যেভাবে মা-বাবার হৃদয় জয় করবেন : শাইখ ইবরাহিম ইবনু সালেহ আল মাহমুদ । Jebave Ma Babar Hridoy Joy Korben by Sheikh Ibrahim Ibn Saleh Al Mahmud

যেভাবে মা-বাবার হৃদয় জয় করবেন
#৭ বেস্টসেলার আদব, আখলাক

লেখক : শাইখ ইবরাহিম ইবনু সালেহ আল মাহমুদ
প্রকাশনী : পথিক প্রকাশন
বিষয় : আদব, আখলাক
পৃষ্ঠা : 80, সংস্করণ : 1st edition 2020

Imge


অনুবাদ : সামী মিয়াদাদ চৌধুরীবইটি লেখার সময় এমন একটি মুসলিম পরিবারের চিত্র আমার মাথায় ছিলো—যে পরিবারে সবাই ভালোবাসা ও সম্মানের সাথে, হৃদয়ে প্রশান্তি নিয়ে পরস্পর একসাথে বসবাস করে। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, মা-বাবার প্রতি নমনীয় আচরনll করা ও তাদের সেবা-যত্ন করা যেকোন মুসলিম সন্তানের জন্য বাধ্যতামূলক কর্তব্য। এ ব্যাপারে অজুহাতের কোন সুযোগ নেই। এতে একজন মুসলিম ব্যক্তি নিজেও মানসিক প্রশান্তি অর্জন করে আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে সন্তুষ্ট করার মাধ্যমে সে দুনিয়া ও আখিরাতেও উত্তম প্রতিদান লাভ করে।

                 বই সম্পর্কে

আমার মুসলিম ভাই ও বোনেরা, এই বইটি লিখে আমি খুব আনন্দবোধ করেছি। হৃদয়ের দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ একটি সুখী ও সমৃদ্ধ মুসলিম পরিবারকে উদ্দেশ্য করেই বইটি আমি লিখেছি। বইটি লেখার সময় এমন একটি মুসলিম পরিবারের চিত্র আমার মাথায় ছিলো— যে পরিবারে সবাই ভালোবাসা ও সম্মানের সাথে, হৃদয়ে প্রশান্তি নিয়ে পরস্পর একসাথে বসবাস করে। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, মা-বাবার প্রতি নমনীয় আচরন করা ও তাদের সেবা-যত্ন করা যেকোন মুসলিম সন্তানের জন্য বাধ্যতামূলক কর্তব্য। এ ব্যাপারে অজুহাতের কোন সুযোগ নেই। এতে একজন মুসলিম ব্যক্তি নিজেও মানসিক প্রশান্তি অর্জন করে আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে সন্তুষ্ট করার মাধ্যমে সে দুনিয়া ও আখিরাতেও উত্তম প্রতিদান লাভ করে।

তবে, অনেক মুসলিম পরিবারের দিকে দৃষ্টি দিলে আমাদের হতাশ হয়ে পড়া ছাড়া কোন উপায় থাকে না। মুসলিম পরিবারের অনেক মা-বাবাই সন্তানদের অবাধ্যতা ও তাদের সাথে খারাপ ব্যবহারের অভিযোগ করে থাকেন। অধিকাংশ ছেলেরাই তাদের মা-বাবার অধিকার আদায়ে গাফিলতি করে এবং মা-বাবার চেয়ে স্ত্রী ও বন্ধুদের বেশী অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। এসব সন্তানদের কাউকে যদি তার মা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন বা কোন আত্মীয়ের বাসায় নিয়ে যেতে বলেন, তবে সে চিৎকার-চেঁচামেচি করে এবং মায়ের সাথে দূর্ব্যবহার করে।

