বই : গাভী বিত্তান্ত (উপন্যাস)
আহমদ ছফা
হাওলাদার প্রকাশনী।
উপন্যাসটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিস্থিতির সত্য কাহিনীকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
ঔপন্যাসিক আহমদ ছফা ১৯৪৩ সালে চট্রগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।তিনি ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্বলবিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন।টিউটোরিয়াল ক্লাশে অধ্যাপকের খুব কড়া একটা ধমক খেয়ে মনকষ্ট থেকেই তিনি আর ক্লাশ না করে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেন।তিনি অসংখ্য কিশোর গল্প,উপন্যাস,প্রবন্ধগ্রন্থ, কাব্যগ্রন্থ, গীতিকাব্যের রচয়িতা।২০০১ সালে তিনি মারা যান।সাহিত্যের জন্য মরণোত্তর একুশে পদক লাভ করেন ২০০২ সালে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকেটা সেক্টরে কি পরিমাণ দুর্নীতি হয় তারই বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে উপন্যাসটিতে।বর্তমান বিশ্ববিদ্যালগুলোর শিক্ষকরা জ্ঞান বিতরণের পরিবর্তে নিজেদের পদোন্নতি নিয়ে বিভর থাকে।নিজেদের পদোন্নতির জন্য তারা যে কোনো কাজ করতে রাজি থাকে।কর্মচারী নিজের বেতন বাড়ানোর জন্য উদ্ধত থাকে।এজন্য তারা প্রায়ই আন্দোলন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিস্থিতিকে উত্তাপিত করে তোলে।সহকারী অধ্যাপকরা চাপ প্রয়োগ করে অধ্যাপক হওয়ার জন্য।কে পরবর্তী উপাচার্য হবে তাও নির্ধারণ করা হয় সিন্ডিকেট করে।
ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে দলীয় দলাদলির চাপে পরে অপ রাজনীতিতে ঝুকে পরে।নিজেদের মধ্যেই দুটি দলের সৃষ্টি হয়।ক্ষমতাসীন দল,অন্যটি বিরোধী দল।বিরোধী দলকে সবসময় কোন্ঠাসা করে রাখে।দুই দলের
মধ্যে মরামারি খুনাখুনি লেগেই থাকে।এমনকি নিজ দলের সদস্যরাও নির্যাতন থেকে রেহাই পায় না।বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের খাবারের মান উন্নয়নের পরিবর্তে নিজেদের পদোন্নতি নিয়েই ব্যস্ত থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ।একজন ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি থেকে শুরু করে পড়াশুনা শেষ করে বের হবার পূর্ব পর্যন্ত কী পরিমাণ ভোগান্তির শিকার হয় তারই বাস্তবতা উপন্যাসটিতে তুলে ধরা হয়েছে।এখানে গবেষণার পরিবর্তে অপরাজনীতির চর্চা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সিদ্ধান্ত চাইলেই উপচার্য স্বাধীনভাবে নিতে পারে না।তাকে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলে সুযোগ আদায় করে নেয়।কিছু হলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক থেকে শুরু করে কর্মচারীরা পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে প্রায়ই আন্দোলন করে।এমনকি ছাত্রছাত্রীরা মাঝে মধ্যে তার বিরুদ্ধে মিছিল নিয়ে তার ভবনে যেয়ে ভাঙচুর করে আসে।বিভিন্ন দলের চাপে একজন উপচার্য যে কাঠের পুতুলে পরিণত হয় সেই বাস্তব সত্যকে উপন্যাসে তুলে ধরা হয়েছে।
উপন্যাসের নাম যেহেতু গাভী বিত্তান্ত তাই গাভী নিয়ে সংক্ষেপে কিছু বলি।উপন্যাসের নায়ক আবু জুনায়েদ উপাচার্য হবার পূর্বে ছোট একটি ভবনে থাকতো।উপচার্য হবার পরে উপচার্য ভবনে আসেন। এখানে এসে পর্যাপ্ত পরিমাণে জায়গা দেখে তার মনে একটি গাভী পোষার ইচ্ছা জাগে।যে ইচ্ছাটা তার উপচার্য হবার পূর্বেও ছিল।পর্যাপ্ত জমি থাকলেও এখন তিনি ইচ্ছাটা কারো কাছে বলতে পারতেছে না।কারণ উপচার্য গাভী পুষে এটা কেউ জানতে পারলে তার বিরুদ্ধে সমালোচনার আরও একটি পথ তৈরি হবে।সবাই সুযোগ খুঁজে কিভাবে উপচার্যের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ এনে তাকে পদ থেকে অপসারণ করা যায়।
জুনায়েদ ইচ্ছাটা তার এক আত্মীয়ের সাথে প্রকাশ করে।সেই আত্মীয় নিজ খরচে তাকে গোয়ালঘর বানিয়ে দেয় এবং একটি গাভী উপহার দেয়।এভাবে তার গাভী পোষার সপ্নটা পূরণ হয়।তার ইচ্ছা ছিল সবার সাথে তার গাভীর কথা বলবে কিন্তু সমালোচনার ভয়ে বলতে পারে না।তবুও তার এ খবর বিশ্ববিদ্যালয় মহলে ছড়িয়ে পরে।সবাই তাকে গোঁ উপচার্য বলতে শুরু করে।এমনকি বলতে থাকে,যে উপচার্য গাভী পুষে, সে উপচার্য হতে পারে না।এভাবে তার অস্তিত্ব নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে যায়।তবে পরবর্তীতে অনেকেই তার এ কাজকে প্রশংসা করে।
