প্রাচ্যবাদ ও ইসলাম লেখক : মুসা আল হাফিজ | Pracchobad O Islam By Musa Al Hafiz | বই রিভিউ

প্রাচ্যবাদ ও ইসলাম
লেখক : মুসা আল হাফিজ
প্রকাশনী : ইত্তিহাদ পাবলিকেশন
বিষয় : ইসলামি গবেষণা
পৃষ্ঠা : 512, কভার : হার্ড কভার
ভাষা : বাংলা
পাওয়া যাবে : ওয়াফিলাইফে

প্রাচ্যবাদ ও ইসলাম লেখক : মুসা আল হাফিজ | Pracchobad O Islam By Musa Al Hafiz | বই রিভিউ
ছবি : প্রাচ্যবাদ ও ইসলাম লেখক : মুসা আল হাফিজ


প্রাচ্যবাদ ও ইসলাম একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্যবিষয়। যার একদিকে রয়েছে বিশ্বাস ও জীবনালোকের স্বচ্ছতা ও পূর্ণতা। অপরদিকে রয়েছে ত্রুটিসন্ধান, সংশয় সৃষ্টি ও বিভ্রান্ত প্রচারণা। আসমানী হেদায়েতের পরিপূর্ণ রূপায়ন হিসেবে ইসলাম যে শাশ্বত সত্যের সামগ্রিকতা, তাকে অবিশ্বাসের চোখ দিয়ে দেখতে চেয়েছে প্রাচ্যবাদ। কুরআন, হাদীস, ফিকহ, সীরাত, উসুল, তাসাউফ, ইসলামের ইতিহাস ইত্যাদি বিক্ষত হয়েছে প্রাচ্যতাত্ত্বিক আক্রমণ ও অপবাদে। এসব আক্রমণ ও অপবাদ বহুমুখী, বহুমাত্রিক। যুগ যুগ ধরে বিচিত্র সুরে, অগণিত কলমে প্রাচ্যতাত্ত্বিক অভিযোগনামার স্তূপ তৈরী হয়েছে। যার প্রভাব ও প্রতাপে ইসলাম সম্পর্কে ভয়াবহ বিভ্রান্তি তৈরী হয়েছে। এর শিকার যেমন অমুসলিম পাঠক, তেমনি মুসলিম অনেকেই। নিকট অতীতের ধারাবাহিকতায় আজকের দুনিয়ায় এর বিপজ্জনক প্রতিক্রিয়া সুস্পষ্ট। ফলে এজাতীয় বিভ্রান্তির অপনোদনে কলমী প্রয়াস খুব জরুরী এবং তা জ্ঞানদক্ষ বয়ানে সম্পন্ন হওয়া উচিত। বাংলা ভাষায় যার অভাব অত্যন্ত প্রকট।

এ শূন্যতা পূরণে ব্যতিক্রমী গবেষণাকেন্দ্র মা’হাদুল ফিকরি ওয়াদ দিরাসাতিল ইসলামিয়ার তরুণ গবেষকরা ইসলাম ও ইসলামী জ্ঞানকলার গুরুত্বপূর্ণ দিক সমূহ নিয়ে প্রাচ্যবাদের জবাবী বয়ান উপস্থাপনে প্রয়াসী হয়েছেন। যা এ ধারার কাজের গুরুত্বপূর্ণ সূচনা।
একটি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে সমৃদ্ধ এই স্মারক ধর্মীয় ধারার অনুরাগী পাঠকদের জন্য যেভাবে সুপেয় শরবতের কাজ দেবে, তেমনি ইসলামের প্রতি যারা অনুরাগী নন, তাদের জন্যও হয়ে উঠবে মহৌষধ! ইনশাআল্লাহ

প্রাচ্যবিদদের ইসলাম চর্চা: প্রকৃতি ও প্রভাব' প্রবন্ধে লেখক ওরিয়েন্টালিজমের শেকড়সন্ধানে ক্রুসেডের ভূমিকা তুলে ধরেন। পাশাপাশি প্রাচ্যচর্চার সূচনা ও গতিপ্রকৃতি সংক্রান্ত আলাপ টেনে দেখান যে, ওরিয়েন্টালিজনের সঙ্গে ক্রুসেডের যোগসূত্র ছিল বটে, কিন্তু প্রাচ্যবিদদের ইতিবাচক ভূমিকাকেও উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। আবার এরই মধ্যে গবেষণাগত বিচ্যুতি ও খেয়ানত থেকে প্রাচ্যবিদরা যে বের হতে পারেন না, এটিও দেখানো হয়েছে প্রবন্ধটিতে।

