বুক ও পিঠের গল্প লেখকঃ আইয়ুব আল আমিন | বুক রিভিউ | Book O Pither Golpo By Ayub Al Amin

বইঃ বুক ও পিঠের গল্প 
লেখকঃ আইয়ুব আল আমিন 
প্রকাশনীঃ কিংবদন্তী পাবলিকেশন 
ধরনঃ গল্পগ্রন্থ 

লেখক আইয়ুব আল আমিন এর গল্পগ্রন্থ " বুক ও পিঠের গল্প" ২০২২ বই মেলায় প্রকাশিত হয়। বইটি প্রকাশ করেছে কিংবদন্তী পাবলিকেশন।  বইটিতে মোট ২১ টি গল্প রয়েছে। গল্পগুলো হলোঃ ১) মেনির মা। ২) মতি কাকা। ৩) নকশা। ৪) টিপ। ৫) জল জোছনা রাত। ৬) চিঠি। ৭) একটা পিতলের ল্যাম্প। ৮) রব ভাই। ৯) মায়া। ১০) ব্যাথা। ১১) জলযাত্রা। ১২) বৃষ্টি। ১৩) পোলাউ। ১৪) ম্যাজিক। ১৫) দাদাজান। ১৬) হিসেব। ১৭) পুষ্প পূর্নিমা মঞ্জুরী। ১৮) মূর্ছনা। ১৯) জীবন। ২০) প্রেসিডেন্ট। ২১) হলুদ খাম।

পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ

লেখক আইয়ুব আল আমিন এর গল্পগ্রন্থ " বুক ও পিঠের গল্প" ২০২২ বই মেলায় প্রকাশিত হয়। বইটি প্রকাশ করেছে কিংবদন্তী পাবলিকেশন। 
বইটিতে মোট ২১ টি গল্প রয়েছে। গল্পগুলো হলোঃ
১) মেনির মা। ২) মতি কাকা। ৩) নকশা। ৪) টিপ। ৫) জল জোছনা রাত। ৬) চিঠি। ৭) একটা পিতলের ল্যাম্প। ৮) রব ভাই। ৯) মায়া। ১০) ব্যাথা। ১১) জলযাত্রা। ১২) বৃষ্টি। ১৩) পোলাউ। ১৪) ম্যাজিক। ১৫) দাদাজান। ১৬) হিসেব। ১৭) পুষ্প পূর্নিমা মঞ্জুরী। ১৮) মূর্ছনা। ১৯) জীবন। ২০) প্রেসিডেন্ট। ২১) হলুদ খাম।

১) মেনির মা। 
মেনির মা চরিত্রটি গ্রামের একটি পরিবারে থাকা গরু। গরুর বাচ্চার নাম মেনি। তাই গরুটিকে মেনির মা বলে ডাকে। একটা মধ্যবিত্ত পরিবারে লেখকরা দুই ভাই বোন, বোনের নাম আসমা। আসমা ছোট। তাদের দুই ভাই বোনের থেকে তাদের মা মেনির মাকে বেশি ভালোবাসে।শীত চলে গেছে কিন্তু এখনো শীতের আমেজ কাটেনি। আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে আসমা অসুস্থ হয়ে পরে। ভীষণ জ্বর হয়। এমন সময় আসমার চিকিৎসার জন্য মেনির মাকে বিক্রির জন্য হাটে নিয়ে যেতে রওনা হয় লেখক ও তার বাবা। এক সময় লেখক মনে মনে ভাবে যদি আজ হাটে মেনির মা বিক্রি না হতো। মাহুতেই ভাবনা থমকে যায় আসমার কথা ভেবে। মেনির মা বিক্রি না হলে আসমার চিকিৎসা হবে না। এমন টানাপোড়েনের মধ্যে লেখক গল্পের ইতি টানেন এখানে।

২) মতি কাকা।
এই বইয়ে আর একটি গল্প মতি কাকা। এই গল্পে লেখক তার শৈশবের কথা উল্লেখ করেছেন। লেখকের মা মারা যায় তার জন্মের সময়। তার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে। তারপর থেকে প্রথম প্রথম তার সত মা তাকে আদর করলেও যখন তার সত মায়ের মেয়ে হলো তখন থেকে  আর তাদের সাথে থাকা হয় না। দাদির ঘরে থাকতো।তাদের বাড়িতে কাজ করতো ময়না। ময়নাকে লেখক ময়নামা বলে ডাকতো। ময়নামার স্বামী মতি কাকা। মতি কাকাকে লেখক তার নিজের বাড়ির লোকই ভাবতেন। কিন্তু মতি কাকা ময়নামার মতই এ বাড়িতে কাজ করতেন। মতি কাকার মা এই বাড়িতে কাজ করতো। তিনি মারা যাওয়ার পর এ বাড়িতেই বড় হয় মতি কাকা। মতি কাকা অনেক ভালোবাসতেন লেখকে। আশ্বিন মাসে যাত্রা পালা আসতো। মতি কাকা সেই যাত্রা পালা দেখতো। আর পরদিন লেখক তার থেকে যাত্রা পালার ঘঠনা শুনতো। স্বপ্নে লেখক দেখে যাত্রা পালায় নবাবকে কেউ ছুরি মারে। সেই নবাবটা মতি কাকা। ঘুম ভেঙে যায় লেখকের। আর শুনতে পায় মতি কাকাকে কেউ মাছ ধরার কোচা দিয়ে মেরে ফেলেছে। হুবহু স্বপ্নে যা দেখেছে তাই। 

