লেখক : সালমান রহমান
প্রকাশনী : ফাউন্টেন পাবলিকেশন্স
বিষয় : পরিবার ও সামাজিক জীবন
সম্পাদক : ডা. শামসুল আরেফীন
পৃষ্ঠা : 144, কভার : হার্ড কভার
ভাষা : বাংলা
বিয়ে কী?
একটি জমিতে ফসল উৎপাদন ও আহরণের জন্য নির্দিষ্ট কিছু নিয়মের অনুসরণ করতে হয়। যদি নিয়ম ছাড়া ফসল উৎপাদনের চেষ্টা করা হয় তবে অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে। তেমনই এই পৃথিবীতে মানবজাতির ফসল উৎপাদনের সর্বপ্রথম ও প্রধান নীতিমালা হলো বিয়ে। সৃষ্টিগতভাবেই পুরুষ ও নারী—এক শ্রেণি আরেক শ্রেণির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে থাকে। সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনের লক্ষ্যে এই বিপরীতমুখী দুই শ্রেণি— পুরুষ ও নারীর পারস্পরিক সমন্বয়, বোঝাপড়া, একে অন্যের প্রতি বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, ধৈর্যসহ মানুষের জীবনের সমস্ত সম্পর্কের একটি পরিপূর্ণ রূপের সমষ্টি হলো বিয়ের মাধ্যমে গড়া স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক।
বিয়ে মানে যৌতুকের নামে ভিক্ষা করা নয়; বরং একটি মেয়ের সারা জীবনের দায়িত্ব নেওয়া। অন্যদিকে বিয়ের মাধ্যমে একটি মেয়েও তার স্বামীর প্রতি দায়িত্ব পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়। মূলত স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের আয়নাস্বরূপ। অনেক স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে মনোমালিন্য হয়। এটা শুধুই ভালোবাসার অভাব নয়; বরং ভালোবাসতে না জানার অভাব।
প্রিয় পাঠক! একটু মনোযোগ দিয়ে ভাবুন, আমরা কেন নিজেকে সাজাই? অবশ্যই অন্যের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা পাবার জন্য। অথবা আপনি অন্যের প্রশংসা নয়; বরং নিজেকে নিজের মতো করে উপভোগ করতে চান। মূলত এটাই স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। বিয়ের মাধ্যমে দুজন এক দীর্ঘ পথযাত্রা শুরু করে আর সেই যাত্রার মূল এবং সবচেয়ে বড় পুঁজি হলো ভালোবাসা। আপনি যখন কাউকে ভালোবাসেন তখন ভালোবাসার মানুষকে সর্বক্ষণ খুশি রাখার চেষ্টা করেন। যে কাজ, যে আচরণ করলে আপনার ভালোবাসার মানুষটি খুশি হবে ঠিক সেইভাবেই আপনি নিজেকে পরিচালিত করেন। এককথায়, নিজের ইচ্ছাকে ভালোবাসার মানুষের পছন্দের কাছে সঁপে দেন। আর এসব করার কারণ হলো, আপনি ভালোবেসে নিজেও তৃপ্তি অনুভব করেন। তাই প্রকৃতার্থে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা থাকলে স্বামী তার স্ত্রীর সেবক হিসেবে কাজ করবে আজীবন। অন্যদিকে স্ত্রীর মধ্যে স্বামীর প্রতি ভালোবাসা থাকলে সে স্বামীর পছন্দকে প্রাধান্য দেবে। অধিকারের নামে ঝগড়া করবে না। ব্যক্তিগত পছন্দের নামে নিজে বাজারে গিয়ে পণ্যদ্রব্য কিনতে ভিড় করবে না। কারণ স্বামী স্ত্রীর জন্য যা আনবে তা-ই স্ত্রীর কাছে সন্তোষজনক মনে হবে, এটাই ভালোবাসার দাবি।
