সত্য নবি, শেষ নবি সা.
লেখক : ইমাম ইবনু তাইমিয়া রহ, ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল ওয়াহহাব
প্রকাশনী : দারুল ফালাহ
বিষয় : সীরাতে রাসূল (সা.)
অনুবাদক : মুজাহিদুল ইসলাম মাইমুন
সম্পাদক : আশিক আরমান নিলয়
পৃষ্ঠা : 160, কভার : হার্ড কভার (only wafilife)
ভাষা : বাংলা
সমুদ্র দুভাগ হয়েছিল, দুখণ্ড হয়েছিল চাঁদও। প্রাকৃতিক বিবেচনায় এগুলো যথেষ্ট আশ্চর্যজনক ঘটনা, সন্দেহ নেই।
কিন্তু ‘সন্দেহ-না-থাকা’ এ ঘটনাগুলো ঘটেছিল আসলে সন্দেহ দূর করার জন্যেই! কী সেই সন্দেহ? সন্দেহটা আর কিছুই না। স্রেফ নুবুওয়াতের দায়িত্ব নিয়ে সন্দেহ! আর তাই হয়তো প্রায় প্রত্যেক জাতির কাছেই নবিগণকে শুনতে হয়েছে অবাক করা এক কথা—“তোমরা তো আমাদের মতোই মানুষ!”
মানুষকে পথ প্রদর্শন করতে মানুষই তো পাঠানো হবে! এ সহজ-সাধারণ সত্যটা অনেকেরই মাথায় ঢোকেনি যুগ যুগ ধরে। তাই তো নবিদের নুবুওয়াত নিয়ে এতশত প্রশ্ন, তর্ক।
সর্বশেষ নবি ও রাসূল মুহাম্মাদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নিয়ে তো ষড়যন্ত্রের অন্ত নেই! হাল আমলের খ্রিষ্টান মিশনারিদের মতো সে যুগের খ্রিস্টানরাও তাঁর নুবুওয়াত নিয়ে জল ঘোলা করার চেষ্টা করেছে। তাঁর নুবুওয়াতকে মিথ্যা প্রমাণের জন্য রোগা-প্রশ্ন তারাও ছুড়েছে।
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়া (রহিমাহুল্লাহ) রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নুবুওয়াতি জিন্দেগির বিভিন্ন মুজিযা ও নুসুসের আলোকে তৎকালীন খ্রিষ্টানদের সেসব প্রশ্নের ব্যবচ্ছেদ করেছেন তাঁর ‘আল জাওয়াবুস সাহীহু লিমান বাদ্দালা দ্বীনাল মাসীহ’ বইতে। বক্ষ্যমাণ বইটি সেটিরই সংক্ষিপ্ত বঙ্গানুবাদ।
ধ্রুব সত্যের বিপরীতে পলকা প্রশ্ন ও তর্ককে এক নিমিষে ধূলিসাৎ করতে বইটি অনবদ্য ভূমিকা রাখবে, ইনশাআল্লাহ।
-----------------------------------
নুবুওয়াতের নিদর্শনের প্রকৃতি ও প্রকারভেদ
আল্লাহ তাআলার বাণী :
سنريهم ءايتنا في الافاق وفي أنفسهم حتى يتبين لهم أنه الحق أولم يكف بريك أنه على كل شيء شهيد - ألا إنهم في مرية من لقاء ربهم ألا إنه بكل شيء محيط و
‘আমি তাদেরকে আমার নিদর্শনাবলি প্রদর্শন করাব পৃথিবীর দিগন্তে এবং তাদের নিজেদের মধ্যে৷ ফলে তাদের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে যে, এ কুরআন সত্য৷ আপনার পালনকর্তা সর্ববিষয়ে অবহিত হওয়াটা কি যথেষ্ট নয়? শুনে রাখো, তারা তাদের পালনকর্তার সাথে সাক্ষাতের ব্যাপারে সন্দেহে পতিত রয়েছে৷ জেনে রাখো, তিনি সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছেন। গ
রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নুবুওয়াতের সত্যতার বহু নিদর্শন রয়েছে। অন্য সকল নবির তুলনায় তাঁর নিদর্শন সবচেয়ে বেশি। আর কুরআন হলো আল্লাহর কালাম। এতেই তাঁর নুবুওয়াতের দাবি এবং সে দাবির সত্যতার
[১] সূরা হা-মীম আস সাজদাহ ৪১:৫৩-৫৪।
প্রমাণ রয়েছে। এটা তাঁর এক অনন্য বৈশিষ্ট্যও বটে।
এ ব্যাপারে তিনি বলেন,
ما من نبي من الأنبياء إلا وقد أوتى من الآيات ما آمن على مثله البشر وإنما كان الذي أوتيته وحيا أوحاه الله إلى فأرجو أن أكون أكثرهم تابعا يوم القيامة
