সায়ক আমান
বিভা পাবলিকেশন
Review Credit 💕 Suraj Ghosh
কাল রাত ২ টো নাগাদ পড়া শেষ করলাম সায়ক আমান - এর "ভাসানবাড়ি" | গল্পটার নেশা আমাকে এমন ভাবে পেয়ে বসেছিল যে সাধের ঘুমটাকে জলাঞ্জলি দিতেও আমি দ্বিরুক্তি করিনি | গল্পটা পড়া শুরু করেছিলাম অনেকটা ভালোলাগা এবং বেশ কিছুটা কৌতুহল নিয়ে | গল্পের শেষটা ভালোলাগা গুলোতে নতুন করে প্রাণ সঞ্চার করল এবং কৌতুহল গুলো এখন মৃতপ্রায় | শুধু এটুকু বলতে পারি এমন ধরনের উপন্যাস আমি এর আগে কখনো পড়িনি
পাঠপ্রতিক্রিয়া
এবার সকলে চলুন আমার অনুভূতির চিলেকোঠায়...
উপন্যাসটির নাম ভাসানবাড়ি... নামের মধ্যেই মিশে আছে কেমন একটা ভৌতিক ভৌতিক ব্যাপার.. এটাকে একটা ভৌতিক উপন্যাস ভাবছেন পাঠক?ভুল ভাবছেন...বিশ্বাস করুন এখানে ভৌতিকতার লেশমাত্র নেই | তো প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক এই ভাসানবাড়ি সম্পর্কে | লেখক জানিয়েছেন.. মুরারীমোহন নামে একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী প্রায় দেড়শ বছর আগে বাড়িটি বানিয়েছিলেন তার গবেষণার সুবিধার্থে | বাড়িটি যেখানে গড়ে উঠেছে সেখানে আগে ছিল একটা পুকুর.. সেই পুকুরে গ্রামের লোকেরা প্রতিমা বিসর্জন/ভাসান করতো, সেই থেকেই বাড়িটির নাম হয়েছে ভাসানবাড়ি | এই বাড়িটির খোঁজে বীরাজপুর গ্রামে পদার্পণ ঘটে গল্পের প্রধান মহিলা চরিত্র হৈমন্তী ঘোষের | তিনি একটি আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে কোম্পানির হয়ে কাজ করেন এবং তার এখানে আসার প্রধান কারণ এই ঐতিহাসিক বাড়িটি সম্পর্কে কিছু তথ্য সংগ্রহ করা | এই হৈমন্তী খুব স্বাধীনচেতা গোছের একটি মেয়ে | পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ অনেকদিন আগেই বিচ্ছিন্ন এবং এর পিছনে একটি কারণ বর্তমান | হৈমন্তী সম্পর্কে একটা কথা আপনাদের জেনে নেওয়া প্রয়োজন... সে এইচ আই ভি পজিটিভ এবং সে ১৬ বছর বয়স থেকেই এই রোগের সঙ্গে লড়াই করে চলেছে | লেখক এখানে সমাজের নীচ এবং অপরিপক্ক নোংরা মানসিকতার রূপ আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন | একজন এইচ আই ভি পজিটিভ মেয়েকে সমাজ কোন নোংরা নজরে দেখে, প্রতিটি পদে-পদে কিভাবে মেয়েটিকে সমাজের তীব্র বাক্যবাণে বিদ্ধ হতে হয়,কিভাবে বিনা দোষে তাকে বার বার নিজের সতীত্বের পরীক্ষা দিতে হয়, এমনকি নিজের বাবা- মাও কিভাবে বিরূপ হয়ে যায় নিজের মেয়ের প্রতি,কিভাবে এই সমস্ত ঘটনা একটা কিশোরী মেয়েকে মানসিকভাবে প্রচন্ড ক্ষতিগ্রস্থ এবং শেষে নেশায় আসক্ত করে দেয় তার বাস্তব রূপ আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে লেখক দেখিয়েছেন |
