বই : মানবতার দেয়াল লেখক নাবিল হায়দার - বুক রিভিউ | Manobotar Deyal By Nabil Haydar

বই : মানবতার দেয়াল 
লেখক : Nabil Hayder 
প্রকাশনায় : পরিবর্তন প্রকাশন
প্রকাশকাল : অমর একুশে বই মেলা মার্চ ২০২২
অনলাইন পরিবেশক : রকমারি
বইয়ের ধরণ : সামাজিক উপন্যাস। 
মূল্য : ২৭৫/-
উৎসর্গ : বাবা-মা


বিষয়বস্তু ও মূল আলোচনাঃ 
আজকাল সমাজের তথাকথিত বাস্তব সমস্যা গুলো এই উপন্যাসে তুলে ধরা হয়েছে। সমাজে এইসব সমস্যার পিছনে থাকা কিছু মুখোস দারী বিত্তবান শ্রেণির মানুষের নৈতিক এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ড সমূহ বইটির মূল বিষয় বস্তু।অনেকে ক্ষমতার জুড়ে নিজের দুষ গুলোকে ডেকে দেয়,চাপিয়ে দেয় কিছু নিরিহ মানুষের উপর। সমাজের সমস্যা গুলোর সাথে লেখক ইসলামিক অনেক বিষয় চমৎকার ভাবে উল্লেখ করেছেন। নারী মানেই ধৈর্য ধারন ক্ষমতা রাখে লেখক খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন। ইসলামিক অনেক দিক উল্লেখ করেছেন যা থেকে অনেক কিছু শিখার আছে।

বইটিতে ইতি আর সানজিদা দুই বান্ধবী। দুজনেই অনেক ধৈর্যশীল, সানজিদা ইসলামিক মাইন্ডের আর ইতি আধুনিক। সানজিদা ইতিকেউ তার মত করে গড়ে তুলে। সানজিদা ইমতিয়াজকে ভালোবাসত কিন্তু বলার সাহস হয়ে উঠেনি। অপর দিকে ইমতিয়াজ এর বন্ধু তানিমকে ভালোবাসত ইতি।
ইমতিয়াজ এর সাথে সানজিদার বিয়ে ঠিক করেছিল,কিন্তু তানিমের বোন ফাইজা ইমতিয়াজকে বিয়ে করতে চায়।তানিমের বাবা চেয়ারম্যান তিনি টাকা আর ক্ষমতাবলে সমাজে নানা অপকর্ম করে থাকেন।ফাইজাকে বিয়ে করতে না করায় ইমতিয়াজকে নারী দর্ষন মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়।ইমতিয়াজ ধার্মিক ন্যায়বান যুবক,খুবই পরহেজগার। কিছুদিন পর জানা যায় সে জেলের মধ্যে আত্মহত্যা করেছেন।এই খবর শুনার পর তানিম পাগলের মত হয়ে পরেছে, স্মৃতি শক্তি লোপ পেয়েছে।এই অবস্থা জেনেও ইতি তানিমকে বিয়ে করে।বিয়ের তিন বছর চলে যায় কিন্তু ইতি স্বামী অধিকার পায়নি।
অন্যদিকে ইতির ভাই এক হিন্দু সম্প্রদায়ের মেয়েকে ভালোবাসে। মেয়েটি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবে, তবুও সে আয়ানকে চায়। জর্জ কোর্টে সুন্দর করে বলে দিল স্মিতা সে আয়ানের জন্য ইসলাম গ্রহণ করেনি।আয়ান ছারা ইসলাম ধর্মের যে কারও কাছে বিয়ে দিলে সে আপত্তি করবেনা।যার ফলে কোর্ট স্মিতার পক্ষে রায় দেয়
ইমতিয়াজ কি সত্যি আত্মহত্যা করেছে?সানজিদার কি হলো??তানিম কি সুস্থ হয়েছে?ইতি কি সুখের দেখা পেল??তানিমের বাবা কি তার শাস্তি পেয়েছে??এই সব কিছুই খুব সুন্দর করে লেখক বর্ণনা করেছেন। 

১৭৬ পৃষ্টার এই বইটিতে যা সম্পূর্ণ বর্ণনা দেওয়া সম্ভব হয়নি।অনেক সুন্দর একটি সামাজিক উপন্যাস। 

আমি যতই পড়েছি, ততই ইচ্ছে হচ্ছিল আরও পড়ি।কথায় আছে শেষ হয়ে হইলনা শেষ।শেষ হয়েগেছে তবু আরও পড়ার ইচ্ছে রয়ে গেছে।  
প্রিয় কিছু লাইনঃ 
👉✌️আমার ভেতরটা বিদ্রোহ করে বসল।বলল,ইতি তুইও কাদঁ।চোখের জলে ভাসিয়ে দে সবকিছু। সবকিছু না- দিতে পারলেও আমাতে জমা দুঃখগুলো ভাসিয়ে দে। উজানে গিয়ে অচেনা কোনো ঘাটে তা লাগুক।আর না হয় সমুদ্রের উর্মিমালার সঙ্গে বন্ধুত্ব করে নিক।দে,ভাসিয়ে দে সব

👉✌️"এখানে আমার দোষ নেই। তবু আমি হার মানলাম, মাফ চাইলাম। কারণ, আমি জানি, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হলে এক পক্ষকে অবশ্যই হার মানতে হয়। ভুল না হলেও তা স্বীকার করতে হয়। অন্তত এক পক্ষ শ্রদ্ধাশীল ও বিনয়ী হতে হয়।" (আমার খুব প্রিয় এই কথাগুলো)। 

👉আমাদের ভেতরের খবর অন্যরা জেনে কি করবে?
সহমর্মিতা ও সমবেদনা জানাবে ! তা দিয়ে আমি কি করবো? তার চেয়ে ভালো সব খবর নিজের ভেতরে চাপা দিয়ে রাখি!

বইটি সম্পর্কে আমার অনুভূতিঃ 
বইটি যখন আমি পড়ছিলাম ইচ্ছে হচ্ছিল শেষ করেই উঠব। বইয়ের প্রত্যেকটা ঘটনা আজকাল আমাদের আশেপাশে বিরাজমান। অনেক ঘটনা ঘটে,অনেক সময় এর প্রকৃত দুষিকে আমরা খোজে পাইনা,আর পেলেও মুখ খুলতে পারিনা ভয়ে।কারণ তারা প্রভাবশালী আমাদের সত্য কথাটা মিথ্যে করা তাদের ১ মিনিটের ও প্রয়োজন হয়না।অনেক সুন্দর করে বর্ণনা করেছেন বাস্তব কাহিনি গুলো। আমরা এভাবেই দিনের পর দিন সুবিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। পেপার কভারের বইটি দেখতে ছোট দেখা যায় বাস্তবে বিপুল শব্দে সমৃদ্ধ এই বইটি। আমার দৃষ্টিতে বইটি মোটামুটি নিখুঁত। নবীন লেখক হিসেবে অনেক অনেক ভালো লিখেছেন।লিখে সব কিছু প্রকাশ করা যায়না।এক কথায় অসাধারণ, সত্যি অসম্ভব উপস্থাপন। শুভকামনা রইলো আপনার জন্য। দুয়া করি অনেক দুরে এগিয়ে যান। 

আমি বইটি পড়ে মুগ্ধ হয়েছি।আমি বলব আপনারও বইটি পড়েন।এ বই থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। আশাকরি টাকা নষ্ট হবেনা সময় ও বৃথা যাবে না।
ব্যাক্তিগত রেটিং : ১০/১০

রিভিউ লেখিকাঃ খাদিজা আক্তার

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