ওরিয়েন্টালিজনের গোড়ায় দৃষ্টিপাত' শীর্ষক প্রবন্ধে প্রাচ্যবাদের পরিচয়, সূচনা এবং ক্রমবিকাশ উঠে এসেছে সংক্ষিপ্ত পরিসরে। এবং প্রাচ্যচর্চার মৌলিক কিছু লক্ষ্য উদ্দেশ্যের প্রতি ইশারা দিয়ে প্রবন্ধটির সমাপ্তি ঘটেছে।

প্রাচ্যবাদ : বুদ্ধিবৃত্তিক নেপথ্যে সাম্রাজ্যবাদী বোঝাপড়া' প্রবন্ধে লেখক প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সম্পর্ক নির্মাণে ওরিয়েন্টালিজমের প্রভাব তুলে ধরেছেন। ওরিয়েন্টালিজম বিষয়ে মুসলিমদের প্রতিবয়ানের সংকট ও সম্ভাবনার পাশাপাশি প্রাচ্যবাদের পরিচিতি ও ইতিহাস এনেছেন। প্রাচ্যচর্চা কখন এবং কীভাবে সাম্রাজ্যবাদের সহযোগী হয়ে উঠেছে, লেখক বিভিন্ন বরাতের মাধ্যমে তা সুস্পষ্ট করেছেন।

‘নব্যপ্রাচ্যবাদ : ধারণা ও পদ্ধতিগত সংকট' শিরোনানে লেখক নব্যপ্রাচ্যবাদের ধারণা ও রূপান্তর তুলে ধরেছেন প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে। নব্যপ্রাচ্যবাদের বিকাশ ও উত্থানের পেছনে ক্রিয়াশীল ঘটনা-অনুঘটনাও সমান্তরালে হাজির করেছেন। বিশেষত, পশ্চিনা তাত্ত্বিকদের বরাতে উপস্থাপন করেছেন নব্যপ্রাচ্যবাদের নানামাত্রিক সংকট। পরিশেষে লেখক দেখান যে, নব্যপ্রাচ্যবাদ আদতে ক্লাসিক্যাল প্রাচ্যবাদের নয়া সংযোজন।

রাশিয়ান প্রাচ্যবাদ : ঐতিহাসিক পাঠ' শিরোনামে লেখক রুশ সাহিত্যে ইসলামচর্চার দীর্ঘ ও ধারাবাহিক গতিপ্রকৃতি তুলে এনেছেন। এবং ইতিহাসের বিচার বিবেচনা নিয়ে এসেছেন দক্ষতার সঙ্গে।

প্রাচ্যবাদের অস্তিত্ব কি এ যুগে নেই’ প্রবন্ধটি মূলত নব্যপ্রাচ্যবাদ সন্ধানের একটা প্রাথমিক প্রচেষ্টা। লেখক পশ্চিমা ও মুসলিম স্কলারদের বরাতে স্পষ্ট করেছেন যে, ওরিয়েন্টালিজম প্রপঞ্চের প্রতি নেতিবাচকতা থাকলেও এর মৌলচরিত্র পশ্চিমা অ্যাকাডেনিয়ায় উপস্থিত, যাকে পূর্বের প্রবন্ধে নব্যপ্রাচ্যবাদ হিসেবে হাজির করা হয়েছে।

আল-কুরআনের প্রাচ্যবাদী গবেষণা ও বিভ্রান্তি' প্রবন্ধে লেখক অত্যন্ত গোছালো ভঙ্গিতে কুরআন সংশ্লিষ্ট প্রাচ্যবাদী বিভ্রান্তির অপনোদন করেছেন৷

আধুনিক প্রাচ্যবিদদের কার্যপ্রকৃতি ও নবীজির বংশমর্যাদা সম্পর্কে মার্গোলিয়রে বয়ান : পাঠ ও পর্যালোচনা' শীর্ষক রচনায় গুরুত্বপূর্ণ প্রাচ্যবিদের আলাপের সূত্র ধরে ওরিয়েন্টালিজনের কাঠানোগত বোঝাপড়া উপস্থিত করেছেন লেখক। বিশেষভাবে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বংশমর্যাদা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নার্গোলিয়রে বিভিন্ন সংশয়ের বিচার করা হয়েছে।

