বিয়ে ও সমকালীন মুসলিম মনস্তত্ত্ব

বিয়ে কী?

একটি জমিতে ফসল উৎপাদন ও আহরণের জন্য নির্দিষ্ট কিছু নিয়মের অনুসরণ করতে হয়। যদি নিয়ম ছাড়া ফসল উৎপাদনের চেষ্টা করা হয় তবে অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে। তেমনই এই পৃথিবীতে মানবজাতির ফসল উৎপাদনের সর্বপ্রথম ও প্রধান নীতিমালা হলো বিয়ে। সৃষ্টিগতভাবেই পুরুষ ও নারী—এক শ্রেণি আরেক শ্রেণির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে থাকে। সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনের লক্ষ্যে এই বিপরীতমুখী দুই শ্রেণি— পুরুষ ও নারীর পারস্পরিক সমন্বয়, বোঝাপড়া, একে অন্যের প্রতি বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, ধৈর্যসহ মানুষের জীবনের সমস্ত সম্পর্কের একটি পরিপূর্ণ রূপের সমষ্টি হলো বিয়ের মাধ্যমে গড়া স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক।



বিয়ে মানে যৌতুকের নামে ভিক্ষা করা নয়; বরং একটি মেয়ের সারা জীবনের দায়িত্ব নেওয়া। অন্যদিকে বিয়ের মাধ্যমে একটি মেয়েও তার স্বামীর প্রতি দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়। মূলত স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের আয়নাস্বরূপ। অনেক স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে মনোমালিন্য হয়। এটা শুধুই ভালোবাসার অভাব নয়; বরং ভালোবাসতে না জানার অভাব।

প্রিয় পাঠক! একটু মনোযোগ দিয়ে ভাবুন, আমরা কেন নিজেকে সাজাই? অবশ্যই অন্যের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা পাবার জন্য। অথবা আপনি অন্যের প্রশংসা নয়; বরং নিজেকে নিজের মতো করে উপভোগ করতে চান। মূলত এটাই স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। বিয়ের মাধ্যমে দুজন এক দীর্ঘ পথযাত্রা শুরু করে আর সেই যাত্রার মূল এবং সবচেয়ে বড় পুঁজি হলো ভালোবাসা। আপনি যখন কাউকে ভালোবাসেন তখন ভালোবাসার মানুষকে সর্বক্ষণ খুশি রাখার চেষ্টা করেন। যে কাজ, যে আচরণ করলে আপনার ভালোবাসার মানুষটি খুশি হবে ঠিক সেইভাবেই আপনি নিজেকে পরিচালিত করেন। এককথায়, নিজের ইচ্ছাকে ভালোবাসার মানুষের পছন্দের কাছে সঁপে দেন। আর এসব করার কারণ হলো, আপনি ভালোবেসে নিজেও তৃপ্তি অনুভব করেন। 

তাই প্রকৃতার্থে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা থাকলে স্বামী তার স্ত্রীর সেবক হিসেবে কাজ করবে আজীবন। অন্যদিকে স্ত্রীর মধ্যে স্বামীর প্রতি ভালোবাসা থাকলে সে স্বামীর পছন্দকে প্রাধান্য দেবে। অধিকারের নামে ঝগড়া করবে না। ব্যক্তিগত পছন্দের নামে নিজে বাজারে গিয়ে পণ্যদ্রব্য কিনতে ভিড় করবে না। কারণ স্বামী স্ত্রীর জন্য যা আনবে তা-ই স্ত্রীর কাছে সন্তোষজনক মনে হবে, এটাই ভালোবাসার দাবি।

এক গরিব লোক এক থোকা আঙুর হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উপহার হিসেবে দিলো। পাশেই বিভিন্ন সাহাবায়ে কেরামগণ উপস্থিত ছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঙুরের থোকা থেকে একটা আঙুর ছিড়ে মুখে দিলেন, তারপর এক এক করে সবগুলো আঙুর খেয়ে ফেললেন; কিন্তু পাশে বসে থাকা সাহাবাদের কাউকে আঙুর সাধলেন না। চোখের সামনে প্রিয় নবির এভাবে আঙুর খাওয়া দেখে গরিব লোকটি অনেক খুশি হলো। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। লোকটি চলে যাবার পর এক সাহাবি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি কীভাবে একাই সব আঙুর খেয়ে ফেললেন! আমাদের কাউকে একটু ভাগ দিলেন না!” সাহাবির প্রশ্ন শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হেসে উত্তর দিলেন, “আমি একাই সব আঙুর খেয়ে ফেলেছি কারণ আঙুরগুলো টক ছিল। যদি আমি তোমাদেরকে আঙুর খেতে সাধতাম, তোমাদের মুখভঙ্গি দেখেই হয়তো লোকটি বুঝে ফেলত এবং কষ্ট পেত। তাই আমি চিন্তা করে দেখলাম, যদি আঙুরগুলো আমি একাই আনন্দের সাথে খেয়ে ফেলি, লোকটি খুশি হবে এবং এটাই সবদিক দিয়ে ভালো।”

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পুরো জীবনটাই এমন অসংখ্য উদাহরণ দিয়ে পরিপূর্ণ। এটাই ভালোবাসা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে ভালোবেসেছিলেন। টক আঙুর খেতে কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও তিনি খেলেন। পাছে যে লোকটি আঙুর নিয়ে এসেছে সে কষ্ট পায়। আমার খেতে কষ্ট হচ্ছে খাব কেন? এই যুক্তিকে ঢেকে দিলেন ভালোবাসার চাদর দিয়ে। ভালোবাসা মানুষকে সকল যুক্তি-তর্কের বাইরে কল্পনা করতে শেখায়। আর এই কল্পনাই হৃদয়ের জমিনে এমন ফুলের আর ফলের বাগান আবাদ করে, যা থেকে অনন্তকাল উপকৃত হওয়া যায় বিরামহীনভাবে।

