জনরাঃ ফিলোসপিক্যাল ফিকশন
অনুবাদঃ সৈয়দ মোহাম্মদ রেজওয়ান
প্রকাশনীঃ বুক স্ট্রিট
ফাইল টাইপঃ পিডিএফ ডাউনলোড
ফাইল সাইজঃ ৫.১ এমবি (বইপাও.কম ক্লাউড)
মূল্যঃ ২০০ টাকা
Review Credit 💕 Peal Roy Partha
ফিওদর দস্তয়ভস্কি লেখা ‘নোটস ফ্রম দ্য আন্ডারগ্রাউন্ড’ বই পড়ে বিস্তর অভিজ্ঞতা সম্মুখীন হতে হলো আমাকে! বইটাকে ঠিক কী হিসেবে নিব আমি? কোন ট্রাজেডি উপন্যাস? একজন ব্যাক্তির জীবনবৃত্তান্ত? অভিজ্ঞতার সাগরের উপচে পড়া ঢেউ না-কি নিজের ভেতরকার সত্তার একাশং? বইটির সাথে আমার এই ক্ষুদ্র জীবনে ঘটে যাওয়ার বেশ কিছু ঘটনার প্রতিবিম্ব একইসাথে সমাজের একজন মানুষের মনমানসিকতার জ্বলন্ত উদাহরণ হিসেবে—নির্দ্বিধায় আমি বইটিকে সেরার কাতারে রেখে দিবো! কোনো প্রকার সাজেশন ছাড়া বইটি কেনা! ‘বুক স্ট্রিট’ পেজ থেকে অফারে মূল্য কম দেখে অর্ডার করে দেওয়া (২০ সালের ঘটনা)! হাতে পাওয়ার পর ফ্ল্যাপের সারাংশ পড়ে কিছুটা আকৃষ্ট হই। যখন পড়তে শুরু করে দিলাম তখন অন্য এক জগতে নিজেকে আবিষ্কার করলাম! নাহ! অবাস্তব জগৎ বা অচেনা কোথাও না; বইয়ের নামহীন সেই যুবকের চল্লিশার্ধ বয়সের বিশাল অভিজ্ঞতা ও কিছু তিক্ত ক্রিয়াকলাপের সমষ্টি মিলিয়ে রোমাঞ্চিত হয়েছি একই সাথে নিজের মধ্যকার কিছু বিষয়কে ঠিক করে নিয়েছি পরিবর্তন করা এখনই দরকার।
মোটিভেশনাল উপন্যাস হিসেবে বইটাকে আমি অনুসরণ করলেও অসুবিধা নেই, কারণ যে-সব উদাহরণ লেখক উক্ত বইতে টেনেছেন সেটা আমাদের সমাজে হারহামেশা ঘটে চলছে! শুধু সমাজে না এমনকি আমাদের নিজেদের মধ্য এই বোধ বিবাধ কাজ করে। মানুষের আচরণে যে রহস্যর সৃষ্টি হয় সেটার উৎপত্তি খুবই অদ্ভুত! বাণী লিখব না কিন্তু বাস্তব কিছু সত্য কথা বইয়ের ভেতর থেকে তুলে ধরছি!
লেখকের মতে, দৈনন্দিন জীবনে চলাচলের জন্য সামান্য একটু মানবিক সচেতনা থাকা যথেষ্ট! মানুষ নিজের অসুখ নিয়ে গর্ব করতে পছন্দ করে। আপনি যখন কোনো সুন্দর পরিকল্পনা তৈরি করবেন ঠিক তখনই কোথা থেকে যেন কুৎসিত এক হাতছানি ছুটে এসে সেই পরিকল্পনা ভেস্তে দিবে। মানুষ যখন বুঝতে পারে সে একেবারে শেষ সীমানায় এসে উপস্থিত অর্থাৎ দেয়ালে পিঠ ঠেঁকে গিয়েছে পালানোর কোন সুযোগ নেই তখন নিজেকে বদলাতে পারবে না। এমনকি সময় আর বিশ্বাস যদি সে সুযোগ তাকে দেয় তবু সে নিজের পরিবর্তন হতে চাইবে না!
মানুষ নিজেকে নিজে চারপাশের মানুষের তুলনায় ভীষণ বুদ্ধিমান ভাবে! অবিশ্বাস, আবেগ আর ঘৃণার থেকেই জন্ম নেই প্রতিহিংসা। কোনো সিদ্ধান্ত নিতে একটুও দেরি হয় না অথচ একমিনিট পরে সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে অনুশোচনা শুরু হয়ে যায়। যেইসব মানুষ আলস্য; তারা জীবনে কিছু করতে পারে না সেটা সবাই জানি, তাহলে এই আলস্য মানুষকে কেউ শ্রদ্ধা করবে কীভাবে? লেখকের ধারাভাষ্যমতে, যখন কেউ কিছু হতে পারে না অন্ততপক্ষে অলস তো হতে পেরেছে, নিজের ওপর আস্থা রাখার মতো এ একটাই ভালো গুণ যথেষ্ট! অলস! এটা তো একটা গালি। একটা পেশা। উন্নতির একটা ধারা!
