বই:- গ’ তে গালি, ফ’ তে ফেমিনিস্ট! লেখক:- ওয়াকিলা তাবাসসুম মুমু | বুক রিভিউ | Go The Gali Go The Feminist

বই:- গ’ তে গালি, ফ’ তে ফেমিনিস্ট!
লেখক:- ওয়াকিলা তাবাসসুম মুমু
জনরা:- সমসাময়িক বিষয়ক প্রবন্ধ 
প্রকাশনী:- চৈতন্য প্রকাশনী
ব্যক্তিগত রেটিং:- [৯/১০]
Review Credit 💕 Himadri Sharma

বই:- গ’ তে গালি, ফ’ তে ফেমিনিস্ট! লেখক:- ওয়াকিলা তাবাসসুম মুমু | বুক রিভিউ | Go The Gali Go The Feminist

বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে নারীরা সবসময়ই অবহেলিত। নারী মানেই সকল জায়গায় পুরুষের নিকট অসহায়ের মতো আত্নসমর্পণ করা, পুরুষদের দ্বারা হেয় প্রতিপন্ন হওয়া। একটা সময় ছিল এদেশের সমাজব্যবস্থায় একজন নারীকে শুধুমাত্র সন্তান উৎপাদনের জন্য ভাবা হতো। সেই দুঃসহ সময় অনেকটাই পেরিয়ে এসেছে এদেশের নারীরা। সমাজের প্রতিটি সেক্টরে পুরুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সমানতালে লড়ে যাচ্ছেন তারা। তবে এখনও নারীরা নির্যাতনের স্টিম রোলার থেকে মুক্ত হতে পারেননি। এই বইটি আপনাকে সমাজের করুণ এই চিত্রটি আরো গভীরভাবে অনুভব করতে শেখাবে। যেমনটা আমার ক্ষেত্রেও ঘটেছে।

ফেমিনিজম!! বর্তমান সময়ে খুব প্রচলিত একটি শব্দ। ফেমিনিজম নিয়ে সোসাইটির একেক ধরনের মানুষের একেক রকম দর্শন। আমি বরং আমার মতামতটি শেয়ার করি। একদম সোজাসাপটা যদি বলি তাহলে আমার কাছে ফেমিনিজম মানে হচ্ছে Gender Discrimination নির্মুল করা। অর্থাৎ, নারী ও পুরুষের মাঝে সাম্যবস্থা বিরাজ করবে সবসময়। সেটা নিত্যদিনের কেনাকাটার সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত বা পারিবারিক যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের বেলায়ও। এই ফেমিনিজমের মূল দর্শনটা যদি আমি কেবল একটি শব্দে বর্ণনা করতে চাই, তবে সেটা হবে- ইক্যুলিজম! (সমতাবিধান)

লেখিকা তাবাসসুম মুমু মূলত সমাজের নিষ্ঠুরতম এই বাস্তবতাকে তাঁর কলমীশক্তিতে স্থান দিয়েছেন। আর সেখান থেকেই সদ্য ভূমিষ্ট টকটকে লাল রঙা বাচ্চাটার নাম তিনি রেখেছেন- গ' তে গালি, ফ' তে ফেমিনিস্ট!
লেখিকার মতে এই যে নারী-পুরুষের বৈষম্য সেটার শুরু কিন্তু নিজেদের পরিবার থেকেই। আমিও কথাটার সাথে স্বমত পোষণ করছি। আমি দেখেছি একটি পরিবারে যখন দুটো শিশু (একটি ছেলে, অপরটি মেয়ে) বেড়ে উঠছে, তখন পরিবারের সবার ছেলে শিশুটির ব্যাপারে একরকম দৃষ্টিভঙ্গি থাকে, আবার কন্যা শিশুটির বেলায় দেখা মিলে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ! এই যেমন- কন্যা শিশুর জন্য কেনা হয় হাঁড়ি-পাতিল, থালা-বাসন; অন্যদিকে ছেলে শিশুটিকে দেয়া হয় ডাক্তারি সরঞ্জামের খেলনা কিংবা গাড়িজাতীয় খেলনা! একটি শিশু যখন সবেমাত্র পুরো জগতটাকে চিনতে শুরু করেছে, তখন যদি তার হাতে রান্নাবান্নার সরঞ্জাম তোলে দেয়া হয়, তাহলে অবচেতন মনে সে কিন্তু ভেবেই নিবে- একজন রাধুনি কিংবা ভালো রান্না জানাটা তার একমাত্র জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত। একটি বার ভেবে দেখেছেন,পরিবারের কন্যা শিশুটির কল্পনাশক্তিতে আমরা কেবল রান্নাঘরের মাঝেই আবদ্ধ করে রাখছি। এটা কি তবে সমতাবিধান???

