বই : আমার অচেনা আমি লেখক: সামসুল ইসলাম রুমি | Amar Ochena Ami By Shamsul Islam Rumi | বই রিভিউ

◑নাম: আমার অচেনা আমি 
◑লেখক: সামসুল ইসলাম রুমি
◑জনরা: সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার 
◑প্রচ্ছদ: সানজিদা স্বর্ণা
◑প্রকাশনী: বাতিঘর প্রকাশনী 
◑প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০২২
◑পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২৫৬
◑মুদ্রিত মূল্য: ২৯০/-
✍️ Review Credit 💕 Rafia Rahman | Thanks Api😍

বই : আমার অচেনা আমি লেখক: সামসুল ইসলাম রুমি | Amar Ochena Ami By Shamsul Islam Rumi | বই রিভিউ
কভার ছবি : আমার অচেনা আমি 


                       𝓘 𝓪𝓶 𝔀𝓱𝓸
                           𝓘 𝓪𝓶.
                      𝓝𝓸𝓽 𝔀𝓱𝓸 𝔂𝓸𝓾 
                      𝓽𝓱𝓲𝓷𝓴 𝓘 𝓪𝓶.
                       𝓘 𝓪𝓶 𝓶𝓮.

                                       - 𝐵𝓇𝒾𝑔𝒾𝓉𝓉𝑒 𝒩𝒾𝒸𝑜𝓁𝑒

আমি...
                       একজন "আমি" গড়ে উঠে কীভাবে? অভিজ্ঞতা, স্মৃতি, ব্যক্তিত্বের সমন্বয়ে। কিন্তু যদি কারো মানসপট থেকে "আমি"- কেই সযত্নে আলাদা করে ফেলা হয় তখন? স্মৃতিও তখন প্রতারণা করে বসে! আদোও কি সম্ভব শুধুমাত্র কারো স্মৃতি থেকে নিজেকে আর তার প্রিয়জনদের পরিচয় মুছে ফেলা বা মুছে যাওয়া? স্মৃতি না থাকলে কি আর ব্যক্তি আগের মতো থাকে না? স্মৃতি ছাড়া একজনের জীবনই বা কেমন...

                আখ্যান 

বিভৎস স্বপ্নে ঘুম ভেঙে যায়; মনে হয় বিকটদর্শন পোকা জাতীয় কিছু একটা মগজ খুবলে বের করে আনছে! সারা শরীরে যন্ত্রণা ছড়িয়ে পড়ে তবে যে বিষয় এসব কিছুকে ছড়িয়ে যাচ্ছে তা হলো একটি প্রশ্ন। " আমি" কে...

দেয়াল জুড়ে করা বিশাল গ্রাফিতি জানান দিচ্ছে নতুন সত্ত্বাটি যে দেহে জেগে উঠেছে তা "জয় জামান"- এর। কিন্তু কেন জানে না সে নিজেকে? কিছু কি হয়েছে তার সাথে কিন্তু কী? নিজেকে জানার সহজাত তাড়না তাকে গ্রাস করে বসে। কিন্তু কাউকে বুঝতে দিতে চায় না যে সে ভুলে গেছে সব, তার সব স্মৃতি! তবে ধীরে ধীরে মানিয়ে নিতে শুরু করে জয় কিন্তু বাবার বলা একটি বাক্য যেন গভীর কিছুর আভাস দেয়! যেন মনে হয় বহুসময় পর সে বাসায় এসেছে। তাহলে সে এতবছর কই ছিল? মা আর বোন এলিন কি তবে কিছু লুকোচ্ছে, সেটাই বা কী, কেন...

বাবার অবস্থা দিনকে দিন খারাপ হচ্ছে। এলিনের ভাষ্যমতে বাবার ট্রিটমেন্টের সকল কাজ জয় দেখাশোনা করে। কিন্তু জয়কে চেনেন না ডা. ক্লার্ক! অতীত নিয়ে ভাববে না যখন জয় ঠিকই করে ফেলেছে তখন হঠাৎই হাতে পড়ে তার আর এলিনের কিছু সার্টিফিকেট। সাদামাটা কাগজগুলোর অসংগতি সহজেই ধরা যায়, মিথ্যা পরিচয় দেওয়া হয়েছে তাকে! বাবার মৃত্যুরদিনও যখন কোনো আত্নীয় বা বন্ধু এলো না তখন বুঝে গেল জয় লুকিয়ে আছে তারা সকলের কাছ থেকে কিন্তু কেন? নিজের সব প্রশ্নের উত্তর জানতে ক্যালিফোর্নিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। জন্ম আর শৈশব যেখানে কেটেছে সেখানেই পাবে সব প্রশ্নের উত্তর এমনটাই ভেবেছিল জয়। কিন্তু বিধিবাম যুক্ত হলো আরও কিছু প্রশ্ন। বহুবছর আগেই মারা গেছে জয় জামানের পুরোপরিবার অগ্নিদূর্ঘটনায়! তাহলে তারা কারা? আর যদি তারা মৃত নাহয় তাহলে পৃথিবী কেন জানে না তাদের অস্তিত্ব? সাথে এটাও জানা যায় জন্ম থেকেই আজব রোগে আক্রান্ত ছিল সে! এখন কী করবে জয়? কীভাবে পাবে তার সকল প্রশ্নের সদুত্তর...