 ভালোবাসার এই বাগানবাড়িতে তৃতীয় পক্ষের (পরকীয়ার) কোনো সুযোগই থাকে না। কারণ ভালোবাসা একটি শক্তি আর শক্তি কেবল রূপ বদলায়। কখনো ধ্বংস হয় না।

বিয়ের নিয়ম

ছেলে-মেয়ে উভয়ের সম্মতিতে বিয়ে হবে, এটাই সত্য। জোরজবরদস্তি করে সম্পর্ক হয় না। আর যেহেতু বিয়ে একটা সামাজিক স্বীকৃতিও বটে তাই সাক্ষী রাখা সামাজিক দাবি। এই ক্ষেত্রে ইসলামের দেওয়া নিয়মগুলো সত্যিই প্রশংসাযোগ্য। যেমন, ইসলামে বিয়েতে মেয়ের সম্মতি আবশ্যক।

হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত। এক কুমারী মেয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, “আমার পিতা আমার অপছন্দ সত্ত্বেও বিয়ে দিয়েছে।” তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে মেয়েকে অধিকার দিলেন, সে যাকে ইচ্ছে বিয়ে করতে পারে বা এ বিয়ে রাখতেও পারবে। (১)

তার মানে এটা নয় যে, মেয়ে যেনতেন একটা ছেলেকে পছন্দ করবে আর বাবা-মা সেটা মেনে নিতে বাধ্য হবেন। বরং বাস্তবতার নিরিখেও এটা বেমানান। যে ছেলেটা নেশাগ্রস্ত, তার সাথে ভদ্র মেয়ের বিয়ে একটি পরিবার কোনোভাবেই মেনে নিতে পারে না। মেয়ের পরিবারের সাথে সম্পদ, বংশ মর্যাদার বিস্তর তফাত বড় সমস্যা ডেকে আনে। যে মেয়েটা ১০ হাজার টাকার জামা পরায় অভ্যস্ত তাকে আপনি ৩ হাজার টাকার জামা দিলে তো সমস্যা হতেই পারে। আর সেজন্য ছেলে-মেয়ে উভয়েরই সমতার দিক লক্ষ রেখে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে ইসলামের পরিপূর্ণ সৌন্দর্যের প্রমাণ বিদ্যমান।

উম্মুল মুমিনিন হযরত আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা ভবিষ্যৎ বংশধরদের স্বার্থে

১. মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-২৪৬৯, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-১৮৭৫, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-২০৯৬, সুনানুল কুবরা নাসায়ি, হাদিস নং-৫৩৬৬, সুনানে দারে কুতনি, হাদিস নং-৩৫৬৬।

উত্তম মহিলা গ্রহণ করো এবং সমতা (কুফু) বিবেচনায় বিবাহ করো, আর বিবাহ দিতেও সমতার প্রতি লক্ষ রাখো। (২)

এ ক্ষেত্রে আপনার হিসাবকে আরও সহজ করে দিয়েছে ইসলাম।

জাবির রা. হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মহিলাদেরকে বিয়ে করা হয় তাদের দ্বীনদারী, ধন-সম্পদ ও সৌন্দর্য দেখে। অবশ্যই তুমি দ্বীনদার পাত্রীকে বেশি অগ্রাধিকার দেবে, কল্যাণে তোমার হাত পরিপূর্ণ হবে।"(৩)

মেয়ের সম্মতি নিয়ে তার উকিল (অবশ্যই দূরের নয়; বাবা, ভাই, চাচা) দুজন সাক্ষীর (দুজন ছেলে অথবা একজন ছেলে এবং দুজন নারীর) সামনে ছেলেকে প্রস্তাব দেবে। তখন ছেলে কবুল করবে। আর ইসলামি বিয়েতে আগে খুতবা তারপর ইজাব কবুল করানো হয়। এটাও চমৎকার একটি শিক্ষা। বিয়ের আগে সদাচরণের যে উপদেশ, নীতিমালার বিবৃতি দেওয়া হয় সেটা বিয়ের পূর্বে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে একে অন্যের মধ্যে একটি “প্রোঅ্যাক্টিভ ব্রেইন ওয়েভ” তৈরি করে।

বিয়ের স্বাস্থ্যগত গুরুত্ব

মানুষ সৃষ্টির সেরা ও প্রকৃতির সবচেয়ে জরুরি উপাদান। কারও হস্তক্ষেপ ব্যতীত সুস্থ ও সুশৃঙ্খলভাবে এই জরুরি উপাদানের বিস্তার ঘটানোর জন্য বিয়ে হচ্ছে একটি সুনিপুণ পবিত্র নীতিমালা। বিয়ে ব্যতীত সরাসরি ছেলে মেয়ের মিলন হলেও সন্তান হবে পৃথিবীতে। কিন্তু শুধু প্রকৃতি ও সমাজের দাবিই নয়; বরং মানুষের ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবনসহ সকল ক্ষেত্রে বিয়ের প্রয়োজনীয়তা বর্ণনাতীত। 

US National Library of Medicine, National Institutes of Health-এ ১৮ জুন, ২০১৪ “Marital Status, Marital Transitions and Health : A Gendered Life Course Perspective" শিরোনামে একটি

বড়সড় আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়, যেখানে দাবি করা হয়েছে : Married individuals report better self assessed health, have lower rates of long

২. ইবনে মাজাহ, ১/১৪১, হাদিস নং-১৯৬৮। °. সুনানে তিরমিজি, ১/২০৭, হাদিস নং-১০৮৬।

term illness, are less depressed and live longer than their unmarried counterparts.