মানুষের সুবিধা ও সাফাল্যর চাবিকাঠি হিসেবে শুধু পরিসংখ্যান আর ফরমুলা দেখে মূল্যায়ন করি। অর্থাৎ একজন ব্যাক্তির সুবিধা মানে উন্নতি-সম্পদ-স্বাধীনতা-শান্তি এমনি সব জিনিস। যে মানুষ এইসবের বিরুদ্ধে যাবে সে যেন খামখেয়ালি পাগল ছাড়া আর কিছু নয়।
যে লেখাটা আমাকে ভীষণ নাড়া দিয়েছে সেটা উল্লেখ করছি। প্রত্যক মেয়ের জন্য এই লাইনগুলো যতোটা আবেগী ততোটাই যৌক্তিক!
❝একজন বাবা নিজের ছেলে থেকেও মেয়েকে বেশি ভালোবাসে স্নেহ করে। মেয়ে যখন পার্টিতে নাচত, বাবা পাঁচ ঘণ্টা একঠায় দাঁড়িয়ে থাকত দেখার জন্য। পাগলের মতো ভালবাসত মেয়েকে। উবু হয়ে বসলে তার হাতে-পায়ে চুমু খেত। মেয়ে না-ঘুমানো পর্যন্ত জেগে থাকত। তারপর ঘুমন্ত মেয়েকে আদর করত, তার শরীরে ক্রসচিহ্ন আঁকত! নিজে শতছিন্ন পোশাক পরত অথচ মেয়েকে কিনে দিত দামি দামি সব কাপড়চোপড়। মেয়েকে দিয়েই তার আনন্দ। অনেক মেয়েতো বাপের বাড়িতে সুখে কাটিয়ে দেয়। বাবারা মেয়েদের বিয়ে দিতে ঈর্ষা করে জানেন? কারণ বাবারা ভাবতেই পারতো না মেয়ে অন্য কাউকে ভালোবাসবে, চুমু খাবে। জানি এইসব ফালতু কথা, শেষ পর্যন্ত বাপকে যুক্তি মানতেই হয়।
বিয়ের পূর্বে বাবারা দুশ্চিন্তায় মরে যায়! তারা পাত্রের খুঁত ধরতে থাকে। অবশ্য মেয়ে নিজে যাকে পছন্দ করবে তার সাথেই মেয়ে বিয়ে দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। কিন্তু অশান্তি হতে পারত কেননা মেয়ে যাকে ভালোবাসে, বাপের কাছে সে-ই তো সবচেয়ে খারাপ পাত্র!
কিন্তু কেউ কেউ পছন্দের পাত্রের সঙ্গে বিয়ে না দিয়ে মেয়েকে বিক্রি করে দেয়।❞
কী বুঝলেন? এই ১১১ পৃষ্ঠার বইতে এমন অনেক লাইন আছে যা আপনার হৃদয়কে ভাবনার দুনিয়ায় নিয়ে ভাবতে বসিয়ে দিবে! সব মিলিয়ে অনবদ্য। বইয়ের নামানুসারে একটি ডায়ারি থেকে উপন্যাসটি লেখা। লেখকের বাস্তবধর্মী জীবনের প্রতিটা পদক্ষেপের সারমর্ম লেখক তুলে ধরেছেন নিজের মাধুর্য মিশিয়ে।
ফিওদর দস্তয়ভস্কি স্যারের অন্যান্য উপন্যাস ও উপন্যাসিকা খুব শীঘ্রই পড়বো। ওনার লেখার যে মাধুর্য তা আমাকে মোহিত করেছে গভীর ভাবে! অনুবাদে ‘সৈয়দ মোহাম্মদ রেজওয়ান’ ভাইয়ের প্রথম কাজ হিসেবে বেশ ভালো! এতটা সাবলীল আর সহজবোধ্য ভাবে পড়তে পেরেছি যে—বই ও অনুবাদের প্রতি ভালোলাগা জন্মেছে অনেক।
নোটস যদিও আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে এসেছে কিন্তু তাতে রয়েছে উন্মুখ খোলা আকাশের ন্যায় সবকিছু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।
══ ১৫ আগস্ট, ২০২০ ══
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....