‘প্রত্যেক নবিকেই কিছু নিদর্শন দান করা হয়েছে, যা দেখে মানুষ তাঁর প্রতি ঈমান এনেছে। আমাকে যে নিদর্শন দেওয়া হয়েছে, তা হচ্ছে আমার প্রতি আল্লাহর নাযিলকৃত ওহি। আশা করি, কিয়ামাতের দিন তাঁদের অনুসারীদের অনুপাতে আমার অনুসারীদের সংখ্যা অনেক বেশি হবে। ২
নুবুওয়াতের দলিলগুলো আল্লাহ তাআলার রুবুবিয়াতের দলিলের মতো। এর মধ্যে কিছু বিষয় অত্যন্ত সুস্পষ্ট, যা সকলেই বুঝতে পারে। প্রসিদ্ধ অলৌকিক ঘটনাবলি এ ধরনের। যেমন- নবিদের আবেদনের প্রেক্ষিতে জীবজন্তু ও উদ্ভিদ সৃষ্টি হওয়া, মেঘমালা তৈরি হওয়া, বৃষ্টি নেমে আসা। আবার কিছু নিদর্শন বিশেষ ব্যক্তিবর্গের সাথে নির্দিষ্ট। সৃষ্টিজীবের সকলেই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব স্বীকার করার এবং তাঁর রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর ঈমান আনার প্রয়োজন রাখে। এটা সার্বজনীন এক প্রয়োজন। পার্থিব ও অপার্থিব সর্বক্ষেত্রেই এর প্রয়োজন রয়েছে। তাই কিছু নিদর্শনকে সর্ববোধগম্য করে দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বান্দাদের জন্য ব্যাপক করে দিয়েছেন এটি।
সর্বজনের বোধগম্য এমন কিছু নিদর্শনই সামনে আলোচিত হবে, যেগুলো থেকে মুহাম্মাদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নুবুওয়াতের সত্যতা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়।
নবিদের নিদর্শনাবলী বিভিন্ন ধরনের। কিছু নিদর্শন তাঁরা নবি হওয়ার পূর্বেই সংঘটিত হয়েছে। কিছু তাঁদের নুবুওয়াত লাভের সময় সংঘটিত হয়েছে। আবার কিছু সংঘটিত হয়ে থাকে তাঁদের মৃত্যুর পর। নবি হওয়ার পূর্বেই সংঘটিত নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে : পূর্ববর্তী নবিগণের মাধ্যমে তাঁদের ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করে যাওয়া। আর তাঁদের নুবুওয়াত লাভের সময় সংঘটিত নিদর্শনাবলির বিষয়টি তো সম্পূর্ণ সুস্পষ্টই। জীবদ্দশায় সংঘটিত নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে—আল্লাহ তাআলা কর্তৃক তাঁদের সাহায্য করা, শত্রুদের হাত থেকে তাঁদের মুক্ত করা, তাঁদের শত্রুদের ধ্বংস করে দেওয়া। আর তাঁদের মৃত্যুর পর সংঘটিত নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে—তাঁদের অনুসারীদের সাহায্য করা, তাঁদের শত্রুদের ধ্বংস করে দেওয়া।
মুহাম্মাদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর জন্মলাভ, জীবদ্দশা, মৃত্যুর পর বরং মৃত্যুর পর থেকে নিয়ে কিয়ামাত পর্যন্ত প্রতিটি সময়েই আল্লাহ তাআলা তাঁর সত্যতার স্বপক্ষে সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলি রেখে দিয়েছেন।
[২] বুখারি, আস-সহীহ, ৪৯৮১, ৭২৭৪; মুসলিম, আস-সহীহ, ১৫২।
পূর্ববর্তী ঐশী গ্রন্থে নবি
ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) দুআ করে বলেছেন :
ربنا وابعث فيهم رسولا منهم يتلوا عليهم عايتك ويعلمهم الكتب والحكمة ويزكيهم إنك أنت العزيز الحكيم و
“হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের মধ্যে থেকেই তাদের নিকট একজন রাসূল প্রেরণ করুন, যিনি তাদের নিকট আপনার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করবেন, তাদেরকে কিতাব ও হিকমাহ শিক্ষা দেবেন এবং তাদের পবিত্র করবেন৷ নিশ্চয়ই আপনিই পরাক্রমশালী, হিকমাতওয়ালা৷৷০]
রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে পূর্ববর্তী আসমানি কিতাবগুলোতে সুস্পষ্ট কিছু ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে।
কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার স্থানের উল্লেখ
তাওরাতে এসেছে
جاء الله من طور سيناء و أشرق من ساعير و استعلن من جبال فاران
[৩] সূরা বাকারা, ২: ১২৯।
‘আল্লাহ তাআলা সিনাই পর্বত থেকে এসেছেন, আর সাঈর উপত্যকাকে আলোকিত করে তুলেছেন এবং ফারান পর্বতে ঘোষণা প্রদান করেছেন।[8]
এখানে প্রথমোক্ত বাক্যে তাওরাত অবতীর্ণ হওয়ার কথা বলা হয়েছে। দ্বিতীয় বাক্যে বলা হয়েছে ইনজিল অবতীর্ণ হওয়ার কথা। আর তৃতীয় বাক্যে রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে।
ভবিষ্যদ্বাণীতে উল্লিখিত ‘ফারান’ দ্বারা মক্কা উদ্দেশ্য। এ ব্যাপারে মুসলিম, ইয়াহুদি ও খ্রিষ্টান—সকলেই একমত। এ নিয়ে তাদের কারোই কোনো মতভিন্নতা নেই।
সংঘটিত হওয়ার সময় অনুযায়ী এ ভবিষ্যদ্বাণীতে পরপর তিনটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। আর এ তিনটির প্রত্যেকটিই আল্লাহর নূর এবং তাঁর হিদায়াত। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, ভবিষ্যদ্বাণীর প্রথম বিষয়টির ক্ষেত্রে ‘জাআ' (এসেছেন) শব্দ প্রয়োগ করা হয়েছে। দ্বিতীয় বিষয়টির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়েছে ‘আশরাকা’ (উজ্জ্বল করে দিয়েছেন) শব্দ। আর তৃতীয় বিষয়টির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়েছে ‘ইস্তা’লানা' (ঘোষণা প্রদান করেছেন)। এর মাধ্যমে যেন বোঝানো হয়েছে যে, তাওরাত সুবহে সাদিকের সময় ফোটা প্রভাতের মতো। ইনজিল প্রভাতের পর সূর্য উদ্ভাসিত হওয়ার মতো। আর কুরআন যেন সূর্য আলোকোজ্জ্বল রূপ-লাভ করার মতো।
এ কারণেই দেখা যায়, পূর্বের দুই কিতাব অর্থাৎ তাওরাত ও ইনজিলের মাধ্যমে গোটা বিশ্ব যতটুকু আলোকিত হয়েছে, তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি আলোকিত হয়েছে কুরআন কারীমের মাধ্যমে। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা কুরআনকে বলেছেন,
سراجا منيرا و
‘উজ্জ্বল প্রদীপ৷
[৪] ওল্ড টেস্টামেন্ট, দ্বিতীয় যাত্রা, শ্লোক: ৩৩া [৫] সূরা আহযাব, ৩৩: ৪৬।
সূর্যের ব্যাপারেও ঠিক একই শব্দ প্রয়োগ করা হয়েছে,
سراجا وهاجا
‘উজ্জ্বল প্রদীপাগ৷
উল্লিখিত উভয় সূর্যের প্রতিই মানুষ মুখাপেক্ষী। তবে প্রথমটির প্রতি তাদের মুখাপেক্ষিতা অধিক। কারণ, তাদের সেটার প্রয়োজন সবসময়। ভবিষ্যদ্বাণীতে উল্লিখিত তিনটি বিষয়ের সবগুলোর ব্যাপারেই আল্লাহ তাআলা সূরা তীনে শপথ করেছেন। তিনি বলেন :
والتين والزيتون * وطور سينين © وهذا البلد الأمين -
‘শপথ তীন (ডুমুর) ও যাইতুনের এবং সিনাই প্রান্তরস্থ তূর পর্বতের৷ এবং এই নিরাপদ নগরীর৷
আয়াতে প্রথমে পূণ্যভূমি বাইতুল মাকদিসের কথা বলা হয়েছে, যেখানে তীন ও যাইতুন উৎপন্ন হয়। আর সে ভূমিতেই জন্মগ্রহণ করেছেন ঈসা ইবনু মারইয়াম (আলাইহিস সালাম)।