এক গরিব লোক এক থোকা আঙুর হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উপহার হিসেবে দিলো। পাশেই বিভিন্ন সাহাবায়ে কেরামগণ উপস্থিত ছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঙুরের থোকা থেকে একটা আঙুর ছিড়ে মুখে দিলেন, তারপর এক এক করে সবগুলো আঙুর খেয়ে ফেললেন; কিন্তু পাশে বসে থাকা সাহাবাদের কাউকে আঙুর সাধলেন না। চোখের সামনে প্রিয় নবির এভাবে আঙুর খাওয়া দেখে গরিব লোকটি অনেক খুশি হলো। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। লোকটি চলে যাবার পর এক সাহাবি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি কীভাবে একাই সব আঙুর খেয়ে ফেললেন! আমাদের কাউকে একটু ভাগ দিলেন না!” সাহাবির প্রশ্ন শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হেসে উত্তর দিলেন, “আমি একাই সব আঙুর খেয়ে ফেলেছি কারণ আঙুরগুলো টক ছিল। যদি আমি তোমাদেরকে আঙুর খেতে সাধতাম, তোমাদের মুখভঙ্গি দেখেই হয়তো লোকটি বুঝে ফেলত এবং কষ্ট পেত। তাই আমি চিন্তা করে দেখলাম, যদি আঙুরগুলো আমি একাই আনন্দের সাথে খেয়ে ফেলি, লোকটি খুশি হবে এবং এটাই সবদিক দিয়ে ভালো।”
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পুরো জীবনটাই এমন অসংখ্য উদাহরণ দিয়ে পরিপূর্ণ। এটাই ভালোবাসা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে ভালোবেসেছিলেন। টক আঙুর খেতে কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও তিনি খেলেন। পাছে যে লোকটি আঙুর নিয়ে এসেছে সে কষ্ট পায়। আমার খেতে কষ্ট হচ্ছে খাব কেন? এই যুক্তিকে ঢেকে দিলেন ভালোবাসার চাদর দিয়ে। ভালোবাসা মানুষকে সকল যুক্তি-তর্কের বাইরে কল্পনা করতে শেখায়। আর এই কল্পনাই হৃদয়ের জমিনে এমন ফুলের আর ফলের বাগান আবাদ করে, যা থেকে অনন্তকাল উপকৃত হওয়া যায় বিরামহীনভাবে।
ভালোবাসার এই বাগানবাড়িতে তৃতীয় পক্ষের (পরকীয়ার) কোনো সুযোগই থাকে না। কারণ ভালোবাসা একটি শক্তি আর শক্তি কেবল রূপ বদলায়। কখনো ধ্বংস হয় না।
বিয়ের নিয়ম
ছেলে-মেয়ে উভয়ের সম্মতিতে বিয়ে হবে, এটাই সত্য। জোরজবরদস্তি করে সম্পর্ক হয় না। আর যেহেতু বিয়ে একটা সামাজিক স্বীকৃতিও বটে তাই সাক্ষী রাখা সামাজিক দাবি। এই ক্ষেত্রে ইসলামের দেওয়া নিয়মগুলো সত্যিই প্রশংসাযোগ্য। যেমন, ইসলামে বিয়েতে মেয়ের সম্মতি আবশ্যক।
হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত। এক কুমারী মেয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, “আমার পিতা আমার অপছন্দ সত্ত্বেও বিয়ে দিয়েছে।” তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে মেয়েকে অধিকার দিলেন, সে যাকে ইচ্ছে বিয়ে করতে পারে বা এ বিয়ে রাখতেও পারবে। (১)
তার মানে এটা নয় যে, মেয়ে যেনতেন একটা ছেলেকে পছন্দ করবে আর বাবা-মা সেটা মেনে নিতে বাধ্য হবেন। বরং বাস্তবতার নিরিখেও এটা বেমানান। যে ছেলেটা নেশাগ্রস্ত, তার সাথে ভদ্র মেয়ের বিয়ে একটি পরিবার কোনোভাবেই মেনে নিতে পারে না। মেয়ের পরিবারের সাথে সম্পদ, বংশ মর্যাদার বিস্তর তফাত বড় সমস্যা ডেকে আনে। যে মেয়েটা ১০ হাজার টাকার জামা পরায় অভ্যস্ত তাকে আপনি ৩ হাজার টাকার জামা দিলে তো সমস্যা হতেই পারে। আর সেজন্য ছেলে-মেয়ে উভয়েরই সমতার দিক লক্ষ রেখে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে ইসলামের পরিপূর্ণ সৌন্দর্যের প্রমাণ বিদ্যমান।
