বইয়ের নাম - ড্রাকুলা (পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ এবং ইলাস্ট্রেশন সহ)
জনরা - গথিক, হরর থ্রিলার, ফ্যান্টাসি বই পিডিএফ ডাউনলোড
লেখক - ব্রাম স্টোকার
অনুবাদ - Lutful Kaiser
সম্পাদনা - মহিউল ইসলাম মিঠু
প্রুফরিড - বীক্ষণ সম্পাদনা সংস্থা
প্রচ্ছদ - সজল চৌধুরী
প্রকাশনী - বেনজিন প্রকাশন
প্রথম প্রকাশ - ফেব্রুয়ারি ২০২২
পৃষ্ঠা সংখ্যা - ৫৬০
মুদ্রিত মূল্য - ৭০০ টাকা
রিভিউঃ মালিহা তাবাসসুম মুমু
রেটিং :- ৫/৫
Aridee Hasan Sakib 💕 Review Credit Too Dramula
ফ্ল্যাপ
ট্রান্সিলভানিয়ার অভিজাত এক ব্যক্তি বাড়ি কিনতে চান লন্ডনে। সেই সংক্রান্ত কাজে সেখানে পাঠানো হলো তরুণ জোনাথন হারকারকে। কিন্তু যাত্রাপথেই সে বুঝতে পারলো কিছু একটা ঠিক নেই। কাউন্ট ড্রাকুলার নাম শুনে কেন ভয় পাচ্ছে ওই অঞ্চলের মানুষজন? সবই কি ইউরোপের পিছিয়ে থাকা একটা অঞ্চলের মানুষের কুসংস্কার? নাকি আসলেই অদ্ভুত কিছু রয়েছে?
পুরো অঞ্চলকে গ্রাস করে আছে একটি অতিপ্রাকৃত ছায়া! কিছু বোঝার আগেই ফাঁদে জড়িয়ে পড়লো জোনাথন। ইংল্যান্ডে কি আর ফেরা হবে তার?
ওদিকে জোনাথনের প্রেমিকা মিনা ম্যুরে, তার বান্ধবী লুসি ওয়েস্টেনরা, ডাক্তার সেওয়ার্ড, আর্থার হোমউড, আমেরিকান পর্যটক কুইন্সি পি. মরিস, ভ্যান হেলসিং... সবাই নিজের অজান্তেই জড়িয়ে পড়লো এক ভয়ানক জালে।
সেই অতিপ্রাকৃত ছায়া উঠে এসেছে ইংল্যান্ডের বুকে। রক্তপিশাচদেরকে কি থামাতে পারবে ওরা?
জানতে পড়ুন ব্রাম স্টোকারের কালজয়ী উপন্যাস 'ড্রাকুলা'। পৃথিবীর সবচেয়ে সফলতম পিশাচ কাহিনিটির
প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাংলাদেশি অনুবাদ।
অনুভূতিকথন
ড্রাকুলা উপন্যাসটি সারাবিশ্বে বেশ জনপ্রিয়। ২০২০ এ পড়েছিলাম সেবা প্রকাশনীর বইটা। বই টা পড়ে দারুণ আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিলো। তবুও একটা অতৃপ্তি কাজ করতো মনের ভিতরে। কাহিনীর পুরো স্বাদ কিভাবে পাবো..? এই কথা সবসময় মাথায় বাজতো। হটাৎ একদিন ফেসবুক টাইমলাইন এ দেখলাম বেনজিন প্রকাশনী থেকে বই আসছে। তাই সময় না নিয়ে বইটি অর্ডার করেছিলাম। বইটি তে পুরো বইয়ে যে আতংক ছড়িয়ে আছে আপনি যদি বইটা পড়েন তা আরো বুঝতে পারবেন।
চরিত্রকথন
পুরো বইটি জেনাথন হরকার, মিনা ম্যুরে, লুসি ওয়েস্টেনরার, আর্থার হোমউড, ডা. সেওয়ার্ড, কুইন্সি পি মরিস, রেনফিল্ড, অধ্যাপক ভ্যান হেলসিং, কাউন্ট ড্রাকুলা প্রত্যেকটা চরিত্র বেশ সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে। প্রত্যেকটা চরিত্রের দিনলিপি, চিঠি আদান প্রদানের মাধ্যমেই কাউন্ট ড্রাকুলার চরিত্র প্রকাশ পেয়েছে। কাউন্ট ড্রাকুলার আতংক পুরো বই জুড়ে। প্রত্যেকটা চরিত্র ই মনে ধরার মত। মিনা, জেনাথন, অধ্যাপক ভ্যানসিং, কুইন্সি মরিস পছন্দের চরিত্র।
