লেখক : মোহাইমিন পাটোয়ারী
প্রকাশনী : ম্যাসেজ পাবলিকেশন্স
বিষয় : ব্যবসা, বিনিয়োগ ও অর্থনীতি
পৃষ্ঠা : 200, সংস্করণ : 1st Published, 2022
আইএসবিএন : 9789849640301
কেন এই বই?
সুদ হারাম, সুদের ৪টা প্রকারের নাম বলতে পারবেন?
আপনি যদি না জানেন কী কী কারণে ও কীভাবে লেনদেন করলে সুদ হয়, তাহলে সুদ থেকে বাঁচবেন কী করে? দ্বীনের হালাল-হারামের জ্ঞান অর্জন আপনার উপর ফরজ, সেই ফরজটা কি তাহলে অর্জিত হয়েছে?
কখনো টাকা ঋণ নিয়েছেন? কাউকে ঋণ দিয়েছেন? সুদ খেয়েছেন কখনো? সুদ দিয়েছেন? সুদ দিলে বা নিলে কি ক্ষতি হয় জানেন? এত মানুষ সুদে জড়িয়ে পড়ছে কেন? সুদ এত 'উপকারি', তাহলে বাড়ছে কেন দরিদ্রতা?!
কর্জে হাসানা কী? কর্জে হাসানা দিলে কি কারো ক্ষতি হয়? কর্জে হাসানা দিলে সমাজ আর সংসারের উন্নতি কীভাবে হয়? কর্জে হাসানা দিলে কি সমাজ সুদমুক্ত হবে? শুধু টাকা দিয়েই কর্জে হাসানা হয়, নাকি সোনা-রুপা-চাল-ডাল দিয়েও হয়? দেশে হাজার কোটি টাকার কর্জে হাসানা ফান্ড থাকলে কী হত? দুনিয়াতে কি বড় কোনো কর্জে হাসানা ফান্ড আছে? কীভাবে কাজ করে তারা?
উত্তরগুলো বইয়ের ভেতর...
ড. মুহাম্মাদ কবির হাসান
অধ্যাপক, ফাইন্যান্স, নিউ অরলিন্স ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্রেইসলামিক ব্যাংকিং ফাইন্যান্সে ২০১৬ ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (ISDB) পুরস্কার বিজয়ী
বর্তমান সময়ের বিশ্বজুড়ে অন্যতম প্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি সমস্যা হলো- অর্থনৈতিক বৈষম্য। এই বৈশ্বিক সমস্যাটির পেছনে যে প্রত্যক্ষভাবে সুদ সম্পৃক্ত, তা হয়তো অনেকেরই জানা। কিন্তু ভবিষ্যৎ বিশ্ব সুদের প্রভাব থেকে বেরিয়ে কীভাবে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে পারবে, তা আমাদের জানা নেই বললেই চলে। সত্যি বলতে, এই আলোচনা আমাদের সমাজে
একেবারেই অপ্রতুল। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে এই বইটি যদিও প্রাথমিক পদক্ষেপ, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই বইটিতে একই সঙ্গে
সমস্যা পেশ এবং সমাধান প্রদানের চেষ্টা করা হয়েছে।
বাস্তবতার নিরিখে একমাত্র কর্জে হাসানা সুদমুক্ত সমাজ গড়ার নিয়ামক হতে পারে না। কর্জে হাসানার পাশাপাশি ব্যাবসা বিনিয়োগ, জাকাত, সাদাকা একসাথে কাজ করলে এবং প্রচলিত অর্থ ও মুদ্রাব্যবস্থার পরিবর্তন হলে সুদকে শেকড়সহ উপড়ে ফেলা সম্ভব। তবে এই যাত্রায় কর্জে হাসানা কত গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে সক্ষম—এই বই তা চমৎকারভাবে উপস্থাপন করে দেখিয়েছি। যদি আমরা বর্তমান অর্থ ও মুদ্রা কাঠামোতেও ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানিক পর্যায়ে কর্জে হাসানার ব্যাপক চর্চা করতে পারি, তাহলে সুদের ওপর মুসলিম সমাজের নির্ভরশীলতা কিছুটা হলেও কমে যাবে। এই অর্জনকে কিছুতেই ছোটো করে দেখার সুযোগ নেই। আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন যে, পৃথিবীর কোনো কিছুই একদিনে গড়ে ওঠেনি। প্রতিটি বড়ো পরিবর্তন খুব ক্ষুদ্র পর্যায় থেকে শুরু হয়েছে। তাই আজকে আমাদের দেশের যুবকরা সুদমুক্ত সমাজ গড়ার স্বপ্নে কর্জে হাসানা নিয়ে যে যাত্রা শুরু করেছে, তা হয়তো একদিন অনেক পথ পাড়ি দেবে এবং অন্যান্য সংগঠনকেও উৎসাহিত করবে। আমার পক্ষ থেকে তাদের জন্য দুআ ও শুভকামনা রইল।
সবশেষে বলতে চাই, সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বাংলাদেশের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে কর্মরত ব্যক্তিবর্গেরও এই বইটি পড়া উচিত। অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং সংসদ সদস্য ব্যক্তিগতভাবে আমার সাথে যোগাযোগ করেন এবং ইসলামি অর্থনীতি বিষয়ে জানার আগ্রহ প্রকাশ করে থাকেন। অনেকে মন্তব্যও করেন যে, এই ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য কোনো বই তারা খুঁজে পাচ্ছেন না- যা বিষয়গুলো সহজ-সরল ভাষায় ব্যাখ্যা করে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বইটি এমন শূন্যতা পূরণে ভূমিকা রাখবে বলে আমি আশাবাদী। আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্ম এমন কাজে আরও বেশি বেশি অংশগ্রহণ করুক, সুদের গ্রাস থেকে সমাজকে মুক্ত করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাক—এই আশা ও দুআ রইল।
লেখকের কথা....