          সম্পাদকের কথামালা

মা-বাবা আল্লাহর দেয়া পৃথিবীর সেরা উপহার। সন্তানের প্রতি মা-বাবার ভালোবাসা হচ্ছে নিখাঁদ ভালবাসা। এতে তাঁদের কোনো স্বার্থচিন্তা থাকে না। শিশু-সন্তানের প্রতিপালনের জন্য আল্লাহ মা-বাবার মনে এ ভালোবাসা দান করেছেন। এর কারণেই তাঁরা সন্তানের জন্য কষ্ট করেন। কোনো ধরণের বিরক্ত হন না। সন্তানের প্রতি স্নেহ-মমতার কারণে কত রাত জেগে কাটিয়ে দেন মা বাবা। সন্তান কাঁদে, দুধ পান করে, মা জেগে থাকেন। সন্তানের অসুখ-বিসুখ হয়, বাবা-মা রাত জেগে তার সেবা করেন। আবার দিনে মা ঘরের কাজ করেন, নীরবে, নিঃশব্দে, নিভৃতে নিজের সুখটুকু বিসর্জন দিয়ে নানান কায়দায় অর্থ সাশ্রয় করে সন্তানের জন্য সুখ কেনেন বাবা'রা। সন্তানকে ঘিরে মা-বাবার থাকে কত চিন্তা-ভাবনা, পরিশ্রম। ধীরে-ধীরে শিশু সন্তানকে বড় করে তোলেন। এজন্য আল্লাহ তায়ালা সন্তানকে আদেশ করেছেন সে যেন মা-বাবার সাথে ভাল ব্যবহার করে।

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেছেন—

‘তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কোনো একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না, তাদেরকে ধমক দিও না আর তাদের সাথে শিষ্টাচারপূর্ণ কথা বল। তাদের সামনে ভালোবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বল—হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তাঁরা আমাকে শৈশবকালে লালনপালন করেছেন।' [সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ২৩-২৪]

সন্তান যখন নিজের পায়ে দাঁড়ায়, কাজ করতে শিখে, তখন তারা বৃদ্ধ মা-বাবার কথা বেমালুম ভুলে যায়। বিশেষ করে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিয়ের পর সন্তানের কাছে মা-বাবা যেন এক বোঝায় পরিণত হন। ঘরের দামী দামী আসবাবপত্রের মধ্যে তখন মা-বাবাকে সবচেয়ে কম দামী মনে হয়। সন্তান তার ভালোবাসার নিবাসে মা-বাবাকে আশীর্বাদ মনে না করে তখন সমস্যা মনে করে। সে ভুলে যায় তার সে মায়ের কথা, যে মা তাকে দীর্ঘ দশমাস-দশদিন গর্ভে ধারণ করেছেন, কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে তাকে বুকের দুধ পান করিয়েছেন এবং আদর-যত্ন ও বুকভরা ভালোবাসা উজাড় করে দিয়ে তাকে লালনপালন করেছেন। সন্তানের কান্নার আওয়াজ শুনে মায়ের ব্যাকুল মন হাজারো কাজ ফেলে ছুটে যায় সন্তানের

কাছে। আর সন্তান গর্ভে ধারণ ও ভূমিষ্ঠ হওয়ার কষ্ট যে কত মর্মান্তিক তা কোন ভুক্তভোগী ছাড়া অন্য কেউ অনুভব করতে পারবে না। ঠিক একইভাবে সন্তানকে লালনপালন করতে গিয়ে বাবাকেও হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করতে হয়েছে। এত কষ্ট স্বীকার করে যে পিতা-মাতা সন্তানকে উপযুক্ত মানুষ হিসেবে গড়ে তুললেন, তাঁদের প্রতি সন্তানের কি দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকতে পারে তা সকলেরই বোধগম্য হওয়া উচিত। বাবা-মায়ের এই অবদানের কথা আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে এভাবে ঘোষণা করেছেন—

‘আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে গর্ভে ধারণ করেছেন। তার দুধ ছাড়ানো দু’বছরে হয়। নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ  হও। অবশেষে আমারই নিকট ফিরে আসতে হবে।' [সুরা লোকমান: ১৩]

মা-বাবা বৃদ্ধ বয়সে সন্তানের কাছে কোন ধন-দৌলত বা সোনা-দানা চান না, বরং তারা চান সন্তানের কাছে পরম মমতা ও ভালোবাসামাখা একটু চাহনী, একটু আশ্রয়। যদিও মা-বাবা তাদের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা দিয়ে সন্তানদের লালনপালন করেন এবং লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করেন নিঃস্বার্থভাবে। কিন্তু বর্ত হয় মান সমাজব্যবস্থা এসব সন্তানদের এতটাই আধুনিক করে ফেলতেছে যে, তারা নিজেদের আত্মপরিচয় পর্যন্ত ভুলে যেতে বসেছে। তাই সন্তানরা বড় হয়ে নিজেদের—মহাপন্ডিত মনে করে অবজ্ঞা করে নিজের সহজ-সরল মা-বাবাকে।

