বোকা ছাত্রের বুদ্ধিমান প্রশ্ন

বোকা ছাত্রের বুদ্ধিমান প্রশ্ন লেখক : কারিম শাওন


ইসলাম যাদের বদহজম হয়, তাদের যদি গণনা না-ও করি, তবুও কোটি কোটি মুসলমান পাওয়া যাবে, যারা কিনা মনে মনে ইসলামের কিছু আইনকে অপছন্দ করে বলে সেগুলোকে সংস্কার করে বদলে দিতে চায়। কথাটা আঁতকে ওঠার মতো হলেও, এটাই বাস্তবতা। তারা মুখে সে রকম মনোভাব প্রকাশ না করলেও, অন্তত তাদের কাজকর্মের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা থেকে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে বলা যায় যে, তারা ইসলামের কতিপয় আইন-কানুনের পরিবর্তন চাইছে। তারা ইসলামের ওই কতিপয় নিয়মকানুন কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না বা মানতে চাইছে না। তারা তথাকথিত আধুনিকতার প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিয়েছে। তারা নিজেরা সে সকল ইসলামি আইনের চর্চা তো করেই না; বরং অন্যকেও সেটা থেকে বিরত রাখতে উপদেশ দেয়।

বলছিলাম যৌবনে পদার্পণ করা ছেলেমেয়েকে বিয়ে দেওয়ার কথা। অমুসলিমরা তো না-ই, এমনকি মুসলিম বাবা-মায়েরা পর্যন্ত এই বিষয়টাকে আজকাল কল্পনায়ও আনতে চান না। তারা নিজেদের ছেলেমেয়েকে গড়ে তোলার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় কোথাও এটা রাখেন না যে, সন্তান যৌবনে পদার্পণ করলে তাকে ভালো পাত্র/পাত্রী দেখে বিয়ে দিতে হবে।

তাদের পরিকল্পনা নির্দিষ্ট একটা ছকে বাঁধা—ছেলে/মেয়ে বড়ো হবে, শিক্ষা অর্জন করবে, নিজে স্বাবলম্বী হবে, পয়সাকড়ি কামাবে, এরপর ৩০-৩৫ বছরে বিয়ে করবে। তারা এই ছকের বাহিরে কোনো কিছু ভাবতে পারেন না বা ভাবতে চান না। মেয়েদের বেলায় কিছু ক্ষেত্রে স্বাবলম্বী হয়ে পয়সা-কড়ি উপার্জন করার লক্ষ্য না থাকলেও, অন্তত ২২-২৫ বছরের আগে বাবা-মায়েরা মেয়ের বিয়ের কথাটা ভাবেন না। অথচ যৌবনে পদার্পণ করা একটা ছেলে/মেয়ে যে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে থাকে, সে ব্যাপারে বাবা-মা এবং অভিভাবকরা বলা চলে একপ্রকার উদাসীন!

জীবনের প্রতিটা নতুন অধ্যায়ে প্রবেশের ক্ষেত্রে সবাই উৎসাহ দিলেও বিয়ের ক্ষেত্রে এসে সবার অজু থাকে—‘এত ছোটো বয়সে ওরা কি সংসার করতে পারবে?' অথচ আগামীকালের ভবিষ্যত জীবনটায় প্রতিটা মানুষই নতুন। কারণ, এটা আমাদের সবারই প্রথম জীবন। কেউ-ই বলতে পারবে না যে, জীবনের কোন নতুন অধ্যায়ে সে অভিজ্ঞ।

আসলে অধিকাংশ মুসলিম বাবা-মা জানেনই না যে, তাদের সন্তানের বিয়ের উপযুক্ত সময় কোনটা। তারা অমুসলিমদের কাছ থেকে এই ব্যাপারে দিকনির্দেশনা নিয়ে থাকে। তারা মুসলিম হলেও এই বিষয়ে ইসলামের দেওয়া দিকনির্দেশনা মেনে চলে না।

ইসলামবিদ্বেষী অমুসলিমরা এই ধরনের মুসলিমদের নানান ছলাকলা দেখিয়ে এটা বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, ছেলেমেয়েদের বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর থেকে শুরু করা উচিত। এর আগে বিয়ে হলে ভবিষ্যৎ জীবনে ছেলেমেয়ে উভয়কে নানা রকমের শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বিশেষ করে মেয়েরা অপ্রাপ্ত বয়সে গর্ভধারণ করে ফেললে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে ইত্যাদি আরও কত কিচ্ছা-কাহিনি! মুসলিমরা এদের কথায় বিশ্বাস করেছে বিধায় সেভাবেই জীবনযাপন করছে।

