[PDF] দহন লেখিকা : সুচিত্রা ভট্টাচার্য (পিডিএফ) Dohon By Suchitra Bhattacharya

বইয়ের নাম : দহন
লেখিকা : সুচিত্রা ভট্টাচার্য
প্রকাশনী : আনন্দ
মূদ্রিত মূল্য : ১০০ রূপি
Review Credit 💕 অনুস্কা ব্যানার্জী শ্রাবস্তী |প্রথম বর্ষ
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ সেশন ২০-২১

[PDF] দহন লেখিকা : সুচিত্রা ভট্টাচার্য (পিডিএফ) Dohon By Suchitra Bhattacharya


আচ্ছা, আপনি কি নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন? কারো উত্তর হতে পারে হ্যাঁ কারো বা না। যাদের উত্তর হ্যাঁ, তাদের কাছে প্রশ্ন নারীর স্বাধীনতাকে আপনি ঠিক কতটুকু সমর্থন করেন? যতটুকু সমর্থন করলে নিজের আঁতে ঘা লাগে না, যতটুকু সমর্থন করলে আপনার ব্যক্তিস্বার্থ বজায় থাকে, ঠিক ততটুকুই তো?


কোনো এক ঝড়বৃষ্টির সন্ধ্যেয় টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশনে ৪ যুবক শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে এক গৃহবধূর। সেখানে আশেপাশের মানুষ যখন নীরব দর্শক তখন সেই গৃহবধূকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে আরেক নারী, শ্রবণা। দহন উপন্যাসের শুরুটা ঠিক এভাবেই। এই শ্লীলতাহানিকে কেন্দ্র করেই এগোয় গল্প। ভিকটিম মামলা দায়ের করে থানায়। ভিকটিমের রক্ষণশীল শশুরবাড়ি থেকে মামলা তুলে নেয়ার ব্যাপারে প্রচণ্ড চাপ আসতে থাকে। এদিকে অভিযুক্তরা সম্ভ্রান্ত ঘরের সন্তান, প্রভাবশালী মহলের লোক। সুতরাং চাপ আসতে থাকে প্রভাবশালী মহল থেকেও। চেষ্টা চলে ক্ষমতার অপপ্র‍য়োগের, দিনকে রাত, মিথ্যেকে সত্যি বানানোর। কিন্তু জিত হবে কার? ক্ষমতার নাকি ন্যায় বিচারের? হাল ছাড়ে না শ্রবণা, যে মেয়েটি এগিয়ে এসেছিল সেই দুর্যোগের রাতে। সামাজিক আর মানসিক চাপকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে সে নামে প্রতিবাদে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে। কিন্তু শেষমেশ কী হবে?


১৯৯২ সালের ২৪ জুন। কলকাতার রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো স্টেশনে ঘটে যায় এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা। রাতের দিকে স্টেশন থেকে বেরোচ্ছিল এক অবিবাহিত দম্পতি। রাস্তায় চার-পাঁচটি বখাটে ছেলে ঐ যুগলের মেয়েটিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে৷ এ ঘটনায় পথচারীরা এগিয়ে আসে নি কেউই। মেয়েটির সাথে থাকা প্রেমিকটি একা অতগুলো ছেলের আচমকা আক্রমণে খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। তার একলার প্রতিরোধ অতগুলো ছেলের কাছে ধোপে টিকছিল না৷ এরকমসময় ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিল এক অল্পবয়সী সাংবাদিক ও ফিল্ম মেকার, অনন্যা চক্রবর্তী। অনন্যা কিছু না ভেবে মেয়েটিকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে। অনন্যার প্রতিরোধের মুখে অপহরণকারীরা পালিয়ে যায় আর সেই যাত্রায় বেঁচে যায় ভিকটিম মেয়েটি। পরবর্তী সময়ে ওরা পুলিশে ডায়রি করে, কেস কোর্টেও ওঠে৷ কিন্তু প্রভাবশালী মহলের চক্রান্তে ওই কেসে প্রতিবাদ করেও দোষী সাব্যস্ত করা যায়নি কাউকে৷


এই সত্যি ঘটনার অনুপ্রেরণা থেকে সুচিত্রা ভট্টাচার্য লিখতে শুরু করেন "দহন"। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের আধিপত্য বিস্তার আর নারীকে স্বাধীনতা দেয়ার নামে হাতের পুতুল করে রাখার প্রবণতাকে লেখিকা তার উপন্যাসে তুলে ধরেছেন বারবার। যুগযুগ ধরে নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি, সূক্ষ্ম অবহেলা আর কৌতুকের মনোভাব সবটাই উঠে এসেছে দহনের প্রতিটি লাইনে।


দহন শব্দটিকে ভাঙলে পাই √দহ্+অন। এটি একটি বিশেষ্য পদ যার অর্থ হচ্ছে পোড়ানো বা যন্ত্রণা। এই উপন্যাসের নাম দহন আর এ যন্ত্রণা হচ্ছে নারীর। নারীর মানসিক দহনকে উপজীব্য করেই "দহন" উপন্যাস লেখা। এ দহন কী নারীর একান্ত? সমাজের নয়? সভ্যতার নয়? হয়তো, হয়তো বা না।