পছন্দের লাইন
১. আমাদের সবার জীবনেই খারাপ সময় আসে, অশান্তি আর মানসিক চাপ ঘিরে ধরে, কিন্তু বুক চিতিয়ে লড়াই করে যারা তারাই টিকে থাকে আর যারা ভেঙে পড়ে তারা হেরে যায়।
২. আত্মত্যাগ আর সাহস ছাড়া কিছুই সম্ভভ হয় না। লক্ষ্যে অবিচল থেকে এগিয়ে যেতে হবে, সেই কর্তব্য যত কঠিনই হোক না কেন। তারপর হয়তো একদিন আসবে সেই সোনালি ভোর।
প্রচ্ছদ ও প্রডাকশন
প্রচ্ছদ এককথায় অসাধারণ। সজল ভাই অসাধারণ প্রচ্ছদ করেছেন। বইয়ের জ্যাকেট জেল কভারে করা, যা সত্যিই দেখতে খুব আকর্ষণীয়। বইয়ের বাইন্ডিং বেশ ভাল। ঢাউস সাইজের বই হওয়া সত্তেও সুন্দর ভাবে নাড়াচাড়া করা যাচ্ছে বইটা। বই পড়ায় বেশ আরামদায়ক মনে হয়েছে আমার কাছে। প্রকাশনী কে এই জন্য ধন্যবাদ।
লেখক নিয়ে কিছু কথা
ব্রাম স্টোকার একজন আইরিশ উপন্যাসিক এবং গল্পকার, যাকে সারা বিশ্বের সাহিত্যপ্রেমী মানুষ চেনে ড্রাকুলা স্রষ্টা হিসেবে। ১৮৯৭ সালে বইটা ১ম প্রকাশিত হয় যা এখনো বিশ্বের হরর কাহিনীর ইতিহাসে প্রথম সারিতে আছে এবং থাকবে আশা করা যায়।
অনুবাদ ও বানান
লুৎফুল কায়সার ভাই বেশ সুন্দর অনুবাদ করেছেন বইটা। পুরো বইটা খুব সুন্দর ভাবেই বুঝতে পেরেছি। বানান অনেক নির্ভুল ছিলো।
বইঃ ড্রাকুলা প্রথম খন্ড এবং দ্বিতীয় খন্ড পিডিএফ ডাউনলোড
মূল লেখকঃ ব্রাম স্টোকার এর বাংলা অনুবাদ বই পিডিএফ
অনুবাদঃ লুৎফুল কায়সার
প্রকাশকঃ বেনজিন প্রকাশন এর বই পিডিএফ ডাউনলোড
মুদ্রিত মূল্যঃ ৭০০ টাকা (আমি ৪২০ এ কিনেছি)
ধরনঃ উপন্যাস (দিনলিপি,চিরকুট,টেলিগ্রাম ইত্যাদি আকারে)
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৫৬০
যেকোনো ধরনের উপন্যাসের মূল লক্ষ্য থাকে পাঠককে কাহিনীর পরিণতি পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া। কিন্তু কোথাও যাওয়ার জন্য বেড়িয়ে পড়লে যেমন দুইপাশে বিচিত্র এবং নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে দেখতে অবশেষে গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়া যায়, উপন্যাসও ঠিক তেমনিভাবে মূল কাহিনীর শেষ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার আগে নানাবিধ পরিস্থিতি,চরিত্র ও ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাত দেখিয়ে থাকে।
তাই ব্রাম স্টোকারের ড্রাকুলার পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ সংক্ষিপ্ত অনুবাদের তুলনায় অধিকতর প্রাসঙ্গিক।