দ্বিতীয় আয়াতে সিনাই পর্বতের কথা বলা হয়েছে মূসা (আলাইহিস সালাম) যে পাহাড়ে আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেছেন তা। তৃতীয় আয়াতে বলা হয়েছে নিরাপদ শহর তথা মক্কার কথা। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, তাওরাতের উদ্ধৃতিটা ভবিষ্যদ্বাণী। তাই বিষয় তিনটি সংঘটিত হওয়ার সময় অনুযায়ী ধারাবাহিকভাবে উল্লিখিত হয়েছে। পক্ষান্তরে কুরআন কারীমের উদ্ধৃতিটি কোনো ভবিষ্যদ্বাণী নয়। এতে কেবল এগুলো সম্পর্কে শপথ করা হয়েছে। তাই সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়নি এতে। উল্লেখ্য, বিষয়গুলো মর্যাদাপূর্ণ হওয়াটা বোঝাতেই এ শপথ করা হয়েছে।
[৬] সূরা নাবা ৭৮; ১৩/
[৭] সূরা তীন, ৯৫ : ১-৩
তাসবীহ ও তরবারি
যাবৃরে এসেছে :
يكبرون الله باصوات مرتفعة
‘তারা উচ্চস্বরে আল্লাহর মহত্ব বর্ণনা করবে।'
এর পূর্বে বলা হয়েছে :
يسبحونه على مضاجعهم بايديهم سيوف ذات شفرتين
‘তারা বিছানায় আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করবে। তাদের হাতে থাকবে
দু'ধারী তলোয়ার। ৮)
এ ভবিষ্যদ্বাণী কেবল মুহাম্মাদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর উম্মাতের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হতে পারে। কেননা আযানের সময় তারাই উচ্চস্বরে আল্লাহর মহত্ত্বের ঘোষণা (আল্লাহু আকবার) দিয়ে থাকে। উঁচু ভূমিতে আরোহণের সময়ও আল্লাহর তাকবীর (মহত্ত্ব বর্ণনা) পাঠ করে তারা।
এমনিভাবে তারাই ঈদের সালাতে, মিনায় অবস্থানের দিনগুলোতে, সালাত শেষে, পশু কুরবানি করার সময়, সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে সাঈ প্রভৃতির সময় উচ্চস্বরে তাকবীর বলে।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
يريد الله بكم اليسر ولا يريد بكم العسر ولتكملوا العدة ولتكبروا الله
[৮] মায়মুর ১৩৯, ১-১।
[৯] জাবির ইবনু আবদিল্লাহ (রদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, “আমরা উঁচু ভূমিতে আরোহণের সময় তাকবীর (মহত্ত্ব বর্ণনা) বলতাম। আর নিচু ভূমিতে অবতরণের সময় পাঠ করতাম তাসবীহ (পবিত্রতা বর্ণনা)। এ পন্থাটি সালাতে বহাল রাখা হয়।' (বুখারি, আস-সহীহ, ২৯৯৩, ২৯৯৪)
রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এই আমল করার বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে সুনানু আবী দাউদে, হাদীস : ২৫৯৯, তাতে এসেছে : ‘নবি (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর সেনাবাহিনী কোনো উঁচু স্থানে উঠার সময় “আল্লাহু আকবার" এবং নিচে নামার সময় “সুবহানাল্লাহ" বলতেন। এ পন্থাটি সালাতেও বহাল রাখা হয়।
على ما هديكم ولعلكم تشكرون «
‘আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, জটিলতা চান না। যাতে তোমরা গণনা পূরণ করো এবং তোমাদেরকে হিদায়াত দান করায় আল্লাহ তাআলার মহত্ত্ব বর্ণনা করো এবং যাতে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করো। ১০।
তিনি আরও বলেন,
لن ينال الله لحومها ولا دماؤها ولكن يناله التقوى منكم كذلك سخرها لكم لتكبروا الله على ما هدلكم وبشر المحسنين *
‘এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না; বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া৷ এমনিভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের বশ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণা করো৷ এ কারণে যে, তিনি তোমাদের পথ প্রদর্শন করেছেন৷ সুতরাং সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন৷ ১৯৷