সিরাত ও প্রাচ্যবাদ : একটি প্রাথমিক অধ্যয়ন' শীর্ষক প্রবন্ধে প্রাচ্যবাদ ক্রুসেডের বুদ্ধিবৃত্তিক সিলসিলা হিসেবে পর্যালোচিত হয়েছে। সিরাতের বিরুদ্ধে ওরিয়েন্টালিস্টদের যাবতীয় বিভ্রাটের গোড়ায় ছিল অজ্ঞতা। পশ্চিমে জ্ঞানচর্চার পোক্ত ভিত্তি থাকার পরও অজ্ঞতা কেন ক্রিয়াশীল থাকল, তার কার্যকারণ সন্ধান করেছেন লেখক। নব্যপ্রাচ্যবিদদের চরিত্র ও আদিম সুরত নিয়েও আলাপ ভুলেছেন। পরিশেষে তুলনামূলক ধর্মতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে রাসুল সা.-এর অনিবার্যতা তুলে এনেছেন।

শিবলির বিচারে প্রাচ্যবিদদের সিরাতচর্চা' প্রবন্ধে শিবলি নোমানির ইতিহাস ও সিরাতচর্চার প্রেক্ষাপট খোলাসা করা হয়েছে। সিরাত সংশ্লিষ্ট প্রাচ্যবিদদের বিচিত্র আপত্তির পর্যালোচনা এসেছে শিবলির বরাতে।

ফ্রান্সে সিরাতচর্চা : প্রাচ্যবাদী প্রকল্প ও মুসলিম নোকাবেলা' শীর্ষক প্রবন্ধে লেখক ফরাসি ভাষায় সিরাতচর্চার মুসলিম-প্রচেষ্টাকে হাজির করেন। এবং ফ্রান্সের তিন শ্রেণির প্রাচ্যবিদদের চিহ্নিত করে পর্যালোচনামূলক ভঙ্গিতে প্রবন্ধের পটভূমি নির্মাণ করেছেন।

প্রাচ্যবিদদের সিরাতচর্চা : প্রক্রিয়া ও কারণ' প্রবন্ধের শুরুতে প্রাচ্যবিদদের সিরাতচর্চার একটি ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন। এবং বিভিন্ন প্রসঙ্গে নেতিবাচক প্রাচ্যচর্চার শাস্ত্রীয় পর্যালোচনা করেছেন। সিরাত-কেন্দ্রিক বহুমাত্রিক প্রকল্প ও সক্রিয়তাকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেছেন।

'রাসুল সা.-এর বহুবিবাহ প্রসঙ্গে প্রাচ্যবাদী আপত্তি' শীর্ষক প্রবন্ধে প্রাক-ইসলামি সমাজে নারী ও বহুবিবাহের চরিত্র নিয়ে আলাপের পাশাপাশি এসেছে ইসলামের বাস্তবতা। বহুবিবাহের গুরুত্বের দিকগুলো তুলে ধরেছেন দৈহিক, সামাজিক ও পারিবারিক বিবেচনা থেকে।

ইসলামি ফিকহের প্রাচ্যবাদী বিচার বিভ্রান্তি ও নিরসন' শীর্ষক প্রবন্ধে মুসলিমবিশ্বের ইউনিভার্সিটিগুলোতে ফিকহচর্চার সংকট এবং প্রাচ্যবিদদের বহুমাত্রিক প্রচেষ্টা উল্লেখ করা হয়েছে। অতঃপর প্রাচ্যবাদের সংজ্ঞা, উৎপত্তি ও বিকাশ এবং সক্রিয়তা নিয়ে আলাপ এসেছে। বিশেষত, শাখতের চিন্তা ও বিভ্রান্তির অপনোদন এসেছে সবিস্তারে।

ইসলামি আইন ও রোমান ল' প্রসঙ্গে প্রাচ্যতাত্ত্বিক দাবি : একটি পর্যালোচনা' প্রাচ্যতাত্ত্বিক বয়ানে ইসলামি আইন যে অপরের দিকনির্দেশনা হিসেবে হাজির হয়েছে, তার খবরদারি করেছেন লেখক। তুলনামূলক পর্যালোচনার ভেতর দিয়ে ইসলামি আইনের স্বাতন্ত্র্য চিত্রায়ন করেছেন ইতিহাস ও তুরাসের বরাতে।

হাদিসশাস্ত্র ও প্রাচ্যবাদ : বিভ্রান্তির নমুনা পর্যালোচনা' শীর্ষক প্রবন্ধে আধিপত্য ও ক্ষমতা নির্মাণের পাটাতনে প্রাচ্যচর্চা কীভাবে ভূমিকা রেখেছে, সেসব আলাপের সাথে সাথে উঠে এসেছে প্রাচ্যবাদের নিজস্ব চরিত্র। বিশেষত, সিরাত এবং হাদিস-সংশ্লিষ্ট আলাপে গোল্ডজিহার ও জোসেফ শাখতের বিভ্রান্তি তুলে ধবে মুস্তফা আজনির বরাতে স্পষ্ট হাজির করা হয়েছে সিরাতের মৌলিকত্ব ও ওহিভিত্তিক বুনিয়াদ।

