বই অতলান্ত এটি একটি কমিক্স বই বইটির লেখক মাহাতাব রশীদ অতলান্ত এর মূল গল্প “নিহত সামির হোসেন আর মোহাম্মদ সোহেল এর বয়স ছিলো যথাক্রমে ২১ ও ২৩ বছর। এলাকাবাসী জানিয়েছে তারা মাদকাসক্ত, এই এলাকায় রাত্রে একা পথচারী দেখলে প্রায়ই ছিনতাই করতো। এই জোড়াখুনের মাধ্যমে তিনমাসে মোট চারবার এইরূপ ভয়ংকর খুন দেখলো শহরবাসী। সারাদেশের সকল সংবাদমাধ্যম টালমাটাল এই ধারাবাহিক খুনের ঘটনায়। এই ঘটনার তদন্তে কাজ করছে ডিএমপির একটি স্পেশাল ব্রাঞ্চ।”
বই: অতলান্ত
কমিক্স আর্টিস্ট: মাহাতাব রশীদ
ধরন: গ্রাফিক নভেল
প্রকাশনী: ঢাকা কমিক্স
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৫৬
মলাট মূল্য: ১৫০ টাকা
সিনেমাপ্রেমীদের বর্তমান সময়টা দারুণ যাচ্ছে। হলিউডের মার্ভেল বা ডিসি’র যেকোনো সিনেমা, জেমস বন্ড সিরিজ, কলকাতার ফেলুদা সিরিজ, কিংবা হালের জনপ্রিয়তা অর্জন করা পুষ্পা অথবা কেজিএফ সিনেমার সিক্যুয়েল বা পরবর্তী পর্ব নিয়ে দর্শকদের উৎসাহের শেষ নেই। এগুলোর সিক্যুয়েল নিয়ে যে হাইপ তৈরি হয়, সেটা অবাক করার মতো। একজন বইপ্রেমী এবং কমিক্স লাভার হিসেবে আমার মাঝেও হাইপ সৃষ্টি করেছে একটি গ্রাফিক নভেল- অতলান্ত। যার দ্বিতীয় পর্বের জন্য ভীষণরকম মুখিয়ে আছি।
এখন প্রশ্ন হলো, কী এই অতলান্ত? ঢাকা কমিক্স থেকে শিল্পী মাহাতাব রশীদ কর্তৃক অঙ্কিত/চিত্রায়িত বইটি মূলত থ্রিলার কেন্দ্রিক গ্রাফিক নভেল। অতলান্ত শব্দের অর্থ গভীর। বইয়ের কাহিনি এবং চরিত্রের সাথে যেটা যথার্থই মেলে। একবার পড়া শুরু করলে কাহিনির গভীরে তলিয়ে যেতে আপনি বাধ্য।
গল্প শুরু হয় শহরের নিস্তব্ধ রাতের কোনো এক গলিতে। শিকারে বের হওয়া দুজন ছিনতাইকারী নিজেরাই ভয়ংকর এক খুনীর হাতে শিকার হয়। কিন্তু তাদের মৃত্যু কোনো স্বাভাবিক হত্যাকা- নয়। মেরে ফেলার পর তাদের চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে। আর এমন ঘটনা এবারই প্রথম নয়। আগেও অনেকবার ঘটেছে। এক কথায়- সিরিয়াল কিলিং।
এই খবর পত্রপত্রিকা, টিভি চ্যানেল, দেশের গণমাধ্যমে ঢালাওভাবে প্রচার হতে থাকে। আইন এবং লোক প্রশাসনের উপর চাপ তৈরি হয়। ডিএমপির একটি স্পেশাল ব্রাঞ্চের ইন্সপেক্টর হায়দার ইকবালের উপর পুরো ঘটনাটি তদন্তের দায়িত্ব অর্পন করা হয়েছে। নিজের কাজে শতভাগ কর্তব্যপরায়ণ থাকলেও উগ্র মেজাজ এবং রুক্ষ ব্যবহারের জন্য হায়দারকে সবসময়ই বাজে পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।
বাঁধা পেরিয়ে তদন্তের কাজে অগ্রসর হলে হঠাৎ এক ফকির-দরবেশ টাইপ ব্যক্তির দেখা মেলে, যার নাম নকুল দেব। উন্মাদের মতো দেখতে হলেও লোকটির রয়েছে আশ্চর্যকর এক ক্ষমতা। যার বদৌলতে কাহিনিতে অদ্ভুত পরিবর্তন আসে। একের পর এক রহস্য, প্রশ্ন জমাট বাঁধতে থাকে। এরপর কী হয়? জানতে হলে পড়তে হবে- অতলান্ত।
ব্যক্তিগতভাবে কমিক্স বিষয়টাকে আমার কাছে বেশ জটিল মনে হয়। গল্প-উপন্যাসের মতো এখানে খুব বেশি লেখা বা বর্ণনার সুযোগ নেই। কার্টুন, হাতে আঁকা চিত্রের সঙ্গে অল্প সংখ্যক সংলাপের মাধ্যমে কাহিনিকে টেনে নিয়ে যেতে হয়। পাঠককে ধরে রাখতে হয় শেষ অবধি। থ্রিলারের বেলায় সেটা আরও শক্ত কাজ। স্টোরিটেলিংয়ের পাশাপাশি রহস্য এবং টুইস্ট ধরে রাখতে হয়। আর এই কঠিন কাজটিকেই সাফল্যের সাথে করতে পেরেছেন মাহাতাব রশীদ। পাঠকদেরকে দুর্দান্ত এক থ্রিলার নভেল উপহার দিয়েছেন।
বইয়ে অসাধারণ চিত্রাঙ্কনের সঙ্গে সংলাপগুলো ভীষণ উপভোগ্য ছিল। প্রতিটি পাতা হরর, ফ্যান্টাসি, থ্রিল, অ্যাকশনে ভরপুর। এত নিখুঁত বর্ণনা যে কোনোকিছু নজর এড়ায় না। সেইসাথে একটি বিষয় না বললেই নয়। যদি বলি- আমার হাতে একটি আম রয়েছে। তাহলে ছবিতে হাতের উপর আমের দৃশ্যই আঁকা হবে। কিন্তু শিল্পী এখানে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি ডিটেইলস যোগ করতে পুরো আম বাগানকে এঁকেছেন। এটা বলার অর্থ- পরিবেশ, পরিস্থিতি এবং প্রতিটি মুহূর্তের আবহকে ফ্রেমবন্দী করার চেষ্টা ছিল। শিল্পীর এই প্রয়াস নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। এমনকি সংলাপ বাদ দিলেও, শুধুমাত্র ছবি দেখে অনেককিছু ধারণা করা সম্ভব। যেটা আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে।
রিভিউয়ের প্রথম দিককার একটি কথা আবারও বলি, এই বইয়ের দ্বিতীয় পর্বের জন্য ভীষণরকম মুখিয়ে আছি। হ্যা, সমাপ্তিতে দ্বিতীয় পর্বের কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু তাই বলে প্রথম পর্বে কোনো অতৃপ্তি নেই। চমৎকারভাবে গল্পের ইতি টানা হয়েছে। পড়ে মজা পাবেন, আত্মতৃপ্তি মিলবে। যারা থ্রিলার বা কমিক্সের বই পছন্দ করেন, তাদের জন্য ‘অতলান্ত’ সাজেস্ট করব। হ্যাপি রিডিং।
রিভিউ ক্রেডিট 💕
জামসেদুর রহমান সজীব
১৬ এপ্রিল ২০২২
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....