একমাত্র মুহাম্মাদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উম্মাতই আযানে উচ্চস্বরে আল্লাহর মহত্ত্বের ঘোষণা দিয়ে থাকে, অন্য কোনো জাতি নয়। মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর উম্মাতকে সালাতের জন্য একত্র করা হতো শিঙা ধ্বনির মাধ্যমে, আর খ্রিষ্টানদেরকে একত্র করা হয় ঘণ্টা বাজানোর মাধ্যমে। তাদের কারোর পদ্ধতিতেই উচ্চস্বরে আল্লাহর মহত্ত্ব বর্ণনার বিষয়টি নেই।
ভবিষ্যদ্বাণীতে উল্লিখিত অপর বিষয়টি ছিল তারা হবেন উভয় দিক ধারালো : তরবারির অধিকারী। এ বৈশিষ্ট্য সাহাবায়ে কেরামের ছিল। তাঁদেরই এমন তরবারি ছিল, যার মাধ্যমে তাঁরা এবং তাঁদের অনুসারীরা বিভিন্ন দেশ জয় করেছেন।
ভবিষ্যদ্বাণীতে আরও বলা হয়েছে: তারা নিজেদের বিছানায় তাসবীহ পাঠ করবে। অর্থাৎ, শুয়ে শুয়ে আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করবে তারা। ঘরে শোবার
[১০] সূরা বাকারা ২: ১৮৫। [১১] সূরা হাজ্জ, ২২:৩৭।
স্থানে সালাত আদায় করবে। ইয়াহুদি-খ্রিষ্টানরা এভাবে তাসবীহ পাঠ করে না। কেবল মুহাম্মাদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর উম্মাতই এভাবে তাসবীহ পাঠে করে থাকে। সালাত আদায় করে এভাবে। আর সালাত-ই তো সবচেয়ে বড় তাসবীহ। কুরআন কারীমে বলা হয়েছে
فسبحان الله حين تمسون وحين تصبحون * وله الحمد في السموات
والأرض وعشيا وحين تظهرون @
‘অতএব, আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করো সন্ধ্যায় ও সকালে, অপরাহ্নে ও মধ্যাহ্নে৷ আসমান ও জমিনে সকল প্রশংসা তাঁরই।
অপর এক আয়াতে বলা হয়েছে :
فأصبر على ما يقولون وسبح بحمد ربك قبل طلوع الشمس وقبل غروبها ومن عاناي اليل فسبح وأطراف النهار لعلك ترضى -
‘এরা যা বলে, সে বিষয়ে ধৈর্যধারণ করুন এবং আপনার পালনকর্তার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন সূর্যোদয়ের পূর্বে, সূর্যাস্তের পূর্বে এবং পবিত্রতা ঘোষণা করুন রাতের কিছু অংশে ও দিবসের প্রান্তভাগে৷ সম্ভবত, এতে আপনি সন্তুষ্ট হবেন৷৷৷৷
এখানে তলোয়ার দিয়ে যে লড়াইয়ের কথা বলা হয়েছে, তা উম্মাতে মুহাম্মাদিরই বৈশিষ্ট্য। খ্রিষ্টানদের অনেকেই তো বিধর্মীদের বিরুদ্ধে লড়াই করাকে দোষণীয় মনে করে। মুহাম্মাদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর উম্মাত কাফিরদের সঙ্গে লড়াই করে বিধায় উলটো সমালোচনা করে খ্রিষ্টানদের কেউ কেউ।
যাবূরে আরও এসেছে :
تقلد أيها الجبار بالسيف شرائعك مقرونة بالهيبة
[১২] সূরা রূম ৩০: ১৭-১৮/ [১৩] সূরা ত্ব-হা, ২০ : ১৩০।
‘হে পরাক্রমশালী, তরবারি ধারণ করুন। আপনার শারীয়াতের সাথে ভীতি রয়েছে। ১*)
এখানে তরবারি ধারণের কথা বলা হয়েছে। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, দাউদ (আলাইহিস সালাম)-এর পর একমাত্র মুহাম্মাদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ব্যতীত আর কোনো নবিই কাফিরদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করেননি। তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করেননি।
তারপর বলা হয়েছে : ‘আপনার শারীয়াতের সাথে ভীতি রয়েছে।' এটাও রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে প্রযোজ্য। তিনি এক হাদীসে বলেছেন, 'আমাকে ভীতির মাধ্যমে সাহায্য করা হয়েছে। [১]