তারা আয়-রোজগার করে নিজেদের জন্য তৈরী করে বড় বড় দালানকোঠা, এসব বড় বড় দালানে তাদের অনেক জিনিস রাখার মত জায়গা থাকে, কিন্তু একটু জায়গা থাকে না মা-বাবার জন্য। তখন বৃদ্ধ মা-বাবার অনেকে কাঁধে তুলে নেন ভিক্ষার ঝুলি আবার কারো বা শেষ ঠিকানা হয় বৃদ্ধাশ্রম।

অনেক পরিবারে মা-বাবাকে রাখলেও তা যেন তাদের কাছে বোঝা মনে হয়। তাই সরাসরি কিছু না বললেও অনেকটা আকার ঈঙ্গিতে বুঝিয়ে দেয় যে মা-বাবা যেন তাদের সংসারে আপদ হয়ে আছেন এবং তারা এটা থেকে মুক্তি চায়। তাই তাদের উপর চলে এক ধরনের মানসিক নির্যাতন এবং বঞ্চিত করা হয় তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে। অথচ পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য অপরিসীম।

মা-বাবার সেবা যত্ন করার মাধ্যমে সন্তানেরা দুনিয়াবী কল্যাণের পাশাপাশি পরকালীন মুক্তির পথ নিশ্চিত করতে পারে। হযরত আবু বাকরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মাতা-পিতার অবাধ্যতা ছাড়া অন্য যে সকল গুণাহ রয়েছে, এগুলোর মধ্য থেকে অনেক গুনাহই

আল্লাহ ইচ্ছা করলে ক্ষমা করে দেন, কিন্তু মাতা-পিতার অবাধ্যকে আল্লাহ মৃত্যুর পূর্বেই দুনিয়াতে শাস্তি প্রদান করে থাকেন।' (বায়হাকী)

সন্তানের অসহায়ত্বের সময় মা-বাবা যদি তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন তাহলে মা-বাবার অসহায়ত্বের সময় সন্তান কেন তার দায়িত্ব পালন করবে না? যে বাবা-মা এক সময় নিজে না খেয়েও সন্তানের মুখে তুলে খাইয়ে দিতেন, তারা আজ কোথায় আছেন, কেমন আছেন, তাদের খোঁজখবর নেয়ার সময় আমাদের নেই। তার নিজের সন্তানও হয়তো একদিন তার সঙ্গে এমন আচরণই করবে। তাই মা-বাবার প্রতি যত্নবান হোন। আপনার মা-বাবাই আপনার জান্নাত-জাহান্নাম।

মা-বার সাথে আমাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত? কী করলে আমরা আমাদের

মা-বাবার হৃদয় জয় করে জান্নাত অর্জন করতে পারবো, এই বিষয়টি নিয়ে শাইখ

ইবরাহিম ইবনু সালেহ আল মাহমুদ ইংরেজী ভাষায় রচনা করেছেন— “How to be kind your parents” ছোট্ট একটি বই। পাশাপাশি কলমের আঁচড়ে তুলে ধরেছেন বাধ্য এবং অবাধ্য সন্তানদের বিভিন্ন ঘটনা। আশা করি কঠিন এবং অনুর্বর হৃদয়ে এই ছোট্ট পুস্তিকায় মা-বাবার প্রতি ভালোবাসার বীজ বুনাবে। বিয-নিল্লাহি। ইংরেজী এ বইটি অনুবাদ করে বাংলাভাষী পাঠকদের সমীপে তুলে ধরার খেদমতটি করেছেন সামী মিয়াদাদ চৌধুরী ভাই। মহান রব তার হৃদয় এবং কলমের শক্তিকে আরো বাড়িয়ে দিন। এই বিশাল কাজে নিজেকে অংশীদার করতে পেরে মহান রবের দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।

পরিশেষে আল্লাহর দরবারে দুআ করছি, মহান রব যেন এই বইটির লেখক, অনুবাদক, প্রকাশকসহ সবাইকে জান্নাতের চিরস্থায়ী সুখ দান করেন। আমীন।

আরো পড়তে অথবা দেখতেঅনুগ্রহকরেHardcopyক্রয় করুন।we Respect Every Author Hardwork-boipaw team।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