উম্মুল মুমিনিন হযরত আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা ভবিষ্যৎ বংশধরদের স্বার্থে
১. মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-২৪৬৯, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-১৮৭৫, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-২০৯৬, সুনানুল কুবরা নাসায়ি, হাদিস নং-৫৩৬৬, সুনানে দারে কুতনি, হাদিস নং-৩৫৬৬।
উত্তম মহিলা গ্রহণ করো এবং সমতা (কুফু) বিবেচনায় বিবাহ করো, আর বিবাহ দিতেও সমতার প্রতি লক্ষ রাখো। (২)
এ ক্ষেত্রে আপনার হিসাবকে আরও সহজ করে দিয়েছে ইসলাম।
জাবির রা. হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মহিলাদেরকে বিয়ে করা হয় তাদের দ্বীনদারী, ধন-সম্পদ ও সৌন্দর্য দেখে। অবশ্যই তুমি দ্বীনদার পাত্রীকে বেশি অগ্রাধিকার দেবে, কল্যাণে তোমার হাত পরিপূর্ণ হবে।"(৩)
মেয়ের সম্মতি নিয়ে তার উকিল (অবশ্যই দূরের নয়; বাবা, ভাই, চাচা) দুজন সাক্ষীর (দুজন ছেলে অথবা একজন ছেলে এবং দুজন নারীর) সামনে ছেলেকে প্রস্তাব দেবে। তখন ছেলে কবুল করবে। আর ইসলামি বিয়েতে আগে খুতবা তারপর ইজাব কবুল করানো হয়। এটাও চমৎকার একটি শিক্ষা। বিয়ের আগে সদাচরণের যে উপদেশ, নীতিমালার বিবৃতি দেওয়া হয় সেটা বিয়ের পূর্বে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে একে অন্যের মধ্যে একটি “প্রোঅ্যাক্টিভ ব্রেইন ওয়েভ” তৈরি করে।
বিয়ের স্বাস্থ্যগত গুরুত্ব
মানুষ সৃষ্টির সেরা ও প্রকৃতির সবচেয়ে জরুরি উপাদান। কারও হস্তক্ষেপ ব্যতীত সুস্থ ও সুশৃঙ্খলভাবে এই জরুরি উপাদানের বিস্তার ঘটানোর জন্য বিয়ে হচ্ছে একটি সুনিপুণ পবিত্র নীতিমালা। বিয়ে ব্যতীত সরাসরি ছেলে মেয়ের মিলন হলেও সন্তান হবে পৃথিবীতে। কিন্তু শুধু প্রকৃতি ও সমাজের দাবিই নয়; বরং মানুষের ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবনসহ সকল ক্ষেত্রে বিয়ের প্রয়োজনীয়তা বর্ণনাতীত। US National Library of Medicine, National Institutes of Health-এ ১৮ জুন, ২০১৪ “Marital Status, Marital Transitions and Health : A Gendered Life Course Perspective" শিরোনামে একটি
বড়সড় আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়, যেখানে দাবি করা হয়েছে : "Married individuals report better self assessed health, have lower rates of long
২. ইবনে মাজাহ, ১/১৪১, হাদিস নং-১৯৬৮। °. সুনানে তিরমিজি, ১/২০৭, হাদিস নং-১০৮৬।
term illness, are less depressed and live longer than their unmarried counterparts."
অর্থাৎ,
“বিবাহিত ব্যক্তিরা নিজেরা মনে করে যে তারা ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী, তাদের দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতার হার কম, বিষণ্নতা কম এবং তারা অবিবাহিতদের চেয়ে দীর্ঘজীবী হয়। (৪)
American Journal of Sociology-এ বলা হয়,
"...both married men and women show substantially lower risks of dying than those who are not married."
