বই রিভিউ বোহেমিয়ান লেখক : শাখাওয়াৎ নয়ন | Bohemian by Shakhawat Nayan [short pdf]

Titleবোহেমিয়ান
Authorশাখাওয়াৎ নয়ন
Publisherঘাসফুল
Qualityহার্ডকভার এবং সর্ট পিডিএফ
ISBN9789849485162
Edition1st Published, 2022
Number of Pages320
Countryবাংলাদেশ
Languageবাংলা

বোহেমিয়ান বই রিভিউ লেখক শাখাওয়াৎ নয়ন

৩২০ পৃষ্ঠা বিশিষ্ট বইটি ৩২ টি অধ্যায়ের মধ্যে দিয়ে সাজিয়েছেন লেখক শাখাওয়াৎ নয়ন। 
বইটির নাম বোহেমিয়ান। মূল গল্পের দিকে এগোনোর আগে একটু জানার চেষ্টা করা যাক যে বোহেমিয়ান অর্থ কি? বোহেমিয়ান শব্দের অর্থ হলো ছন্নছাড়া। অনেক ক্ষেত্রে এলোমেলোও বলা চলে। আমরা নিজেদের জীবনে নিজেরাই এক একজন বোহেমিয়ান কিছু ক্ষেত্রে। সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছুই হয়ে যায় এলোমেলো। অনেক সময় বাধ্য হয়েই হতে হয় বোহেমিয়ান। সেই রকমই একটি উপন্যাস হচ্ছে বোহেমিয়ান।

উপন্যাসের শুরুতে আমরা জানতে পারবো মাহবুব এবং শুভ্রার কথা। যারা নিসন্তান দম্পতি। শুভ্রা অস্ট্রেলিয়ার সরকার প্রধানকে চিঠি লিখে জানান যে তারা বাংলাদেশ থেকে বাচ্চা নিতে আগ্রহী কিন্তু বাংলাদেশের সাথে অস্ট্রেলিয়ার চাইল্ড অ্যাডাপটের কোনো চুক্তি নেই যার ফলে তাদের বাচ্চা নিতে হলে অন্যদেশ থেকে নিয়ে হবে যেটা শুভ্রা চান না। 

বই রিভিউ বোহেমিয়ান লেখক : শাখাওয়াৎ নয়ন, বই রিভিউ ২০২২ Bohemian by Shakhawat Nayan  boipaw.com - bd book review website
বোহেমিয়ান বইয়ের কভার ছবি

একটি বাচ্চার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ানো শুভ্রা-মাহবুব দম্পতির হঠাৎ করেই তাদের স্কুল জীবনের বন্ধুদের কথা মনে পড়তে থাকে। যারা জীবিকার টানে কেউ আছেন সিডনিতে, কেউ আছেন কলকাতায় আবার কেউ আছেন আমস্টারডাম। একটা সময় সবাই মনের কাছাকাছি থাকলেও এখন সবাই ভিন্ন যায়গায়, ভিন্ন পরিবেশে। সবাই ভিন্ন ভিন্ন স্থান, পরিবেশে থাকলেও সবারই আছে টানাপোড়েন। 

এরই মাঝে মাহমুবের জীবনে আগমন হয় একজন নতুন নারীর। অন্দ্রে যিনি সরবোন ইউনিভার্সিটির একজন ছাত্রী। মাহবুবের জীবনে আশা এই নারীর সাথে মাহবুবের পরিচয় হওয়ার পর একসময় তারা সিদ্ধান্ত নেন যে তারা বিয়ে করবেন। কিন্তু সবসময় মানুষ যা চায় তাই পাবে বা যেটা মনের ইচ্ছা সেটাই পেতে হবে বিষয়টা মোটেই তেমন নয়। অনেক সময় তা অসম্ভবও বটে। অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে মানুষের জীবন অতিবাহিত হলে তার শেষ পরিণতি আসলে কি হবে? মাহবুব আর অন্দ্রের জীবনে শেষ পর্যন্ত হয়েছিলো কি? তা জানতে হলে একটু সময় দিতে হবে উপন্যাসটিকে। 

