অন্ধ বধীর মূক লেখক : কারিম শাওন - বই রিভিউ | Ondho Bodhir Muk By Karim Shawn

অন্ধ বধীর মূক
লেখক : কারিম শাওন
প্রকাশনী : ফেরা প্রকাশন
বিষয় : ঈমান ও আকীদা
পৃষ্ঠা : 256, কভার : হার্ড কভার
ভাষা : বাংলা
প্রথম প্রকাশ : এপ্রিল ২৪ : ২০২২

অন্ধ বধীর মূক লেখক : কারিম শাওন - বই রিভিউ | Ondho Bodhir Muk By Karim Shawn
কভার ছবি : বই অন্ধ বধীর মূক

বই অন্ধ বধীর মূক লেখক : কারিম শাওন - মানুষ সৃষ্টিগতভাবে স্বাধীনচেতা বলে অন্যের দৃষ্টিভঙ্গিকে অন্ধের মতো অনুকরণ করাকে নিজের জন্য বোঝা মনে করে। তাই স্রষ্টা থাকার বিষয়ে অমুক বিখ্যাতরা কী বলল, তমুক জ্ঞানীরা কী যুক্তি দেখাল, আপনার কাছে সেসবের মূল্য গোটা একটা শূন্যের সমান; যদি না নিজের সহজ-সরল চিন্তাশক্তি প্রয়োগ করে স্রষ্টাকে খুঁজে পান, যদি না আপনার অন্তরকে আপনি নিজের মতো করে বুঝিয়ে শান্ত করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারেন–একজন স্রষ্টা অবশ্যই আছেন।‘স্রষ্টা থাকা বা না থাকা’র বিতর্কের মঞ্চ থেকে ভারী ভারী যুক্তিতর্ক শুনে আপনার অন্ধকারাচ্ছন্ন অন্তরের ঘরটা আলোকিত হলো কি না, সেটা বোঝা যায় বিতর্ক শোনার পরও যেই আপনি সেই ‘আপনিই’ হয়ে রইলেন। স্রষ্টাকে অন্তর দিয়ে অনুভব করতে পারেন না বলে ‘কেউ নেই’ ভেবে হতাশাগ্রস্ত হন। ক্ষাণিক পরেই আবার ‘হয়তো কেউ একজন আছেন’ ভেবে আশাবাদী হয়ে ওঠেন যখন দেখেন, জগতের কোনো কিছুর ওপর আপনার একবিন্দুও নিয়ন্ত্রণ নেই।

মূলত দল হলো দুটো—

১. বিশ্বাসী

২. অবিশ্বাসী

দিনশেষে কখনোই এমনটা হবে না যে, একই সাথে দুটো দলই সঠিক কিংবা একই সাথে দুটো দলই ভুল। মানে চূড়ান্ত ফলাফলে গিয়ে হয় বিশ্বাসীরা সঠিক আর অবিশ্বাসীরা ভুল, অথবা অবিশ্বাসীরা সঠিক আর বিশ্বাসীরা ভুল হবে। ফলাফল কখনোই এমন হবে না যে স্রষ্টা আছেন + নেই। বিশ্বজগৎ তার একটা চূড়ান্ত সমাধানে পৌঁছে যাবে। চূড়ান্ত বললাম এই জন্য যে, এই জগতে যা-ই ঘটে যাচ্ছে— এ সবই স্রষ্টাকে ঘিরে। কারণ, স্রষ্টা কর্তৃক সকল আদেশ-নিষেধ, নির্দেশ, নিয়ম কানুন জারি করা আর মানুষ হিসাবে নির্দ্বিধায় বিনা বাক্য ব্যয়ে সেসব মেনে নেওয়া সবই নির্ভর করছে একজন স্রষ্টা সত্যি সত্যি আছেন কি না সেটার ওপর।

একদল বলছে, ‘এই এই নিয়মে আমরা চলব',

আরেক দল বলছে, 'আমরা আমাদের নিয়মে চলব,

আরেক দল বলছে, ‘না না আমরা স্রষ্টার দেওয়া নিয়মে চলব', আরেক দল বলছে, ‘স্রষ্টার নিয়ম আবার কী? স্রষ্টা বলতে কিছুই নেই। সব মনগড়া কাহিনি।'

ও বলছে, 'না আমি তোমারটা মানি না।' সে বলছে, ‘আমারটা মানতেই হবে, আমিই সঠিক।'

এক দেশ বলছে, ‘অমুক দেশের সাথে যে দেশ বন্ধুত্ব রাখবে, সে দেশের সাথে আমাদের সম্পর্ক নেই।”

আরেক দেশ বলছে, ‘অমুক দেশের নিয়ম-কানুন আমাদের দেশে কেন চলবে??

