"১৪০৮" - স্টিফেন কিং অনুবাদকঃ সালমান সাদ - বই রিভিউ | 1408 By Stephen King Bangla Anubad

"১৪০৮" - স্টিফেন কিং 
• অনুবাদকঃ সালমান সাদ
• জনরাঃ হরর উপন্যাসিকা
• প্রকাশনীঃ ঈহা প্রকাশ
• প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারি ২০২২
• পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১১১
• মূল্যঃ ১৯০/-
• Review Credit 💕 Sakib Shahriar Priyo

"১৪০৮" - স্টিফেন কিং অনুবাদকঃ সালমান সাদ - বই রিভিউ | 1408 By Stephen King Bangla Anubad

সারসংক্ষেপঃ 

তিনটি বেস্টসেলার বইয়ের লেখক মাইক এনলিন এলেন হোটেল ডলফিনে। উদ্দেশ্য এই হোটেলের রহস্যময় ১৪০৮ নম্বর কক্ষে থাকা। অতিপ্রাকৃত বিষয়ে কোনো বিশ্বাস নেই লেখকের। এই কক্ষকে নিয়ে রহস্যের যেন শেষ নেই। পূর্বে এখানে অবস্থানকারীরা কোনো না কোনোভাবে বিপদে পড়েছেন, মৃত্যুও ঘটেছে। বহুদিন ধরে তালাবদ্ধ এই কক্ষ কিছুতেই খুলে দিতে চায় না হোটেল ম্যানেজার ওলিন। কিন্তু বিখ্যাত লেখকের জোরাজোরিতে বাধ্য হয়ে কক্ষটির চাবি দিলেন। এরপর? কী হয় সেই রাতে? মাইক এনলিন কি পারবে এই কক্ষে সারারাত অবস্থান করতে? শতাব্দীপ্রাচীন মিথ আর পিশাচদের রহস্যের জট কি খুলতে পারে লেখক?

পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ

বইটি শুরু থেকেই উত্তেজনা ধরে রাখতে পেরেছে। পাঠকের কৌতুহল ধরে এগিয়েছে প্রতিটি পর্বই। লেখক মাইক এনলিন সেই কক্ষে একটি টেপ রেকর্ডার নিয়ে ঢুকেছিলেন। সেইসাথে এই হন্টেড রুমে বসে লেখালেখি পরিকল্পনাও ছিল তাঁর। এই বিষয়গুলোরও সুস্পষ্টতা এসেছে লেখায়। কিছু সময় বিরতি রেখে রেখে সেই রুমে মাইকের কথা রেকর্ড করাটা আলাদা উত্তেজনা সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে এই টেপ রেকর্ডারটিই হয়ে উঠবে বইয়ের অন্যতম আকর্ষণ। 

লেখনশৈলীঃ

অনুবাদক খুব সাবলীল ভাষায় অনুবাদ করেছেন প্রতিটি পর্ব। কিছুক্ষেত্রে ভাষান্তর না করে দিয়েছেন রূপান্তর। তবে তাতে মূল কাহিনীর কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। ফলে সব মিলিয়ে পড়তে চমৎকার ছিল পুরো বইটিই। 

থ্রিলার পাঠকদের জন্য আরেকটি সুন্দর খোরাক হতে পারে "১৪০৮"।

স্টিফেন কিং-এর লেখা মানেই ভিন্ন কিছু। হরর কিং আমাদের সবসময় তার বর্ণনাভঙ্গি আর গল্প দিয়ে ভয় ও রোমাঞ্চের এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা দিয়ে থাকেন। যারা ইতোমধ্যেই তার লেখা পড়েছেন, তারা অবশ্যই জানেন, আমি ঠিক কোন জিনিসটার কথা বলছি।

একটি অনুভূতি। এমন এক অনুভূতি যা আপনাকে ভিতর থেকে কাঁপিয়ে তুলে। পাঠকদের এমন অনুভূতি দিতে কিং সাহেবের হাত সিদ্ধহস্ত।

কিন্তু '১৪০৮' পড়ে কিন্তু আমার এই চেনা পরিচিত অনুভূতি হয়নি। এটা কেমন যেন বর্ণনা করা যায় না। বইটি পড়ার পর আমার ভিতর একটা প্রশ্ন জাগছিল, এটা আমি কী পড়লাম? কারণ আমি নিজেও বুঝতে পারছিলাম না যে বইটাকে আসলে কিভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়।