উলটো দিকে ইসলাম বলছে, ছেলেমেয়েদের বিয়ে দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনো বাধাধরা বয়স নেই। যখন থেকে তাদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি ঘটতে শুরু করবে, যখন থেকে তাদের চালচলনে পরিপক্কতার আভাস দেখতে পাওয়া যাবে, তখন থেকেই তাদের বিবাহযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে এবং উক্ত সময় থেকেই সন্তানের ব্যাপারে বাবা-মাকে সতর্ক হতে হবে, যেন কোনো রকমের অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা না ঘটে যায়।

আর তখনি শুরু হয় ইসলামবিদ্বেষী অমুসলিমদের চুলকানি। ওরা তখন প্রশ্ন করে ইসলামি আইনে ছেলেমেয়েদের বিয়ের সর্বনিম্ন বয়সসীমা নেই কেন? অর্থাৎ ইসলাম ১৮ বছরের আগে ছেলেমেয়েদের বিয়েকে সমর্থন করে কোন যুক্তির ভিত্তিতে?

এটা আসলে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ওই একই দিকে ইঙ্গিত করে প্রশ্ন করা। অর্থাৎ, ৫০ বছর বয়সি মুহাম্মাদ (সা.) কীভাবে ছয় বছর বয়সি আয়িশা (রা.)-কে বিয়ে করেছিলেন?

কারণ, ইসলামবিদ্বেষী অমুসলিমদের প্রধান লক্ষ্য থাকে রাসূল (সা.)-এর চরিত্রকে বিতর্কিত করা। তাঁকে বিতর্কিত করতে পারলে সম্পূর্ণ ইসলামের তখন নড়বড়ে হয়ে যাবে। শুধুমাত্র এই বিয়ে নিয়ে ইসলামবিদ্বেষী অমুসলিমরা যে কতটা জল ঘোলা করেছে আর কত মুসলিমকে যে বিভ্রান্ত করেছে, সেটা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু ওরা আজও পর্যন্ত সফল হয়নি; বরং যুগে যুগে পর্যদস্তু হয়েছে।

বিবেক-বুদ্ধিহীন, অবৈজ্ঞানিক, মূর্খ এবং অদূরদর্শী সমাজের বিবেক-বুদ্ধিহীন, অবৈজ্ঞানিক, মূর্খ এবং অদূরদর্শী মানুষ গুলোর এমন প্রশ্নের উত্তর দিতেও মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে না।

যাহোক। প্রশ্ন দুটো হলেও, মূলত প্রশ্ন একটিই। তাই দুটো প্রশ্নকে একটি প্রশ্ন হিসেবে ধরে প্রশ্নটার দুটো উত্তর দেবো এবং প্রথম উত্তর কিছুটা দীর্ঘ হবে।

প্রথম উত্তর :

একটা প্রশ্ন দিয়ে শুরু করি। মানুষ বিয়ে কেন করে? উত্তর হলো

১. বৈধভাবে ভালোবাসার একজন মানুষ খুঁজে পাওয়ার জন্য।

২. বৈধভাবে জৈবিক চাহিদা পূরণ করার জন্য।

৩. ডজনখানেক মিষ্টি মিষ্টি বাচ্চার বাবা-মা হওয়ার জন্য। ৪. খুব সুন্দর ও সুশৃঙ্খল একটা পারিবারিক জীবন গঠনের জন্য।

৫. সমাজবদ্ধ হয়ে একসাথে বসবাস করার জন্য।

৬. যুগ যুগ ধরে বংশপরম্পরা টিকিয়ে রাখার জন্য।

৭. বৃদ্ধ বয়সে সহযোগিতা পাওয়ার জন্য।

এই সাতটি কারণের মধ্যে প্রথম কারণ দুটো প্রধান এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই ১ ও ২ নং কারণ দুটোর যেকোনো একটির যথাযথ বাস্তবায়ন ছাড়া বাকি পাঁচটা ধাপ অসম্ভব।

এবার আরও একটা প্রশ্ন করি—

একজন মানুষ তার জীবদ্দশার ঠিক কোন সময়টায় মনের মধ্যে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি ভালোবাসা এবং যৌন আকর্ষণ (মানে একটু হাত ধরা, জড়িয়ে ধরা, চুমু খাওয়া) অনুভব করা শুরু করে?

