সুখী পরিবার ও পারিবারিক জীবন by মুয়াল্লীমা মোরশেদা বেগম (পিডিএফ)
কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে বিয়ের আগে ও পরে
-- মুহাম্মদ ইবনে ইবরাহীম আত্তুওয়াইজি | Shukhi Poribar O Paribarik Jibon by Muallima Morsheda Begum books
------------------------------------------------
বইঃ কুরান ও সহীহ হাদীসের আলোকে বিয়ের আগে ও পরে
(সুখী পরিবার ও পারিবারিক জীবন)
মুল লেখকঃ মুহাম্মদ ইবনে ইবরাহীম আত্তুওয়াইজি
সংকলনেঃ মুয়াল্লীমা মোরশেদা বেগম
প্রকাশনায়: পিস পাবলিকেশন্স
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৩২৮
গায়ের মুল্যঃ ২২০ টাকা।
সংক্ষিপ্ত বর্ণনাঃ
মানব সমাজের ভিত্তি হচ্ছে পরিবার। যা শুরু হয় স্বামী-স্ত্রীকে কেন্দ্র করে। আদম-হাওয়া (আঃ)-এর মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রথম মানব পরিবার গড়ে ওঠে। সৃষ্টির সূচনাকাল থেকে আজও এ পরিবার প্রথা চালু আছে। সারা দিনের কর্মক্লান্তি, বিভিন্ন কারণে মানব মনে পাওয়া দুঃখ-বেদনায় যেখানে সবাই শান্তি খোঁজে সেটা হ’ল পরিবার। যদি পরিবারে শান্তি-শৃংখলা থাকে তাহ’লে মানব জীবন সুখময় হয়। পক্ষান্তরে পরিবারে কাঙ্ক্ষিত শান্তি না থাকলে জীবন হয়ে ওঠে বিতৃষ্ণ, বিষাদময়। এজন্য দরকার একটি আদর্শ পরিবার। যা হবে মানুষের আরাম-আয়েশ ও সুখ-শান্তির নিবাস।
বিস্তারিত রিভিউঃ
স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, পিতা-মাতা ও দাদা-দাদী নিয়ে গঠিত হয় পরিবার। পরিবারের সংজ্ঞায় Oxford ইংরেজী অভিধানে বলা হয়েছে, A group consisting of one or two parents their children. ‘পরিবার হ’ল পিতা বা মাতা অথবা পিতা-মাতা উভয় ও তাদের সন্তান-সন্ততির সমষ্টি’।
পৃথিবীর প্রথম মানব হযরত আদম (আঃ) ও প্রথম মানবী হযরত হাওয়া (আঃ)-কে কেন্দ্র করে মানব জাতির প্রথম পরিবার গড়ে উঠেছিল জান্নাতে। এই প্রথম পরিবারের সদস্য স্বামী ও স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে মহান আল্লাহ বলেছিলেন,
‘হে আদম! তুমি এবং তোমার স্ত্রী জান্নাতে অবস্থান কর এবং সেখান থেকে যা চাও খুশীমনে খাও। কিন্তু তোমরা দু’জন এই গাছটির নিকটে যেয়ো না। তাহ’লে তোমরা সীমালংঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে’ (বাক্বারাহ ২/৩৫)।
এই প্রথম পরিবার থেকে মানব জাতি বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ে। এসম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
‘হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর। যিনি তোমাদেরকে একজন মানুষ থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকে তার জোড়া সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর ঐ দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচ্ঞা করে থাক এবং আত্মীয়তার বন্ধন সম্পর্কে সতর্ক হও। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপর সদা সতর্ক তত্ত্বাবধায়ক’ (নিসা ৪/১)।
