মূলঃ কিয়েগো হিগাশিনো
অনুবাদঃ সালমান হক
প্রকাশকঃ বাতিঘর প্রকাশনী
প্রকাশকালঃ জানুয়ারি, ২০২০
ঘরানাঃ মার্ডার মিস্ট্রি
প্রচ্ছদঃ কৌশিক জামান
পৃষ্ঠাঃ ৩০৪
মুদ্রিত মূল্যঃ ৩২০ টাকা
ফরম্যাটঃ হার্ডকভার
স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট বই রিভিউ
কাহিনি সংক্ষেপঃ এক বছরের বিবাহিত জীবন ইয়োশিতাকা মাশিবা ও আয়ানে মাশিবা দম্পতির৷ হঠাৎ-ই একদিন স্ত্রী আয়ানেকে ডিভোর্স দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানালো ইয়োশিতাকা। এর ঠিক পরপরই নিজের বাড়িতেই মৃত অবস্থায় পাওয়া গেলো ইয়োশিতাকাকে। মৃত্যুর কারণ বিষ। আর্সেনাস অ্যাসিড। মেশানো ছিলো তার কফির কাপে। স্বাভাবিকভাবেই সমস্ত সন্দেহ গিয়ে পড়ার কথা আয়ানের ওপর। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর সময়ে টোকিও থেকে কয়েকশো কিলোমিটার দূরে হোক্কাইদো শহরে নিজের বাবার বাড়িতে ছিলো আয়ানে। বেশ শক্তপোক্ত তার এই অ্যালিবাই।টোকিও পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ডিটেকটিভ কুসানাগির ধারণা, আয়ানে নির্দোষ। কিন্তু তার সদ্য যোগ দেয়া সহকারী জুনিয়র ডিটেকটিভ উতসুমি মনে করে আয়ানেই খুন করেছে ইয়োশিতাকাকে। কিন্তু তার অ্যালিবাই চেক করে দেখা গেলো সেটা পুরোপুরি সত্যি। তাহলে কে খুন করলো ইয়োশিতাকাকে?
জনপ্রিয় সূচিশিল্পী আয়ানে মাশিবার একসময়ের প্রিয় ছাত্রী ও তার সেলাই শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষিকা হিরোমি যেন কিছু একটা লুকাতে চাচ্ছে। ডিটেকটিভ কুসানাগি ও উতসুমির জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এলো চমকপ্রদ তথ্য, যা এই খুনের কেসটাকে আরো রহস্যমণ্ডিত তুললো। এদিকে আয়ানের ওপর ডিটেকটিভ কুসানাগি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়তে লাগলো৷ ইয়োশিতাকার খুনের রহস্য বারবার সবাইকে একের পর এক কানাগলিতে নিয়ে গিয়ে ফেলছে।
জুনিয়র ডিটেকটিভ উতসুমি ঠিক এমনই একটা সময়ে ডিটেকটিভ গ্যালিলিও হিসেবে খ্যাত ইম্পেরিয়াল ইউনিভার্সিটির পদার্থবিজ্ঞানের প্রোফেসর ইউকাওয়ার সাহায্য চাইলো। প্রোফেসর ইউকাওয়া এর আগেও টোকিও পুলিশ ডিপার্টমেন্টকে বেশ কিছু জটিল কেসে সাহায্য করেছে৷ কিন্তু ইয়োশিতাকা খুনের কেসে সে-ও যেন অকূল পাথারে পড়লো। মুখ থুবড়ে পড়তে লাগলো তার একের পর এক থিওরি। শেষমেষ ডিটেকটিভ গ্যালিলিও বলতে বাধ্য হলো, "এটা একটা পারফেক্ট ক্রাইম।"
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ 'দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স' খ্যাত কিয়েগো হিগাশিনোর ডিটেকটিভ গ্যালিলিও বিষয়ক আরেক বই 'স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট'। মার্ডার মিস্ট্রি ঘরানার এই বইতে ব্যক্তিজীবন ও পেশাজীবনে সফল একজন ব্যক্তির খুন ও তৎপরবর্তী তদন্ত প্রক্রিয়া দেখানো হয়েছে। কাহিনির শুরু থেকেই কিয়েগো হিগাশিনো সাসপেক্টের ব্যাপারে একটা ধারণা দিয়েছেন। এরপর ঘটিয়েছেন ক্রাইম। কিন্তু যেখানে প্রধান সাসপেক্টের অ্যালিবাইয়ে কোন ছিদ্র থাকেনা, তখন কিভাবে প্রমাণ করা যায় যে খুনটা তারই করা?