অর্থাৎ,

“বিবাহিত ব্যক্তিরা নিজেরা মনে করে যে তারা ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী, তাদের দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতার হার কম, বিষণ্নতা কম এবং তারা অবিবাহিতদের চেয়ে দীর্ঘজীবী হয়। (৪)

American Journal of Sociology-এ বলা হয়,

both married men and women show substantially lower risks of dying than those who are not married.

“অবিবাহিতদের তুলনায় বিবাহিত নারী এবং পুরুষ উভয়েরই মৃত্যুর ঝুঁকি কম দেখা গেছে। (৫)

The University of Chicago Press এটি প্রকাশ করে “Marital Disruption and Mortality

শিরোনামে। মানুষ সামাজিক জীব’ এই একটি কথা যদি আমরা বুঝতে পারি, বিয়ের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে তখন একমত হতে আর বাধা থাকে না। মানুষ চায় অন্যের সাথে নিজের অনুভূতি বিনিময় করতে এবং সে বন্ধুত্ব কামনা করে। প্রকৃতিগতভাবেই আমাদের মনে এই প্রোগ্রাম স্থাপন করে দেওয়া হয়েছে। 

পরস্পরের অনুভূতি আদান প্রদানের মাধ্যমে দুজন ব্যক্তির মধ্যে শক্ত একটি বন্ধন তৈরি হয়, যেখানে আমরা আমাদের মনের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, সব রকম অনুভূতি প্রকাশ করে মনকে সহজ করতে পারি, হালকা করতে পারি। গবেষকরা প্রমাণ করেছেন, . যত বেশি আপনি নিজের অনুভূতিগুলো নিজের ভেতর বোতলজাত করে রাখবেন, বাইরের পৃথিবী থেকে তত বেশি দূরে সরে আপনি ক্রমশ নিজের ভেতর অবরুদ্ধ হতে থাকবেন এবং আপনার ভেতর তত বেশি আড়ষ্টতা ভর করবে। ধীরে ধীরে জড় হয়ে যাবেন আপনি। আপনার মন থেকে চাপা অনুভূতিগুলো মুক্ত হয়ে আপনার জার যদি খালি হয়ে যায় তবেই

Williams, K., & Umberson, D. (2004). Marital status, marital transitions, and health: a gendered life course perspective. Journal of health and social behavior, 45(1), 81-98. . Lee A. Lillard and Linda J. Waite. Til Death Do Us Part: Marital Disruption and Mortality. American Journal of Sociology 1995 100:5, 1131-1156

আপনি আরও ভালো থাকতে পারবেন। মনোবিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা করেছেন যে, মানুষ তার অভ্যন্তরীণ চিন্তাগুলি আদান-প্রদানের ফলে নিজেকে নিজে ও আশেপাশের মানুষকে বুঝতে আরও বেশি সাহায্য করে এবং তার জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথ আরও সুগম হয়। আর বিয়ের মাধ্যমে আমরা স্থায়ী বন্ধু পেয়ে থাকি; যার সাথে সবকিছু শেয়ার করা যায়, সব অনুভূতিও।

Staci Lee Schnell (৬) বলেন,

In fact, the emotional connection that married couples share is said to be five times more important intimacy. than their physical

অর্থাৎ,

“প্রকৃতপক্ষে, বিবাহিত দম্পতিরা তাদের যে মানসিক অনুভূতি আদান-প্রদান করে সেটা তাদের শারীরিক অন্তরঙ্গতার চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”

সুস্থ ও সহজভাবে এই সুযোগের প্রতিফলন কেবল বিবাহিতদের মধ্যে সম্ভব

হয়ে থাকে। ফলে বিবাহিতদের মানসিক ব্যাধি অবিবাহিতদের তুলনায় খুবই

কম। যেমন :

১. অবিবাহিতদের চেয়ে বিবাহিতরা মানসিকভাবে দৃঢ় এবং মানসিক সুস্থতা বেশি দ্রুত অর্জন করে।

২. বিবাহ একাকিত্ববোধ থেকে বাঁচায়।

৩. বিয়ে শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য যথেষ্ট উপকারী।

University of Miami-এর গবেষণা অনুযায়ী, প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে বিবাহিত পুরুষদের অবিবাহিতদের চেয়ে বেশি বেঁচে থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সাহচর্য এবং সুখী সম্পর্ক সবার জন্য বেশি বেঁচে থাকার সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। আরেকটি তত্ত্ব হলো, বিবাহিত পুরুষরা নিয়মিত যৌনমিলন করে যা প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। Sweden's

Therapist of Marriage and Family. President of SLS Therapy, Inc. Clinical Director and Owner of the Counseling and Wellness Center of South Florida
Karolinska Institute-এর ২১ বছরের এক গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, মধ্যম বয়সে বিবাহিত ব্যক্তিদের Dementia বা 'স্মৃতিভ্রংশ হবার সম্ভাবনা ৫০% কম। “People who had been single all their life had a doubled risk of Dementia.” অবিবাহিতদের মধ্যে ডিমেনশিয়া হবার সম্ভাবনা দ্বিগুণ বেশি।

আমার কাছের এক বন্ধু এসএসসিতে জিপিএ-৫ মিস করায় যথেষ্ট ভেঙে পড়ে। আর এই মানসিক চাপের প্রভাব তাকে এতটাই ভোগায় যে Brain Epilepsy হয়ে তার স্মৃতিবিভ্রম ঘটে। এর ফলে তাকে এইচএসসি দিতে হয়েছে মাত্র ২৭ দিনের প্রস্তুতিতে, মানে দুই বছরের পড়াশোনা ২৭ দিনে। এখানে একটি বিষয় বলে রাখার মতো, যারা জিপিএ-৫ না পায় অথবা পরীক্ষায় ফেল করে আর এসবের জন্য আত্মহত্যা করে কিংবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে, তাদের পেছনে দুটি অযৌক্তিক উদ্দীপক কাজ করে :