পরিবার মানব সমাজের মূল ভিত্তি। পারিবারিক জীবন ব্যতিরেকে মানব সভ্যতা কল্পনা করা যায় না। মানুষের অস্তিত্বের জন্য পারিবারিক জীবন অপরিহার্য। সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা, উন্নতি-অগ্রগতি ইত্যাদি সুষ্ঠু পারিবারিক ব্যবস্থার উপরে অনেকাংশে নির্ভরশীল। পারিবারিক জীবন অশান্ত ও নড়বড়ে হ’লে, তাতে ভাঙ্গন ও বিপর্যয় দেখা দিলে সমাজ জীবনে নানা অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হ’তে বাধ্য। তাই বলা যায়, পরিবারই হচ্ছে কল্যাণকর সমাজের ভিত্তি। সুতরাং আদর্শ সমাজ গঠনের অপরিহার্য শর্ত আদর্শ পরিবার গঠন।
পরিবার গঠন করার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে বিয়ে।বিয়ের হুকুম কি?বিয়ের ফযিলাত, বিয়ের শর্ত, বিয়ের ক্ষেত্রে স্ত্রী নির্বাচন, বিয়ের খুতবা পাঠ ইত্যাদি বিষয়গুলো দিয়ে গ্রন্থকার তার লেখা শুরু করেছেন।
অতপর বিবাহিত জীবনের সেই সেই রাত্রি যে রাত্রির আশা অনেকেই বুকে লালন করে।বাসর রাতেই তারা স্বপ্ন দেখে একটি আদর্শ পরিবারের। যেখানে থাকবেনা কোন কলহ দন্দ, ঝগড়া ফাসাদ। থাকবে ভালবাসা, মিষ্টি কথা মান অভিমান।বাসর রাতে দেখা সেই স্বপ্ন অধিকাংশ সময় পরিনত হয়ে দুঃস্বপ্নে।যদি এই রাতে করণীয় সম্পর্কে ইসলামী দিক নির্দেশনা না জানা থাকে। এই রাতে করণীয় স্ত্রীর মাথায় হাত রেখে দোয়া করা থেকে শুরু করে, স্ত্রী সহবাস,অযু-গোসল,আযলসহ ইত্যাদি বিষয়গুলো সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
অলিমা বিয়ের একটি গুরুপ্তপুর্ণ বিষয়।অলিমার আয়োজন করতে এবং এর দাওয়াতে অংশ গ্রহন করতে হাদীসে উৎসাহিত করা হয়েছে।এই অলিমার আয়োজন কেমন করা উচিত।সে সম্পর্কে ইসলামী দিক নির্দেশনা এবং স্বামী-স্ত্রীর অধিকার সম্পর্কে তত্ববহুল আলোচনা করা হয়েছে।
ইসলাম আল্লাহর মনোনিত একমাত্র কল্যাণময় জীবন বিধান। জীবনের অন্য সকল দিকের ন্যায় পরিবার ও পারিবারিক জীবন সম্পর্কেও ইসলামের রয়েছে নিজেস্ব দৃষ্টিভঙ্গি। একটি পুরুষ ও নারী কিভাবে দাম্পত্য জীবন শুরু করবে, তাদের একের প্রতি অন্যের দায়িত্ব ও কর্তব্য কি হবে, তাদের পরস্পরের মধ্যে বিরোধ ও বিসম্বাদ দেখা দিলে কিভাবে তার নিষ্পত্তি করবে ইত্যাকার সকল বিষয়েই ইসলাম দিয়েছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা।
ইসলামে তালাককে অপসন্দ করা হয়েছে। যদিও বেদ্বীনী, অবাধ্যতা, যেনাকারিতা প্রভৃতি চূড়ান্ত অবস্থায় এটাকে জায়েয রাখা হয়েছে এবং তালাকের মাধ্যমে বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করার এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে।
