বিশিষ্ট তাবেয়ীদের জীবনী। গ্রন্থটির নাম রাখা হয়েছে সাহাবীদের সাহচর্যে আলোকিত তাবেয়ীদের জীবনী।
বক্ষমাণ গ্রন্থটি মূলত দারুল মারিফা, বৈরুত থেকে প্রকাশিত এবং প্রসিদ্ধ আরব কবি ও সাহিত্যিক মুহাম্মাদ রাজি হসান কান্নাস কর্তৃক রচিত হায়াতুত তাবিয়ীন-এর আলোকে সংকলন করা হয়েছে। নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ ও সূত্র থেকে তথ্য-উপাত্ত সংযোজন করে গ্রন্থটিকে আরও সমৃদ্ধ করা হয়েছে। আর এই দুরূহ কাজটি করেছেন সমকালীন বিদগ্ধ লেখক, অনুবাদক ও সম্পাদক মাওলানা কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক। তিনি এ গ্রন্থে সাঁইত্রিশজন তাবেয়ীদের জীবনী খুবই সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় বর্ণনা করেছেন। উল্লেখ্য, এ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার আরও দুটি অনূদিত গ্রন্থ—মহীয়সী নারী সাহাবীদের আলোকিত জীবন এবং নারী তাবেয়ীদের আলোকিত জীবন— প্রকাশিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা তার এই কাজ কবুল করেন এবং এর পাঠকদের উপকৃত করেন।
গ্রন্থটি ত্রুটিমুক্ত করার সার্বিক চেষ্টা করা হয়েছে। সুহৃদ পাঠকের দৃষ্টিতে কোনো অসঙ্গতি ধরা পড়লে তা জানানোর জন্য অনুরোধ করা হলো। যারা এ গ্রন্থটি প্রকাশের ব্যাপারে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন, আল্লাহ তাদেরকে কবুল করুন। সবাইকে এর উসিলায় বিনা হিসেবে জান্নাত নসীব করুন। আমীন।
মুহাম্মাদ আদম আলী
তাবেয়ীদের মর্যাদা
মর্যাদাগত দিক দিয়ে সাহাবীদের পরই তাবেয়ীদের স্থান। তাদের এ উচ্চ মর্যাদার কথা কুরআন-সুন্নাহয়ও বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন :
و الشبقون الاولون من المهجرين والأنصار و الذين اتبعوهم بإحسان رضي الله عنهم ورضوا عنه وأعد لهم جنت تجرئ تحتها الأنهر خليين فيها ابدا ذلك الفوز العظيم
আর মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা তাদেরকে অনুসরণ করেছে সুন্দরভাবে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন; আর তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন জান্নাতসমূহ, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে। এটাই মহাসাফল্য। (সূরা তাওবা, ৯ : ১০০)
পবিত্র কুরআনের এ আয়াতে মুহাজির ও আনসার সাহাবীদের পরেই তাবেয়ীদের কথা বলা হয়েছে। তারা ঈমান ও আমলের ব্যাপারে যেমন সাহাবীদের অনুসারী, তেমনি কালের দিক দিয়েও তারা সাহাবীদেরই উত্তরসূরি। এ কারণেই প্রচলিত পরিভাষায় তাদেরকে তাবেয়ীন (পরবর্তী বা অনুসারী) বলা হয়েছে। তাবেয়ীদের মর্যাদা প্রসঙ্গে নিম্নোক্ত হাদীসটিও বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
خير الناس قرني ، ثم الذين يلونهم ثم الذين يلونهم আমার উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে আমার যুগের লোকেরা। তারপর তার পরের যুগের লোকেরা অর্থাৎ তাবেয়ীগণ। এরপর তার পরের যুগের লোকেরা অর্থাৎ তাবে-তাবেয়ীগণ।