১. অন্যের সামনে ছোট হওয়া।

২. জীবন এখানেই শেষ মনে করা বা ব্যর্থতা সহ্য করার সক্ষমতা না থাকা।

“অ্যাকাডেমিক শিক্ষা" জীবনের একটি অংশ বা গুণ মাত্র। আর জীবনের কোনো একটি ক্ষেত্রে ব্যর্থ হওয়া মানেই জীবন শেষ হয়ে যাওয়া বা আপনি ব্যর্থ, এটা বোঝায় না। কারণ মানুষ সব গুণে গুণান্বিত হতে পারে না কখনোই। আর অন্যের সামনে ছোট হবারও কিছু নেই। চাকরি জীবনের শুরুতে আমি যে ফ্যাশন হাউজে ছিলাম সেটার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কেবল প্রাইমারি পাশ। অথচ তিনি কোটিপতি আর তার প্রতিষ্ঠানে এমবিএ পাশ করা আমি চাকরি করতাম। মানুষের প্রশংসা কিংবা দুর্নাম, এই দুটো কচু পাতার পানির ন্যায়। তাহলে কেন এটা নিয়ে ভেবে খুশি কিংবা কষ্ট পাবেন? ডা. দীপক চোপড়া বলেন, “মানুষ তার জীবনের ৯০% অন্যকে খুশি করার কাজে ব্যয় করে।” তাই এই ব্যাপারে কৃপণ হয়ে যান, জীবনের সুখ অনুভব করতে পারবেন। তবে এর মানে এটা নয়, মানুষের উপকার করা বন্ধ করে দেবেন। বরং অন্যের পাশে দাঁড়ালে আপনার হৃদয়ই শীতল হবে।

যা-ই হোক, বলছিলাম আমার বন্ধুর মানসিক চাপ Brain Epilepsy থেকে স্মৃতিবিভ্রম ঘটে। আর এর প্রভাবে সে অসুস্থ ছিল ২০১০ সাল পর্যন্ত। বলতে গেলে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয়েছিল। কিন্তু তার বড় ভাই, বড় বোন আর সেজো ভাইয়ের অবিরত প্রেষণা আর বাবা-মায়ের উৎসাহ-অনুপ্রেরণা তাকে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে সাহায্য করে। আসলে সামাজিক সম্পর্কগুলো শরীর, মন বা জীবন সবকিছুতেই মানুষকে কল্পনাতীত উচ্চতায় নিয়ে যায়। Sweden's Karolinska Institute তাদের গবেষণায় এটাই বলেছে—

Social relationships are known to be health boosters, as friends are thought to encourage each other to look after their health and ease depression and anxiety.

অর্থাৎ,

সামাজিক সম্পর্কসমূহকে স্বাস্থ্য সহায়ক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। কারণ বন্ধুরা তাদের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার এবং বিষণ্নতা ও উদ্বেগকে হ্রাস করার জন্য উৎসাহ দিয়ে থাকে।

সব সামাজিক সম্পর্কের মূল ভিত্তি হলো বিয়ে। কারণ বিয়ের মাধ্যমেই দুজন নর-নারী থেকে আজকের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অজস্র মানুষ আর অজস্র বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা। ইনফ্লুয়েঞ্জা অনেক বিবাহিত পরিবারের মধ্যেও একটি সাধারণ ঘটনা বলে মনে হতে পারে, কিন্তু যারা অবিবাহিত তাদের তুলনায় বিবাহিতদের মধ্যে ফু আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম। University of Birmingham ১৮৪ জন মানুষের ওপর গবেষণা করে দেখেছে যে, বিবাহিত পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে ফু টিকার অ্যান্টিবডি সাড়া দিয়েছে বেশি। প্রতিবেদনে পাওয়া গেছে, রোগপ্রতিরোধ পদ্ধতি বা ইমিউন সিস্টেম বিবাহিতদের বেলায় বেশি কার্যকর ও সক্রিয় ছিল। ৭

বিবাহিত দম্পতিদের হৃদরোগের ঝুঁকি শুধু কমই নয়; বরং রোগ শনাক্ত হওয়ার পরেও তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা আরও বেশি। কারণ মানসিক চাপ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। আর বিবাহিত দম্পতিরা অবিবাহিত ব্যক্তিদের চেয়ে কমই হতাশায় ভোগে। University of Newcastle, Australia একটি গবেষণায় প্রকাশ করেছে যে, একই বয়সের বিবাহিত

1. Anna C Phillips et al. Brain Behav Immun 2006 May, A. Carroll, D, Bums, VE, Ring, C, Macleod, J & Drayson, M 2006, 'Bereavement and Marriage are associated with antibody response to influenza vacccination in the elderly', Brain, Behaviour, and Immunity, Vol. 20, no. 3, pp. 279289.


পুরুষদের তুলনায় অবিবাহিত পুরুষদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থাকে বেশি। University of Maryland in America-এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, হৃদরোগ নির্ণয়ের ১০ বছরের মধ্যে মারা যাওয়ার আশঙ্কা বিবাহিতদের তুলনায় অবিবাহিতদের শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ বেশি। (৮)

গবেষণায় প্রমাণিত হার্ট অ্যাটাকের পর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ১৪% বেশি বিবাহিত মানুষদের।

University of Pittsburgh-এর গবেষকরাও দেখেছেন যে, বিবাহিত পুরুষদের ধমনীতে কম ঘনত্ব থাকে, এর কারণ হলো বিয়ের কারণে মানসিক চাপ হ্রাস পাওয়া বিদ্যমান থাকে। কারণ বিয়ে বিশেষ করে ভালো সম্পর্ক, স্বাস্থ্যকর খাদ্য এবং নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাত্রার জন্য সবচেয়ে বড় নিয়ামক। (১০)