“অবিবাহিতদের তুলনায় বিবাহিত নারী এবং পুরুষ উভয়েরই মৃত্যুর ঝুঁকি কম দেখা গেছে। (৫)
The University of Chicago Press এটি প্রকাশ করে “Marital Disruption and Mortality" শিরোনামে। মানুষ সামাজিক জীব’ এই একটি কথা যদি আমরা বুঝতে পারি, বিয়ের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে তখন একমত হতে আর বাধা থাকে না। মানুষ চায় অন্যের সাথে নিজের অনুভূতি বিনিময় করতে এবং সে বন্ধুত্ব কামনা করে। প্রকৃতিগতভাবেই আমাদের মনে এই প্রোগ্রাম স্থাপন করে দেওয়া হয়েছে। পরস্পরের অনুভূতি আদান প্রদানের মাধ্যমে দুজন ব্যক্তির মধ্যে শক্ত একটি বন্ধন তৈরি হয়, যেখানে আমরা আমাদের মনের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, সব রকম অনুভূতি প্রকাশ করে মনকে সহজ করতে পারি, হালকা করতে পারি। গবেষকরা প্রমাণ করেছেন, . যত বেশি আপনি নিজের অনুভূতিগুলো নিজের ভেতর বোতলজাত করে রাখবেন, বাইরের পৃথিবী থেকে তত বেশি দূরে সরে আপনি ক্রমশ নিজের ভেতর অবরুদ্ধ হতে থাকবেন এবং আপনার ভেতর তত বেশি আড়ষ্টতা ভর করবে। ধীরে ধীরে জড় হয়ে যাবেন আপনি। আপনার মন থেকে চাপা অনুভূতিগুলো মুক্ত হয়ে আপনার জার যদি খালি হয়ে যায় তবেই
*. Williams, K., & Umberson, D. (2004). Marital status, marital transitions, and health: a gendered life course perspective. Journal of health and social behavior, 45(1), 81-98. . Lee A. Lillard and Linda J. Waite. Til Death Do Us Part: Marital Disruption and Mortality. American Journal of Sociology 1995 100:5, 1131-1156
আপনি আরও ভালো থাকতে পারবেন। মনোবিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা করেছেন যে, মানুষ তার অভ্যন্তরীণ চিন্তাগুলি আদান-প্রদানের ফলে নিজেকে নিজে ও আশেপাশের মানুষকে বুঝতে আরও বেশি সাহায্য করে এবং তার জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথ আরও সুগম হয়। আর বিয়ের মাধ্যমে আমরা স্থায়ী বন্ধু পেয়ে থাকি; যার সাথে সবকিছু শেয়ার করা যায়, সব অনুভূতিও।
Staci Lee Schnell (৬) বলেন,
"In fact, the emotional connection that married couples share is said to be five times more important intimacy." than their physical
অর্থাৎ,
“প্রকৃতপক্ষে, বিবাহিত দম্পতিরা তাদের যে মানসিক অনুভূতি আদান-প্রদান করে সেটা তাদের শারীরিক অন্তরঙ্গতার চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”
সুস্থ ও সহজভাবে এই সুযোগের প্রতিফলন কেবল বিবাহিতদের মধ্যে সম্ভব
হয়ে থাকে। ফলে বিবাহিতদের মানসিক ব্যাধি অবিবাহিতদের তুলনায় খুবই
কম। যেমন :
১. অবিবাহিতদের চেয়ে বিবাহিতরা মানসিকভাবে দৃঢ় এবং মানসিক সুস্থতা বেশি দ্রুত অর্জন করে।
২. বিবাহ একাকিত্ববোধ থেকে বাঁচায়।
৩. বিয়ে শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য যথেষ্ট উপকারী।
University of Miami-এর গবেষণা অনুযায়ী, প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে বিবাহিত পুরুষদের অবিবাহিতদের চেয়ে বেশি বেঁচে থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সাহচর্য এবং সুখী সম্পর্ক সবার জন্য বেশি বেঁচে থাকার সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। আরেকটি তত্ত্ব হলো, বিবাহিত পুরুষরা নিয়মিত যৌনমিলন করে যা প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। Sweden's
