লেখক : শামসীর হারুনুর রশীদ
প্রকাশনী : কালান্তর প্রকাশনী
বিষয় : ইসলামী ব্যক্তিত্ব
পৃষ্ঠা : 152, কভার : হার্ড কভার
আইএসবিএন : 9789849659013, ভাষা : বাংলা
"শাহজালাল রাহ.-কে নিয়ে অনেকের লেখা বই আছে। কিন্তু এইসুফি সাধকের জীবন ও কর্ম আলোচনা প্রসঙ্গে তাসাওউফের তাত্ত্বিক বিস্তৃত আলোচনা সম্ভবতএটিই প্রথম। বইটি লিখতে গিয়ে তিনি তাসাওউফের এবং শাহজালালের ওপর লিখিত অসংখ্য বই পাঠকরেছেন। রেফারেন্স দিয়েছেন পাতায় পাতায়। বইটি পড়ে শাহজালাল রাহ. এবং একই সঙ্গেতাসাওউফের খুঁটিনাটি সম্পর্কে জেনে পাঠক নিশ্চয়ই উপকৃত হবেন। বলা যায় বইটি তাসাওউফসম্পর্কিত একটি সমৃদ্ধ তথ্যভান্ডার হয়ে উঠেছে। মার্জিত ও ঝরঝরে ভাষায় লিখিত বইটিবোদ্ধামহলে সমাদৃত হবে—এটি আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।"
দরবেশ শাহজালাল রাহ. (১২৭১-১৩৪১ খ্রিষ্টাব্দ) - নাম, উপাধি, গুণাবলি ও পরিবার
রাসুল বলেছেন,
কিয়ামত পর্যন্ত সর্বদাই আমার উম্মতের একদল দীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। তিরস্কারকারীদের তিরস্কার তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
রাসুলের বাণী অক্ষরে অক্ষরে প্রতিফলিত হয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত হতে থাকবে। তাঁরা হলেন সততা ও আসমানি জ্ঞানের পতাকাবাহী জামাআত এবং তাঁদের অনুসারীগণ, যাঁরা প্রতিদান দিবসে নাজাতপ্রাপ্ত হবেন। কালপরিক্রমার বাঁকে বাঁকে দাঁড়িয়ে তাঁরাই দিয়েছেন এ উম্মতকে দরদভরা দিকনির্দেশনা। লোকদের আহ্বান করেছেন এক আল্লাহর দিকে। মানুষের কল্যাণচিন্তায় অহর্নিশ জার জার হয়ে কেঁদেছেন। প্রচার করেছেন আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের মধুময় বাণী। পার্থিব লোভ-লালসা, ভয়ভীতি বা কারও চোখরাঙানি ক্ষণিকের জন্য তাঁদের বিচ্যুত করতে পারেনি। অমানিশার ঘোর অন্ধকারে দাঁড়িয়েও উচ্চৈঃস্বরে ঘোষণা করেছেন—'ইসলাম হ্রাস পাবে আর আমরা জীবিত থাকব, এটা তো হতে পারে না!