'বোহেমিয়ান' উপন্যাসটি ব্যক্তিগত ভাবে আমার খুব ভালো লেগেছে। বাস্তবতার ছাপ লক্ষ্য করা গেছে প্রতিটি মুহূর্তেই। মানুষের জীবনে না চাইতেও অনেক কিছু মেনে নিতে হয়। অনেক সময় মানিয়ে নিতে হয়। কাছের অনেক কিছুকে ঠেলতে হয় দূরে! আবার দূরের কিছুকে আনতে হয় কাছে। উপন্যাসটির প্রতিটি অধ্যায় এমন ভাবে যুক্ত যেন শেষ না করা পর্যন্ত মনে হবে কোনো কাজ অসমাপ্ত রয়ে গেছে। এদিক থেকে লেখক ছিলেন সফল। 

এবারে একটু বোহেমিয়ান লেখক শাখাওয়াৎ নয়নের দিকে আসি। লেখক শাখাওয়াৎ নয়ন কর্মজীবনে অস্ট্রেলিয়া, এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা ও গবেষণামূলক কাজ করেছেন। হংকং থেকে তিনি হৃদরোগ বিষয়ক গবেষণায় পেয়েছেন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি 'দ্যা বেস্ট ইয়োথ সায়েন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড ২০১৬'। বাংলাদেশ,ভারত, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা,ফ্রান্স, সুইডেন ও যুক্তরাজ্য থেকে প্রকাশিত বাংলা পত্রপত্রিকায় এ পর্যন্ত প্রবন্ধ ও নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। 

পরিশেষে একটা কথাই বলবো, কয়েকটি মার্বেল একসাথে ছুড়ে দিলে সব কয়টি মার্বেল একত্রে একই গন্তব্যে কোনোদিন পৌছাবে না। কিন্তু কেন পৌছাবে না তার উত্তর মিলবে বইটিতে। মানুষের জীবনের সাথে এই কথাটির মেলবন্ধন খুব সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে উপন্যাসটিতে। 

সুন্দর প্রচ্ছদে মোড়ানো 'বোহেমিয়ান' পাওয়া যাচ্ছে অমর একুশে বই মেলায়। আরও পাওয়া যাচ্ছে রকমারি সহ বিভিন্ন অনলাইন বই বিক্রি প্রতিষ্ঠানে।

লেখক শাখাওয়াৎ নয়ন এর জীবনী

লেখক শাখাওয়াৎ নয়ন এর জীবনী
ছবি : শাখাওয়াৎ নয়ন

শাখাওয়াৎ নয়ন। জন্ম ২০ মে ১৯৭৪। মাদারীপুর জেলার কুন্তিপাড়া গ্রামে, নানাবাড়িতে। বাবা মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব আলী মোল্লা এবং মা রিজিয়া বেগম। উত্তর ব্রাহ্মন্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস ওয়ানের ফাইনাল পরীক্ষায় ডাবল শূন্য পেয়ে শিক্ষাজীবনের শুরু হলেও, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্স পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করেন। অস্ট্রেলিয়ার নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটি থেকে ফুলব্রাইট স্কলারশিপে পাবলিক হেলথে পিএইচডি এবং পোস্ট ডক্টরেট করেছেন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর থেকে। হংকং থেকে তিনি হৃদরোগ-বিষয়ক গবেষণায় পেয়েছেন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ‘দ্য বেস্ট ইয়োথ সায়েন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড ২০১৬’। কর্মজীবনে অস্ট্রেলিয়া, এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা ও গবেষণামূলক কাজ করেছেন। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর, ব্যাবেজ বইউই ইউনিভার্সিটি অব রোমানিয়া এবং নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। বাল্যকালে ছোট চাচাকে পত্র লেখার মধ্য দিয়ে লেখালেখিতে হাতেখড়ি। বাংলাদেশ, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্স, সুইডেন ও যুক্তরাজ্য থেকে প্রকাশিত বাংলা পত্রপত্রিকায় এ পর্যন্ত দুই শতাধিক প্রবন্ধ ও নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এর পাশাপাশি এসব দেশের পত্রপত্রিকায় গল্প ও উপন্যাস লেখেন। ‘ব্যাপ্টিস্ট চার্চ এবং একটি টিকটিকির গল্প’ তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ; ‘অদ্ভুত আঁধার এক’ প্রথম উপন্যাস; ‘নিয়তিপাড়ে গলে যাওয়া ডিমগুলি’ প্রথম নিবন্ধগ্রন্থ এবং ‘অল্প ভাঙ্গা গল্প’ দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ।