ইসলামে তালাকের অধিকার সীমিত করা হয়েছে তিনবারের মধ্যে। প্রথম দু’বার ‘রাজ‘ঈ’ ও শেষেরটি ‘বায়েন’। অর্থাৎ ইসলামে তালাকের বিধান রাখা হ’লেও স্বামীকে ভাববার ও সমঝোতার সুযোগ দেওয়া হয় স্ত্রীর তিন ঋতু বা তিন মাসকাল যাবত। এর মধ্যে স্বামী তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে পারেন। যাকে ‘রাজ‘আত’ বলা হয়। কিন্তু গভীর ভাবনা-চিন্তার পর ঠান্ডা মাথায় তৃতীয়বার তালাক দিলে তখন আর ফিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকে না।
তালাকের শরয়ী বিধান,পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
তিনটি কাজের সমষ্টির নাম ইবাদতঃ প্রথমঃ যার ইবাদাত করা হয় তাকে রব বা ইলাহ বলে স্বীকার করা । দ্বিতীরঃ সকল অবস্থায় মনিবের আদেশ ও নিশেধ মেনে চলা । তৃতীয়ঃ মনিবের প্রতি সন্মান ও আদব প্রকাশের যে পন্থা মনিব নির্দিষ্ট করে দেবেন তাই অনুসরন করা ।
এ তিনটি প্রক্রিয়ার সমন্বয়ে যে কার্যটি সম্পন্ন হয় আরবী পরিভাষায় তাকেই বলে ইবাদাত । প্রথমত, মনিবের দাসত্ব স্বীকার, দ্বিতীয়ত, মনিবের আনুগত্য এবং তৃতীয়ত, মনিবের সন্মান ও সম্ভ্রন রক্ষা করা ।
ইবাদাতের পুর্ব শর্ত হচ্ছে পবিত্রতা।পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম হচ্ছে,অযু,গোসল,তায়াম্মুম।যেগুলো সম্পর্কে জ্ঞান রাখা আবশ্যক।গ্রন্থাকার সে বিষয়গুলো দলীলভিত্তিক আলোচনা করেছেন।
সুখী পরিবার গঠন করতে হলে অবশ্যই সেই পরিবারকে ইসলামিক অনুশাষণ মেনে চলতে হবে।পরিবারের সদস্যরা যখন আল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্ব সম্পর্কে সজাগ ও সচেতন থাকবে; স্ত্রী তার অধিকার পূর্ণভাবে লাভ করবে; স্বামী যখন স্ত্রীর নিকট তার অধিকার পাবে, সন্তান পিতা-মাতার ঘনিষ্ঠ সাহচর্য লাভ করবে ও তাদের অধিকার পাবে; আত্মীয়-স্বজন যখন পরস্পরের যথাযথ সম্মান-মর্যাদা পাবে, তখন কোন স্ত্রী অধিকারের দাবীতে প্রকাশ্য রাজপথে বের হবে না, কোন স্বামী ভালোবাসা ও সুনদর জীবন-যাপনের প্রত্যাশায় অন্য নারীর প্রতি আসক্ত হবে না, কোন সন্তানই পিতা-মাতার অবাধ্য হয়ে উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন করবে না। বরং পরিবারে সবার মাঝে সুসম্পর্কের কারণে আল্লাহর রহমত, অনুগ্রহ-অনুকম্পা বর্ষিত হ’তে থাকবে।
যুগ-কালের বিবর্তনে ইসলামের বিধানকে অচল প্রমাণ করার জন্য ইসলামের বিরুদ্ধে নানাভাবে বিষোদগার করা হচ্ছে। বিশেষ করে উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে পুরুষকে নারীর দ্বিগুণ সম্পদ প্রদান করার বিষয়টি নিয়ে ইসলাম বিদ্বেষী মহল ও তাদের নব্য শিষ্য তথাকথিত সুশীল সমাজ (?), এনজিও ও নারীর সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার সোল এজেন্টরা বলছে, ইসলাম পুরুষকে নারীর দ্বিগুণ সম্পদ প্রদান করে তার প্রতি মস্তবড় যুলুম করেছে। যে ইসলাম অধিকারবঞ্চিত নির্যাতিত-নিপীড়িত নারী জাতির ত্রাতারূপে আবির্ভূত হয়ে তাকে লাঞ্ছনার অতল গহবর থেকে টেনে তুলে এনে মর্যাদার রাজপথে পৌঁছিয়ে দিয়েছে, উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত নারীকে জগতের ইতিহাসে প্রথমবারের মত উত্তরাধিকার প্রদান করেছে, তার বিরুদ্ধেই নারীর অধিকার হরণের নির্লজ্জ অপবাদ।ইসলামে নারীদেরকে যে সব উত্তরাধিকার দিয়েছে গ্রন্থাকার তার লিখনিতে সুন্দর ভাবে তা উপস্থাপন করেছেন।