তাঁরা হলেন সাহাবি, তাবিয়ি, তাবে তাবিয়ি, মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদ, মুহাদ্দিস, ফকিহ ও সুফি আলিমদের সুমহান জামাআত। তাঁদের অক্লান্ত ও নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টার ফলেই আজ আমরা ইসলামের সুশীতল ছায়ায় স্থান পেয়েছি। পেয়েছি দীন, ইমান ও ইহসান সম্পর্কে জানার অফুরন্ত সুযোগ। বিশ্ব-ইতিহাসে সোনালি অক্ষরে লেখা আছে তাঁদের নাম, আলোচিত হয়েছে তাঁদের সৃষ্টিকর্ম। আতশকাচের আলো ফেলে বিচার বিশ্লেষণের পর হয়েছে তাঁদের মূল্যায়ন। ক্ষণজন্মা এ সকল মনীষীর মধ্যে মুজাহিদে
• সহিহ মুসলিম: ১০২০।
• মিরকাতুল মাফাতি: ১/৩৮৯১৷
মিল্লাত, সুফিসম্রাট শাহজালাল রাহ. অন্যতম। যুগের প্রকৃত দরবেশ, ধর্মপ্রচারক, বাংলা-আসামে মুসলিম সংস্কৃতির আনুষ্ঠানিক প্রচলন দানকারী আদর্শপুরুষ ছিলেন নানা গুণে গুণী, দীর্ঘ জীবনাদর্শের অধিকারী একজন খাঁটি ওলি।
জন্ম ও শৈশব
হিজরি ষষ্ঠ শতকের শেষাংশে মক্কার কুরাইশ বংশের একদল লোক মক্কা থেকে হিজাজের° দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তে ইয়ামেনে হিজরত করে বসবাস শুরু করেন। কুরাইশের এ দলের সবচেয়ে খোদাভীরু ব্যক্তি মুহাম্মাদ বা মাহমুদ হলেন শাহজালালের পিতা। মাহমুদের পিতা ছিলেন ইবরাহিম। আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণায় অবস্থিত সৌন্দর্যের লীলানিকেতন ও প্রাচীন সভ্যতার আবাসভূমি ইয়ামেন। তখন ইয়ামেনের রাজধানী ছিল সানা ও এডেনের মধ্যপথে অবস্থিত তাইজ (Taiez) নগর। তাইজের নিকটবর্তী কুন্না নামক শৈলপুরীতে শাহজালালের জন্ম।
ড. ব্লকম্যান ও আল-ইসলাহ পত্রিকার সাবেক সম্পাদক মৌলবি নুরুল হকের বর্ণনায় জানা যায়, শাহজালাল রাহ. ইয়ামেনের কুনিয়া বা কার্নিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। সুহেলি ইয়ামেনি নামক প্রাচীন ঐতিহাসিক গ্রন্থেও তাঁকে ইয়ামেনি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ১৩৬৪ বাংলায় সিলেটের মাসিক পত্রিকা আল-ইসলাহ শাহজালাল সংখ্যায় তাঁকে ইয়ামেনি বলা হয়েছে। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত সিলেট ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ারে মি.বি. সি. এলেন অনুরূপ মত প্রকাশ করেছেন। এতৎসত্ত্বেও কেউ কেউ ভিন্নমত পোষণ করেছেন। সিলেটের আম্বরখানায় ১২৭৯ বাংলায় ১৫১২ খ্রিষ্টাব্দের একটি খোদিত হুসেনশাহি শিলালিপি আবিষ্কৃত হয়। তাতে লেখা আছে,
মুহাম্মাদ ছেলে মহীয়ান, বরণীয় শায়খুল মাশায়িখ, সংসারবিরাগী ফকির শাহজালালের সম্মানে ৭০৩ হিজরিতে সুলতান ফিরোজ শাহ দেহলবির আমলে সিকান্দার গাজির হাতে সিলেটে প্রথম মুসলিম-বিজয় সূচিত হয়। আরও জানা যায়, তাঁর দাদার কারাবন্দি হওয়ার সময় অর্থাৎ, ৬৭৩ হিজরিতে তিনি ছিলেন তিন বছরের শিশু।
এ হিসেবে তাঁর জন্মসাল ৬৭১ হিজরি–১২৭১ খ্রিষ্টাব্দ ধরা হয়। যেহেতু ৩২ বছর
* আরব উপদ্বীপকে হিজাজ বলা হয়।।