ভাসান বাড়িতে পৌঁছে অপ্রত্যাশিতভাবে হৈমন্তীর দেখা হয় অশ্বিনী- এর সাথে | প্রথম দর্শনেই এই মিতভাষী, হৃষ্টপুষ্ট - পেশীবহুল, সর্বদা পাঞ্জাবি ও শাল পরিহিত যুবকটির প্রতি একটি কৌতুহল জন্ম নেয় যা বিভিন্ন কারণে বর্ধিত হয়ে এক বিরাট রুপ পরিগ্রহণ করে | এই অশ্বিনী সম্বন্ধে আপনি যতই জানবেন ততই আপনার কৌতুহল এর মাত্রা তীব্রতর হবে |
গল্প কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বার্থে গল্পের প্লট একবার বর্তমান থেকে অতীতে, হৈমন্তীর কৈশোরে এমন বহু স্থানে বিচরণ করে... যা প্রথমে অহেতুক মনে হলেও পরবর্তীতে গল্পের এই নিজস্ব তালে আপনি হারিয়ে ফেলবেন নিজেকে |
গল্পে বেশ কিছু জটিল গাণিতিক এবং বৈজ্ঞানিক বিষয়কে এমন সহজ বোধগম্য পদ্ধতিতে ও এক নিদারুন রোমাঞ্চের মোড়কে লেখক আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন যাতে কোনোভাবেই তথ্যের ভারে আপনি ভারাক্রান্ত নয় বরং রোমাঞ্চিত ও শিহরিত হয়ে উঠবেন | হায় রে!! আমি ভাবছি লেখক যদি আমাদের স্কুলের সাইন্সের শিক্ষক হতেন তবে বৃহৎ দাঁত সমন্বয়ে প্রচন্ড আক্রোশে গিলে খেতে আসা কঠিন ম্যাথ ইকুয়েশন এবং রসবিহীন রাক্ষুশে ফিজিকস ও কেমিস্ট্রির প্রেমে পড়তাম | গল্পের একটি বিরাট স্থান অধিগ্রহণ করে আছে "সময়", মহাকাশ, বিগ ব্যাং, ব্ল্যাক হোল, সৌরজগৎ প্রভিতি....
এই রে!! আপনারা আবার গল্প টিকে কোন সাধারণ সাইন্স ফিকশন কাহিনী বলে একদম ভুল করবেন না | গল্পের আসল রূপ উন্মোচিত হওয়ার অপেক্ষা করুন সামান্য |
"ভালোবাসা" এই শব্দটির সঙ্গে তো আমরা সকলেই পরিচিত | তবে এতদিন এই শব্দটির আসল অর্থ আমার জানা ছিল না | বাকি সকলের মত আমিও এটিকে একটি সাধারন এবং নির্ঘাত মানবিক অনুভূতি বলে জানতাম | তবে এই উপন্যাস আমার ভুল ভাঙ্গিয়ে দিয়েছে | ভালোবাসার আসল রূপ সম্পর্কে আমি অবগত হয়েছি এই উপন্যাস পাঠের মধ্য দিয়ে |ভালোবাসা শুধুমাত্র একটা অনুভূতি নয়...আপনার কি মনে হয় দুজন ভালোবাসার মানুষ শুধু একজনমের সঙ্গী? ভালোবাসা কি এতটাই ক্ষণিক? শুধু একটা কেন লক্ষ লক্ষ যুগ এবং জন্ম ভালোবাসার পরিধির কাছে অত্যন্ত ক্ষুদ্র হয়ে যায় |
আমরা মনে করি মৃত্যুই হয়তো ভালোবাসার অন্ত, কিন্তু তা নয়.. মৃত্যু হল দুজন ভালোবাসার মানুষের পুনর্মিলনের জন্য অন্তহীন অপেক্ষার সূচনাপর্ব 😌...