সুদ কী— তা বোঝার আগেই আমরা সুদ কষার অঙ্ক করি এবং পাঠ্যপুস্তকে গল্প পড়ি, কীভাবে একজন ব্যক্তি ঋণ নিয়ে সফল উদ্যোক্তা হতে পারবে। কিন্তু সুদের কুফল কী, বৈষম্যের সাথে সুদের যোগসূত্র কী এবং অর্থায়নের বিকল্প মাধ্যমগুলো কী কী—সে সম্পর্কে আমরা কোনো ধারণা পাই না।
স্কুল-কলেজ অতিক্রম করার পরে যখন আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠি, তখনও সুদের ব্যাপারে সমালোচনামূলক বা বিশ্লেষণধর্মী কোনো আলোচনা পড়া হয় না। এমনকী অর্থনীতির ছাত্র হয়েও যখন সুদের ক্ষতিকর প্রভাব এবং সুদমুক্ত সমাজব্যবস্থা গড়ার ব্যাপারে কোনো পুস্তক নজরে আসে না, তখন ছাত্র-ছাত্রীদের মনে যে প্রশ্নটি ঘুরপাক খেতে থাকে, তা হচ্ছে—সুদ কি আসলেই খুব খারাপ? ব্যাংক ছাড়া কি বাঁচা সম্ভব? বর্তমান বিশ্বে সুদ হারাম হওয়ার প্রাসঙ্গিকতা কোথায়? আবার অনেকে মনে করে, কুরআনে বর্ণিত সুদ এবং বর্তমান যুগের ব্যাংকিংব্যবস্থা পৃথক দুটি সত্তা। তাই আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা হারাম নয়।
সত্যি বলতে, আমি নিজেও একসময় বিষয়গুলো নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতাম। তবে মনে মনে বিশ্বাস ছিল, ভালোভাবে চেষ্টা করলে সদুত্তর মিলবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও প্রশ্নগুলোর উত্তর জানার দৃঢ় চেষ্টা করলাম না। কেবল বিশ্বাসের জায়গা থেকে সুদকে এড়িয়ে চলতে থাকলাম। এভাবেই যেতে যেতে একদিন কিছু গবেষণাধর্মী প্রামাণ্যচিত্র আমার নজর কেড়ে নেয়। শুনলে হয়তো অবাক হবেন, যাদের প্রামাণ্যচিত্র আমার নজর কেড়েছিল, তারা কোনো মুসলিম ব্যক্তিত্ব ছিলেন না। তারা ছিলেন আমেরিকা ও কানাডায় জন্মানো অমুসলিম গবেষক ও পণ্ডিত। যেমন Paul Grignon; তারা খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলেন, বর্তমান অর্থ ও মুদ্রাব্যবস্থার শুভংকরের ফাঁকিগুলো কী কী। আমাদের অর্থনীতিতে সুদের ফলে কী কী সমস্যা হচ্ছে ইত্যাদি।
তাদের প্রচেষ্টা আমার অন্তরে দাগ কেটে দেয়। চিন্তা দখলাম, উত্তর আমেরিকাতে জন্মানো অমুসলিম ব্যক্তি হয়েও তারা সুদের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছেন; অথচ মুসলিম হয়েও আমি কেন কিছুই করছি না। তারপর ধীরে ধীরে সুদ, ব্যাংকিং এবং আধুনিক অর্থব্যবস্থা নিয়ে আরও অধ্যয়ন চিন্তা-ভাবনা করা শুরু করি। আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ আমার জন্য জানার রাস্তা সহজ করে দিয়েছেন। প্রচলিত সুদ ছাড়াও আরও কতভাবে যে আমাদের জীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে রিবা ছড়িয়ে আছে তা জেনে একসময় আমি অবাক হয়ে যাই।
এখন আমি উপলব্ধি করি যে, মূলত জ্ঞানের অভাবেই আমরা এমন নাজুক পরিস্থিতির শিকার। ইসলাম যে আধুনিক অর্থনীতিকে অস্বীকার করে, ব্যাপারটি এমন নয়। সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন না থেকে ন্যায়ভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ার লক্ষ্যেই কাজ চালাতে হবে। বর্তমানে যারা এই কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের প্রচেষ্টাকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে একটি কথা মনে করিয়ে দিতে চাই, যুদ্ধের ময়দানে একজন সৈনিককে সফলভাবে