• Biographical encyclopedia of Sufis, By N. Hanif, Published by Surup & sons, new delhi, 1st edition 2000. p171; শ্রীহট্টে ইসলাম জ্যোতি, মুফতি আজহার উদ্দিন সিদ্দিকি, উৎস প্রকাশন ঢাকা, প্রকাশকাল সেপ্টেম্বর ২০০২।
• জালালাবাদের কথা, দেওয়ান নুরুল আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দ, বাংলা একাডেমি; আল ইসলাহ, শাহজালাল সংখ্যা ১৩৬৪ বাংলা।
বয়সে ৭০৩ হিজরি—১৩০৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সিলেট জয় করেন, তাই তাঁর জন্মসাল ৬৭১ হিজরি সঠিক মনে হয়। কোনো কোনো গবেষকের মতে, ২৫ মে ১২৭১ রোম সালতানাতের বর্তমান তুরস্কের কুনিয়ায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৫০ বছর জীবিত ছিলেন। শাহজালালের জন্ম-সংক্রান্ত তথ্য এর চেয়ে বেশি কিছু জানা যায়নি।
শাহজালালের রাওজায় প্রাপ্ত ফলকলিপি সুহেলি ইয়ামেনি অনুসারে, শাহজালাল রাহ. ৩২ বছর বয়সে ৭০৩ হিজরি—১৩০৩ খ্রিষ্টাব্দে সিলেট আসেন। সুহেলি ইয়ামানিতে উল্লিখিত তথ্য থেকে জানা যায়, ৬৭১ হিজরি—১২৭১ খ্রিষ্টাব্দে শাহজালাল জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মভূমি ছিল প্রাচীন আরব-আজমের হিজাজ ভূমির প্রদেশ ইয়ামেনের কুনিয়া শহর। শাহজালাল যখন তিন মাসের শিশু, তখন তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়। উর্দুভাষী লেখক আবদুল জলিল বিসমিল বলেন,
শেখ মুহাম্মাদ ইয়ামেন থেকে এসে যখন সস্ত্রীক তুরস্কের কুনিয়ায় বসবাস শুরু করেন, তখনো তাঁরা নিঃসন্তান ছিলেন। বিয়ে-পরবর্তী দীর্ঘদিন কোনো সন্তান না হওয়ায় দাম্পত্যজীবনে তিনি সত্যিই একটি সন্তানের অভাব অনুভব করছিলেন। এ জন্য আল্লাহর কাছে প্রতিনিয়ত দুআ করতেন। অবশেষে ৫৯৫ হিজরি—১১৯৮ খ্রিষ্টাব্দে একজন সন্তান লাভ করেন। নাম রাখা হয় জালাল উদ্দিন। শিক্ষাদীক্ষা শেষে আপন মুরশিদের অনুমতি নিয়ে তিনি বাংলায় আসেন। তখন দিল্লির সম্রাট ছিলেন আলাউদ্দিন খিলজি (১২৯৬-১৩১৬ খ্রিষ্টাব্দ); আর বাংলার শাসক ছিলেন শামসুদ্দিন ফিরোজ শাহ (১৩০১-১৩২২ খ্রিষ্টাব্দ)।
পিতামাতা ও দাদা
শাহজালালের পিতামাতা উভয়ই ছিলেন কুরাইশ বংশের বিখ্যাত ওলির বংশধর। পিতা মুহাম্মাদ ইবনু ইবরাহিম অথবা শেখ মাহমুদ ইবনু ইবরাহিম কুরাইশি রাহ. ছিলেন তাইজের নিকটবর্তী আজ্জান দুর্গের আমির। তিনি ইয়ামেনের সুলতান মালিক মুহাম্মাদ শামসুদ্দিনের হাদিসের শিক্ষক ছিলেন। সে সময়ে কেন্দ্রীয় সুলতান ও শক্তিশালী সামন্ত আমিরদের মধ্যে প্রায়ই যুদ্ধ-সংঘাত চলত। এরূপ এক খণ্ডযুদ্ধে শাহজালালের জন্মের আগেই আমির মুহাম্মাদ রাহ. শাহাদতবরণ করেন।
* শ্রীহট্টে ইসলাম জ্যোতি, মুফতি আজহার উদ্দিন সিদ্দিকি। শাহজালাল রাহ, জীবনীগ্রন্থ, শাহ ওয়ালিউল্লাহ। ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দ, ছাফা বুক কর্পোরেশন, ঢাকা।
* সিলেট মে উর্দু, আবদুল জলিল বিসমিল: ৩২। ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দ, করাচি। • হজরত শাহজালাল রাহ ও তাঁর কারামাত, সৈয়দ মোস্তফা কামাল; শ্রীহট্টে ইসলাম জ্যোতি।