গাভী নিয়ে উপচার্যের বউ নুরুন্নাহারের মধ্যে এক প্রতিহিংসা কাজ করতে থাকে। তিনি গাভীটিকে তার সতীন মনে করতে শুরু করে।কারণ গাভীটি আসার পর তার স্বামীর সাথে তার সম্পর্ক আগেরর মতো নেই। তার প্রতিহিংসার আরো একটি কারণ ছিল।যে লোকটি গাভীটি দিয়েছিল তার বিবাহিত জামাইয়ের সাথে নুরুন্নাহারের মেয়ের ভাব হয়েছিল।যেহেতু এই গাভীর মাধ্যমেই ঐ বিবাহিত জামাই তাদের মেয়ের সাথে পরিচিত হয়ে ভাব জমিয়ে তার মেয়েকে গোল্লায় নিয়েছে তাই গাভীর প্রতি তার প্রতিহিংসা বারতে থাকে।।নুরুন্নাহার বানু হলেন উগ্র মেজাজের। সে কিছু হলেই তার স্বামীকে খোঁটা দিয়ে বসে যে তার বাবার টাকায় উপচার্য পড়ালেখা করেছে এবং কিছু হলেই ঝগড়া বাধিয়ে দেয়।বিশ্ববিদ্যালয়ে উপচার্যের তেমন কোনো বন্ধু ছিলো না। পরিবারেও তার মনের কথা শেয়ার করার সুযোগ পেতোনা।তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শেষে যতোটুকু সময় বাসায় থাকতো সে গরুটার সাথেই তার মনের কথা বলতো।গাভীটাইই তার একমাত্র আপন হয়ে উঠেছিল।এটা নুরুন্নাহার বানুর সহ্য হতো না। তাই সে গাভীটিকে বিষ খাওয়ানোর পরিকল্পনা করলো।
একবার উপচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কাজে একদিনের জন্য দূরে কোথায়ও যান।সেই সুযোগে নুরুন্নাহার বানু গাভীটিকে খাবারের সাথে বিষ দিয়ে তার বোনের বাসায় চলে যান।উপচার্য রাতের বেলা এসে দেখেন তার গোয়ালঘরের সামনে অনেক মানুষ।কাছে যেয়ে দেখেন গাভীটির মুখ দিয়ে অঝোরে লালা বের হচ্ছে।পায়ুপথ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।এটা দেখে সে হতাশ হয়ে যায়।একসময় তার হুশ চলে যায়।রাতে ক্লান্ত হয়ে কখন ঘুমিয়ে পরেন নিজেও বুঝতে পারেন না।পরের দিন গাভীটি মারা যায়।তিনি অনেক দিন হতাশায় ছিলেন।এরপর ধীরেধীরে পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে।বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা তার বিরুদ্ধে ছিল তারাও তার কাছে আসতে থাকে।একদিন শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তার কাছে আশি লক্ষ টাকার একটি খবর আসে।কিছু লেকচারের মাধ্যমে তিনি এই টাকা পাবেন।এই আনন্দের সংবাদটি তার স্ত্রীকে দিতে যান।সে তখন ঘুমাচ্ছিলেন। ঘুম থেকে জাগিয়ে খবরটি বলার পরে তার বউ বলে তোমার গাভীটিকে আমিই বিষ দিয়ে মেরেছি।এখানেই উপন্যাসটি শেষ হয়ে যায়।
উপন্যাসটি পড়ার শেষ পর্যায়ে মনে হচ্ছিল এটা যদি আরও বর্ধিত হতো। আনন্দ শেষ হচ্ছিল না।নিঃসন্দেহে এটা একটা শিক্ষণীয় উপন্যাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তবতাকে অত্যন্ত চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।তবে কিছু আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।যেগুলো আমার কাছে ভালো লাগে নি।এমন একটা উপন্যাসে নিম্নমানের এ শব্দগুলা ব্যবহার খুবই শ্রুতিকটু ও দৃষ্টিকটু।
আগে কখনও বুক রিভিউ দেইনি।এই প্রথম দিলাম।রিভিউ দেয়ার তেমন নিয়মও জানা নেই।তাই ভুলগুলো সবাই ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ জানাই বন্ধু @ Sajib Sikder কে যার মাধ্যমে বই বৃক্ষ -এর মতো অসাধারণ একটি গ্রুপে যুক্ত হওয়া।এই গ্রুপের কাজ মনোমুগ্ধকর। গ্রুপটি বিনামূল্যে বই পোকাদের বই পড়ার সুযোগ করে দিচ্ছে।আমরা অনেকেই আছি যারা টাকার অভাবে বই কিনতে পারি না অথবা টাকা থাকলেও সব বই কেনা হয়না।তাই সব ধরনের বই পড়ার জন্য আপনিও এই গ্রুপের একজন সদস্য হতে পারেন।আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বই প্রেমি বন্ধুরা খুব দ্রুত গ্রুপে যুক্ত হয়ে পছন্দের বইগুলো পড়তে পারেন।ঢাবির বটতলায় প্রত্যেক রবি ও বৃহস্পতিবার বই দেয়া-নেয়া হয়।আপাতত ঢাকার সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে বই দেয়া-নেয়ার এ মহৎ কাজটি চালু হয়েছে।আশা করি খুব দ্রুতই সারাদেশের বই পোকারা এই গ্রুপের মাধ্যমে বই পড়ার সুযোগ পাবে ইনশাআল্লাহ।
ছড়িয়ে পরুক জ্ঞানের আলো সারাদেশে।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....