যার ফলে দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতন চলছে। যে যার ইচ্ছেমতো নিয়মে চলছে। যে যেভাবে পারছে, জোর খাটিয়ে একদল অপর দলকে বাধা দিচ্ছে। যে যেভাবে পারছে, দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধাচ্ছে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়ে এখন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পথে।

কী মনে হয়, ‘স্রষ্টা আছেন' এই ব্যাপারে যদি সবাই নিশ্চিত বিশ্বাসী হতো, তাহলে এত এত ঝামেলা তৈরি হতো? কখনোই হতো না। কারণ, অন্তত স্রষ্টার ভয়ে হলেও দলগুলো নিজেদেরকে অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখত। পৃথিবীতে নাস্তিক দাবি করা মানুষ আর কতজন; হাতে গোনা যাবে এদের। আস্তিক বা স্রষ্টায় বিশ্বাসী দাবি করা মানুষের সংখ্যাই তো বেশি। অন্ততপক্ষে এই বিশ্বাসী মানুষগুলোও যদি সীমালঙ্ঘনমূলক কাজ থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখত, তবে পৃথিবীটা আরও শান্তিময় হতো।

যেসব মানুষ নিজেদের বিশ্বাসী হিসাবে দাবি করে, তাদের অনেকেই আসলে নিশ্চিত বিশ্বাসী নয়। তারা যদি নিশ্চিত বিশ্বাসী হতো, তখন অন্তত বিশ্বাসী মানুষগুলোর মধ্যে কোনো বড়ো রকমের দ্বন্দ্ব হতো না। স্রষ্টার প্রতি যদি মানুষের নিশ্চিত বিশ্বাস থাকে; তবে স্রষ্টা যেই আদেশ করেছেন, সেটা বিনা বাক্য ব্যয়ে মানুষ মেনে নেবে। সে তখন খুব বেশি বিশ্লেষণ করতে যাবে না যে, স্রষ্টা এই নিয়ম কেন দিলেন বা স্রষ্টার ওই নিয়মটা এমন কেন বা স্রষ্টা এত কঠোর আইন কেন করলেন ইত্যাদি।

নিশ্চিত বিশ্বাসী একজন মানুষকে হাতে ধরে পথ দেখাতে হয় না। তার নিখাদ বিশ্বাস তাকে তার সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বিবেক প্রয়োগ করে সে নিজেই বুঝতে পারে, কোন কাজ তার করা উচিত আর কোন কাজ করা উচিত নয়। সে নিজে স্রষ্টার কোনো আইন লঙ্ঘন করবে তো দূরের কথা, বরং স্রষ্টার আদেশ পালন করতে গিয়ে কিংবা স্রষ্টার কোনো আইন বলবৎ রাখতে গিয়ে তাকে যদি জীবনও দিতে হয়, তবে সেটাও সে হাসিমুখে দিয়ে দেবে।

