অ্যা গুড ম্যারিজ লেখক: স্টিফেন কিং | A good marriage by Stephen King Bangla Anubad | বই রিভিউ

◑নাম: অ্যা গুড ম্যারিজ (বাংলা অনুবাদ)
◑লেখক: স্টিফেন কিং
◑অনুবাদক: ইরাজ উদ্দৌলা দিবাকর
◑জনরা: সাইকোলজিক্যাল মিস্ট্রি থ্রিলার
◑প্রচ্ছদ: সুজন
◑প্রকাশনী: ঈহা প্রকাশ
◑প্রথম প্রকাশ: জুলাই, ২০২০
◑পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১০৯
◑মুদ্রিত মূল্য: ২২০/-
Review Credit 💕 Rafia Rahman (thanks a lot apu)


𝕴 𝖙𝖍𝖎𝖓𝖐 𝖙𝖍𝖆𝖙 𝖜𝖊'𝖗𝖊 𝖆𝖑𝖑 𝖒𝖊𝖓𝖙𝖆𝖑𝖑𝖞 𝖎𝖑𝖑. 𝕿𝖍𝖔𝖘𝖊 𝖔𝖋 𝖚𝖘 𝖔𝖚𝖙𝖘𝖎𝖉𝖊 𝖙𝖍𝖊 𝖆𝖘𝖞𝖑𝖚𝖒𝖘 𝖔𝖓𝖑𝖞 𝖍𝖎𝖉𝖊 𝖎𝖙 𝖆 𝖑𝖎𝖙𝖙𝖑𝖊 𝖇𝖊𝖙𝖙𝖊𝖗 𝖆𝖓𝖉 𝖒𝖆𝖞𝖇𝖊 𝖓𝖔𝖙 𝖆𝖑𝖑 𝖙𝖍𝖆𝖙 𝖒𝖚𝖈𝖍 𝖇𝖊𝖙𝖙𝖊𝖗 𝖆𝖋𝖙𝖊𝖗 𝖆𝖑𝖑.
— 𝔖𝔱𝔢𝔭𝔥𝔢𝔫 𝔎𝔦𝔫𝔤


বহুকাল ধরে সাথে থাকা অতিপরিচিত জনকে আমরা ভালোমতোই চিনি বলে ধরে নেয়। আদোও কি এই ধারণা সত্য? নিজেকেই জানা যেখানে সম্ভব হয় না সম্পূর্ণভাবে, সেখানে অন্য আরেকজন!!!

আখ্যান


সাজানো-গোছানো সংসার বলতে যা বুঝায় এমনটাই ছিল ডার্সি অ্যান্ডারসনের দুনিয়া। পিকচার পারফেক্ট একটা পরিবার; আদরের দুই ছেলেমেয়ে আর ভালোবাসার জীবনসঙ্গী। কিন্তু বলে না কোনো কিছুই দীর্ঘস্থায়ী হয় না। ঝড়ের রাতে একাকী ডার্সির সঙ্গী ছিল টিভি। রিমোট নষ্ট হওয়াতে বাসার গ্যারেজে ব্যাটারি খুঁজতে যায়। কিন্তু কে জানতো ঝড় বহে যাবে এই সুন্দর সাজানো-গোছানো পরিবারের উপর দিয়েও!


গ্যারেজের পরিপাটি দর্শন ববের তত্ত্বাবধানের কথা জানান দেয়। কিন্তু অযত্নে পড়ে থাকা বাক্স ডার্সির মনে সন্দেহের উদ্বেগ করে। আর এই সন্দেহই কাল হয়ে দাড়ায়! বাক্স থেকে পাওয়া যায় ম্যাগাজিন ❝ বন্ডেজ বিচেস ❞। ববের প্রতি বিশ্বাস টলে উঠে ডার্সির। কিন্তু আসল চমক তো তখনও বাকি...
বেঞ্চের নিচ থেকে পায় আরও একটি বাক্স। এতবছরের অতিচেনা সঙ্গীকে অচেনা মনে হয়। বব কুখ্যাত নির্দয় সিরিয়াল কিলার বিডি নয় তো! কী আছে সে বাক্সে? কেনইবা ডার্সির এই সন্দেহ? কী করবে সে যদি বব-ই বিডি হয়? ভালোবাসার খাতিরে দেখেও না দেখের ভান করবে নাকি অপরাধীকে তার যোগ্য শাস্তি দিবে? জীবনের শেষ ভাগে এসে ডার্সিকে যখন মুখামুখি হতে হবে এসব প্রশ্নের কেমন হবে তার মানসিক পরিস্থিতি...