ভবিষ্যদ্বাণীতে তাঁকে জব্বার তথা প্রতাপশালী বলে সম্বোধন করে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, আল্লাহর শত্রুদের বিরুদ্ধে তিনি হবেন প্রবল প্রতাপের অধিকারী। আর মুহাম্মাদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেমন ছিলেন রহমতের নবি, তেমনি যুদ্ধের নবিও। তাঁর উম্মাত কাফিরদের ওপর অত্যন্ত কঠোর আর নিজেদের মাঝে দয়ার্দ্র।
দাজ্জালের ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী
মুসলিম, ইয়াহুদি ও খ্রিষ্টান নির্বিশেষে সকলেই একমত যে, সকল নবিই মাসীহ দাজ্জালের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। আর সুসংবাদ দিয়েছেন দাউদ (আলাইহিস সালাম)-এর বংশে জন্মগ্রহণকারী (ঈসা) মাসীহের ব্যাপারে। তেমনিভাবে তারা সকলেই একমত যে, পথভ্রষ্টকারী মাসীহ তথা দাজ্জালের আগমন এখনো ঘটেনি। পক্ষান্তরে হিদায়াতের পথপ্রদর্শনকারী মাসীহের (ঈসা আলাইহিস সালাম) আগমন শীঘ্রই ঘটবে।
মুসলিম ও খ্রিষ্টানরা এ বিষয়েও একমত যে, হিদায়াত প্রদর্শনকারী মাসীহ হলেন ঈসা (আলাইহিস সালাম)। কিন্তু ইয়াহুদিরা তা অস্বীকার করে। ঈসা (আলাইহিস সালাম) দাউদ (আলাইহিস সালাম)-এর বংশে জন্মগ্রহণের বিষয়টি তারা মেনে
[১৪] মাষমুর: ৫৪: ২-৫। [১৫] বুখারি, আস-সহীহ, ৩৩৫, ৪৩৮; মুসলিম, আস-সহীহ, ৫২১।
নেওয়া সত্ত্বেও তাঁর মাসীহ হওয়াটাকে স্বীকার করে না তারা। তাদের যুক্তি এরকম: ভবিষ্যদ্বাণীতে বলা হয়েছে যে, তাঁর ওপর সকল জাতিই ঈমান নিয়ে আসবে। কিন্তু ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর ওপর তো সকল জাতি ঈমান আনেনি।
খ্রিষ্টানরা অবশ্য স্বীকার করে যে, তিনি ইতোমধ্যেই নবি হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন। তবে সামনে আরেকবার আগমন করবেন। আগমনের সময় হিসেবে তারা বলে থাকে কিয়ামাত-দিবসের কথা। তারা মনে করে, মানুষকে তাদের কৃতকর্মের প্রতিদান দেওয়ার জন্য তিনি আসবেন।
পক্ষান্তরে মুসলিমরা ঈসা মাসীহের ওপর ঈমান রাখে নবিগণের প্রদত্ত ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী। আর সর্বশেষ নবি মুহাম্মাদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীসেই তা বলা হয়েছে। তিনি বলেন,
يوشك أن ينزل فيكم ابن مريم
‘শীঘ্রই তোমাদের মাঝে মারইয়াম-পুত্র অবতরণ করবেন।।। এটা মূলত নিম্নের আয়াতেরই ব্যাখ্যা :
وإن من أهل الكتب إلا ليؤمن به قبل موته، ويوم القيمة يكون
عليهم شهيدا و
‘আর আহলে কিতাবদের মধ্যে যত শ্রেণি রয়েছে, তারা সবাই মৃত্যুর পূর্বে তাঁর (ঈসা'র) প্রতি ঈমান আনবে৷ আর কিয়ামাতের দিন তিনি হবেন তাদের ওপর সাক্ষী। ১৭১
ইয়াহুদি-খ্রিষ্টানদের ঐশী গ্রন্থাদিতে এমন বিবরণই পেশ করা হয়েছে। কিন্তু খ্রিষ্টানরা ধারণা করে বসে আছে যে, এটা হবে কিয়ামাতের দিন। এটা তাদের ভুল ধারণা। তিনি সর্বপ্রথম যখন আগমন করেছিলেন, তারা তখনো ভুলের শিকার হয়েছিল। তারা ধারণা করেছিল যে, তিনি হলেন আল্লাহ। নাউযুবিল্লাহ! পক্ষান্তরে
[১৬] আহমাদ, আল মুসনাদ, ৭২৬৯; বুখারি, আস-সহীহ, ২৪৭৬, ৩৪৪৮; মুসলিম, আস-সহীহ, [১৭] সূরা নিসা, ৪: ১৫৯।
🚫 আরো পড়তে অথবা দেখতে : অবশ্যই আপনাকে বইটির অরিজিনাল কপি ক্রয় করতে হবে।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....