সব থেকে ভালো লেগেছে প্রয়োজনীয় এবং অজানা নানাবিধ তথ্য এবং চরিত্রগুলো। লুসি ওয়েস্টেনরা,আর্থার হোমউড,ডা.হেলসিং,ডা.জন সেওয়ার্ড,জোনাথন হারকার, মিনা হারকার,মরিস এরাই মূল চরিত্রসমূহ এবং এদের বিপরীতে রয়েছে...অবশ্যই কাউন্ট ড্রাকুলা।
প্রতিটি চরিত্র এবং ঘটনার বিস্তার এতো সুন্দর আর নিঁখুত করে তুলে ধরা হয়েছে যে ঘটনা বুঝতে কষ্টই না। আরেকটা ব্যাপার, অলৌকিক ঘটনা শোনাতে শোনাতে লেখক তাঁর ব্যক্তিগত দর্শন জানাতেও ভুলেননি। তাঁর আর কোন বই আমি পড়িনি তবুও আমার ধারনা লেখক ব্রাম স্টোকার একজন মননশীল এবং আধুনিক চিন্তা-চেতনার মানুষ। প্রতিটি চরিত্রকে তিনি এমন এক কঠিন ব্যক্তিত্ব এবং আভিজাত্য দিয়ে তৈরী করেছেন যা অভাবনীয় বলে মনে হয়।
আমার সব থেকে পছন্দের চরিত্র মিনা হারকার। একদম রুপে লক্ষ্মী গুনে সরস্বতী। লেখক তাকে ওয়ান্ডার ওমেন বানাননি কিন্তু নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে নিজের যতখানি ক্ষমতা তার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে পুরো একটা দলকে পথ দেখানো যায় কিভাবে তার সুন্দর দৃষ্টান্ত হতে পারে মিনা হারকার।
ডা.ভ্যান হেলসিং সব থেকে বয়োজ্যেষ্ঠ এবং ড্রাকুলা নিধন অভিযাত্রার দলনেতা। ডা হেলসিং চরিত্রটি অভিজ্ঞ এবং প্রবীণদের প্রতিনিধিত্ব করে যারা বিপদে নবীনদের সঠিক পথে চালনা করতে পারেন।
লুসি ওয়েস্টেনারের ঈর্ষনীয় সৌভাগ্য এবং ব্যথাতুর দুর্ভাগ্য আমাকে ভাবায়। তার পাণিপ্রার্থী মোট তিনজন। কিন্তু লুসি ভালোবাসতো শুধুই আর্থারকেই। স্বাভাবিকভাবে, বাকি দুজনকে বিনয়ের সাথে ফিরিয়ে দেয় সে। কিন্তু এই দুজনও লুসির করুণ পরিণতিতে আঘাত পায়, ভালোবাসে বলেই আঘাতটা পেয়েছিল আর তাই হৃদয়ের এই ক্ষত শেষ পর্যন্ত তাদের এক অসম অলৌকিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়তে অনুপ্রাণিত করে।
সবার আগে অনুবাদ নিয়ে কথা বলা উচিত ছিল। লুৎফুল কায়সার ভাইয়ের কাজ দারুন লেগেছে। ভাইকে ধন্যবাদ। রোবটিক অনুবাদে এতোসব অনুভব করতে পারতাম না। করোনায় আক্রান্ত হলে যেমন স্বাদহীন গন্ধহীন অবস্থার সৃষ্টি হয়, অপাঠ্য অনুবাদের বেলায়ও একই রকমের অনুভূতি হয়। কী পড়ছেন বুঝবেনই না। তাই অনুবাদ ভালো হওয়াটা সবার আগে প্রয়োজন।
গণসাহিত্য নামক একজাতীয় সাহিত্য রয়েছে যেখানে কোন একক নায়ক থাকে না। সম্মিলিত শক্তি নায়করুপে অবতীর্ণ হয়ে শাসক-শোষকদের বিরুদ্ধে লড়াই করে। 'ড্রাকুলা' তেও দেখা যায় সম্মিলিত শক্তির কারিশমা। সম্মিলিত মানবশক্তির ক্ষমতা। অশুভ শক্তিকে পরাস্ত করতে সম্মিলিত সত্তার বিকল্প নেই।
সবমিলিয়ে এই পুরো জার্নিটা দারুন উপভোগ্য ছিল।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....