প্রশ্নটা সহজভাবে করলে

একজন মানুষ কোন বয়স থেকে ভালোবাসা ও যৌনতার বিষয়ে একটুখানি হলেও বুঝতে শুরু করে?

প্রশ্নটা ছোটো করে করলে বয়ঃসন্ধিকাল কখন থেকে শুরু হয়?

এখানে একটা বিষয় একটু লক্ষণীয়, বয়ঃসন্ধিকাল ও বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স আলাদা কোনো বিষয় নয়; বরং এ দুটো পরস্পর সম্পৃক্ত। এ দুটোকে আলাদাভাবে হিসাব করাটা অযৌক্তিক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং দুরভিসন্ধিমূলক। এর কারণটা একটু পরেই পেয়ে যাবেন।

(এই প্রশ্নটার উত্তর খোঁজার পাশাপাশি যেই প্রশ্ন গুলোর উত্তর আমাদের খোঁজা উচিত সেগুলো হলো

১. একটা ছেলে বা মেয়ের বয়ঃসন্ধিকাল কত বছর বয়স থেকে গণনা করা উচিত?

২. শারীরিক ও মানসিক কী কী বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে বয়ঃসন্ধিকাল শুরুর বয়সটা নির্ধারণ করা উচিত?

৩. বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স কত হওয়া উচিত?

৪. ব্যক্তিগত কোন কোন বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়ে বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স নির্ধারণ করা উচিত?

৫. সামাজিক কোন কোন বিষয় গুলোকে বিবেচনায় নিয়ে বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স

নির্ধারণ করা উচিত?

৬. বয়ঃসন্ধিকাল ও বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স নির্ধারণের এই কাজটি কারা করবে?

৭. শেষ ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা হলো- বয়ঃসন্ধিকাল ও বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স

আলাদা আলাদা করা হলো কোন যুক্তিতে?) উত্তরটা অবশ্যই কোনো ব্যক্তি বা সমাজ বা নির্দিষ্ট কোনো মতাদর্শ কিংবা কোনো জাতি কর্তৃক চাপিয়ে দেওয়া প্রচলিত নিয়ম মেনে আমরা খুঁজব না। আমাদের চারপাশের বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে আমরা উত্তরটা খুঁজব।

১ নং বিষয়টি, অর্থাৎ বিপরীত লিঙ্গের প্রতি ভালোবাসা অনুভব করাটা মনস্তাত্ত্বিক একটা ব্যাপার। পরবর্তী সময়ে বয়স বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে জৈবিক তাড়নাটাও এসে যুক্ত হতে থাকে ধীরে ধীরে। একটা ছেলে বা মেয়ে নির্দিষ্ট কোন বয়স থেকে মনস্তাত্ত্বিক এই নতুন জগতে ডুবে যাওয়া শুরু করে, সেটা নির্ণয় করার মতো কোনো যন্ত্র পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। তা ছাড়া কোনো মানুষের পক্ষে অন্য কারও মনের ভেতরে ঢুকে দেখা সম্ভব নয় যে, তার মনের ভেতরে আসলে কী চলছে। কখনো কখনো ৬-১০ বছর বয়সের ছেলেমেয়েরা ১ নং বিষয়ে অতিমাত্রিক পরিণত আচরণ করে ফেললে যারা তাদের আদর করে ইঁচড়ে পাকা বলে ডাকেন, মনে রাখা উচিত, সেসব ছেলেমেয়ের মনের ভেতরের অবস্থা কী, সেটা জানা কিন্তু আদৌ আপনাদের পক্ষে সম্ভব নয়। যদি এমন ইঁচড়ে পাকা আচরণকে আপনি মুগ্ধতা বা কৌতূহল বলে আখ্যায়িত করতে চান, তাহলে আমি বলব

প্রথমত, যখন থেকে এই ১ নং বিষয়ে কৌতূহল তৈরি হলো, তখন থেকেই তার বয়ঃসন্ধিকাল শুরু হয়েছে। কারণ, যে বিষয়ে কিছু মাস আগেও তার কৌতূহল জাগেনি, হঠাৎ তার মধ্যে এমন কী পরিবর্তন হলো যে, ওই বিষয়ে সে এমন কৌতূহলী হয়ে উঠল? প্রাথমিক ধাপে এই মানসিক পরিবর্তনটাই এখানে অবশ্য ধর্তব্য ও মুখ্য বিষয়।