পর্যালোচনা ও প্রতিক্রিয়া

সচারাচর থ্রিলার বলতে আমরা যেমনটা দেখে থাকি ❝ অ্যা গুড ম্যারিজ ❞ সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। নৃশংস খুনি আছে, দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা অফিসার আছে সাথে আছে খুনির শিকার বিকৃত কিছু লাশ কিন্তু কাহিনীর কেন্দ্রবিন্দু হলো এমন একজন যে জানে না তার জীবনসঙ্গী সিরিয়াল কিলার কিনা। প্রিয়জন যদি খুনি হয় তাহলে একজনের মানসিক অবস্থা কেমন হবে বইয়ের মূল উপজীব্য এটাই। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠক এটাই ভাববে ❝ কী করবে ডার্সি? ❞।


কাহিনীর শুরু ডার্সির জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা দিয়ে যেগুলো তার দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ; ঘটনাগুলো কত সালে ঘটেছে। এত এত সাল দেখে মনে হয়েছিল কী দরকার সাল লেখার ঘটনাগুলো বলে গেলেই তো হচ্ছে। কিন্তু ডার্সি যখন খুনির সন্ধানে নামে তখনই আসলে বুঝা যায় লেখক কেন এত এত সাল দিয়ে কাহিনীর শুরু টেনেছেন। রহস্য বলতে শুরুর প্রথম অংশেই যা আছে। খুনিকে জানার পর আর তেমন কোনো রহস্য নেই। তারপর শুধু সাইকোলজিক্যাল টার্ম। ডার্সি কী করবে খুনির পরিচয় জানার পর... কাহিনীর মাঝামাঝি যেয়ে বিডি যখন ভিক্টিম চুজ আর খুনের কারণ বলা শুরু করে তখন একটা কথায় মনে হচ্ছিল ❝ ঠান্ডা মাথার পাগল ❞। তবে কিং-এর একটা ডায়লগও মনে পড়ে ❝ 𝓜𝓸𝓷𝓼𝓽𝓮𝓻𝓼 𝓪𝓻𝓮 𝓻𝓮𝓪𝓵, 𝓪𝓷𝓭 𝓰𝓱𝓸𝓼𝓽𝓼 𝓪𝓻𝓮 𝓻𝓮𝓪𝓵 𝓽𝓸𝓸. 𝓣𝓱𝓮𝔂 𝓵𝓲𝓿𝓮 𝓲𝓷𝓼𝓲𝓭𝓮 𝓾𝓼, 𝓪𝓷𝓭 𝓼𝓸𝓶𝓮𝓽𝓲𝓶𝓮𝓼, 𝓽𝓱𝓮𝔂 𝔀𝓲𝓷. ❞। শেষাংশ কাহিনীর মোড়ই ঘুরিয়ে দেয়। পড়া শেষ করার পরও ঘোরের মধ্যে ছিলাম।


থ্রিলে ভরপুর, এ্যাকশন সিন, খুনি খুঁজে বের করা, খুন হওয়া, খুনি-ভিক্টিমের ইন্টারঅ্যাকশন এমন কিছু আশা করলে পাঠককে হতাশ হতে হবে। কারণ এসব কিছু তেমন নেই বললেই চলে। খুনির খোঁজে পাঠককে বেশি দূরও যেতে হবে না। তবে হ্যা কিছু ভিক্টিমের কাহিনী আছে আর আছে লাশের বিভৎস বর্ণনা। শেষভাগে রবার্ট শেভারস্টোনের লাশের বর্ণনা পড়ে তো গা শিউরে উঠেছিল। খুনির শেষ পরিণতি কী হবে? ডার্সি কী করবে খুনির খোঁজ পাওয়ার পর? ভবিষ্যতে কি আর কোনো খুন হবে না? এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েই শেষ হয়েছে ❝ অ্যা গুড ম্যারিজ ❞।

লেখনশৈলী ও বর্ণনা

❝ কিং অফ হরর ❞- খ্যাত স্টিফেন কিং- এর এখনও কোনো হরর পড়ার সৌভাগ্য হয়নি। তবে বেশ কিছু ছোট রহস্য গল্প ও উপন্যাস পড়া হয়েছে। কিন্তু অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর নয়। তাই ভয়ে ছিলাম এবারও যদি ওমন হয়। কিন্তু না এবার হতাশ করেননি হরর কিং।


অন্য ধাঁচের সিরিয়াল কিলিং। যেখানে অধিক ফোকাসে কিলার না বরং ভিক্টিমদের দেখানো হয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত কোনো আলোচনা নেই। স্টোরি টেলিং স্টাইলটাও অন্যরকম, বেশ ভালো লেগেছে। সবচেয়ে বেশি ইন্টারেস্টিং পার্ট হলো শেষ অংশ। লেখক যে এইভাবে ইতি টানবেন ভাবি নাই। কল্পপটের বর্ণনা খুঁটিনাটি সহকারে করা হয়েছে।

অনুবাদ

সাবলীল অনুবাদ। পড়ার সময় মোটেও মনে হয়নি অনুবাদকের প্রথম করা অনুবাদ। টানা পড়ে যেতে পেরেছি এর পিছনে ক্রেডিট অনেকাংশে ঝরঝরে অনুবাদকে দিতেই হয়। বইয়ের প্রবাদগুলো পড়ার সময় মনে একটা প্রশ্ন বারবার উঁকি দিচ্ছিল। প্রবাদের অনুবাদ কেমন হয়? ডাইরেক্ট অনুবাদ নাকি রিলেটেড বাংলা প্রবাদ। কিছু অনুবাদ বইয়ে রিলেটেড প্রবাদের ব্যবহার দেখেছি।