আমাদের সমাজে এমন উদাহরণও আছে যে, কিছু মানুষ দাবি করে তারা স্রষ্টাকে বিশ্বাস করে, তারা ধর্মীয় উপাসনালয়েও যায়, অথচ তারা স্রষ্টার আইনের বিরোধিতা করে নিজের মনগড়া আইন তৈরি করে রেখেছে। এই মনগড়া আইনকে রক্ষা করছে আবার এমনসব মানুষ, যারা কি না নিজেদেরকে স্রষ্টায় বিশ্বাসী বলে দাবি করে এবং এই শ্রেণির মানুষগুলোও ধর্মীয় উপাসনালয়ে যায়। অথচ তারা স্রষ্টার বিরুদ্ধে অসংখ্য কাজ করে, স্রষ্টাবিরোধী কাজে সহায়তা করে। কোনো মানুষ যদি এই শ্রেণির লোকগুলোকে বলে যে, আপনি/আপনারা যেই কাজগুলো করছেন, সেই কাজগুলো স্রষ্টা নিষিদ্ধ করেছেন, তখন ‘ওই শ্রেণির’ লোকগুলো উপদেশ দেওয়া লোকগুলোর ওপর দমন-পীড়ন চালায়। দমন-পীড়ন চালানো এই দলের লোকগুলো যদি স্রষ্টাকে নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করত, তবে তারা এমন কাজ করতে কখনোই পারত না। তারা ভয়ে থাকত যে, তাদেরকে তাদের এসব দমন-পীড়নের জন্য একদিন জবাবদিহি করতে হবে। প্রকৃতপক্ষে এরা হলো অন্য মানুষকে দেখে দেখে বিশ্বাসী, অন্য মানুষের মুখে শুনে শুনে বিশ্বাসী। বেশিরভাগ মানুষ স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস করছে; তাই এরাও স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস করে। সবাই যা করছে, এরা সেটারই অনুকরণ করছে। বেশিরভাগ মানুষ স্রষ্টার অস্তিত্বে অবিশ্বাস করলে এরাও তা-ই করবে।

এককথায় যেটাকে বলে অন্ধবিশ্বাস। হ্যাঁ, বেশিরভাগ মানুষ আসলে অন্ধবিশ্বাসী। স্রষ্টার অস্তিত্বকে তারা নিশ্চিতভাবে উপলব্ধি করতে পারেনি। মনের মধ্যে ভাগ্য নিয়ে নানান প্রশ্নে এদের জীবনটা গোলকধাঁধাময় হয়ে গেছে। মনের অজান্তে তারা এমন ধারণাও করে ফেলে যে, তারা কি মৃত্যুর পর আসলেই পুনরুজ্জীবিত হবে কিনা।

এই লোকগুলোর অন্ধবিশ্বাসকে নিশ্চিত বিশ্বাসে রূপান্তর করার একটা বৃথা প্রচেষ্টা আমি করেছি আমার লেখায়। বিজ্ঞান নিয়ে নানান প্রমাণ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তার মানে এই নয় যে, বিখ্যাত বিজ্ঞানীরা স্রষ্টায় বিশ্বাস করে তাই আমিও স্রষ্টায় বিশ্বাস করি। পৃথিবীর সব বিজ্ঞানীরা যদি নাস্তিকও হয়ে যায়, এমনকি পৃথিবীর সব মানুষ মিলেও যদি নাস্তিক হয়ে যায়, তবুও আমি স্রষ্টাকে বিশ্বাস করব। বিশ্বাস না করারও কোনো কারণ দেখছি না। কারণ, আমি মানুষটা যেমন বাস্তবে বিরাজমান, স্রষ্টাও বাস্তবে বিরাজমান। স্রষ্টা কোনো কাল্পনিক চরিত্র নন।

বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী নির্বিশেষে প্রতিটা মানুষের মধ্যে একজন নাস্তিক বসবাস করে। অর্থাৎ আপনি একজন বিশ্বাসী হলেও প্রতি মুহূর্তে আপনার নিজের ভেতরের কুপ্রবৃত্তি আপনাকে স্রষ্টায় অবিশ্বাস করতে অনুপ্রাণিত করে। কিন্তু যখন আপনি দেখছেন— আপনি সারা জীবন বেঁচে থাকতে চাইলেও বেঁচে থাকতে পারছেন না, তখন একপ্রকার নিরুপায় হয়ে বুকে পরকালের কিছু আশা নিয়ে স্রষ্টা আছে বলে অনিশ্চিতভাবে ধোঁয়াশা ধোঁয়াশা বিশ্বাস করছেন। অনেক বিশ্বাসী মানুষ আছেন— যারা শুধুই অন্ধের মতো স্রষ্টাকে বিশ্বাস করে যাচ্ছেন বছরের পর বছর। ভাগ্য নিয়ে অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছেন। পাশাপাশি আরও একদল মানুষ আছেন— যারা কি না স্রষ্টাকে বিশ্বাস করেন ঠিকই, কিন্তু ধর্মকে বিশ্বাস করেন না। উপরন্তু, নাস্তিকদের চাতুরী কথাবার্তা এই দুই ধরনের মানুষগুলোর বিশ্বাসকে মরার ওপরে খাড়ার ঘাঁ হয়ে আঘাত করে। এই লেখাটা মূলত এই দুই ধরনের বিশ্বাসী মানুষদের জন্য।

আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে, আমার লেখাগুলো নাস্তিকদেরকে উদ্দেশ্য করে লিখেছি। কিন্তু নাস্তিকদেরকে সঠিক পথের দিকে ডাকার আদৌ কোনো ইচ্ছে আমার নেই। কারণ, এরা পথভ্রষ্ট ও গোঁয়ার মানুষ।

এদের সাথে কী যুক্তি-তর্কে যাব, এরা তো জন্তু-জানোয়ার আর মানুষের মাঝে পার্থক্যই করতে পারে না। তাই এরা বিবর্তনের মতো বস্তাপচা ধারণাকে বিশ্বাস করে। এদের সাথে সভ্যতা-অসভ্যতা নিয়ে কী কথা বলব, এরা তো পাপ শব্দটার সাথে পরিচিতই হয়নি এখনও। পাপ শব্দটা এদের গায়ে এলার্জির মতো চুলকানির সৃষ্টি করে। কারণ, পাপ-পুণ্য এই শব্দগুলো স্রষ্টার সাথে সম্পৃক্ত বিষয়। গুরুতর কোনো খারাপ কাজকেও এরা ‘অন্যায়’ নামে আখ্যায়িত করে, ছোটো কোনো খারাপ কাজকেও এরা ‘অন্যায়' নামে আখ্যায়িত করে। গুরুতর জঘন্য কাজকে পাপ বলে আখ্যায়িত না করে ‘অন্যায়' বলে আখ্যায়িত করলে সেই গুরুতর জঘন্য কাজের নিকৃষ্টতার পরিমাণটা কম কম অনুভব হয় মানুষের মাঝে। ফলে গুরুতর অন্যায় কাজগুলো দিনদিন প্রশ্রয় পেতে থাকে। পাপ কথাটা অত্যন্ত গুরুগম্ভীর। এই শব্দের ব্যবহারের ফলে অন্যায়কারী নিজেও তার পাপ কাজের জন্য মনে মনে অনুতপ্ত হবে। মানুষ হিসাবেই তো এরা এখনও প্রকৃত মানুষের মতো আচরণ করা শিখতে পারেনি। স্রষ্টার ব্যাপারে এদের সাথে যুক্তি-তর্কে যাওয়াটা তাই অর্থহীন।

এরা মানুষের সামনে বিজ্ঞানমনস্ক সাজে। এরা সত্যিই যদি বিজ্ঞানমনস্ক হতো, তবে অনেক আগেই স্রষ্টাকে বিশ্বাস করত। কারণ, বিজ্ঞান দিয়ে খুব সহজেই স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণ করা যায়।

ধরুন এমন কোনো জরিপ বা বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রকাশ করা হলো— যেটা কি না স্রষ্টা আছেন সেই পক্ষে যায়, তাহলে এরা সেই জরিপ বা গবেষণার রেফারেন্স চায়। কাদের রেফারেন্স চায়? বিবিসি, রয়টার্স, উইকিপিডিয়া, নাস্তিকতা মদদপুষ্ট বিভিন্ন জার্নাল ইত্যাদির। এসব জার্নাল কাদের তৈরি? যারা কি না স্রষ্টায় বিশ্বাস করে না অর্থাৎ, এসব পাতি নাস্তিকদের গুরু। এসব গুরুরা——যারা স্রষ্টায় বিশ্বাস করে না, এরা তো ।ময় সেসব বিষয়কেই প্রচার করবে, যেসব বিষয়গুলো স্রষ্টাকে

অস্বীকার করার পথ বের করে দেবে। কতটা হাস্যকর! এরা নিজেদের দলের লোকেরই রেফারেন্স চায়। এসব জার্নাল বা আন্তর্জাতিক পত্রিকা কি নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে? কখনোই না। বরং সত্য গবেষণা—যেটা কি না স্রষ্টার অস্তিত্বকে সত্য বলে প্রমাণিত করে, সেগুলোকেও ভুল প্রমাণ করার প্রচেষ্টা চালায় এসব পক্ষপাতদুষ্ট প্রচার মাধ্যমগুলো। যদি ভুল প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সেই গবেষণাগুলোকে প্রচার পর্যন্ত করে না এসব মিডিয়া।