বোহেমিয়ান বই রিভিউ ২

"বোহেমিয়ান "-ছন্নছাড়া, নামটাই অন্যরকম।এই নাম শুনেই আমার বইটা পড়ার আগ্রহ বেড়ে গিয়েছিল।তাই বইটা খুব তাড়াতাড়ি পড়ে শেষ করেছি।

বই পড়ার পড়ে শেষ করে তৃপ্তি হয়েছে অনেক।এই বছরের প্রিয় বইয়ের তালিকায় এই বই কোন সন্দেহ ছাড়াই জায়গা করে নিবে।আচ্ছা সার্থক উপন্যাস কাকে বলে? এই প্রশ্নের উত্তর আমার অজানা।আমার কাছে মনে হয় যে বই পাঠকের কল্পনায়-মনে দাগ কেটে, যে দাগ সহজে হাল্কা হবে সেই বই ই সার্থক।

বোহেমিয়ান বইয়ে একটা অদ্ভুত ব্যাপার আমার ভাল লেগেছে।পুরো বই জুড়ে এক্টা প্রশ্ন-উত্তর খেলা। কিছু প্রশ্নের উত্তর বইয়ে মিলবে আবার কিছু উত্তর পাঠক চিন্তা করবে। আস্লেই যেন বোহেমিয়ান নামের সার্থকতা আছে বইয়ে।

বোহেমিয়ান বইয়ের গল্পটা কিসের? গল্পটা বন্ধুতের কথা বলে,আবার বাবা কিংবা বাবা হওয়ার গল্প বলে,একজন নারীর মাতৃতের কথা থেকে শুরু করে একা টিকে থাকার গল্প যেন এই বই আকড়ে আছে।আবার এই বই ভ্রমণের কথা, প্রবাস জীবনের গল্পও লেখক তুলে ধরেছেন। এক বই যে কতো গল্প বলে, এই বইয়ের পাতায় পাতায় লেখকের অভিজ্ঞতার প্রমাণ মিলে যায়।

বইয়ে অনেক চরিত্র আছে, তবে এটা যেহেতু স্পয়লার না তাই চরিত্র আর তাদের গল্প জানতে বই টা পড়তে হবে।তবে এই বইয়ের শুভ্রা চরিত্র টা তার নামের মতোই শুভ্র।

বোহেমিয়ান" উপন্যাস সমসাময়িক সময়ের! তাই পড়ে তৃপ্তি পাওয়া যায়।আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে এই বই। বইয়ের বিশেষ কিছু অংশ মনে গেথে যাওয়ার মতো। 

আপনারা চাইলে মেলা না হয় রকমারি থেকে এই বই সংগ্রহ করতে পারেন।

রিভিউয়ার: মাইসা রশিদ

বোহেমিয়ান বই সম্পাদনার ইতিকথা

প্রায় তেইশ বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের বই এডিট ও প্রুফ দেখে আসছি। এর মধ্যে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির বই যেমন এডিট করেছি, তেমনি অনেক বিখ্যাত বইও এডিটের সৌভাগ্য হয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে ৮০০টির অধিক বই, ম্যাগাজিন ও সাময়িকীতে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি।

আমার সারা জীবনের এই কর্মযজ্ঞে কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক ড. শাখাওয়াৎ নয়নের ‘বোহেমিয়ান’ উপন্যাসকে বাংলা সাহিত্যে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী এক সংযোজন বলে মনে হয়েছে। সম্প্রতি বইটি এডিট করতে গিয়ে একদিকে যেমন আমাকে নাজেহাল হতে হয়েছে এর বহুবিধ তথ্য-উপাত্ত যাচাই করতে গিয়ে; অন্যদিকে বিস্মিত, হতবাক ও অভিভূত হতে হয়েছে এর ভাষায় শব্দের ছন্দবদ্ধ নান্দনিক প্রয়োগ, ট্র্যাজিক কাহিনি এবং ভাগ্যনিয়ন্ত্রিত কয়েকটি চরিত্রের পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে চলার শৈল্পিক সমন্বয় দেখে।

‘বোহেমিয়ান’ শুধু একটি মহাকাব্যিক উপন্যাসই নয়, গভীর জীবনবোধের আখ্যান, মানবজীবনকে দেখার বহুমুখী দৃষ্টিভঙ্গি আর আনন্দ-বেদনার অতলান্তিক মহাসাগর।

সালাহ্ উদ্দিন খোকন
প্যারিস, ফ্রান্স

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