এদিকে খুন হয়ে যাওয়া মানুষটার অতীতের অনেক অজানা অধ্যায়ও তদন্তের গতিময়তার সাথে সাথে সামনে আসতে থাকে, যা এই কেসটাকে আরো রহস্যময় ও জটিল করে তোলে। শেষমেষ ডিটেকটিভ গ্যালিলিও ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হন। লেখক এই পুরো প্রসেসটাই বেশ চতুরতার সাথে পুরো উপন্যাস জুড়ে দেখিয়ে গেছেন।
'পারফেক্ট ক্রাইম'-এর সংজ্ঞা কি? অপরাধ সংঘটিত হলো, কিন্তু অপরাধীর অপরাধ সংঘটনের কোন প্রমাণই পাওয়া যাচ্ছেনা হারিকেন জ্বালিয়ে খুঁজেও। 'স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট'-এর কাহিনিতেও ঘটেছে একই ব্যাপার। পড়তে গিয়ে ডিটেকটিভ কুসানাগি ও জুনিয়র ডিটেকটিভ উতসুমির মতো আমিও বারবার কানাগলিতে ঘুরপাক খাচ্ছিলাম। অবশেষে যখন সত্যটা উন্মোচিত হলো, শ্বাসরুদ্ধকর একটা অনুভূতি হয়েছিলো আমার। ধৈর্য কি বস্তু তা আরো একবার টের পেয়েছি এই বইটা পড়তে গিয়ে।
এর আগে কিয়েগো হিগাশিনোর 'দ্য ডিভোশন অব সাসপেক্ট এক্স' পড়েছিলাম। ওটা অত্যন্ত ভালো লেগেছিলো আমার৷ তাই স্বাভাবিকভাবেই 'স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট' নিয়েও এক্সপেকটেশন অনেক হাই ছিলো। আহামরি টাইপের ভালো না লাগলেও মোটামুটি ভালোই ছিলো এই বইটা৷ বিশেষ করে মার্ডার মিস্ট্রি উপন্যাসের প্লট হিসেবে এর প্লটটা বেশ পিকিউলিয়ার ছিলো।
সালমান হকের অনুবাদ বরাবরের মতোই চমৎকার। একটানে পড়ে যাওয়ার মতো অনুবাদ ছিলো 'স্যালভেশন অফ আ সেইন্ট'। যদিও আমার একটু সময় লেগে গেছে। তবে শেষ ১০০ পৃষ্ঠা একটানে পড়ে ফেলেছি। বইটা যখন শেষ করি, তখন মাঝরাত। কিয়েগো হিগাশিনোর অন্যান্য মার্ডার মিস্ট্রি ও থ্রিলারের অনুবাদও সালমান হকের কাছ থেকে পাবো, এমনটাই আশা।
পিডিএফ ডাউনলোড লিংক
কৌশিক জামানের করা প্রচ্ছদ ভালো লেগেছে।ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৩.৮৫/৫
গুডরিডস রেটিংঃ ৩.৯৩/৫
রিভিউ লিখেছেন 💕 শুভাগত দীপ
(২১ মার্চ, ২০২০, সকাল ১০ টা ১ মিনিট; চকরামপুর, নাটোর)
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....