যুদ্ধ পরিচালনা করার জন্য যেমন পূর্বপ্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ নিতে হয়, ঠিক তেমনি সুদমুক্ত সমাজ গড়ার জন্য প্রয়োজন অর্থনীতি বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন। সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই এই বইটি রচনা করা হয়েছে। তার পাশাপাশি প্রাসঙ্গিক ইসলামি আলোচনা, আইন-কানুন, সংকট এবং তা মোকাবিলার কৌশলও আলোচনা করা হয়েছে। এককথায় কর্জে হাসানাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চাওয়া একজন ব্যক্তির জন্য প্রয়োজনীয় সকল রসদ সংক্ষেপে সাবলীল ভাষায় একত্র করার অক্লান্ত প্রয়াস এই বইটি। আমি মনে-প্রাণে আশা রাখি, বইটি আপনাদের জীবনে প্রয়োজনীয় জ্ঞান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
মোহাইমিন পাটোয়ারী
মাস্টার্স ইন বিজনেস স্টাডিস, মানহাইম ইউনিভার্সিটি, জার্মানি মাস্টার্স ইন ফাইনান্সিয়াল ইকোনমিক্স, নরওয়েজিয়ান স্কুল অব ইকোনমিক্স, নরওয়ে চার্টার্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালিস্ট উত্তীর্ণ, সিএফএ ইন্সটিটিউট, যুক্তরাষ্ট্র বিবিএ, আইবিএ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ।
গুণীজন কহেন
সুদ হারাম, কর্জে হাসানা সমাধান বইটি আমরা প্রকাশের পূর্বে পরম শ্রদ্ধেয় ও অভিভাবকতুল্য কিছু মানুষের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। বইটি নিয়ে তাঁদের উপদেশ ও উচ্ছ্বাস আমাদের আজীবন পথচলার অনুপ্রেরণা জোগাবে। বইটি নিয়ে তাঁদের কিছু সদয় অনুভূতি এখানে তুলে ধরা হলো
সাইয়্যেদ কামালুদ্দীন আব্দুল্লাহ জাফরী
প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ইসলামি ইউনিভার্সিটি
প্রতিষ্ঠাতা ও মহাপরিচালক, জামেয়া কাসেমিয়া কামিল মাদরাসা
‘মানবজীবনে অর্থনীতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই অর্থনীতিকে শোষক শ্রেণির কিছুসংখ্যক ব্যক্তি সাধারণ মানুষকে শোষণের শিকারে পরিণত করার লক্ষ্যে এর সাথে 'সুদ' নামক এক ঘৃণ্য নিয়ম সংযোজন করেছে। অথচ মহান আল্লাহ প্রদত্ত অর্থব্যবস্থায় সুদকে হারাম করা হয়েছে।
সুদ রক্তশোষক জোঁকের অনুরূপ — যার ফলে সাধারণ মানুষ ক্রমশ গরিব হতে থাকে এবং পুঁজিপতির অর্থ ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এ কারণে মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন এবং হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে, সুদভিত্তিক লেনদেনের মধ্যে ৭০ প্রকারের গুনাহ রয়েছে। এর মধ্যে সবথেকে নিম্ন স্তরের গুনাহ হলো—স্বীয় গর্ভধারিণী মাকে বিয়ে করা তথা নিজ মায়ের সাথে ব্যভিচার করা।
আধুনিক পৃথিবীতে ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে উন্নয়নের এমন সব লোভনীয় চিত্র অঙ্কন করা হয়—যা ঋণগ্রহীতাকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা হলো-ঋণগ্রহীতা ক্রমশ ধ্বংস গহ্বরের দিকে এগিয়ে যায় এবং ঋণদাতা কোনোরূপ শ্রম ব্যতীতই অর্থের পাহাড় গড়তে থাকে।
পৃথিবীর নেতৃত্বের আসন থেকে মুসলিমরা যখন ছিটকে পড়েছে, তখন ইহুদিদের আবিষ্কৃত জঘন্য এ সুদব্যবস্থা সমগ্র পৃথিবীকে
অক্টোপাসের মতোই জড়িয়ে ধরেছে। প্রত্যেক দেশে পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের মন-মস্তিষ্কে সুদ-পদ্ধতি প্রতিষ্ঠিত করা