University of Southern Denmark ২০০০ লোকের ওপর ভিত্তি করে একটি গবেষণা করে। তাতে দেখা গেছে যে, যারা তালাকপ্রাপ্ত, বিধবা বা যারা বিবাহিত না তারা বিবাহিতদের চেয়ে বেশি মাত্রায় বিষণ্নতায় ভোগে এবং তাদের শারীরিক ক্ষমতা কম থাকে। (১১)

Italian National Institute of Health Study-এর মতে বিবাহিত ব্যক্তিদের আত্মহত্যার হার সর্বনিম্ন। এমন অসংখ্য গবেষণায় প্রমাণিত যে বিয়ে মানুষের জীবনকে পরিপূর্ণ ও সুস্থ করে তোলার এক অনন্য মাধ্যম। বলাবাহুল্য, এসব গবেষণার মাধ্যমে সাড়ে ১৪০০ বছর আগে বিয়ে নিয়ে ইসলামের গুরুত্বারোপ করার মাহাত্ম্য অনুভূত হয়। ১২

Coyne, J. C., Rohrbaugh, M. J., Shoham, V., Sonnega, J. S., Nicklas, J. M., & Cranford, J. A. (2001). Prognostic importance of marital quality for survival of congestive heart failu . The American journal of cardiology, 88 (5). 26-52 . Aston Medical School and the University of East Anglia. Dr. Rahul Potluri, Clinical Lecturer at Aston Medical School and the Founder of ACALM 2020.

Nataria Joseph, American College of Cardiology's 2014 Conference. 22. Soons, J.P.M. and Kalmijn, M. (2009). Is Marriage More Than Cohabitation? Well-Being

Differences in 30 European Countries. Journal of Marriage and Family, 71 1141-1157. *. Kposowa AJDivorce and suicide risk. Journal of Epidemiology & Community Health 2003;57:993.

নবিজির দৃষ্টিতে অবিবাহিত ব্যক্তি

একবার নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “যার স্ত্রী নেই, সে মিসকিন।” সাহাবায়ে কেরামগণ আরজ করলেন, “সে ব্যক্তি মালদার হলেও?” তিনি বললেন, “হ্যাঁ, সে ব্যক্তি মালদার হলেও (যদি তার স্ত্রী না থাকে, তবে সে মিসকিন)।” অতঃপর নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “যে স্ত্রীলোকের স্বামী নেই, সেও মিসকিন।” লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, “ইয়া রাসূলাল্লাহ! তার নিকট যদি অঢেল সম্পদ থাকে, তবুও সে মিসকিন?” তিনি বললেন, “হ্যাঁ, তবু সে মিসকিন। "(১৩) এরূপ আরও ২০টি হাদিসে বিয়ের প্রতি স্পষ্ট উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। এ কারণেই রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানতে পারলেন, কোনো কোনো লোক বিয়ে না করাকে উত্তম কাজ বলে মনে করছে, তখন তাদেরকে তিনি বিয়ে করতে উদ্বুদ্ধ করেন।

হাদিসে এমনটা এসেছে যে, তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা আল্লাহর কর্তব্য :

১. আজাদি চুক্তিবদ্ধ গোলাম, যে তার রক্তমূল্য আদায় করতে চায়।

২. পবিত্রতার মানসে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ ব্যক্তি। ৩. আল্লাহর পথের মুজাহিদ। (১৪)

ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিয়ের অকল্পনীয় ভূমিকা

আমার চেনাজানা একজন ভদ্রলোক, তিনি কোনো এক অসুস্থতার কারণে ডাক্তারের কাছে যান। ডাক্তার রোগীর কতজন ছেলে-মেয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তর দিলেন আটজন। তাতে ডাক্তার যেন আকাশ থেকে পড়লেন আর বিস্ময়ের ভঙ্গিতে বললেন, “আপনি চলেন কীভাবে?” তখন তিনি উত্তর দিলেন, “আপনার বাসায় আটজন মেহমান এলে আপনি অবশ্যই পাঁচজনের ব্যবস্থা করবেন না। বরং আটজনেরই খাবারের ব্যবস্থা করবেন। তেমনই আল্লাহর পৃথিবীতে তার মেহমান যত, ঠিক ততটাই রিজিক পৌঁছে দেবেন।

১০. জামউল ফাওয়ায়িদ, বিবাহ অধ্যায়, ১ম খণ্ড, পৃ. ২১৬। সুনানে তিরমিজি, মিশকাত শরিফ, ২৬৭।


বিবাহিত ব্যক্তিদের উপার্জন অবিবাহিতদের থেকে বেশি। এছাড়া বহু গবেষক তাদের গবেষণায় একমত পোষণ করেছেন যে, বিবাহিত ব্যক্তিদের উপার্জন অবিবাহিতদের থেকে অনেক বেশি।

গবেষকদের গবেষণায় যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে তা হলো :

১. বিবাহিত পরিবারের আয় বেশি। বিবাহের ফলে উৎপাদনশীলতা ২৬ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। পুরুষের

২. সন্তান থাকা বিবাহিত পরিবারের বাৎসরিক আয় ১৮.২৬ পরিমাণ বেশি অবিবাহিতদের চেয়ে।

৩. বিবাহিত দম্পতিরা অবিবাহিত দম্পতির চেয়ে বেশি সঞ্চয় করে এবং অন্যান্য পারিবারিক কাঠামোর তুলনায় বিবাহিত পরিবারের অবসর গ্রহণের জন্য আরও বেশি সংরক্ষণ করতে থাকে।

৪. তরুণ বিবাহিত দম্পতিরা অবসর গ্রহণের লক্ষ্যে লক্ষ রাখে এবং অবিবাহিত দম্পতির চেয়ে অবসর গ্রহণের জন্য আরও বেশি সংরক্ষণ করতে থাকে।

