লেখক : মারুফ রুসাফী
ধরণ : উপন্যাস
প্রকাশ : মার্চ ২০২২
প্রকাশনী : ইলমান পাবলিকেশন
রিভিউ : আরিফা খান
মানুষ একটা সময়ে এসে অতীতের সবকিছু মনে করে; মনে করে কখনও হাসে কখনও বা কাঁদে!
বইটি সংগ্রহ করার সময় তেমন আহামরি কিছু ভাবিনি। ভেবেছিলাম নিকাব নিয়ে সাদামাটা কোনো বই হবে। কিন্তু অর্ধেক পড়ে বুঝতে পারি এ লেখকের বই নিয়ে কেন এতো ফটোগ্রাফি করে মানুষ। লেখকের আগের এথেইস্ট বইটি পড়া না হলেও এথেইস্ট নিয়ে অনেক আলোচনা শুনেছি। নিকাব পড়ে সেটাও সংগ্রহ করার নিয়ত করেছি। নিকাব নাম বইটির সাথে সুন্দর ভাবে মিলে গিয়েছে। আমার পছন্দের সেরা তালিকায় যুক্ত হয়ে গেছে বইটি।
বইটির উৎসর্গটিই অনেক সুন্দর। তাই হুবহু নিচে না তুলে পারলাম না।
আমাদের সমাজে দেখেছি, মেয়েরা নিকাব পড়ে নিজেদের চেহারা ঢেকে রাখে, এটা তো ভালো কাজ কিন্তু আমি আমার সমাজে এমন কিছু কিছু মানুষও দেখেছি, তারা কেমন যেন তাদের আসল চরিত্র এবং আসল রূপ ঢেকে রেখে ভালো এবং সাধু মানুষ সেজে থাকে। তার মানে তারাও নিকাব পড়ে, আসল চরিত্র এবং আসল রূপের উপর, ভালো এবং সাধুর নিকাব। তারা দু-মুখী মানুষ। তাদেরকে চিনতে বড় কষ্ট হয়! সে সকল মানুষের বিরুদ্ধে লড়াই করা মানুষগুলোর জন্য বইটি উৎসর্গ করেছি।
মূল চরিত্র আলো এবং জেনিতা। সাথে চেয়ারম্যান ডক্টর খান, লিটন, আলোর মা এবং জেনিতার নানা-নানি।
প্রথমেই শুরু হয় দুই বান্ধবী আলো এবং জেনিতার মর্মান্তিক ঘটনা দিয়ে এবং চেয়ারম্যানের ছেলের ক্ষমতার ভয়ংকর অপব্যবহার দিয়ে।
আলো-জেনিতার বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছোট থেকেই থাকে গভীর। তাদের বন্ধুত্বের পথ চলে হাসি-কান্না, হাসাহাসি, একসাথে কোচিং, ঝগড়া এবং খুনসুটিতে। হঠাৎ তাদের জীবনে নেমে আসে ভয়ংকর নির্মম বাস্তবতা। এখানে এসে বর্তমান বাংলাদেশের সাথে মিলে গেছে।
কিছুদিন পর জেনিতা ধর্ষিতা হয়ে আলোর হাতেই খুন হয়! কিন্তু কেনো? কী হয়েছিল সে বাঙলোতে? এখানে এসে খুবই সুন্দর একটা টুইস্ট পাবেন। বর্তমান রাজনীতির আড়ালের নোংরা কিছু দৃশ্য পাবেন।
জেনিতার নানা বীর মুক্তিযোদ্ধা হোসেন মিয়াকে কারা খুন করে তা জানতে গিয়েই বের হয়ে আসে অনেক কিছু। এখানে এসে মনে হয়েছে আমাদের সমাজেরই কিছু মানুষের আসল চেহারা বের হয়ে আসে। তারপর জেনিতার খুন, আলোর মায়ের পরকীয়া এবং খুন, চেয়ারম্যান ডক্টর খানের পরিণতী! এক পৃষ্ঠা পড়ার পর মনে হচ্ছিল তারপর কী হবে, তারপর কী হবে!