               পর্যালোচনা ও প্রতিক্রিয়া

সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার শুনলেই মনে হয় মাথা খাটিয়ে পাঠকও রহস্যের কিনারা করবে। সেক্ষেত্রে "আমার অচেনা আমি" এই কথার মান রেখেছে। সেইসাথে আছে বিভিন্ন মিউজিক্যাল, মেডিক্যাল ও সায়েন্টিফিক টার্মের আলোচনা। কলেবরে বড়ই বলা চলে তবে প্রথম ১০০ পেজে রহস্যের তেমন কোনো বিষয় নেই। জয় প্রথমে নিজেকে জানতে উদগ্রীব হলেও অতীত নিয়ে কোনো মাথাব্যাথা ছিল না। বর্তমানের সাথেই মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে গেছে। প্রথমের ১০০ পেজ এই নিয়েই লেখা। মেগানের তার অতীতের প্রতি আগ্রহ আর বাবার মৃত্যু তাকে অতীতের স্মৃতির কথা মনে করিয়ে দেয়। রহস্যের শুরু মূলত সেখান থেকেই। 

"হাইপারথাইমেসিয়া"- বইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যদিও আগে থেকেই রোগটি সম্পর্কে জানা ছিল তবে কাহিনীর সুবাদে বিস্তারিত জানার সুযোগ হয়েছে। এটি এমন একটি রোগ যা ব্যক্তিকে কোনোকিছুরই ভুলতে দিবে না, ছোটখাটো কোনো কিছুই না। স্ট্রং মেমোরিকে সাধারণত আমরা মেধা বলে থাকি কিন্তু মাত্রারিক্ত স্ট্রং মেমোরি একপ্রকার রোগ যা রোগীর মৃত্যুর কারণ হবে নির্দিষ্ট সময় পর। কারণ আমাদের ব্রেইন নির্দিষ্ট পরিমাণ স্মৃতি সংরক্ষণ করতে পারে লিমিট পার হয়ে গেলে মৃত্যু অবধারিত। জয় এই রোগেই আক্রান্ত ছিল। সে কীভাবে এতবছর বেঁচে আছে আর এর ট্রিটমেন্ট কী আর যদি সে কিছু নাই ভোলে তাহলে এতবছরের স্মৃতি কীভাবে ভুলে গেল এসব প্রশ্নই পাঠককে ভাবাবে। বিষয়গুলো লেখক সুন্দরভাবে মেডিক্যাল ও সায়েন্টিফিক টার্ম দিয়ে আলোচনা করেছেন। যতই পড়ি ততই মুগ্ধ হই। কী আশ্চর্যভাবে কাজ করে আমাদের ব্রেইন কিন্তু কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু যাদের হয় তাদের কতই না মারাত্মক হয়।

বইয়ের যে বিষয়ে সবচেয়ে বেশি বিরক্ত হয়েছি তা হলো যৌন মিলন নিয়ে লেখকের লেখনী। রগরগে আলোচনা করা হয়ে। অনেক সময় তো গা গুলিয়ে উঠেছে। যেন জোর করে বিষয়টিকে অতিরঞ্জিত করা হয়েছে। তাই প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত বইটি না পড়ার অনুরোধ করবো পাঠকদের। আর আমেরিকা ভিত্তিক এতবড় গুপ্ত সংস্থার প্রতিনিধি রাসেল জামান কীভাবে হন এনিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ কিছু সংস্থা আমার জানা মতে নিজের দেশের নাগরিক নাহলে যুক্ত হওয়া যায় না। জয়ের স্মৃতি হারানোর রহস্য দিয়েই সমাপ্তি হবে ভেবেছিলাম কিন্তু আলোহার জঙ্গলে সে রাতের ঘটনা নতুন টুইস্ট আনে। লেখক যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন কাহিনীর শেষ আকর্ষণীয় করতে তবে শেষ অংশ মনপুত হয়নি। আরও টুইস্ট থাকবে বলে আশা করেছিলাম। আর এত বড় মহাজনের আড্ডায় হানা দিয়ে মৃত্যুলীলা হয়ে গেল তার কোনো প্রতিক্রিয়া শেষে দেওয়া হয়নি বলে অবাকই হয়েছি। ঠান্ডা সমাপ্তি লেগেছে। 

               লেখনশৈলী ও বর্ণনা 

ছোট-বড় প্রতিটি কল্পপটের বর্ণনা লেখক বিস্তারিতভাবেই দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে প্রথম দিকে গল্প খামখায় টানা হয়েছে বলে মনে হয়েছে। লেখনী সহজ - সাবলীল। লেখায় বিদেশি লেখকদের আভাস রয়েছে। কিছু জায়গায় মনে হয়েছে অনুবাদ পড়ছি।