হয়েছে। ফলে সুদের বিপরীত কল্যাণমুখী জাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা তাদের নিকট অজানাই রয়ে যাচ্ছে।
আলহামদুলিল্লাহ, আধুনিক ব্যাংকিং সেক্টরে ইসলামি শরিয়াহ পদ্ধতি ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছে এবং আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত বহুসংখ্যক যুবক জাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থার একটি দিক 'কর্জে হাসানা' পদ্ধতি অনুসরণের লক্ষ্যে গবেষণাকর্মে নিয়োজিত হয়েছে।
কর্জে হাসানা পদ্ধতি অবলম্বনে সুদমুক্ত অর্থব্যবস্থা দেশ-জাতি ও সমাজকে কল্যাণের পথে অগ্রসর করতে সক্ষম-বর্তমান গ্রন্থে তা বাস্তব দৃষ্টান্তসহ উপস্থাপন করা হয়েছে। মেধাবী যুবক আবদুল মোহাইমিন পাটোয়ারী দেশ-বিদেশ থেকে অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে অক্লান্ত শ্রমে অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে সুদ হারাম, কর্জে হাসানা সমাধান নামক মূল্যবান এক গ্রন্থ রচনা করেছে। আমি নিদারুণ ব্যস্ততার মধ্যেও তার রচিত গ্রন্থটি দেখার চেষ্টা করেছি। মহান আল্লাহ তাঁর জ্ঞান ও বিচক্ষণতা আরও বৃদ্ধি করে দিন।
মানুষকে সুদ কীভাবে শোষণ করে এবং এর ক্ষতিকর দিক, আর কর্জে হাসানা বলতে কী বোঝায় এবং কোন পন্থা অবলম্বন করলে তা মানুষকে শোষণমুক্ত রাখে এবং এর কল্যাণকর দিক স্নেহাস্পদ মোহাইমিন সবিস্তারে দৃষ্টান্তসহ আলোচ্য গ্রন্থে উপস্থাপন করেছে।
ব্যাংক, বিমা, ইনস্যুরেন্স কোম্পানি এবং ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ ঋণ প্রদান কর্মে যারা নিয়োজিত, তাদের এবং দেশের প্রত্যেক শিক্ষিত পুরুষ-নারীকে আলোচ্য গ্রন্থটি অধ্যয়নের পরামর্শ দিচ্ছি। দেশের সকল মসজিদ ও পাঠাগারে এ গ্রন্থটি রাখলে পাঠক-পাঠিকারাও অধ্যয়নের সুযোগ পাবে এবং সুদ যে মানবজাতির জন্য এক ভয়ংকর অভিশাপ এবং জাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা ও কর্জে হাসানা যে এ অভিশাপ থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায়—তাও জানতে পারবে। সুদমুক্ত অর্থব্যবস্থা বিনির্মাণে এ গ্রন্থটি যেন ব্যাপক অবদান রাখতে পারে, মহান আল্লাহর দরবারে আমি সেই দুআ করছি।
প্রফেসর মোখতার আহমাদ
চেয়ারম্যান তারবিয়াহ এডুকেশন নেটওয়ার্ক
“কর্জে হাসানা' হলো উত্তম ঋণ। এর মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে বিপদগ্রস্ত মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এটি কর্জে হাসানা প্রদানকারী ও গ্রহীতা উভয়ের জন্য একটি উইন-উইন সিচুয়েশন। যিনি দিচ্ছেন, তিনি ফিরে পাবেন; আবার যিনি নিচ্ছেন, তারও সমস্যা সমাধান হচ্ছে; অথচ সুদের কবলে পড়ে সর্বস্বান্ত হতে হচ্ছে না।