৫. অবিবাহিতদের চেয়ে বিবাহিত পরিবারের সন্তানদের মোট সম্পত্তির

পরিমাণ বেশি। (১৫)

আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

“বিবাহ আমার সুন্নত। যে আমার সুন্নত অনুযায়ী আমল করে না, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। তোমরা বিবাহ করো, কারণ আমি আমার উম্মতের আধিক্য নিয়ে আল্লাহর দরবারে গর্ব করব। যার সামর্থ্য আছে সে অবশ্যই বিবাহ করবে আর যার সামর্থ্য নেই তার ওপর কর্তব্য হলো রোজা রাখা। কারণ রোজা তার জন্য প্রতিষেধক। "(১৬)

১৫. দেখুন, Population and Development Review 29 (2): 255-276 Married men earn

more than single men. Are All the Good Men Married?" Patrick F. Fagan, American Economic Review 9, (May 2004): 317-321. The Family GDP: How Marriage and Fertility Drive the Economy. The Family in America 24, no.

2 (Spring 2010): 141.25) Joseph Lupton and James P. Smith, "Marriage, Assets, and Savings." Labor and Population Program, Working Paper Series 99-12 (November 1999): 16-17. Patrick F. Fagan, Andrew J. Kidd, and Henry Potrykus, "Marriage and Economic Well-Being: The Economy of the Family Rises or Falls with Marriage 

১০. ইবনে মাজাহ।

আগেই বলেছি যে, বিয়ে করা শুধু ব্যক্তিজীবন নয়; বরং সমাজ, দেশ এবং সারা পৃথিবীর জন্য সমৃদ্ধির দুয়ার। তাই তো হাদিসে বিয়ের সামর্থ্য হলে বিয়ে করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আর নয়তো সে যেন রোজা রাখে। কারণ Sexual Relaxation বা যৌন শিথিলতার অভাবে মানুষ চরম অপরাধপ্রবণ হয়ে পড়ে। ফলে সমাজ, দেশ ও জাতি এক মহাবিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। আর আজ আমাদের এই পৃথিবীতে এত বেশি অপরাধের পেছনে এটাই বেশি দায়ী। আমরা বিয়ের ক্ষেত্রে আইনের নামে প্রকৃতির চাহিদার ওপরে নগ্ন হস্তক্ষেপ করে এবং প্রকৃতিবিরুদ্ধ কাল্পনিক বয়সের মাত্রা নির্ধারণ করে বিয়েকে কঠিন করে পৃথিবীকে অপরাধের লীলাভূমিতে রূপান্তর করেছি।

Journal of Research in Crime and Delinquency-তে বলা হয়েছে—“বিয়ে অপরাধপ্রবণতা হ্রাস করে। ”(১৭) অর্থাৎ রাষ্ট্রের কল্যাণেও বিয়ের ভূমিকা অনন্য । মূলত ব্যক্তি যেহেতু রাষ্ট্রের বড় একটি উপাদান তাই সাধারণভাবেই বোঝা যায় ব্যক্তির উন্নয়ন মানেই রাষ্ট্রের উন্নয়ন।

Netherlands Institute for the Study of Crime and Law Enforcement (NSCR)- এর গবেষক ড. Arjan A.J. Blokland এর রিসার্চ পেপারে বলা হয়েছে,

Marriage may

diminish propensity to commit crime."

individual

অর্থাৎ,

“বিয়ে ব্যক্তির অপরাধপ্রবণতা হ্রাস করে।”(১৮)

ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির অপরাধবিদ ড. ফরেস্ট ও ড. কার্টারসহ বহু গবেষকের রিসার্চে এটা প্রমাণিত যে,

"Married individuals are more likely to cease using marijuana, due in part to improvements in self-control.")

Demuth S, Brown SL. Family Structure, Family Processes, and Adolescent Delinquency: The Significance of Parental Absence Versus Parental Gender. Journal of Research in Crime and Delinquency. 2004;41(1):58-81.. BLOKLAND, A.A. and NIEUWBEERTA, P. (2005), THE EFFECTS OF LIFE CIRCUMSTANCES ON LONGITUDINAL TRAJECTORIES OF OFFENDING. Criminology, 43: 1203-1240.

অর্থাৎ,

বিয়ে ও সমকালীন মুসলিম মনস্তত্ত্ব ● ২৫

“বিবাহিত ব্যক্তিদের মধ্যে মারিজুয়ানা ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়ার হার বেশি, কারণ তাদের মধ্যে আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বেশি থাকে।”

এই জন্যই বোধ করি ইসলামে বিয়ে করাকে অর্ধেক ঈমান পূরণ করার সমান বলা হয়েছে। হাদিস শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি বিয়ে করল তার অর্ধেক দ্বীন-ঈমান পূর্ণ হয়ে গেল, সে যেন বাকি অর্ধেকের বিষয়ে আল্লাহকে ভয় করে চলে। ”(২০)

আরেক হাদিসে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “বিয়ে করলে মানুষ বহুরকম অনিষ্ট থেকে বেঁচে যায়। বরং কেউ যদি স্বীয় কাম-প্রবৃত্তির আঁচল নিষ্কলুষ ও পবিত্র রেখে দুনিয়া থেকে বিদায় হতে চায়, তবে এটাই তার একমাত্র পথ। আল্লাহর সাথে যে পাক-পবিত্র অবস্থায় মিলিত হতে চায়, তার ভদ্রমহিলাদের বিয়ে করা উচিত।”(১)