তাঁর মা সাইয়িদা হাসিনা ফাতিমা বিনতু জালাল উদ্দিন সুরুখ বুখারি রাহ.। তিনিও নানা গুণে বিভূষিত কুরাইশ বংশীয় এক সম্ভ্রান্ত মহিলা ছিলেন। তিন মাসের শিশুসন্তান জালাল উদ্দিনকে রেখে তিনি ইনতিকাল করেন। পরে তাঁর লালনপালনের ভার নেন দাদা ইবরাহিম কুরাইশি রাহ। তিনি একজন বিখ্যাত দরবেশ ছিলেন। তাইজ নগরে তাঁর কবর অবস্থিত। মরক্কোর অধিবাসী মুর পরিব্রাজক ইবনু বতুতা ৭৩০ হিজরিতে ইয়ামেন সফরকালে এই কবর জিয়ারত করেন। দুঃখের বিষয়, রাজরোষে পড়ে ইবরাহিম কুরাইশি রাহ. ৬৭৩ হিজরিতে কারাবন্দি হন। বন্দি অবস্থায় ৬৮৩ হিজরিতে তিনি ইনতিকাল করেন।
দাদার কারাবন্দিতে তাঁর লালনপালনের ভার নেন মামা ও মুরশিদ সৈয়দ আহমাদ কবির রাহ। তিনি ছিলেন মক্কার বিশিষ্ট আলিম ও বুজুর্গ। এ সময়ে তিন বছরের ইয়াতিম শিশু শাহজালাল ইয়ামেন থেকে মক্কায় চলে আসেন। তাঁর নানা জালাল উদ্দিন সুরুখ বুখারি রাহ. ছিলেন উঁচুস্তরের একজন বুজুর্গ। তিনি পাঞ্জাব ও মুজপুতানায় ইসলাম প্রচার করেন। ১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দে হালাকু খান কর্তৃক বাগদাদ ধ্বংসের সময় তিনি সেখানে ছিলেন। জালাল উদ্দিন সুরুখ বুখারি ৬৯১ হিজরিতে মুলতানের উচে ইনতিকাল করেন। তিনি বাহাউদ্দিন জাকারিয়া রাহ.-এর মুরিদ ছিলেন। তাঁর মামা ও মুরশিদ সৈয়দ আহমাদ কবির রাহ. ৭২৫ হিজরিতে পিতার গদিনশিন অবস্থায় উচে পরলোকগমন করেন। আহমাদ কবিরের ছেলে জালাল উদ্দিন জাহানিয়া জাহাগাশত দিল্লির সম্রাট ফিরোজ শাহ তোঘলকের মুরশিদ ছিলেন। ৭৮১ হিজরিতে তিনিও উচে ইনতিকাল করেন।
এখানে লক্ষণীয় যে, শাহজালালের কবর রয়েছে উপমহাদেশের পূর্বপ্রান্তে সিলেট শহরে এবং তাঁর নানা, মামা ও মামাতো ভাইয়ের কবর রয়েছে উপমহাদেশের পশ্চিমপ্রান্তে মুলতানের উঁচে। আরও লক্ষণীয় যে, শাহজালালের বাল্যকাল বহুলাংশে রাসুল - এর জীবনের সঙ্গে মিলে যায়। উভয়েই পিতৃহীন হয়ে জন্মগ্রহণ এবং অল্পবয়সে মাতৃহারা হন। তারপর পিতামহ, চাচা ও মামার হাতে লালিতপালিত হন।
গুরু পরিচিতি ও মক্কিজীবন
শাহজালালের মামা ও শিক্ষাগুরু শেখ সৈয়দ আহমাদ কবির সোহরাওয়ার্দি রাহ। তবে আহমাদ কবির নামে তিনি সমধিক পরিচিত। তাঁর পিতা সৈয়দ জালাল উদ্দিন
১. শ্রীহট্টে ইসলাম জ্যোতি।
১১ দিল্লির মুলতান শহরের একটি স্থানের নাম।
১২ তাজকিরাতুল আউলিয়া, ফরিদুদ্দিন আত্তার (বঙ্গানুবাদ): ৪২৭। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দ।
আরো পড়তে অথবা দেখতে :- অনুগ্রহ করে Hardcopy ক্রয় করুন।
অনুরোধঃ- বই : শাহজালাল রাহ. ও সুফিদর্শন এর প্রি অর্ডার চলছে ... তাই শাহজালাল রাহ. ও সুফিদর্শন বইটি PDF Free Download চাহিয়া লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না।
We Respect Every Author Hardwork - boipaw.com™
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....