চরিত্রায়ন 

ডার্সি, জীবন বলতে গেলে শেষের পথে। সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞ ছিল তাকে নিখুঁত একটা পরিবার দেওয়ার জন্য। কিন্তু একরাতে বদলে যায় সব, নামতে হয় সিরিয়াল কিলার ❝ বিডি ❞- র খোঁজে। সন্দেহের তীর ববের দিকে। বব, এক আজব চরিত্র। বিডি, এই চরিত্র কেমন বলবো না। পাঠকের জন্য তোলা থাক। পড়েই না হয় পাঠক এই চরিত্রের বিচার করবে। হল্ট রামসে, অতীতে যে প্রায় ধরেই ফেলেছিল বিডিকে। যদিও কাহিনীর একদম শেষেই আবির্ভাব হয়েছে তবুও বলতে হয় এই চরিত্র না থাকলে কিছু তো অসম্পূর্ণ থেকে যেতো। এছাড়া আছে ডার্সির ছেলেমেয়ে, পুলিশ অফিসার ও তার স্ত্রী।

প্রোডাকশন

❝ আগে দর্শনধারী পরে গুণবিচারী ❞- তাহলে শুরু করি বইয়ের জ্যাকেট দিয়ে। কুরিয়ারে বই কীভাবে যে এসেছে! মনে হচ্ছে জ্যাকেটের উপর ঝড় গেছে। জাস্ট ছিঁড়ে যাওয়া বাকি ছিল। জ্যাকেট আরও একটু মোটা হলে ভালো হয়। তবে একটা সুবিধা হয়েছে বই থেকে আলগা করা। পড়ার সময় খুলে পড়েছি যেন এক্সট্রা আর কোনো ভাজ না পড়ে। তো এবার বলি বাঁধাইয়ের কথা, মজবুত তবে পড়তে কোনো সমস্যা হয়নি। অফ-হোয়াইট পেজের মানও ভালো। বিশেষভাবে বলতে হয় বইয়ের হার্ডকভারের কথা, জ্যাকেটের বারোটা বেজে গেলেও বইয়ের ভিতরে কিছু হয়নি। কারণ হার্ডকভারের মান যথেষ্ট ভালো।

বানান ও সম্পাদনা

বইয়ে বানান ভুল আর টাইপিং মিস্টেকর পরিমাণ নগন্যই বলা চলে। ❝ র্ ❞- এ কিছু সমস্যা আছে। যে অক্ষরের উপর হবে সেটাতে না বসে পাশের অক্ষরে বসে গেছে (র্অজন)। পৃষ্ঠা- ১১


স্বরবর্ণের ব্যবহারে অল্প কিছু ভুল আছে; ইঠলো(উঠলো), অয়নায়(আয়নায়)। পৃষ্ঠা- ২৭, ৪৩


শব্দের মধ্যে থেকে অক্ষর মিসিং; কীভা ে(কীভাবে)। পৃষ্ঠা- ৪৪


দুটা শব্দ এক হয়ে গেছে; কিকোরণ(কি কারণ)। পৃষ্ঠা- ৫৩


একই অক্ষর ডাবল; আমমাকে(আমাকে)। পৃষ্ঠা- ৬১


কিছু পেজে লাইন ওভারল্যাপ করেছে। সেম লাইন একবার ফ্রন্ট মোটা তো আর একবার হালকা। ব্যাপারটা চোখে লাগে। এছাড়া আর তেমন কোনো সমস্যা নেই।


প্রচ্ছদ ও নামলিপি 

প্রথম দেখায় চোখে পড়ার মতো প্রচ্ছদ। তবে প্রচ্ছদ কিন্তু সে ঝড়ের রাতে ডার্সির গ্যারেজে যাওয়ার ঘটনার কথা মনে করিয়ে দেয়। উঁকি দিয়ে বেঞ্চের তলে কী দেখেছিল সে দৃশ্যপট। সাথে কয়েনের ছবি। কাহিনীর সাথে কীভাবে রিলেট হচ্ছে এটা পাঠক পড়েই বুঝবে। প্রচ্ছদ আর নামলিপির কালার কম্বিনেশনটা সুন্দর। নামলিপিতে দু'ধারে লাইট গ্রীন আর মাঝে ডিপ গ্রীনের মিশিংটা দারুণ।


ভিন্ন স্বাদের সাইকোলজিক্যাল মিস্ট্রি থ্রিলার ❝ অ্যা গুড ম্যারিজ ❞। তবে বলে নেয় সিরিয়াল কিলিংগুলো অতীতেই হয়ে গেছে এখন সে অতীতের পাতাগুলোকে পাঠক পুনরায় দেখবে ডার্সি অ্যান্ডারসনের চোখ দিয়ে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