সুতরাং বোঝা গেল যে, নাস্তিকদেরও ধর্মগ্রন্থ আছে। এদের নিজেদের ধর্মগ্রন্থের বাইরে অন্য কোনো রেফারেন্স এরা গ্রহণ করবে না। এদের সাথে কথা বললে এদের ধর্মগ্রন্থগুলো থেকেই রেফারেন্স দিতে বলে এরা। যেমনঃ আপনি যখন এদের সাথে পৃথিবীতে মানুষের উৎপত্তি নিয়ে তর্কে জড়ান, তখন এরা এদের ধর্মগ্রন্থ যেমন— উইকিপিডিয়া, গুগল, ডারউইনের বই, হার্ভার্ডের বা অক্সফোর্ডের রিসার্চ পেপারস ইত্যাদি দেখানো শুরু করে। আর আপনিও সেটা দেখে চুপ হয়ে যান। আচ্ছা আপনি যদি পৃথিবীতে মানুষের উৎপত্তির দলিলগুলো কুরআন থেকে দেখান, সেটা কি এরা মেনে নেয়?

মানে নাস্তিকতা নামক খেলা বানাল ওরা। খেলার নিয়মও ওদের। আর এটাকে ভুল প্রমাণ করতে চাইলে করতে হবে ওদেরই কাগজপত্র দিয়ে। মামার বাড়ির আবদার!

এরা আপনাকে বলবে— অমুক বিজ্ঞানের জার্নাল, তমুক বিজ্ঞানের জার্নাল থেকে উদ্ধৃতি দিতে। আপনিও বোকার মতো ওদের দেখানো পথে হাঁটতে গিয়ে ফাঁদে পরে যান। কখনো কি ভেবেছেন ওই জার্নালগুলোতে যারা লেখা প্রকাশ করে তারা কারা? ব্যাপারটা তো এমন নয় যে, ‘স্রষ্টা নেই’ এটা প্রমাণের গবেষণার ফলাফল যেসব জার্নালে প্রচার করা হয়, সেসব জার্নালের দায়িত্ব পালনকারীরা আস্তিক। ব্যাপারটা এমনও নয় যে, নিরপেক্ষ কোনো সংস্থা স্রষ্টা থাকা বা না থাকার পক্ষে-বিপক্ষে প্রতিটা গবেষণা প্রচার করছে।

বরং দৃশ্যটা পুরো উলটো। শুনে বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও এটাই সত্য যে, বিশ্বের নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নাস্তিকতা লালন করে। আর এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা করে এদেরই দেশের প্রধানরা। বেশিরভাগ অসাধু প্রফেসর যারা কি না নামি একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরের তকমা ব্যবহার করতে পারবে সেই লোভেই হোক, আর নোবেলের মতো ঠুনকো একটা পুরস্কার পাবার লোভেই হোক – সত্যগুলোকে গোপন করে। হাতেগোনা কয়েকজন প্রফেসর যারা কি না স্রষ্টা আছেন— সেটা প্রমাণের চেষ্টা করেছেন, তাদের ক্যারিয়ার নিয়ে টানাটানি হয়েছে, চাকুরি থেকে বরখাস্ত হয়েছেন, জীবনের ওপর হুমকি এসেছে; তারা নামি একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর হতে পারবে তো বহু দূরের কথা। মোটকথা ওইসব দেশগুলো নাস্তিকদেরই দেশ। এ কথাগুলো এখন ওপেন সিক্রেট।

