মখমলী ভালোবাসা লেখক : ড. কারীম আশ শাযিলী | বই রিভিউ ২ | Mokhmoli Valobasha

বই: মখমলী ভালোবাসা
লেখক : ড. কারীম আশ শাযিলী
অনুবাদক : রুকাইয়া মাবরুরা
বিষয় : বিবাহ ও দাম্পত্য জীবন 
বাইন্ডিং : হার্ডকাভার
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ২২০
মুদ্রিত মূল্য ৩০০
অফার মূল্য ২১০

মখমলী ভালোবাসা লেখক : ড. কারীম আশ শাযিলী | বই রিভিউ ২ | Mokhmoli Valobasha
ছবি : মখমলী ভালোবাসা

একজন নারী “প্রেমিক পুরুষ” বলতে বোঝে, নীরব শ্রোতা, অকৃপণ দুটি হাত আর এমন একটি আকাশসম হৃদয় — যেখানে নিরাপদে জমা রাখা যায় দু'চোখের শত স্বপ্ন।

ইমাদ ও মারইয়ামের একটি চরিত্র আমাদের এ দাবীকেই চিত্রায়ণ করে। একটু বিশ্লেষণ করলে দেখতে পাব আমাদের দাবী কতটা নির্ভুল।

মারইয়াম (রাগতস্বরে) : আমি বুঝতে পারছি না আমার অফিসের ম্যাম কী চায় বলো তো!
ইমাদ (নিরস গলায়) : কী হয়েছে সেটা তো বলো!
: মহিলাটা সব সময় আমার পেছনে লেগে থাকে। আমার সব কাজে হস্তক্ষেপ না করলে কি তার হয় না? আমাকে যেন মানুষ হিসেবে গোনেই না! আমার শারীরীক অবস্থাটাও একটু বিবেচনা করে না।
ইমাদ : আরে সে তো অফিসের দায়িত্বশীল। অন্য সবার মতো তোমার কাজেও হস্তক্ষেপ করার অধিকার তার আছে।
মারইয়াম ঃ আরে না, তার উদ্দেশ্য হলো আমি যেন কোনো কাজ সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে না পারি।
ইমাদ ঃ তুমি সব কিছু নিয়েই একটু বেশি ভাবো। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দাও। এখন এসব বিষয় নিয়ে ঝগড়া করার সময় সময় আমার নেই।
মারইয়াম ঃ তুমি সব সময় এরকম। আমাকে কখনো বুঝতে চাও না। আমার কথা একটুও দাম দাও না।
ইমাদ ঃ আচ্ছা ভালো হয়েছে যাও। সামনে থেকে তোমার অফিসের ব্যাপারে আমাকে কিছু বলবে না। আমার কোনো মতামতও চাইবে না। 
এরপর দুজনেই পিঠে পিঠ ফিরিয়ে চুপ করে শুয়ে পড়ল।

এবার একটু বিশ্লেষণ এ আসা যাক। এই পরিস্থিতিতে মারইয়াম খুব করে চাচ্ছিল একটি নীরব শ্রবণেন্দ্রিয়; যেটা তার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনবে। এমন একটি হৃদয় যা তার সমস্যাকে গুরুত্ব দিয়ে অনুধাবন করবে। এমন একটি অকৃপণ হাত যা তার জন্য উদার হবে। কিন্তু মারইয়ামের আাশার গুড়ে বালি দিয়ে ইমাদ নিরস গলায় যুক্তির নুড়ি পাথর ছিটিয়ে গেল।

ইমাদ যদিও বুঝতে পেরেছে, মারিয়াম হৃদয়ের আকুলতা ব্যাক্ত করে একটু ভালোবাসার পসরা সাজাতে চাইছে অথবা পরিস্থিতি মোকাবেলার উপায় জানতে চাইছে কিন্তু ইমাদের এমন কাটখোট্টা জবাব কি মারিয়াম কামনা করেছিল?