হাদিস বর্ণনাকারীদের নিয়ে প্রাচ্যবিদদের বিষোদগার : একটি বিশ্লেষণ' প্রবন্ধে হাদিস বর্ণনার ঐতিহাসিক সিলসিলা, প্রচেষ্টা ও পদ্ধতি সংশ্লিষ্ট আলোচনা যত্নের সাথে স্থান পেয়েছে। ইবনে আব্বাস রা.-সহ বিভিন্ন প্রসঙ্গে প্রাচ্যবিদদের আপত্তিগুলোর পর্যালোচনা হাজির করেছেন লেখক।

ইসলামি তাসাউফ ও প্রাচ্যবাদ : একটি পর্যালোচনা' প্রবন্ধে তাসাউফের শেকড় ও সূত্র নিয়ে প্রচারিত বিভ্রান্তির প্রতি ইশারা করেছেন লেখক। অতঃপর তাসাউফের পরিচিতি তুলে ধরে উৎস-কেন্দ্রিক বিতর্কের সমাধান টেনেছেন।

প্রাচ্যবিদদের ইসলামি ইতিহাসচর্চা : একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা' শীর্ষক প্রবন্ধে প্রাচ্যবাদের চরিত্র তুলে ধরেন লেখক। মুসলিম ইতিহাসের বিভিন্ন কালপর্ব ধরে বিশ্লেষণী পর্যালোচনা তুলে এনেছেন। এবং প্রাচ্যবাদী বিভ্রান্তির অবসানে প্রয়াসী হয়েছেন।

বিশ্বায়নে প্রাচ্যবাদের প্রভাব' প্রবন্ধে লেখক প্রাচ্যবাদের সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদ ও বিশ্বায়নের যোগসূত্র উপস্থাপন করেছেন। এবং বিশ্বায়নের বহুমাত্রিক প্রবণতা কীভাবে প্রাচ্যবাদের অবকাঠানোতে ভূমিকা রেখেছে, তার সংক্ষিপ্ত চিত্র উঠে এসেছে সংশ্লিষ্ট প্রবন্ধে।

আরবি সাহিত্যে প্রাচ্যবাদের সংশ্লেষ' শিরোনামে লেখক বিশ্লেষণ করেছেন মুসলিনবিশ্বে আরবিভাষার অবস্থান নিয়ে। পাশাপাশি ইউরোপে আরবিভাষাচর্চার বহুমাত্রিক রূপ ও প্রবাহ কীভাবে ওরিয়েন্টালিজমের পাটাতন নির্মাণ করেছে, সেসব নিয়েও আলাপ করেছেন।

উপমহাদেশে খ্রিষ্টান মিশনারি ও প্রাচ্যবাদী তৎপরতা' শিরোনামে মূলত ইসলামের বিরুদ্ধে উপনহাদেশীয় প্রাচ্যবাদ ও মিশনারির যৌথ অপচেষ্টা তুলে ধরা হয়েছে। উঠে এসেছে নিশনারির কর্মপ্রক্রিয়া, প্রখ্যাত নিশনারিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী এবং নিশনারি পুস্তক ও প্রতিষ্ঠানসমূহের সূচি।

‘সন্ত্রাসের অভিযোগে বিদ্ধ জিহাদ: একটি নির্মোহ পর্যালোচনা' প্রবন্ধে লেখক জঙ্গিবাদের উৎস নিয়ে শাব্দিক এবং পারিভাষিক পর্যালোচনা হাজির করেছেন। ওয়ার অন টেররের মার্কিনি প্রকল্পের ভঙামি তুলে ধরেছেন নিপুণ হাতে। মিডিয়ার বিচিত্র কপটতা সন্ত্রাসের জমি তৈরিতে কীভাবে ভূমিকা রেখেছে, তা খোলাসা করা হয়েছে। সবশেষে তুলনামূলক ধর্মতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখিয়েছেন ইসলামের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং তুলে ধরেছেন বিভিন্ন ধর্মের অরাজকতা।