ব্যাক্তিগত মতামত হলো বইটি প্রথম কয়েক পৃষ্ঠা সাদামাটা মনে হলেও কয়েকপৃষ্ঠা পরে গিয়েই শুরু হয় ভয়ংকর বাস্তবতা। গল্পের ভিতরে যে একটা গল্প থাকে তা লেখক সুন্দর করেই তুলে ধরেছেন। সমাজের ক্ষমতাশালীরা যে ক্ষমতার অপব্যবহার করে মাঝে মাঝে কতটা ভয়ংকর তা সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন। পরকীয়া যে সন্তানসহ পুরো একটা পরিবার ধ্বংস করে দেয় তাও সুন্দর ফুটে ওঠে! সমাজের কিছু মানুষ যে আঁধারের হিংস্রতার উপর কালো নিকাব টেনে সাধু সেজে থাকে, তাদেরকে সুন্দর করেই উপস্থাপন করেছেন। বইটি পড়ে মাঝে মাঝে মুগ্ধ হয়েছি এবং মাঝে মাঝে কিছু নির্মম চরিত্র পড়ে অজান্তেই কেঁদেছি! আসলে বাস্তবতা এতোই কঠিন হয়! পড়া শেষ করেও অনেক ভেবেছি। আবার কেঁদেছি। কিছু কিছু চরিত্রে মনে হয়েছে এগুলো আমার কষ্ট, আমার যন্ত্রণা!
সমালোচনা করার মত বইটিতে তেমন কিছু নেই। যা করা যায় তা হলো আলোচোনা। তবে কয়েকটি শব্দ টাইপিং মিস্টেক হয়েছে। যা একদমই নগন্য। আশাকরি সংস্করণে সংশোধন করে নিবেন।
বইটির অসংখ্য প্রিয় লাইন হতে কিছু লাইন।
জগতে কিছু কিছু মানুষের অনেক কিছু বলার থাকা সত্ত্বেও হুটহাট নিরব হয়ে যায়, আমরা আপন মানুষগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সে নিরবতার অর্থ বুঝতে পারি না।
মানুষ একটা সময় এসে অতীতের সব কিছু মনে করে; মনে করে কখনও হাসে, কখনও বা কাঁদে!
জীবনের লাইনগুলোতে কমা কিংবা দাঁড়ি পাল্টে গিয়ে কখন কোথায় বিরামচিহ্ন বসে যেতে পারে তা আমরা কেউ জানি না!
আমাদের ব্যক্তিগত কেউ একজন থাকুক,
যেমন থাকে আকাশের বুকে নীল!
একজন মেয়ে মৃত্যুর চেয়ে বখাটে ছেলেকে অনেক বেশি ভয় পায়! মৃত্যু মেয়েটির জীবন নিয়ে নিবে আর বখাটে ছেলে মেয়েটির বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নিবে!
এ শহরের ফুটপাতে শুয়ে থাকা মানুষগুলো কোনো সাধারণ মানুষ নয়, তাদের প্রতিটি জীবনের উপর বয়ে গেছে এক অনাকাঙ্ক্ষিত তুমুল ঝড় কিংবা এখনও বয়ে যাচ্ছে!
পৃথিবীতে বেঁচে না থাকার মত বিকট যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে থেকে নতুন করে স্বপ্ন দেখার ভীষণ সুখ সবাই উপলব্ধি করতে পারে না
ব্যাক্তিগত রেটিং : ১০/১০
বই : নিকাব লেখক : মারুফ রুসাফী | বই রিভিউ - Nikab By Maruf Rusafi
জগতে কিছু কিছু মানুষের অনেক কিছু বলার থাকা সত্ত্বেও হুটহাট নিরব হয়ে যায়, আমরা আপন মানুষগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সে নিরবতার অর্থ বুঝতে পারি না।
মানুষ একটা সময় এসে অতীতের সব কিছু মনে করে; মনে করে কখনও হাসে, কখনও বা কাঁদে!
জীবনের লাইনগুলোতে কমা কিংবা দাঁড়ি পাল্টে গিয়ে কখন কোথায় বিরামচিহ্ন বসে যেতে পারে তা আমরা কেউ জানি না!
আমাদের ব্যক্তিগত কেউ একজন থাকুক,
যেমন থাকে আকাশের বুকে নীল!
একজন মেয়ে মৃত্যুর চেয়ে বখাটে ছেলেকে অনেক বেশি ভয় পায়! মৃত্যু মেয়েটির জীবন নিয়ে নিবে আর বখাটে ছেলে মেয়েটির বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নিবে!
এ শহরের ফুটপাতে শুয়ে থাকা মানুষগুলো কোনো সাধারণ মানুষ নয়, তাদের প্রতিটি জীবনের উপর বয়ে গেছে এক অনাকাঙ্ক্ষিত তুমুল ঝড় কিংবা এখনও বয়ে যাচ্ছে!
পৃথিবীতে বেঁচে না থাকার মত বিকট যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে থেকে নতুন করে স্বপ্ন দেখার ভীষণ সুখ সবাই উপলব্ধি করতে পারে না
ব্যাক্তিগত রেটিং : ১০/১০
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....