বই: হাত বাড়িয়ে দাও
লেখক: ওরিয়ানা ফাল্লাচি
প্রকাশনী: সংহতি প্রকাশন
মুদ্রিত মূল্য: ১০০ টাকা
এই পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর মধুর শব্দ হলো 'মা'।বই: হাত বাড়িয়ে দাও |
সব ডাক ছাপিয়ে এই একটা শব্দই কেন যেন আমাদের কানে আসে। ছোট্ট একটা মাংসপিণ্ড থেকে যখন ধীরে ধীরে মায়ের গর্ভে তার সন্তান বেড়ে ওঠে কখনো কি ভেবে দেখেছি একজন 'মা' শুধুমাত্র সেই মাংস্পিন্ড টাকেই কত আগলে রাখার চেষ্টা করেন? কত স্নেহ করেন সেটাকে? সব ভালোলাগা মন্দলাগাকে উপেক্ষা করে কিভাবে সেই সন্তানকে ভালো রাখা যায় সেই চিন্তা করেন?
ঐ অবস্থায়ও গর্ভধারিণী মা পারেন দৌড়ে বেড়াতে, দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক ভাবে করতে কিন্তু তবুও তিনি থেমে যান, দিনশেষে ভয় পান পাছে তার সন্তানের কোনো ক্ষতি হয় কিনা সেটা ভেবে। ঐ মাংসপিণ্ডকে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখা হয়। নিজের পেটে হাত দিয়ে কত কথা বলেন তার অবুঝ সন্তানের সাথে। হয়ত মা যা বলছেন সেটা সে বুঝতে পারছেনা বা শুনতে পারছেনা কিন্তু তবুও মায়ের কথোপকথন চলতে থাকে। চলতে থাকে এই পৃথিবীতে সেই সন্তানের আপনজন কে আছে তাদের সাথে তাকে পরিচয় করিয়ে দেবার। এই অনুভূতি একমাত্র একজন 'মা' ই ভালো উপলব্ধি করার ক্ষমতা রাখেন।
মায়ের গর্ভে সন্তান নৈতিক ভাবে আসুক আর অনৈতিক ভাবে আসুক,ইচ্ছায় আসুক আর অনিচ্ছায় আসুক একজন মা কখনোই সেটার ধার ধারেন না। তিনি সেই শুরু থেকেই ভালোবেসে যান ঐ ছোট্ট মাংসপিণ্ডকে, ভালোবেসে যান মাংসপিন্ড হতে ধীরে ধীরে ব্যাঙাচির মত লেজ গজানো কোনো আকৃতির মানুষটাকে। আর ঠিক এই বিষয়টাকেই খুব গভীরভাবে দেখানোর চেষ্টা করেছেন ইতালির একজন জনপ্রিয় লেখিকা 'ওরিয়ানা ফাল্লাচি' যেখানে উঠে এসেছে বিশ্বযুদ্ধোত্তর ইতালির একটা সামাজিক অবস্থার কথা। ঐ সময়ে সন্তানের জন্ম দেয়া নিয়ে একজন নারীর বিড়ম্বনা এবং নানান সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার কথা। কিন্তু তারপরেও সারাদিনের ব্যস্ততার শেষে একাকি সময় পেলে সেই জীবনের মধ্যে বেড়ে ওঠা আরেকটা নতুন জীবনের সাথে কথা বলা।পৃথিবীতে সেই শিশুটির আগমনের পূর্বে তাকে এই নোংরা পৃথিবীর অবস্থা সম্পর্কে জানানো এসবই ছিল যেন সেই মায়ের সবথেকে আনন্দের কথোপকথন। লেখক যেন একজন 'মা' কে দিয়ে সকল মায়েদের গর্ভাবস্থাইয় তাদের অনুভূতির একটা চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
হাত বাড়িয়ে দাও লেখক: ওরিয়ানা ফাল্লাচি - বই রিভিউ | Hat Barea Saw By Oriana Fallacy
'হাত বাড়িয়ে দাও' বইটা ১৯৭৫ সালে প্রকাশিত 'লেটার টু এ চাইল্ড নেভার বর্ন' এর অনুবাদ।
বইটা নিয়ে আমার প্রতিক্রিয়া মিশ্র। কেন? বলছি।
বইটার ফ্ল্যাপ পড়ে যেমন ভেবেছিলাম তেমন লাগেনি। বইতে যতটা গর্ভে বেড়ে ওঠা সন্তানের সাথে একজন মায়ের সম্পর্ক দেখানো হয়েছে তার থেকে বেশি দেখানো হয়েছে ঐ মায়ের পারিপার্শ্বিক অবস্থা বা নিজের অবস্থা। কিছু কিছু জায়গায় সেই সন্তানের প্রতি মাঝে মাঝে অবহেলা বা অযত্নের ছাপ স্পষ্ট যার জন্য শেষ পরিণতিটা হয়ত ভালোভাবে ফুটে উঠেছে। অনুবাদ বেশ সাবলীল যার জন্য পড়তে তেমন অসুবিধা হয়নি। ৫০-৬০ পৃষ্ঠার বই তাই এক বসায় ই পড়ে ফেলা গিয়েছে। যাত্রাপথে সময় পেলে এ ধরনের বইয়ের বিকল্প নেই।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....