. Therapist of Marriage and Family. President of SLS Therapy, Inc. Clinical Director and Owner of the Counseling and Wellness Center of South Florida
Karolinska Institute-এর ২১ বছরের এক গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, মধ্যম বয়সে বিবাহিত ব্যক্তিদের Dementia বা 'স্মৃতিভ্রংশ হবার সম্ভাবনা ৫০% কম। “People who had been single all their life had a doubled risk of Dementia.” অবিবাহিতদের মধ্যে ডিমেনশিয়া হবার সম্ভাবনা দ্বিগুণ বেশি।
আমার কাছের এক বন্ধু এসএসসিতে জিপিএ-৫ মিস করায় যথেষ্ট ভেঙে পড়ে। আর এই মানসিক চাপের প্রভাব তাকে এতটাই ভোগায় যে Brain Epilepsy হয়ে তার স্মৃতিবিভ্রম ঘটে। এর ফলে তাকে এইচএসসি দিতে হয়েছে মাত্র ২৭ দিনের প্রস্তুতিতে, মানে দুই বছরের পড়াশোনা ২৭ দিনে। এখানে একটি বিষয় বলে রাখার মতো, যারা জিপিএ-৫ না পায় অথবা পরীক্ষায় ফেল করে আর এসবের জন্য আত্মহত্যা করে কিংবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে, তাদের পেছনে দুটি অযৌক্তিক উদ্দীপক কাজ করে :
১. অন্যের সামনে ছোট হওয়া।
২. জীবন এখানেই শেষ মনে করা বা ব্যর্থতা সহ্য করার সক্ষমতা না থাকা।
“অ্যাকাডেমিক শিক্ষা" জীবনের একটি অংশ বা গুণ মাত্র। আর জীবনের কোনো একটি ক্ষেত্রে ব্যর্থ হওয়া মানেই জীবন শেষ হয়ে যাওয়া বা আপনি ব্যর্থ, এটা বোঝায় না। কারণ মানুষ সব গুণে গুণান্বিত হতে পারে না কখনোই। আর অন্যের সামনে ছোট হবারও কিছু নেই। চাকরি জীবনের শুরুতে আমি যে ফ্যাশন হাউজে ছিলাম সেটার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কেবল প্রাইমারি পাশ। অথচ তিনি কোটিপতি আর তার প্রতিষ্ঠানে এমবিএ পাশ করা আমি চাকরি করতাম। মানুষের প্রশংসা কিংবা দুর্নাম, এই দুটো কচু পাতার পানির ন্যায়। তাহলে কেন এটা নিয়ে ভেবে খুশি কিংবা কষ্ট পাবেন? ডা. দীপক চোপড়া বলেন, “মানুষ তার জীবনের ৯০% অন্যকে খুশি করার কাজে ব্যয় করে।” তাই এই ব্যাপারে কৃপণ হয়ে যান, জীবনের সুখ অনুভব করতে পারবেন। তবে এর মানে এটা নয়, মানুষের উপকার করা বন্ধ করে দেবেন। বরং অন্যের পাশে দাঁড়ালে আপনার হৃদয়ই শীতল হবে।
যা-ই হোক, বলছিলাম আমার বন্ধুর মানসিক চাপ Brain Epilepsy থেকে স্মৃতিবিভ্রম ঘটে। আর এর প্রভাবে সে অসুস্থ ছিল ২০১০ সাল পর্যন্ত। বলতে গেলে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয়েছিল। কিন্তু তার বড় ভাই, বড় বোন আর সেজো ভাইয়ের অবিরত প্রেষণা আর বাবা-মায়ের উৎসাহ-অনুপ্রেরণা তাকে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে সাহায্য করে। আসলে সামাজিক সম্পর্কগুলো শরীর, মন বা জীবন সবকিছুতেই মানুষকে কল্পনাতীত উচ্চতায় নিয়ে যায়। Sweden's Karolinska Institute তাদের গবেষণায় এটাই বলেছে—
"Social relationships are known to be health boosters, as friends are thought to encourage each other to look after their health and ease depression and anxiety."