অপর একটি হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন সৌভাগ্যবান তারা, যারা আমাকে স্বচক্ষে দেখেছে এবং আমার প্রতি ঈমান এনেছে। আর তারাও সৌভাগ্যবান, যারা আমাকে দেখেছে, এমন লোকদের দেখেছে।
আমাদের এ আলোচনা থেকে এ কথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো, যে, ইসলামী দুনিয়ায় তাবেয়ীদের বিরাট আসন ও উচ্চ মর্যাদা রয়েছে। সাহাবীদের পর তারাই হলেন এ উম্মতের সর্বোত্তম ব্যক্তি। বস্তুত তাকওয়া, দ্বীনদারী ও আমলী যিন্দেগীর ক্ষেত্রে তাবেয়ীগণ ছিলেন সাহাবীদেরই প্রতিবিম্ব। তারা একদিকে যেমন সাহাবীদের কাছ থেকে পবিত্র কুরআন-সুন্নাহ সম্পর্কিত যাবতীয় জ্ঞান অর্জন করেন, অপরদিকে তারা সেই সময়ের বিস্তৃত মুসলিম সমাজের দিকে দিকে, কোণে কোণে এর ব্যাপক প্রচারকার্যও সম্পাদন করেন। সাহাবীদের কাছ থেকে ইল মগ্রহণ ও পরবর্তীকালের অনাগত মুসলিমদের কাছে তা পৌঁছানোর জন্য কার্যত তারাই মাধ্যম হয়েছিলেন। মূলত এসব কারণেই তাবেয়ীগণ এ রকম সুমহান মর্যাদার আসনে সমাসীন হন।
হিজরী প্রথম শতাব্দী থেকে দ্বিতীয় শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত সময়ে মুসলিম জাহানের বিভিন্ন শহর ও অঞ্চলে বহুসংখ্যক তাবেয়ী ইলমে হাদীসে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। স্থানের উল্লেখসহ তাদের প্রসিদ্ধ কয়েকজনের নাম ও জন্ম-মৃত্যুর সন নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
হাসান আল-বাসরী রহ.
নাম ও বংশ
আমাদের আলোচ্য মনীষীর নাম : হাসান। উপনাম : আবু সায়ীদ। পিতার নাম ইয়াসার। পিতার উপনাম: আবুল হাসান। ইয়াসার ছিলেন বিশিষ্ট সাহাবী যায়েদ ইবনে সাবিত রাযিয়াল্লাহু আনহুর আযাদকৃত দাস। ১০ হাসানের মায়ের নাম খাইরা। তিনি হলেন উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামা রাযিয়াল্লাহু আনহার আযাদকৃত দাসী।” হাসান রহ.-এর পূর্বপুরুষ ছিলেন ইরাকের অধিবাসী। ১২ হিজরীতে ইরাক বিজিত হলে ইয়াসার বন্দী হয়ে মদীনায় আসেন ও ইসলামগ্রহণ করেন। পরবর্তী সময়ে উম্মে সালামাহ রাযিয়াল্লাহু আনহার দাসী খাইরার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।১২
জন্ম ও তাহনীক
২১ হিজরী মোতাবেক ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে উমর ইবনুল খাত্তাব রাযিয়াল্লাহু আনহুর খেলাফতকালের দুই বছর বাকি থাকতে এ দম্পতিরই ঘর আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন হাসান। ৩ ভূমিষ্ট হওয়ার পর হাসানকে উমর ইবনুল খাত্তাব রাযিয়াল্লাহু আনহুর কাছে নিয়ে যাওয়া হলে তিনি নিজ হাতে তাকে তাহনীক করান। * তারপর তিনি বললেন, শিশুটি দেখতে বেশ সুন্দর হয়েছে, তোমরা এর নাম রেখো হাসান।
উম্মে সালামা রা.-এর দুগ্ধপান
উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামা রাযিয়াল্লাহু আনহার কাছে সংবাদবাহক এ সুখবর নিয়ে এলো যে, তার দাসী খায়রা একজন পুত্রসন্তান জন্ম দিয়েছে।
আরো পড়তে অথবা দেখতে অনুগ্রহ করে Hardcopy ক্রয় করুন। we Respect Every Author Hardwork-boipaw team
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....