আমি গ্রামে বেড়ে উঠেছি। স্কুলে পড়ালেখার সুবাদে মফস্বলেও নিত্য আনাগোনা ছিল আমার। গ্রাম ও মফস্বলের ভেতর কাঠামোগত পার্থক্য থাকলেও একটা বিষয়ে দুইয়ের মধ্যে মিল থাকতে দেখেছি আমি। আর সেটা হলো, রাতে মদ খেয়ে এসে বউকে বেধড়ক পেঠানো। কী এক পাশবিক নির্যাতন চলত ঘরের বউটার উপর! একটা মেয়ে যখন ছোটোবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখত পক্ষীরাজ ঘোড়ায় চড়ে বর এসে রাজার বেশে তাকে বউ করে ঘরে তুলে নিবে, সেই মেয়েকে যখন তার স্বামীর হাতে দিনের পর দিন মার খেতে হয় তখন সেই নারী নিজেকে অভাগা ভাবা ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারে না। ওদিকে পরিবার, সমাজ মেয়েটিকে স্বান্তনা দেয় এই বলে—‘একটু সহ্য করতে হয় মা। ওই একটু-আধটু স্বামীর মার সব মেয়েদেরই খেতে হয়।’ পরাধীন এই মেয়েগুলোর কষ্ট হয়তো লেখিকাকে ছুঁয়ে যায়, তিনি হয়তো পীড়িত হোন। তাইতো তিনি লিখেন- ‘রাতের বেলা স্বামীর বেধম মার খেলেও পরদিন সকালবেলা ঠোঁটে খয়েরি রঙের লিপস্টিক লাগিয়ে বাচ্চাকে স্কুলে দিতে হয়। চোখের জল বাষ্প হয়ে উড়ে যায় ফুটন্ত ভাতের ধোঁয়ার সাথে, গরম চায়ের কাপে।’

লেখিকা তাবাসসুম মুমু এই বইটিতে নারী নির্যাতনের পাশাপাশি পুরুষ নির্যাতনের কথাও লিখতে ভুলে যান নি! পরবর্তীকালে সেটা নিয়ে আরও বিস্তৃত আকারে লিখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। তাই হয়তো বইয়ের একদম শুরুতে লেখিকা লিখেছেন-
          ‘এই বইয়ে অনেক কিছুই পাবেন—
     কিন্তু যা পাবেন না তা হলো, পক্ষপাতিত্ব।’

বইয়ের শেষে এসে লেখিকা এই সমাজেরই কয়েকটা গল্প তোলে ধরেছেন। সেখানকার কোনো গল্প আমাকে ভাবিয়েছে, কোনো গল্প পড়ে চোখের কোণে একফোঁটা গরম জল অনুভব করেছি। কোনো গল্প পড়ে সত্যিকার অর্থেই সংগ্রামী হওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেছি, দমে না যাওয়ার প্রেরণা পেয়েছি। কিছু গল্প আমাকে সত্যিকারের পুরুষ হওয়ার চেতনা দিয়েছে। সেই পুরুষ, যে পুরুষের কাছে একজন নারী নিজেকে স্বাধীন ভাববে; সেই পুরুষ, যে পুরুষ রান্নার কাজে বউকে একটু কন্ট্রিবিউট করে তৃপ্তির এক হাসি দিবে; সেই পুরুষ, যে পুরুষ নিজের ইগো আর দাম্ভিকতাকে দমিয়ে রেখে প্রিয় মানুষটার এগিয়ে যাওয়ার পথে একজন ভালো বন্ধু হয়ে আর্বিভূত হবে। আমি তবে পুরুষ হবো, সত্যিকারের পুরুষ, আসল পুরুষ। 

কতটুকু ডেডিকেটেড হলে এমন একটা কঠিন কাজ সবার সামনে উপস্থাপন করা সম্ভব, সেটা লেখিকা তাবাসসুম মুমু দেখিয়ে দিয়েছেন। করোনার ভয়াবহতার সময়ে ঘরে আবদ্ধ না থেকে বস্তিতে বস্তিতে ঘুরে বেড়ানো, মানুষের সঙ্গে কথা বলা; কী প্রচন্ড খাটাখাটুনির পর লেখিকা গুরুত্বপূর্ণ এই বইটি দাঁড় করিয়েছেন। এমন একটা কাজের পেছনে কতটুকু পরিশ্রম করতে হয়েছে সেটা নিজে এক্সপেরিয়েন্স করার সুযোগ না পেলেও ঠাহর করতে পারছি ঠিকই।