বাস্তবেও দেখা যায়, যে ব্যক্তি বিয়ে করে না এবং বৈধভাবে যৌন চাহিদা পূরণ করে না, সে সাধারণত বহু পাপ-কর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ে। তা ইচ্ছায়ই হোক আর অনিচ্ছায়ই হোক। কিন্তু বিবাহিত ব্যক্তির নিকট যেহেতু আত্মরক্ষার উপকরণ বিদ্যমান, সেহেতু সাধারণত ওইসব পাপ-কার্য থেকে তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। পক্ষান্তরে যারা বিয়ে করে না, অথচ নিষ্কলুষ জীবন যাপন করতে আগ্রহী, তারা অহেতুক দোলাচলে জীবনাতিপাত করে। তারা কখন কী করে বসবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।

বিয়ে আপনাকে সুন্দর ব্যক্তিত্ব প্রদান করবে

প্রয়োজন এবং চাহিদার তফাত বুঝতে বিয়ের চেয়ে উত্তম আর কোনো মাধ্যম আছে বলে আমাদের জানা নেই। অনেক মানুষকে নিজের চোখে দেখেছি ধূমপান ছেড়ে দিয়েছে শুধু সন্তানের কথা ভেবে। যদি আপনি কোথাও ভুল করে থাকেন, তবে কারও অধীনে কাজ করতে এবং তাদের

». Forrest, Walter & Hay, Carter. (2011). Life-course transitions, self control and desistance from crime. Criminology & Criminal Justice - CRIMINOL CRIM JUSTICE. 11. 487-513. 10.1177/1748895811415579. ২০ মিশকাত, ৩০৩২; শুআবুল ঈমান, বাইহাকি, ৫৪৮৬। ২. মিশকাত, বিবাহ অধ্যায়।

কথা শোনার জন্য ধৈর্য ধরতে বড় একটি শিক্ষাকেন্দ্র হলো পরিবার। যার ভিত্তি বিয়ে। অন্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার শিক্ষাটিও মানুষ একইভাবে পরিবার থেকে শেখে। জীবনের লক্ষ্য স্থির করে নিয়মানুবর্তিতার সাথে এগিয়ে যাবার দৃঢ় মানসিক শক্তি স্ত্রী এবং সন্তানদের কাছ থেকে পেয়ে থাকে। যার কোনো বিকল্প নেই।

বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ক

সীমা এবং জয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে পড়ে। দুজনই মুক্তমনা। ভালোলাগা থেকে অবশেষে লিভ-টুগেদার শুরু করে এবং এক মেয়ে সন্তানের জন্মও হয়। হঠাৎ সীমার সোরিয়াসিস রোগ দেখা দেয়। জয় একটি প্রাইভেট ব্যাংকে জব করে। সারা দিন শেষে ঘরে এসে সীমার এই বিকৃত চেহারা দেখতে জয়ের ভালো লাগে না। জয় স্বাধীনচেতা ছেলে। তাই সে অস্বস্তিবোধ করে এবং নতুন জীবন শুরু করার জন্যে তার ব্যাংকের আরেক সহকর্মী ফারিয়ার প্রতি ঝুঁকে পড়ে এবং সীমাকে ছেড়ে দেয়। সীমা তার কন্যাকে নিয়ে মানবেতর জীবন কাটানো শুরু করে। আজ সীমা অনুভব করে প্রকৃত সমাজের নিয়মনীতি উপেক্ষা করে নিজের ও নিষ্পাপ শিশুর জীবন নষ্ট করল। সীমালঙ্ঘনের ফল সবসময়ই ভয়াবহ। আর জয়ের স্বাধীনচেতা মনোভাবের কাছে মানবতার হলো পরাজয়।

সাউথ-ইস্ট ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক নাইমুল হাসানের স্ত্রী সোরিয়াসিস রোগে ভুগছে আজ ১০ বছর ধরে। কিন্তু স্যার তার স্ত্রীকে কখনো ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবতে পারে না। প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনরা অনেকেই তালাকের জন্য পীড়াপীড়ি করে। কিন্তু নাইমুল স্যার ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাসী নয়। তিনি বিশ্বাস করেন, বিয়ে মানে এমন একটি বন্ধন এবং এমন এক প্রতিশ্রুতি যা নিজের, অন্যের, পারিবারিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতার সাথে জড়িত। অন্যের বিপদের সময় ছুড়ে ফেলে দেওয়া নয়; বরং বিপদে-আপদে মানুষের পাশে থাকা, ভালোবাসা ও সম্পর্ককে সম্মান করার এক চিরচারিত পবিত্র রীতি হলো বিয়ে। বৈবাহিক বন্ধনকে ইসলামে “মিসাকে গালিজ” তথা সুদৃঢ় সম্পর্ক বা প্রতিশ্রুতি বলা হয়েছে।(২২)

২২. সূরা নিসা : ২১।

জনৈক নাস্তিক বলে, “আফসোস, লিভ-টুগেদার বাংলাদেশে এখনো চালু হয় নাই। বিবাহ মানে বন্ধন। বন্ধনের ভেতর থেকে কোনো ক্রিয়েটিভ কাজ হয় না।” মূলত ইচ্ছার কোনো সীমা নেই। তাই সেই ইচ্ছার পেছনে অন্ধভাবে ছুটলে সেই ইচ্ছা অনাকাঙ্ক্ষিত ও অযাচিত পরিণতি বয়ে আনবে। লিভ টুগেদার মানে ব্যক্তিস্বাধীনতা, লোভ আর স্বার্থপরতার কাছে আত্মসম্মানকে বিলিয়ে দেওয়া কিংবা শুধু পশুর মতো দৈহিক আর যৌন চাহিদা মেটানো। একইভাবে আত্মকেন্দ্রিকতায় ডুবে আত্ম বা নিজকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। এর মূলে শুধুই ইচ্ছা বা বাসনা আর ব্যক্তিস্বাধীনতা থেকে উদ্ভূত স্বার্থপরায়ণতা।