গল্পের শেষে জয়কে নিয়ে সকল প্রশ্নের জবাব দেওয়া থাকলেও কিছু প্রশ্ন থেকেই যায়। সমাপ্তিটা কেমন জানি অসম্পূর্ণ লেগেছে। সম্ভবত সিকুয়েল কোন বইয়ের জন্য এমনটা করা হয়েছে। 

               চরিত্রায়ন 

বইয়ে বেশ কিছু চরিত্রের উল্লেখ রয়েছে। মূল চরিত্র জয়, স্মৃতি যখন ভুলে গেছে তখন ঠিক করে অতীত নিয়ে আর ভাববে না কিন্তু জীবনে মেগানের আগমন ঘটলে সিদ্ধান্ত নেয় নিজেকে খুঁজে বের করবে। কাহিনীর খোলসা শুরু মূলত তখন থেকেই। মেগান, জয়ের প্রেমিকা সাথে এক রহস্যজনক চরিত্র। মাইক, জয়ের একমাত্র বন্ধু। রাসেল জামান, জয়ের বাবা বহুদিন ধরে ব্রেন ক্যান্সারে ভুগে মারা যান। তার মৃত্যু জয়কে রহস্যের কিনারা করতে সবচেয়ে বেশি উদ্ভুদ্ধ করে। এছাড়া আছে মা রুথ জামান, বোন এলিন, বোনের মেয়ে কেটি, ড্রাগ লর্ড আর তার ছেলে আরও কিছু ছোটখাটো চরিত্র রয়েছে। 

সবচেয়ে রহস্যময় চরিত্র রেইনবো। যদিও বইয়ে যথেষ্ট খোলসা করা হয়নি তার পরিচয় তবে সিকুয়েল কোন বই আসলে চরিত্রটির আগমন ঘটবে বলে আশা করা যায়। 

     আলোর ফেরিওয়ালা : লেখক মুহাম্মদ বরকত আলী | Alor Feriwala by Mohammad Borkot Ali

চক্ষে আমার তৃষ্ণা PDF | বই রিভিউ | Chokkhe Amar Trishna

জলরঙ লেখকঃ সুব্রত কুমার মোহন্ত | Jolrong by Subrata Kumar Mohanto

দ্বীপরাষ্ট্র মার্টিন লেখক- স্বপ্নীল শাকিল | Diprasto Martin - Shopnil Shakil

নিঃসঙ্গ ঈশ্বর : সমীরণ দাস (সম্পূর্ণ বই রিভিউ) Ni'Shongo Isshor Shomiron Das

বই রিভিউ বোহেমিয়ান লেখক : শাখাওয়াৎ নয়ন | Bohemian by Shakhawat Nayan [short pdf]

বইঃ জানি সে আসবে না লেখক: আরিফুর রহমান | Jani Se Ashbena by Arifur Rahman

বইঃ তিতিয়া লেখক: আলমাস হোসাইন | Titia by Almas Hossain Saja

          প্রোডাকশন 

বাতিঘরের বইয়ের অন্যতম সমস্যা হলো কোণা সহজেই ভেঙে যায়। তবে দাম অনুযায়ী সেরাটাই দিয়ে এসেছে এনিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এছাড়া বইয়ের বাঁধাই যথেষ্ট স্মুথ, আরামে পেজ উল্টিয়ে পড়া যায় আবার পেজ বের হয়ে আসারও চিন্তা নেই। ক্রিম কালারের পেজের মানও ভালো। তবে বইয়ের জ্যাকেট অনেক পাতলা। 

                বানান ও সম্পাদনা 

বাতিঘরের বইয়ের আরও একটি সমস্যা হলো বানান ভুল আর টাইপিং মিস্টেক। এই বইও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে পরিমাণ অন্য বইগুলোর তুলনায় কমই মনে হয়েছে। 
১৫৩ পৃষ্ঠা - জয়ের অসুখ নিয়ে তোমার মতো(এতো) আগ্রহ কেন?

বইয়ের কিছু শব্দে 'র'- এর জায়গায় 'ও' এর ব্যবহার আছে। কওে(করে), সেওে(সেরে), সুওে(সুরে)। তবে বেশ কয়েক জায়গায় 'চিৎকার'-কে 'শীৎকার' লেখা।

               প্রচ্ছদ ও নামলিপি 

বইয়ের প্রচ্ছদ দারুণ। জয়ের বাড়ির পিছের জঙ্গলের কথা মনে করিয়ে দেয় সেইসাথে সেখানে লুকিয়ে থাকা রহস্যের আভাস দেয়। কুকুর আর দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া গাড়ি গল্পের শেষের কাহিনীর আলোকপাত। নামলিপিও সুন্দর। 

অসংগতিগুলো বাদ দিলে "আমার অচেনা আমি" সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার হিসেবে সুখপাঠ্য। তবে বেশ কিছু জায়গায় উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে।

আমার অচেনা আমি পড়ুন PDF Short অথবা বইটি ক্রয় করুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