আল কুরআনের মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন—এমন কে আছে, যে আল্লাহকে কর্জে হাসানা (উত্তম ঋণ) দেবে? ফলে আল্লাহ তা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেবেন।' কর্জে হাসানাসংক্রান্ত আয়াতটি নাজিল হলে আবু দারদা (রা.) রাসূলুল্লাহ স্ন-কে বললেন- হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তায়ালা কি আমাদের কাছে ঋণ চান? তিনি বললেন-“হ্যাঁ।' সাহাবি বললেন- তাহলে আপনার হস্ত মোবারক বাড়িয়ে দিন, আপনার হাতে হাত রেখে আমি একটি অঙ্গীকার করব।' রাসূলুল্লাহ হাত বাড়িয়ে দিলে আবুদ দারদা (রা.) রাসূলুল্লাহ - এর হাত ধরে অঙ্গীকার করেন—ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আমার খেজুরের বাগানটি আল্লাহ তায়ালাকে কর্জ হিসেবে দিয়ে দিলাম। সে বাগানে ৬০০ খেজুর গাছ ছিল এবং বাগানে তাঁর স্ত্রী-সন্তানও থাকতেন। অতঃপর তিনি নিজ বাগানে গিয়ে স্ত্রীকে বললেন- “চলো, এই বাগান থেকে বের হয়ে এসো। এটি আমি আমার রবকে কর্জ দিয়ে দিয়েছি।'
রাসূলুল্লাহ বলেন—'আমি যখন মিরাজে গিয়েছিলাম, জান্নাতের দরজায় লেখা দেখেছি, দানের সওয়াব ১০ গুণ, আর কর্জে হাসানার সওয়াব ১৮ গুণ।
সমাজের সম্পদশালীরা কর্জে হাসানার চর্চা করলে লাখো মানুষ দরিদ্রতার কশাঘাত ও সুদের অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে নিজ পায়ে দাঁড়ানোর সুযোগ পায়। দেশে ব্যক্তিপর্যায়ে কর্জে হাসানা চালু থাকলেও এর কোনো শক্তিশালী প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো এখনও গড়ে ওঠেনি। দারিদ্র্য বিমোচন, বেকার সমস্যা সমাধান, ক্ষুদ্র ব্যাবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন ও প্রসার, হর্টিকালচার, কৃষি উন্নয়ন, কারিগরি প্রশিক্ষণ, এমনকী অসচ্ছল পরিবারের ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাঋণ দিয়ে নিরক্ষতা দূরীকরণের মতো কাজে কর্জে হাসানাকে ব্যবহার করা যায়।
তরুন লেখক ও গবেষক আব্দুল মোহাইমিন পাটোয়ারী তার সুদ হারাম, কর্জে হাসানা সমাধান গ্রন্থে অসাধারণভাবে সুদের ভয়াবহতা, ব্যাংকিং-এর ইতিহাস, সুদ ও রিবাসংক্রান্ত ধুম্রজালের অপনোদন, আধুনিক অর্থব্যবস্থায় মুদ্রার প্রচলন, কর্জে হাসানার ইতিহাস ঐতিহ্য-মর্যাদা, কর্জে হাসানাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানের প্রয়োজনীয়তা উপায় ও প্রতিবন্ধকতা এবং এ কেন্দ্রিক বিভিন্ন আইনের প্রস্তাবনা ইত্যাদি বিষয়কে সুন্দর ও সাবলীলভাবে তুলে ধরেছেন। যদিও অর্থনৈতিক বিষয়ের আলোচনা কিছুটা রস-কষহীন হয়, কিন্তু পাটোয়ারী তার মুনশিয়ানার মাধ্যমে বিষয়টিকে সর্বপাঠকের জন্য সুখপাঠ্যরূপে উপস্থাপন করতে পেরেছেন।
বাংলা ভাষায় কর্জে হাসানার ওপর পাটোয়ারীর পূর্বে কেউ এত বিশদ লিখেছেন বলে আমার জানা নেই। ইসলামের বিলুপ্তপ্রায় অর্থনৈতিক মুক্তির হাতিয়ার এই মডেলকে পুনর্জীবিত করার ক্ষেত্রে এই বইখানা ব্যাপক অবদান রাখবে এবং অন্যদের কর্জে হাসানা নিয়ে নতুন করে ভাবতে এই বইটি উদ্বুদ্ধ করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। বইটিতে পাটোয়ারীর দেখানো পথে বিভিন্ন ইসলামি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ট্রাস্ট বিনা সুদে ছোটো ও মাঝারি আকারের ঋণ প্রদান করে অসহায় পরিবারগুলোকে আত্মনির্ভরশীল করার পথ-পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারে বলে আমি মনে করি।
একাডেমিক ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা অঙ্গনে বইটি ব্যাপক সাড়া ফেলবে বলে আমি বিশ্বাস করি এবং বইয়ের সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করছি।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....