অর্থাৎ,
“সামাজিক সম্পর্কসমূহকে স্বাস্থ্য সহায়ক হিসেবে আখ্যায়িত করা
হয়। কারণ বন্ধুরা তাদের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার এবং বিষণ্নতা ও
উদ্বেগকে হ্রাস করার জন্য উৎসাহ দিয়ে থাকে।”
সব সামাজিক সম্পর্কের মূল ভিত্তি হলো বিয়ে। কারণ বিয়ের মাধ্যমেই দুজন নর-নারী থেকে আজকের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অজস্র মানুষ আর অজস্র বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা। ইনফ্লুয়েঞ্জা অনেক বিবাহিত পরিবারের মধ্যেও একটি সাধারণ ঘটনা বলে মনে হতে পারে, কিন্তু যারা অবিবাহিত তাদের তুলনায় বিবাহিতদের মধ্যে ফু আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম। University of Birmingham ১৮৪ জন মানুষের ওপর গবেষণা করে দেখেছে যে, বিবাহিত পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে ফু টিকার অ্যান্টিবডি সাড়া দিয়েছে বেশি। প্রতিবেদনে পাওয়া গেছে, রোগপ্রতিরোধ পদ্ধতি বা ইমিউন সিস্টেম বিবাহিতদের বেলায় বেশি কার্যকর ও সক্রিয় ছিল। ৭
বিবাহিত দম্পতিদের হৃদরোগের ঝুঁকি শুধু কমই নয়; বরং রোগ শনাক্ত হওয়ার পরেও তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা আরও বেশি। কারণ মানসিক চাপ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। আর বিবাহিত দম্পতিরা অবিবাহিত ব্যক্তিদের চেয়ে কমই হতাশায় ভোগে। University of Newcastle, Australia একটি গবেষণায় প্রকাশ করেছে যে, একই বয়সের বিবাহিত
1. Anna C Phillips et al. Brain Behav Immun 2006 May, A. Carroll, D, Bums, VE, Ring, C, Macleod, J & Drayson, M 2006, 'Bereavement and Marriage are associated with antibody response to influenza vacccination in the elderly', Brain, Behaviour, and Immunity, Vol. 20, no. 3, pp. 279289.
পুরুষদের তুলনায় অবিবাহিত পুরুষদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থাকে বেশি। University of Maryland in America-এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, হৃদরোগ নির্ণয়ের ১০ বছরের মধ্যে মারা যাওয়ার আশঙ্কা বিবাহিতদের তুলনায় অবিবাহিতদের শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ বেশি। (৮)
গবেষণায় প্রমাণিত হার্ট অ্যাটাকের পর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ১৪% বেশি বিবাহিত মানুষদের।(*)
University of Pittsburgh-এর গবেষকরাও দেখেছেন যে, বিবাহিত পুরুষদের ধমনীতে কম ঘনত্ব থাকে, এর কারণ হলো বিয়ের কারণে মানসিক চাপ হ্রাস পাওয়া বিদ্যমান থাকে। কারণ বিয়ে বিশেষ করে ভালো সম্পর্ক, স্বাস্থ্যকর খাদ্য এবং নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাত্রার জন্য সবচেয়ে বড় নিয়ামক। (১০)
University of Southern Denmark ২০০০ লোকের ওপর ভিত্তি করে একটি গবেষণা করে। তাতে দেখা গেছে যে, যারা তালাকপ্রাপ্ত, বিধবা বা যারা বিবাহিত না তারা বিবাহিতদের চেয়ে বেশি মাত্রায় বিষণ্নতায় ভোগে এবং তাদের শারীরিক ক্ষমতা কম থাকে। (১১)
Italian National Institute of Health Study-এর মতে বিবাহিত ব্যক্তিদের আত্মহত্যার হার সর্বনিম্ন। এমন অসংখ্য গবেষণায় প্রমাণিত যে বিয়ে মানুষের জীবনকে পরিপূর্ণ ও সুস্থ করে তোলার এক অনন্য মাধ্যম। বলাবাহুল্য, এসব গবেষণার মাধ্যমে সাড়ে ১৪০০ বছর আগে বিয়ে নিয়ে ইসলামের গুরুত্বারোপ করার মাহাত্ম্য অনুভূত হয়। ১২
*. Coyne, J. C., Rohrbaugh, M. J., Shoham, V., Sonnega, J. S., Nicklas, J. M., & Cranford, J. A. (2001). Prognostic importance of marital quality for survival of congestive heart failu . The American journal of cardiology, 88 (5). 26-52 . Aston Medical School and the University of East Anglia. Dr. Rahul Potluri, Clinical Lecturer at Aston Medical School and the Founder of ACALM 2020.
». Nataria Joseph, American College of Cardiology's 2014 Conference. 22. Soons, J.P.M. and Kalmijn, M. (2009). Is Marriage More Than Cohabitation? Well-Being
Differences in 30 European Countries. Journal of Marriage and Family, 71 1141-1157. *. Kposowa AJDivorce and suicide risk. Journal of Epidemiology & Community Health 2003;57:993.
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....