আমি হয়তো একটি শব্দের সাথে আমার এই অনুভূতির মিল খুঁজে পাই। আর তা হলো ক্রিপিনেস। পুরো বইটা পড়ার সময় ভয়ের চেয়ে আমার মধ্যে কেমন যেন ক্রিপিনেস কাজ করছিল। মানে পুরো বইটায় অদ্ভুত রকমের এক অনুভূতির বিচরণ ঘটেছে।

আমি নিশ্চিত আপনারা এই অনুভূতি মিস করতে চাইবেন না। সেখানে যদি [সালমান সাদ]) ভাইয়ের মতো দক্ষ অনুবাদকের কলমের ছড়ি ঘোরানো থাকে, তবে তো কথাই নেই। এই অনুবাদ পড়ার পর আমার মনে হয়েছিল, যেন আমি কিং সাহেবের লেখা মূল বইটাই পড়ছি। এত দারুণ অনুবাদ!

যাই হোক, আর মাত্র তিন দিন বাকি প্রি-অর্ডারের। যদি এর মধ্যে আপনারা অর্ডার না করেন, তাহলে বলব, আপনি কিন্তু দারুণ কিছু মিস করছেন। আশা করি, বইটির স্বাদ গ্রহণের সুযোগটা আপনারা হারাবেন না। ধন্যবাদ।

লেখালিখি করতে এসে ভেবে দেখলাম অন্য সব জনরার সাহিত্য কর্মের মত রহস্য গল্প লিখে এমন সব লেখকের উচিৎ হােটেল। ডলফিনের ভুতুড়ে কক্ষটা নিয়ে অন্তত একটা গল্প ফাঁদা। আমিও সে লক্ষেই লিখছি। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলাে এ গল্পটা আমি কখনাে শেষ করবার জন্য শুরু করিনি। কারণ একজন লেখক কখন লেখা শেষ করবেন তা তিনি নিজেও জানেন না। জানে তার সৃষ্ট চরিত্রেরা। নিজের অন্য একটা গল্পের উৎসর্গপত্রে লিখবার জন্য প্রথম তিন চার পেজ লিখেছিলাম। যেনাে পাঠক বুঝতে পারে কোথা থেকে গল্পটার শুরু। অনেকটা ড্রাফট বলা যায়। আমি যা বিশ্বাস করি তাই মানুষকে জানাতে চেয়েছি বইটার গল্পের মধ্য দিয়ে। তার ভেতর প্রথমবারের মত ভালাে কিছু ঘটে গেলাে জীবনে। গল্পটা আমাকে মােহগ্রস্ত করে ফেললাে। আর আমিও লিখে শেষ করে ফেললাম সেটা।
আমি মনে করি ভয় মানুষের আদিমতম প্রবৃত্তি। যা আমাদেরকে ভীত করে তা আসলে মানুষ থেকে মানুষে ভিন্ন হয়। তবে এটা বলতে পারি এ গল্পটা লেখার সময় আমি সত্যিই ভয় পেয়েছিলাম। “ব্লাড এন্ড স্মােক” নামের একটা অডিওবুকে দেয়ার জন্য গল্পটা লিখেছিলাম। আর অডিও ভার্শনটা গল্পের চেয়েও ভীতিকর লেগেছে আমার কাছে। হন্টেড হােটেল রুমগুলাে প্রাকৃতিকভাবেই

একেকটা ভুতুড়ে জায়গা। ঠিক বললাম কিনা পাঠক?
মানে যে কক্ষটাতে আপনি থাকছেন সেখানে আগে কত সহস্র লােক শুয়ে গেছে, তাইনা? তার মধ্যে অনেকে আবার অসুস্থও ছিলাে। কতজন তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপন করা হারিয়ে ফেলেছিলাে। কতজন ঘরের কোনে গলায় ফাঁস দেয়ার আগে। বাইবেল থেকে শেষ কটা লাইন আবৃত্তি করে গেছে কে জানে!
এসব কিছুকে স্বাক্ষী করেই আমাদের চেক ইন করতে হয়। চলুন তাহলে.. হয়ত সময় লাগবে আপনাদের বুঝতে যে কিভাবে চারটা অক্ষর একটা আতংক তৈরী করতে পারে মানবমনে। যদি ভেবে থাকেন ভুল তবে শুরু হয়ে যাক যাত্রা প্রিয় পাঠক!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