হ্যাঁ এই গল্প নিদারুণ এক প্রেমের এক অন্তবিহীন ভালোবাসার গল্প আপনাকে ভ্রমিত করার অভিপ্রায়ে বেশ কিছু ভালোবাসা বহির্ভূত বিষয় গল্পে স্থান দখল করেছে.. তবে আপনি কোনভাবেই ফাঁদে পা দেবেন না..সর্বদা মনে রাখবেন.. এ গল্প চির ভালোবাসার 😌
উপন্যাস পাঠের সময় আমার অনুভূতির চরম মাত্রায় আমি পৌঁছেছি, এক সময় আমার অস্তিত্ব সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে পড়েছিলাম, নিজেকে বারবার হারিয়ে ফেলেছিলাম মহাকাশের লক্ষ-কোটি নক্ষত্র এবং বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অসংখ্য ধূলিকণার মাঝে,অনুভব করছিলাম এই গোটা বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের প্রতিটি অণু-পরমাণুতে আমার অবস্থান, হাজারটা অনুভূতি আমার মধ্যে বিরাজ করেছিল তখন.. কোন মুহূর্তে হাসছি, কখনো নিজের অজান্তেই চোখের কোণ অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়ছে, কখনো দারুণভাবে ভাবিয়ে তুলছে গল্পটা আমায়, গল্পের মধ্যে এক দারুণ টানটান থ্রিলার আছে যা গল্প পড়ার গতির সাথে হৃদস্পন্দনের মাত্রা অত্যাধিক পরিমাণে বাড়িয়ে দেবে , আবার কখনো একটা ভাললাগা বোধ এসে আচ্ছন্ন করেছে সমগ্র হৃদয়টাকে... তখন মন্থরতা আমাকে ভীষণভাবে ভাবিয়ে তুলছে....কোনো কোনো জায়গায় আপনার গল্পটিকে অলৌকিক মনে হতে পারে.. তবে কিছু বৈজ্ঞানিক তথ্যের সাহায্যে লেখক সেখানে বিজ্ঞানের অবস্থান সুনিশ্চিত করবেন |
গল্পের শেষটা বেশ করুণ... যার অভিঘাতে চোখের জলকে বাঁধ মানানো প্রায় এক দুঃসহ ব্যাপার.. এই গল্পটা এক দারুণ অনুভূতির দোরগোড়ায় নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়েছে আমাকে... প্রথম উপন্যাস পড়ার পরেই লেখক -এর লিখনশৈলীর প্রেমে পড়ে গেছি..সকলে অবশ্যই একবার পড়ে দেখুন উপন্যাসটি... আশা করি হতাশ হবেন না বরং এক অসাধারণ ভয়াবহ ভালোলাগা আপনার সম্পূর্ণ হৃদয়কে গ্রাস করবে....
সবশেষে শুধু একটা কথাই বলবো সায়ক আমান আপনি কোনো সাধারণ মানুষ নন... "অনুভূতির ঈশ্বর"
Midnight Horror Station
বই: ভাসানবাড়ি বই রিভিউ ২
লেখক: সায়ক আমান
তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি,
শত রূপে শত বার...
জনমে জনমে, যুগে যুগে অনির্বার।
রবী ঠাকুর যদি জানতেন তার এই কবিতা রচনার একশ বছর পরেও, এক তরুণ লেখকের লেখায় আধুনিক বিজ্ঞানের ছোঁয়ায় একদম শ্বাশ্বত সত্যি হয়ে ফিরে আসবে, তাহলে কি খুশিই না হতেন।
আচ্ছা পৃথিবীর বয়স কতো?
আপনারা সবাই এককথায় বলবেন সাড়ে চারশো কোটি বছর।
তাহলে ভাবুন কেউ ভালোবাসার জন্য 14 বিলিয়ন বছর ধরে অপেক্ষা করছে, সেই বিগ বাং বা ব্রহ্মনাদের সময় থেকে। আপনারা বলবেন ধুর! যত্তসব গাঁজাখুরি গল্প;
আরে না মশায়, এ এক আদ্যপ্রান্ত প্রেমের গল্প। যেটা পড়ার পড়ে আপনি দ্বিধায় পড়বেন জগতের সৃষ্টিতত্ব আর এক অন্তহীন প্রেমের মধ্যে। অনেকে এটাকে সাইন্স ফিকশনও ভাবতে পারেন, তবে লেখকের কথায় এটি -
“অন্তহীন প্রেমের গল্প" যার কোনো শেষ নেই, যার বিস্তৃতি এই ব্রহ্মান্ডের সম্পূর্ন জীবনকাল ধরে।
গল্পের শুরু অনেকটা এরকম।
এক উচ্ছল কিশোরীর চোখে থাকে কতই না স্বপ্ন, রঙিন ভবিষ্যতের ঘোর।হঠাৎ করেই যদি জানতে পারে তার শরীরে চুপিসারে দানা বেধেছে মরণব্যাধি তখন তার কেমন লাগবে?
ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে তাই না? আমাদের গল্পের নায়িকা হৈমন্তীর গল্পটাও ঠিক এরকমই। তবুও সে হার না মানা এক অদম্য সৈনিক। পরিবার,সমাজ আর কঠিন রোগের সাথে লড়াই করে সে কাটাতে থাকে জীবন।
আচ্ছা যে জীবনে ভবিষ্যতের কোন আশা নেই সেই একাকী জীবন আর কতদিন টেনে বেড়ানো যায়!এভাবেই চলছিল হৈমন্তীর দিন।
এমন সময় একটা সংস্থার পক্ষে কিছু গোপন জিনিস উদ্ধারের জন্য হৈমন্তীকে যেতে হয় এক প্রত্যন্ত গ্রামের এক জরাজীর্ণ বাড়ির খোঁজে। বাড়ির নাম ভাসানবাড়ি।
এই ভাসানবাড়িতে লুকিয়ে রাখা রয়েছে এমন এক যন্ত্র যা সময়ের মাত্রা বদলে দিতে পারে। হ্যাঁ ভাসানবাড়ির সময় পৃথিবীর অন্য জায়গার সময় থেকে দুবছর এগিয়ে সব সময়। আর সেখানেই এক রহস্যময় যুবক অপেক্ষা করছে হৈমন্তীর জন্য, নাম অশ্বিনী। নিজেকে বাড়ির কেয়ারটেকার এর ছেলের পরিচয় দিলেও, সে আসলে কে সেইটা নিয়ে একটা দ্বন্দ্ব থেকেই যায় হৈমন্তীর মনে।
অদ্ভুতগোছের ছেলেটার প্রতি হৈমন্তী একটা টান অনুভব করা শুরু করে ধীরে ধীরে।আবার কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে থাকে ভাসানবাড়িতে।
কে এই অশ্বিনী? সে কি করে হৈমন্তীর জীবনের প্রতিটা ঘটনা, প্রতিটা মুহূর্ত জেনে গেল?
হৈমন্তীর মনে অনেক প্রশ্ন থাকলেও সে অশ্বীনির প্রেমে পড়ে।
শেষপর্যন্ত কি হবে?ভালবাসার স্রোতে ভেসে যাবে অশ্বিনী আর হৈমন্তী?
নাকি এটা শুধুই অভিনয় সেই গোপন জিনিস উদ্ধারের জন্য?কি সেই গোপন জিনিস যা এই বাড়ির কোথাও লুকিয়ে আছে?
সব প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে ভাসানবাড়ির মধ্যে।
এই অবধি পড়ে আপনাদের মনে হতেই পারে এটি একটি থ্রিলার গোছের সাইন্স ফিকশন, কিন্তু না আবারও বলছি এটি আসলে একটি প্রেমের গল্প, অন্তহীন প্রেমের গল্প।
অসংখ্য ধন্যবাদ কাশবনের কন্যা দিদিকে এতো সুন্দর একটা রিভিউ লিখে দেওয়ার জন্য।
Vasanbari Download Link
বিশেষ দ্রব্যষ্ট: পিডিএফ কপি পড়ে ভালো লাগলে, হার্ডকপি কিনে সংগ্রহ করুন, বাংলা বই গুলোকে বাঁচিয়ে রাখুন।
ভাসানবাড়ি পিডিএফ ডাউনলোড করুন সম্পূর্ণ ফ্রিতে Vasanbari PDF সায়ক আমান এর বই | Vasanbari By Shayok Aman
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....