দ্বিতীয়ত, কৌতূহল শুধু ছোটো বয়সেই জাগে না; পূর্ণবয়স্ক মানুষও যেকোনো বিষয়ে কৌতূহলী হয়। সুতরাং ৬-১০ বছরের ছেলেমেয়েরা বয়স কম হওয়ার কারণে কৌতূহলী হয়ে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি ভালোবাসার টান অনুভব করছে, এমন যুক্তি অসার । অর্থাৎ, উক্ত বিষয়ে এমন আগ্রহী হওয়ার মানে হলো সে মানসিক বিকাশের প্রথম ধাপে পৌঁছে গেছে। এখন থেকে প্রতিদিন সে একটু একটু করে সামনের দিকে এগুবে। এই বিষয়ে সে আরও বেশি বেশি জানতে চাইবে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে।

তৃতীয়ত, এই বয়সি ছেলেমেয়েরা কোনো বিষয় জানার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠলে বিষয়টা সম্পূর্ণরূপে বোঝার বা জানার পর সে বিষয়ের প্রতি তাদের আগ্রহ কমে যেতে থাকে ধীরে ধীরে। এটা মানুষের প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য। কিন্তু নির্দিষ্ট এই ১ নং ক্ষেত্রটির বেলায় এসে ঘটে ঠিক উলটো ঘটনা। বয়স বাড়ার সাথে সাথে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি ভালোবাসার টান অনুভব করার মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে তাদের ভেতরে। অর্থাৎ পুরো বিপরীতধর্মী একটা কাজ এটি।

আমি কিন্তু এটা বলছি না যে, এই বয়সে একটা ছেলে বা মেয়ে ভালোবাসার আদ্যোপান্ত সব বুঝে ফেলে। আমি বলতে চাইছি, এই বয়স থেকে তাদের মধ্যে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি ভালোবাসার ব্যাপারে কিঞ্চিৎ একটা মানসিক পরিবর্তন দেখা যায় । সময় পার হওয়ার সাথে সাথে এই পরিবর্তন আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে।

সুতরাং নিঃসন্দেহে ৬-১০ বছর বয়সি ছেলে বা মেয়ের মনে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হওয়ার বিষয়টি নিছক কোনো কৌতূহল নয়। এমনকি এটাকে আপনি ইঁচড়েপাকাও বলতে পারবেন না; বরং এটা হলো মানসিক পরিপক্বতার একেবারে প্রাথমিক একটি ধাপ। কোনো কোনো ছেলেমেয়ের ক্ষেত্রে এই মানসিক পরিপক্বতা শুরু হওয়াটা ৬-১০ বছর বয়স পর থেকেও হতে পারে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট কোনো বাধাধরা বয়সসীমা নেই।

২ নং বিষয়টি, অর্থাৎ বিপরীত লিঙ্গের প্রতি যৌন আকর্ষণ অনুভব করাটা শারীরিক একটি বিষয়। একটা ছেলে বা মেয়ে ঠিক কোন বয়স থেকে এই আকর্ষণ অনুভব করা শুরু করে এটাও কিন্তু নিশ্চিত করে বলা সম্ভব না। কারণ, কম বয়সি ছেলেমেয়েদের মধ্যে এই জৈবিক তাড়না যখন অল্প অল্প করে আসতে শুরু করে, তখন কিন্তু কোনো ছেলেমেয়েই এ ব্যাপারটা সবার কাছে বলে বেড়ায় না। তাই বয়সে বড়োরা ভাবে, তার ছোটো ছেলে বা মেয়েটি, ভাই বা বোনটি, ভাতিজা বা ভাতিজিটি, ভাগনে বা ভাগনিটি এখনও ছোটো বাচ্চাই রয়ে গেছে।

অথচ বাস্তবতা হলো— নীরবে বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছে যাওয়া এই ছেলেমেয়েরা প্রেমের গল্প-উপন্যাস চলচ্চিত্র উপভোগ করছে। নির্দিষ্ট কোনো উপন্যাস বা চলচ্চিত্রের নায়ক-নায়িকার চরিত্রটি তাদের মনে গেঁথে রেখেছে। জনপ্রিয় কোনো প্রেমের গান তারা ঘনঘন গাইছে, ট্যাংলেড বা ফ্রোজেন বা রিও নামক প্রেমকেন্দ্রিক ছায়াছবির নায়ক-নায়িকাদের চরিত্র নিজের ভেতরে ধারণ করছে। খোলামেলা পোশাক পরিহিতাদের অশ্লীল গান দেখছে। পর্নোগ্রাফি বা অশ্লীল ছবি দেখার মধ্যেও নিজেদের জড়িয়ে ফেলছে; এমনকি হস্তমৈথুন পর্যন্ত করছে।