বিয়ের উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা

বিয়ে এমন একটি বন্ধন যা আদর্শ পরিবার ও নিরাপদ সমাজ গড়ার উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে এবং এটা পরস্পরের মধ্যে একটি চুক্তিনামাও বটে। ফলে বিবাহের উদ্দেশ্য কেবল ভোগ নয়; বরং এর সঙ্গে আদর্শ পরিবার ও আলোকিত সমাজ গড়ার অভিপ্রায়ও জড়িত। পরিবার সমাজের একক। আর বিয়ে নামক চুক্তি একটি আদর্শ পরিবার গঠনে মূল নিয়ন্ত্রক। আর তাই এ ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনা অজস্র প্রশংসার দাবিদার। কারণ ইসলামে বিয়ের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতাই মুখ্য। ইসলামের প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিয়ে করে পূর্ণ দায়িত্ব নেওয়ার শর্তে নিজের কর্তৃত্বাধীন নারীদেরকে আল্লাহ হালাল করেছেন পুরুষদের জন্য (৪:৩, ২৫; ২৩:৬)। এখানেও নারীর প্রতি পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ববোধের ব্যবস্থা মুখ্য। কোনো ধরনের দায়িত্ব নেব না, শুধুই ভোগ করব এমন নারী-পুরুষের সম্পর্ক হলো ‘চূড়ান্ত অবিচার' এবং 'নারীর জন্য চরম অপমানজনক'। এই রীতিকে ইসলাম প্রত্যাখ্যান করে নারীকে উচ্চ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে।

একই সঙ্গে লক্ষণীয় যে, ইসলামি জীবনব্যবস্থার কোনো পর্যায়েই, কোনোভাবেই নারীকে কখনো একাকী ছেড়ে দেওয়া হয়নি। নারীকে সবসময়ই রাখা হয়েছে মাহরাম পুরুষ তথা যাদের সাথে বিয়ে হারাম তাদের সাথে অথবা স্বামীর সাথে। নারীর নিরাপত্তাকে দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ প্রাধান্য, তাকে রাখা হয়েছে সর্বদা সুরক্ষিত। বর্তমান সমাজে অতি সহজলভ্য 'নারী ভোগ'। এখানে 'ভোগের বিনিময় হিসেবে নারীকে যে টাকা পয়সা প্রদান করা হয় সেটাকে মুক্তমনাগণ 'নারীর প্রতি দায়িত্ব পালন করা হলো’ বলে মনে করে। কিন্তু বাস্তবে এটা শুধু সুখভিত্তিক বিনিময়। অন্যদিকে বিয়ের মাধ্যমে দুটি মানবজীবনের প্রতিদিনের চাওয়া-পাওয়া পরস্পরের অংশীদারত্বের যে চিরস্থায়ী ‘বিনিময়’ তা কখনোই এক হবার নয়। আর তাই ওই সমস্ত ধান্ধাবাজি যুক্তি দিয়ে লিভ-টুগেদার-সহ অন্যান্য সকল অপরাধ সমাজে ইতিবাচক হিসেবে রূপান্তর করার কোনো সুযোগ নেই।

বৈবাহিক ধর্ষণ বা ম্যারিটাল রেইপের বাস্তবতা

বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে অথবা নাগরিকত্ব পাওয়ার পর বাংলাদেশের প্রচলিত সংবিধান ও আইনকানুন মেনে চলা আবশ্যক। এখন কেউ যদি বাক্‌স্বাধীনতার কথা বলে দেশকে গালি দেয় অথবা সংবিধান অনুযায়ী এ দেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম নিয়ে কটূক্তি করে কিংবা আমি এই দেশের সংবিধান মানি না আইন মানি না আমি অখণ্ড ভারত চাই তাহলে তাকে দেশদ্রোহী ও ভারতীয় রাজাকার বলা হবে।

তেমনই সুদৃঢ় বন্ধন বিয়েতে আবদ্ধ হবার মানে হলো পারস্পরিক জৈবিক আচরণের স্বতঃস্ফূর্ত স্বীকৃতি। তাই Marital Rape এই শব্দটিই ভুল। সারা দিন অফিসে ব্যস্ত থেকে ঘরে আসার পর ঘুম সবচেয়ে আপন মনে হয়। তারপরও স্ত্রীর ডাকে সারা দেওয়া নৈতিক দায়িত্ব মনে করে মুসলিম পুরুষ। কখনোই বলেনি আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে করছ তাই আমি ধর্ষিত। তাহলে স্ত্রীর কি নৈতিক দায়িত্ব নয় স্বামীর ডাকে সারা দেওয়া? হ্যাঁ, স্বামী-স্ত্রী উভয়েই এই অপরিহার্য নৈতিক দায়িত্ব সানন্দে পালন করে আসছে। কিন্তু উগ্রপন্থীরা বিয়ের মতো পবিত্র সুদৃঢ় বন্ধনকে তছনছ করতে বাস্তবতা বিবর্জিত শব্দ ‘Marital Rape' আবিষ্কার করেছে যা হাস্যকর। পৃথিবীর সবাই তাদেরকে Illuminati নামে ডাকলেও আমি personally তাদেরকে dullness বলি। কারণ Illuminati word-টি brightness-কে states করে। অথচ এটা মারাত্মক ভুল। অন্যদিকে ‘dullness word'-টি darkness and stupidity দুটোই বোঝায় আর দুটিই তাদের সাথে match করে। যা-ই হোক Satanic Religion-এর ত্রাতাদের যুক্তি এতটাই ভঙ্গুর আর বিরক্তিকর যে তাদের নিয়ে কিছু লিখা, বলা সময় নষ্ট মনে হয়। স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসার যে সম্পর্ক থাকে এটা unique। আর ভালোবাসা derives/stimulate করে একে অপরের ইচ্ছাকে পূরণ করতে নিজের ইচ্ছার ওপর অন্যের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে। আর নিজের ইচ্ছার ওপর Read More ⤵️

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