এখন প্রশ্ন হলো, তাহলে জবাবগুলো কেমন হতে পারত; যা শুনে মারইয়ামের খা খা করা মরুহৃদয়ে শীতল পরশ হতো? তাহলে আসুন আমরা একটু ভিন্ন আঙ্গিকে মারইয়াম এবং ইমাদের চরিত্র চিত্রায়ন করি—

মারিয়াম (রাগত স্বরে) ঃ আমি বুঝতে
পারছি না অফিসের ম্যাম কী চায়।
ইমাদ ঃ একটু শান্ত হও আমার প্রিয়তমা! কী হয়েছে খুলে বল।
ঃ আরে সে সব সময় আমার পেছনে লেগেই থাকে। আমার সব কাজে হস্তক্ষেপ না করলে তার হয় না। আমার বর্তমান অবস্থারও তো একটু বিবেচনা করতে পারে।
ইমাদ মারইয়ামের কাধে হাত রেখে বলল ঃ তুমি তো নিজের কাজে যথেষ্ট পরিশ্রমী। কেউ হাজার চেষ্টা করলেও এর বিপরীত প্রমান করতে পারবে না। এই সামান্য বিষয় যেন তোমার রূপের আয়নাই পর্দা না ফেলতে পারে মারিয়াম!
ঃ কিন্তু তার কাজকারবার আমার ভালো লাগছে না।
ইমাদ (আদুরে গলায়) ঃ আরে সে তো নিজের চাকরি নিয়ে চিন্তায় আছে। তোমার পরিশ্রম ও একনিষ্ঠতার ধারে কাছেও সে যেতে পারবে না। এসব লোকদের কথা ভেবে সংকীর্ণতাই ভুগবে না। চলো, ঘুমুতে যাই! তোমার রূপের জোসনা আমার থেকে আর আড়াল রেখ না।
মারইয়ামের ঠোঁটের কোনায় ঝিলিক দিয়ে ওঠে —
হাহাহা.... জাযাকুমুল্লাহ.. চলো...। 

খেয়াল করুন— দ্বিতীয় চিত্রে যদিও আমরা রোমান্টিকতার পরশ দেখতে পেয়েছি কিন্তু এই দু'টি ভিন্ন চিত্রের মৌলিক পার্থক্যটা কেবল রোমান্টিকতা থাকা না থাকার কারণে কিন্তু নয়। পার্থক্যটা আরও আরো সূক্ষ্ম। প্রথম চিত্রের বিপরীতে দ্বিতীয় চিত্রে ইমাদ তার স্ত্রীর মানসিক অবস্থা বুঝে নিয়েছিল — এখন তার দরকার একটা বেলে মাটির মন, যেটা হৃদয়ের ব্যাকুলতা সর্বাঙ্গে শুষে নেবে। একটা নির্লিপ্ত কানের প্রয়োজন, যা তার সসম্যাগুলো বুঝবে; সমাধানের পথ
বাতলে দেবে।

স্বাভাবিকভাবে মানুষ যখন বুঝতে পারে তার এমন একজন লোক রয়েছে, যে তার আবেগগুলো স্পর্শ করতে পারে — তখন মনটা বড় প্রশান্ত হয়ে যায়। আর অনুভবের সেই সত্ত্বাটি যদি হয় জীবন ভাগাভাগি করে চলা মানুষটি, সবচে প্রিয় মানুষটি — তাহলে হৃদয়ের
আকুলতা নিয়ন্ত্রণ করা কীভাবে সম্ভব বলুন!

অবশ্যই আপনার মনে রাখতে হবে, মেয়ে মানুষ সাধারণত আবেগ-অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। বিশ্বাস করা মানুষটির কাছে সব ঝেড়ে ফেলতে চায়। এক্ষেত্রে আপনার সবচেয়ে বড় ভুল হবে, যদি আপনি তার আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে চান। হয়ত ভাবছেন তাকে থামিয়ে দিয়ে আপনি তার সহযোগিতা করছেন। দুশ্চিন্তা দূর করে দিচ্ছেন অথবা তার সমস্যা সমাধান করে দিচ্ছেন, তাহলে এটা ভুল ভাবনা। তার এখন এই কাটখোট্টা সমাধানের প্রয়োজন নেই। সে শুধু চাইছে বুকের মাঝে খচখচ করতে থাকা কথা গুলো আপনার কানে, আপনার হৃদয়ে ঢেলে একটু হালকা হতে।

" মখমলী ভালোবাসা " বই থেকে একটুখানি।

Book Review Credit 💕 Ismail Hossain

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