শুধু তা-ই নয়, ৯/১০ বছরের ছেলেমেয়ে প্রেম করছে – এমন খবর কেউ শোনেননি বা অল্প বয়সের প্রেমের কোনো ঘটনা নিজের চোখে কেউ দেখেননি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াটা কষ্টকর। ১০/১১/১২ বছরের কিংবা তার চেয়েও কম বয়সি ছেলেমেয়েরা পরিবারকে ফাঁকি দিয়ে প্রেমিক/প্রেমিকার সাথে দেখা করতে যাচ্ছে, বিদ্যালয়ে গিয়ে বিপরীত লিঙ্গের সহপাঠীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক করছে, দূরালাপনীর মতো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে একে অপরকে চুমু খাচ্ছে এবং যৌনতাপূর্ণ কথাবার্তা বলে পরস্পর দূর থেকেই যৌন উত্তেজনা বাড়াচ্ছে। ছাদে কিংবা চিলেকোঠায় কিংবা ফাঁকা সিঁড়িতে কিংবা বন্ধুর বাড়িতে কিংবা অন্ধকার কোনো গলিতে কিংবা বাগানে কিংবা পুকুরপাড়ের ঝোপঝাড়ে প্রমিক/প্রেমিকার সাথে অন্তরঙ্গ মুহূর্ত কাটাচ্ছে। এদের কেউ কেউ আবার অদক্ষ যৌন সম্পর্ক করে বিয়ের আগেই ভার্জিনিটি বা সতীত্ব পর্যন্ত হারাচ্ছে। আর এই সমাজ তখনও ওদের খোকাখুকু হিসেবে বিবেচনা করছে!

বর্তমান সমাজে এসব ঘটনা এখন প্রকাশ্য। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাবা-মা অভিভাবকেরা নিজেদের পরিবারের মধ্যে এসব উদাহরণ দেখেও এড়িয়ে যায়। নিজেদের ব্যাপারে তাদের চক্ষু লজ্জা যেন একটু বেড়ে যায়। আমার ঘরের সন্তান বড়ো হয়ে যাচ্ছে'—সেটা বলতে বা ভাবতে কেমন যেন ইতস্তত বোধ করে তারা। মনে মনে ভাবে, না না আমার সন্তান এখনও ছোটোই। তখন তারা এমন একটা ভান করার চেষ্টা করে, মনে হয় যেন তাদের এই ৬ ১০ বছরের ছোটো ছেলেমেয়েগুলো ২ নং বিষয়ে আসলে কিছুই বোঝে না। অথচ বাস্তবতাটা এই অভিভাবকরা বোঝে; এমনকি নিজ চোখে দেখেও না বোঝার ভান করে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আপনি হয়তো চক্ষুলজ্জার দোহাই দিয়ে নিজেকে দায় থেকে মুক্তি দিচ্ছেন, কিন্তু সত্য বলতে বা প্রকাশ করতে আমার একবিন্দুও চক্ষুলজ্জা নেই।

আচ্ছা সব কথা বাদ দিলাম। অন্যের ব্যাপার নিয়ে এত বাছবিচার নাহয় না-ই করলাম। আপনি নিজেও তো একসময় এই বয়সটা অতিক্রম করে এসেছেন। একজন সত্যবাদী মানুষ হিসেবে নিজেই একটু বলুন তো

ঠিক কত বছর বয়স থেকে এই বিষয়গুলো আপনার মনের মধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল?

ঠিক কত বছর বয়স থেকে আপনি এসব বিষয় বোঝা শুরু করেছিলেন?

ঠিক কত বছর বয়স থেকে এসব বিষয় নিয়ে ঘাঁটাঘাটি শুরু করেছিলেন? ঠিক কত বছর বয়স থেকে কাছের কোনো বন্ধু বা সহপাঠীর সাথে এসব বিষয় নিয়ে গোপনে আলাপ করা শুরু করেছিলেন?

ঠিক কত বছর বয়স থেকে বিপরীত লিঙ্গের কারও প্রতি ভালোবাসা ও যৌন আকর্ষণ তৈরি হয়েছিল আপনার?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