নাস্তিকদের আরও একটা চাতুরী আপনাদেরকে ধরিয়ে দিই।

স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণের চেষ্টা করেছেন— এমন কারও লেখা যখন এরা খণ্ডন করতে যায় তখন এরা সেই লেখককে উদ্দেশ্য করে কিছু বাক্য ব্যবহার করে। যেমনঃ সীমিত জ্ঞান দিয়ে নিজের মতো ব্যাখ্যা করেছেন; তিনি যে থিওরিগুলো কপচালেন, সেগুলোর ওপর কী তিনি পড়াশোনা করেছেন; জ্ঞানের দৌড় বোঝা গেল, I am not here to educate you ইত্যাদি ইত্যাদি বলে এরা এমন একটা ভাব ধরে যেন এরা সবকিছু জেনে উলটিয়ে ফেলেছে। ভাবখানা এমন মনে হয় যে, এরা সবচেয়ে বড়ো পণ্ডিত। অথচ সত্যটা হলো এরা একটা কুয়োর ব্যাঙ। এদের গুরুরা এদের জন্য যেসব পেপারস লিখে রাখে, এরা সেসব মুখস্থ করে এখানে সেখানে বমি করা শুরু করে।

এদের সবার কথা বলার ধরন দেখবেন একই। কারও গঠনমূলক সমালোচনা করা তো দূরের কথা, গোঁজামিল আর অযুক্তি-কুযুক্তি দিয়ে পয়েন্ট করে করে কথা বলে নিজেদের বস্তাপচা কথাগুলোকে খুব গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে জাহির করতে চায়। যে বিষয়ের সমালোচনা করতে যায়, সেটার বিপক্ষে কোনো যুক্তি দাঁড় করানো তো দূরের কথা, সেই বিষয়টাকে বিস্তারিত করে এমনভাবে বলা শুরু করে, মূল প্রসঙ্গটাই একসময় হারিয়ে যায়।

যেমন ধরুন, আপনি একটা বাড়ি বানালেন। এরপর একজন নাস্তিক এসে আপনার বাড়ি বানানো ভুল হয়েছে বলতে লাগল। কী ভুল হয়েছে, সেটা না বলে বলা শুরু করে বাড়ি বানাতে ইট, সিমেন্ট, রড, বালু লাগে। বাড়িতে রং করতে হয়, মোজাইক করতে হয়। দখিনা বারান্দায় দাঁড়ালে বাতাস পাবেন। বাড়ি মানুষকে রোদ, বৃষ্টি থেকে সুরক্ষিত রাখে।— এসব শুনে সাধারণ মানুষ যাদের বিশ্লেষণক্ষমতা কিছুটা কম, তারা এসব নাস্তিকদেরকে বিশাল পণ্ডিত ভাবা শুরু করে দেন।

এরা কেমন যুক্তি দেয়, তার আরও একটা উদাহরণ দিই। একবার এক ব্যক্তিকে প্রশ্ন করা হলো, ‘আপনার পিতা আর আপনার বয়সের পার্থক্য কত?' লোকটি— উত্তর দিলো, সে আর তার পিতা বয়সে সমান। সবাই অবাক হয়ে যখন জানতে চাইল যে কীভাবে এটা সম্ভব? তখন লোকটি যুক্তি দিলো— ‘আমি আমার পিতার বড়ো সন্তান। আমি যখন জন্মগ্রহণ করেছি, তখনই আমার পিতা বাবা হয়েছেন।' যাহোক, নাস্তিকদের নিয়ে আমি মোটেই চিন্তিত নই। মৃত মানুষকে জীবিত করে দেখালেও এরা স্রষ্টাকে বিশ্বাস করবে না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কুরআনের অনেক জায়গায় বলেছেন, এদের হৃদয়গুলোতে তিনি সিল করে দিয়েছেন। তাই আমার মূল লক্ষ্য শুধু সন্দেহপূর্ণ বিশ্বাসী মানুষগুলোকে নাস্তিকদের ধোঁকা থেকে উদ্ধারের চেষ্টা করা এবং অনিশ্চিত বিশ্বাসকে নিশ্চিত বিশ্বাসে রূপান্তর করা, যেন তারা পরিপূর্ণভাবে স্রষ্টার নিয়মগুলো নিজে থেকেই মেনে চলে।
____কারিম শাওন।

অন্ধ বধীর মূক বইটি পাওয়া যাচ্ছে Wafilife এ তাই দেরি না করে এখনি Hardcopy ক্রয় করুন। লেখক : কারিম শাওন এর বই।
অন্ধ বধীর মূক বইটি PDF Download Free চাহিয়া লেখককে নিরুৎসাহিত করবেন না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