এই বইটি নিছকই কেবল একটি বই নয়। এর থেকে বোধহয় একটুখানি বেশিই। ফেমিনিজম সম্পর্কে যারা বিস্তর জানতে চান, তাদের জন্য এই বইটি কাজে দিবে। গবেষণার কাজেও এই বইটি যথেষ্ট সহযোগিতা করবে। আপনি যদি এই বইটি না পড়ে থাকেন, তবে আমি বলছি- সংগ্রহ করুন, পড়ুন। আপনার আশপাশের বাস্তব ঘটনাপ্রবাহের সাথে মিলিয়ে পড়ুন। হয়তো আপনি একটু হলেও সচেতন আর দায়িত্বশীল হতে চাইবেন। লেখিকার সঙ্গে গলা মিলিয়ে বলতে চাই—‘ফেমিনিজমের চর্চা শুরু হোক আমাদের ঘরের ডাইনিং টেবিল হতে।‘
মানুষ বইতে বাঁচুক।

গ' তে গালি ফ' তে ফেমিনিস্ট! বই রিভিউ ২

এবং নারী-পুরুষ-সমাজের কিছু শুদ্ধ চিন্তার অভাব

Owakila Tabassum Mumu Review Credit 💕

ফেমিনিজম আসলে কি? এবং
ফেমিনিজম কেনো এখন একটা গালির রূপ ধারণ করলো? 
এই প্রশ্নের উত্তরই পাবেন বইয়ে। সাথে আছে ছোট একটা অনুসন্ধান বা রিসার্চ এবং কিছু এক্সক্লুসিভ ইন্টার্ভিউ!  
 ফেমিনিজম নিয়ে আমরা অনেকে অনেক কথা শুনি। সেই শোনা কথা থেকে আর চোখের সামনে গড়পড়তা কিছু উদাহরণ দেখে অনেকে অনেককিছু ভেবে বসে থাকি; কিন্তু ফেমিনিজম আসলে কি এবং আমাদের সমাজের সার্বিক পরিস্থিতি কি, আমরা সর্বসাধারণ সে জিনিস বুঝিইনা কিংবা বোঝার ভান করি আর যে যার অবস্থান থেকে বিচার করি।

 রচনার উপসংহারের মত শুরু করলে বলতে হবে, পৃথিবীতে সবকিছুরই দুটো দিক থাকে; ভালো এবং মন্দ। 
হালকা পেঁচিয়ে কঠিন করে বললে, এ ধরণীর যাহা কিছু দেখি আমরা এখন-তখন সবেরই আছে কিছু না কিছু গড়পড়তা ধরন ও ফাঁকফোকর। যেথায় দিবে ফাল, দেখে নিও তোমার পেছনকার গড়া জাল। 

থাক গে! এসব ভাবালুতার কথা বাদ দেই। স্পষ্টভাবে বলি। মানুষের মতের মিল হয়, বিরোধ হয়। এই বইও প্রত্যেকটি ব্যক্তির ভালো লাগবেনা। কারো খুব ভালো লাগবে, কারো কম বা বেশি, কেউ বা দাও নিয়ে কোপানোর ইচ্ছাও পোষণ করতে পারে এবং ভালো লাগা, ভালোবাসা, খারাপ বাসা, আলোচনা, সমালোচনা সবই আমি স্বাদরে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। 
আমি দুই চক্ষু মেলিয়া আশেপাশে উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিন্মবিত্ত সবখানে যা দেখেছি, কয়েক বছর যাবত তাবৎ ঢাকা শহরের বস্তিগুলো ঘুরে-ঘুরে, হাজারখানেক ঘরের ভেতর ও বাহির অবলোকন করে যা উপলব্ধি করেছি তাই উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি এই বইয়ে। 
আমি আশা করবো, আপনি যদি একজন পবিত্র মনের, স্বশিক্ষিত মানুষ হোন, এই বইয়ের সাথে নিজের সংযোগ ঘটাতে পারবেন, যদি এমন একজন মানুষ হোন যার কিনা জানার আগ্রহ প্রচন্ড সে অনেককিছুই জানবেন এবং শেষমেষ যদি সেই দলের যাত্রী হোন যারা কিনা প্রথমেই কিছু খতিয়ে না দেখে প্রশ্নবিদ্ধ করেন তাহলে আপনাকে শুধু একটা কথাই বলবো, দয়া করে ভাববেন কিন্তু সহজ-সরল্ভাবে এবং একদিন আলো খুজে পাবেন। 

আপনাকে স্বাগতম।
শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানবেন।

গ' তে গালি
ফ' তে ফেমিনিস্ট!
এবং নারী-পুরুষ-সমাজের কিছু শুদ্ধ চিন্তার অভাব

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