৬) চিঠি।
আমার সব থেকে ভালো লাগে চিঠি গল্পটা,
এই গল্পটায় কেন্দীয় চরিত্র প্রণব। লেখক মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে। তিনি চারুকলায় পড়বে। এতেই বেঁধে গেলো যত বিপত্তি। পড়াশুনা বাদ তবু চারুকলায় পড়াবে না। অনেক কিছু বুঝিয়ে পরিবারকে রাজি করায় লেখক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগে এডমিশন হয়। এখানেই পরিচয় হয় প্রণবের সাথে। পরিচয় বলতে কিছু চিঠির মাধ্যম। লেখকের রুমে আগে থাকতো প্রণব। প্রণব আত্মহত্যা করে সেই থেকে রুমটায় একা থাকতেন লেখকের এক বড় ভাই। আলমারি খুলে একটা বস্তায় অনেক চিঠি খুঁজে পায় লেখক চিঠি গুলো সমীরণ নামের একজন পাঠিয়েছে প্রণবকে। মোট ৩৮৭ টা চিঠি। প্রণব দিনাজপুর গিয়ে পরিচয় হয় সমীরণের সাথে। তখন প্রণব অর্নাস দ্বিতীয় বর্ষে আর সমীরণ ক্লাস টেনে। দুজনই কথা থেকে প্রেমে পরে যায়। এর পর চিঠি দেওয়া নেওয়া। হঠাৎ একটা চিঠিতে সমীরণ উল্লেখ করে তার বিয়ের বিষয়। কিন্তু প্রণবের থেকে কোন উত্তর যায় না। এরপর কয়েকটা চিঠি এতই করুণ লেখক তা প্রকাশ করেননি। প্রণব কেন আত্মহত্যা করে তা জানার জন্য লেখক অস্তির হয়ে যায়। লেখক দিনাজপুর আসে এবং খোঁজ করে সমীরণের। দেখা হয় তাদের। লেখক রাজশাহী থেকে এসেছে শুনেই সমীরণ তাকে কিছু জিজ্ঞেস না করে বাড়ি নিয়ে যায়। কান্নায় ভেঙে পরে সমীরণ। ভাই বলে লেখকের হাত ধরে। লেখক অনুভব করে তাদের ভালোবাসার অসীম স্পর্শ সহ্য করার ক্ষমতা তার নেই। গল্পটা শেষ হয়েও শেষ হয় না। গল্পের সমাপ্তি হয় এখানেই।

এমন ভাবে প্রতিটা গল্পেই লেখক তুলে এনেছে তার শৈশব থেকে শুরু করে এখন অবধি ঘটে যাওয়া সব ঘঠনা। প্রতিটা গল্পের শেষ এমন ভাবে শেষ হয়েছে যা পড়ার পর নিজের কৌতুহল আরও বৃদ্ধি পাবে এর পর কি হয়েছিলো জানার জন্য। 

পাঠক প্রতিক্রিয়া-
বুক ও পিঠের গল্প বইটা অসাধারণ, বইটাতে মোট ২১ টা গল্পের মধ্যে প্রতিটা গল্পেই কোনো না কোনো ভাবে জীবনের সাথে মিশে যাওয়া গল্প। বইটার সব থেকে বেশি কৌতুহলী করেছে চিঠি গল্পটা। সমীরণের সাথে দেখা হওয়ার পর কি লেখক জানতে পেরেছিলো প্রণব কেন আত্মহত্যা করলো?। প্রতিটা গল্প একটা স্বপ্নের মতো করে সুন্দর এবং সহজ ভাষা ব্যাবহার করে লেখক লিখেছেন। যে কেউ বইটা পড়তে ধরলে ঠিক তার জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার সাথে হুবহু মিল খুঁজে পাবে পাঠক। বইটির প্রচ্ছদ আকর্ষণ করবে একজন পাঠককে খুব সহজেই। আর একটা কথা না বললেই নয়, আমার পড়া যে সকল বই দেখেছি তার মধ্যে সব কটা বইয়ে দেখেছি বইয়ের ব্যাক কভারে ঘটা করে লেখকের ছবি সহ তার পরিচয় অর্জন সব উল্লেখ করা থাকে। কিন্তু এই বইয়ে সব উল্টো লেখকের ছবি নেই ঘঠা করে পরিচয় নেই।

বাইন্ডিংঃ
বইটির বাইন্ডিং নিয়ে কোন কথা বলার নেই। দারুন সব কিছু। বইটি প্রকাশ করেছে কিংবদন্তী পাবলিকেশন। কিংবদন্তী পাবলিকেশন এর বাইন্ডিং মানেই অসাধারণ। 
শুভ কামনা রইলো বইটির জন্য।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