ইসলাম নারীর আসল কর্মক্ষেত্র নির্দিষ্ট করেছে তার গৃহে-স্বামীর সংসারে। নারী তার নিজ অবস্থান থেকেই হতে পারে শিক্ষিতা, গুণবতী, বিদুষী, সমাজ হিতৈষী, জনসেবী ও সংগঠক। ইসলামের সোনালী যুগ এর প্রকৃষ্ট সাক্ষ্য বহন করছে।
পুরুষ তার স্বাভাবিক যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতা দিয়ে ঘরের বাইরের অঙ্গনে যেমন কর্তৃত্ব করবে, নারীও তেমনি তার স্বাভাবিকতার দাবী অনুসারে পর্দার অন্তরালে থেকে মানব সভ্যতার অর্ধেক কাজের আঞ্জাম দিবে।
নারী তার প্রকৃতির দাবী অনুযায়ী সঠিক দায়িত্ব প্রদানের মাধ্যমে ইসলাম যে কল্যাণময় সমাজ গঠন করেছে, বস্তুবাদী পাশ্চাত্য সভ্যতা তাকেই ধ্বংস করার জন্য “নারী স্বাধীনতা” নামক নিরুর বাঁশী বাজিয়েছে। এই নারী স্বাধীনতাবাদীরা নারীদেরকে স্বাভাবিক লজ্জা ও অবগুণ্ঠন থেকে মুক্ত করে কর্মের সকল অংগনে পুরুষের পাশাপাশি নিয়ে এসেছে। ফলে লিংগের দ্বারা নির্ধারিত মানবিক সকল সম্পর্ক আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হতে চলেছে। সংসার ও পরিবার ভেঙ্গে যাচ্ছে; পিতা-পুত্র ও মাতা-কন্যার সম্পর্ক টুটে যাচ্ছে।সব শেষে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১ বিস্তারিত আলোচনা ও পর্যালোচনা করেই গ্রন্থটি শেষ করা হয়েছে।
মন্তব্যঃ
--------------
এই গ্রন্থে সম্মানিত গ্রন্থকার পরিবার গঠনের অপরিহার্যতা, নর নারী সম্পর্কের ভিত্তি,বিবাহ, যৌন জিবনের সীমা ও স্বাধীনতা, নারীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভুমিকা যাবতীয় বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গিই শুধু বিশাদভাবে তুলে ধরেননি, পরিবার ও পারিবারিক জীবনের ভাঙ্গন ও বিপর্যয়ের কারনগুলো চিন্হিত করে তা দূর করার বৈজ্ঞানিক পন্থাও নির্দেশ করেছেন। এ দিক থেকে ইসলামী সাহিত্যে গ্রন্থটি নিঃসন্দেহে এক অমূল্য সংযোজন।
সুখী পরিবার গঠন করতে হলে অবশ্যই ইসলামিক পরিবারের বিকল্প নেই।ইসলামিক পরিবার সম্পর্কে জানতে বইটি সহায়ক ভুমিকা পালন করবে।বইটি পড়ার আহবান জানিয়ে রিভিউ শেষ করছি।
পরিশেষে মহান আল্লাহর দরবারে আরজ-
হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদের স্ত্রীদের ও সন্তানদের মাধ্যমে চক্ষুশীতলকারী বংশধারা দান কর এবং আমাদেরকে আল্লাহভীরুদের জন্য আদর্শ বানাও’ (ফুরক্বান ২৫/৭৪)।
💕রিভিউ লেখক : আনোয়ার হোসাইন
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....