২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভারতের নয়াদিল্লীতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের পর ২২ বছর বয়সী এক মেডিকেল পড়ুয়া তরুণীর ওপরে নৃশংস অত্যাচার করে ফেলে পালিয়ে যায় ৬ দুষ্কৃতি। ২৯ ডিসেম্বর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে গণধর্ষণের শিকার মেয়েটি। পরবর্তীতে সেই ঘটনার বিচার হতে সময়ে লেগেছিল ৮ বছর। ২০১৬ সালের ২০ মার্চ কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগী জাহান তনুর লাশ পাওয়া যায় কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে। পরবর্তীতে তদন্তে মেলে গণধর্ষণের আলামত। কিন্তু ঘটনার ৬বছরের বেশি সময় পার হলেও মেলে নি বিচার। দোষী সাব্যস্ত হয় নি কেউই। আমাদের চারপাশে নারী ধর্ষণ, নিপীড়ন, শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটে চলেছে অহরহই। কিছু ঘটনা পাবলিক ফোকাস পায়, কিছু পায় না। "দহন" মূলত নারীর প্রতি নিপীড়ন আর অবিচারের একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে লেখা নিছক একটা উপন্যাস নয়। বরং এটি নারীর প্রতি ঘটে যাওয়া সব অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে এক লিখিত প্রতিবাদ, কলুষিত সমাজে নারী স্বাধীনতার প্রকৃত চেহারার উন্মোচন আর বাস্তবতার সম্মিলন।


১৯৯৭ সালে বিখ্যাত পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ "দহন" উপন্যাসের কাহিনি অবলম্বনে একটি সিনেমাও বানিয়েছিলেন যেটি পেয়েছিল ভারতের জাতীয় পুরস্কারের মর্যাদা। সুচিত্রা ভট্টাচার্যের "দহন" উপন্যাস পায় ননজনাগড়ু থিরুমালাম্বা জাতীয় পুরস্কার ১৯৯৬, কথা পুরস্কার ১৯৯৭ এবং ইন্দু বসু স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার।


সুচিত্রা ভট্টাচার্য যাঁর লেখায় বিশেষভাবে ঠাঁই পেয়েছে নারী, নারীদেরই একজন হয়ে যিনি নারীজগতের যন্ত্রণা, সমস্যা আর অব্যক্ত কথাকে লেখায় রূপ দিতে চেয়েছেন আজীবন, তাঁর অবশ্যপাঠ্য একখানা বই "দহন"। দহনে আরেকটি বিষয় খুব দারুণভাবে তুলে আনা হয়েছে সেটি হচ্ছে ভিকটিম ব্লেমিং। অপরাধী অপরাধ করে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায় সমাজে আর ধর্ষণ কিংবা এ ধরনের ঘটনার শিকার হওয়া নারীকে অপরাধের দায়ভার চাপিয়ে দেয়া হয়, দোষী সাব্যস্ত করা হয়। মুখ লুকিয়ে ঘরে কোণে থাকার ফতোয়া জারি করা হয়। নোংরা সমাজ ,তার থেকেও নোংরা পুরুষতন্ত্রের নগ্ন রূপ আর পরিস্থিতির সাথে চারপাশের মানুষের পাল্টে যাওয়া জঘন্য চেহারা যে এত সাবলীল ভাষায় এত বাস্তবিকভাবে লিখে ফেলা যায় তা এই লেখিকাকে না পড়লে জানা হতো না।সুচিত্রার লেখার ভক্ত আমি অনেকদিন থেকেই। ওঁর উপন্যাসের ঘটনাপ্রবাহের সাথে যেমন রিলেট করা যায় তেমনি সহজ সরল সাবলীল ভাষার কারণে পড়তেও সুবিধে হয়। আর তার সাথে যখন মেশে লেখিকার জীবনবোধ ওঁর উপন্যাস হয়ে ওঠে সৃষ্টিশীল।


অনেকদিন ধরে বিভিন্ন ব্যস্ততায় আমার পড়ার অভ্যেস মরতে বসেছে। সুচিত্রার দহন পড়ছি মাসখানেক ধরে টুক টুক করে। আজকে ভাবলাম দুনিয়া দুখানা হয়ে গেলেও "দহন" শেষ করব। " দহন" শেষ হলো। কিন্তু শেষ হওয়ার পরই ভাবতে শুরু করেছি। স্বাধীনতা, আত্মসম্মান না আধিপত্য? একজন মানুষের কোনটাকে বেছে নেয়া উচিত? "দহন" চমৎকার বই স্বীকার করতে দ্বিধা নেই। কিন্তু উপন্যাসের শেষাংশে সেই চিরাচরিত আপোস। এন্ডিং মোটেও ভালো লাগে নি আমার। শেষটাকে এভাবে শেষ না করলেই পারতেন, রেখে দেয়া যেত পাঠকের জন্য। তবে এন্ডিংটাও যে বাস্তবিক তা মানতে হবে। আমি যে কাউকে সাজেস্ট করব উপন্যাসটি পড়ার জন্য। "দহন" সিনেমাখানাও খুবই সুন্দর, যদিও দেখা হয় নি আমার। দেখতে হবে খুব তাড়াতাড়ি। কোনো ক্লান্ত দুপুর কিংবা অবসন্ন বিকেলের সঙ্গী করতে পারেন "দহন" উপন্যাসকে। আপনি যদি সত্যিকার অর্থে একজন মননশীল মানুষ হন হলফ করে বলতে পারি, দহন ভালো লাগতে বাধ্য।

Dohon PDF Download Link

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