প্রাচ্যবিদদের ইসলাম অধ্যয়নের স্বরূপ ও মওলানা মুহাম্মদ আলির অন্তদর্শন' শীর্ষক প্রবন্ধে ইসলাম সংশ্লিষ্ট চর্চায় ইউরোপের বিশেষ উৎসাহের প্রসঙ্গ তুলে এনেছেন। প্যান ইসলামিজন নিয়ে বিস্তৃত পরিসরে পর্যালোচনা হাজির করেছেন। মুসলিম সনাজের রাজনৈতিকতা ও ধর্মাচরণ সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে নারগোলিয়ূথ, হ্যারি জনস্টনদের বক্তব্যকে বিচার বিবেচনা করেছেন সূক্ষ্ম উপস্থাপনায়।

প্রাচ্যবাদ নোকাবেলায় ড. মুস্তফা সিবায়ী' শিরোনানের নিবন্ধে মুস্তফা সিবায়ীর কর্মবহুল জীবনের ফিরিস্তি উঠে এসেছে। প্রাচ্যবিদদের সঙ্গে সাক্ষাত ও সংলাপের ভেতর দিয়ে সিবায়ী যে অভিজ্ঞতা হাসিল করেছেন, তা এ ধারার পাঠে নবপ্রাণ সঞ্চার করেছে নিশ্চয়ই; লেখক সংশ্লিষ্ট প্রবন্ধে সেসব অভিজ্ঞতা সামনে রেখে সিবায়ীর রচনাবলির মৌলিকত্ব ও উপযোগিতা নির্ণয়ে শ্রম দিয়েছেন।

অ্যাডওয়ার্ড সাইদের ওরিয়েন্টালিজন : কোথায় জরুরত?' শীর্ষক প্রবন্ধে পাশ্চাত্য মোকাবেলায় সাইদের ভূমিকা ও জরুরত তুলে ধরেন। সাইদের কর্মজীবনের পাশাপাশি তাঁর শ্রেষ্ঠকর্ন ‘ওরিয়েন্টালিজনে'র পাঠ-পর্যালোচনা উঠে এসেছে সংক্ষেপে। সাইদের অন্যান্য রচনার প্রতিও বিশেষ মনোযোগ রেখেছেন লেখক। বিশেষত, ফিলিস্তিনিদের অধিকার ও বিপর্যস্ত বাস্তবতা সাইদের বরাতে হাজির করার প্রচেষ্টা চলেছে সংশ্লিষ্ট প্রবন্ধে।

লাইফ অব মুহাম্মদ : উইলিয়ান ন্যুর ও স্যার সৈয়দ আহমদ খান" দ্য লাইফ অব মুহাম্মাদের প্রতিবয়ানে স্যার সৈয়দের ‘খুতুবাতে আহমদিয়া' গ্রন্থের প্রাসঙ্গিকতা উঠে এসেছে সংশ্লিষ্ট প্রবন্ধে। দুজনের সংক্ষিপ্ত জীবনালেখ্যের ভেতর দিয়ে পর্যালোচিত হয়েছে ন্যুরের গবেষণা। উপমহাদেশের পটভূমিতে স্যার সৈয়দ এবং আলিগড়ের বিচিত্র সক্রিয়তা তুলে ধরে, প্রাচ্যচর্চা নোকাবেলায় স্যারের অবদানকে নাতিদীর্ঘ পরিসরে উপস্থাপন করা হয়েছে।

মুস্তফা আজমি : প্রাচ্যবাদ প্রতিরোধে কীর্তিমান মনীষী' শীর্ষক প্রবন্ধে আজমির পরিচিতি উঠে এসেছে। এবং বিশেষভাবে জোসেফ শাখতের প্রাচ্যবাদী প্রকল্পের বুনিয়াদি পর্যালোচনা এসেছে আজমির বরাতে।

প্রাচ্যতাত্ত্বিক জ্ঞানের মোকাবেলায় পাশ্চাত্যতাত্ত্বিক জ্ঞানের পুনর্গঠনের জরুরত' শীর্ষক প্রবন্ধে লেখক ড. মাজিন ইবনে সালাহ ওরিয়েন্টালিজনের খেলাফে পাশ্চাত্যচর্চার প্রস্তাবন হাজির করেছেন। পাশ্চাত্যচর্চার সিলসিলা, অবকাঠানো এবং সংকট-সম্ভাবনা তুলে এনেছেন। সংক্ষিপ্ত হলেও প্রবন্ধটি বেশ গুরুত্ববহ।

প্রাচ্যবিদদের ইসলামচর্চা : প্রকৃতি ও প্রভাব
আনোয়ার হোসাইন

ইতিহাসে দেখা গেছে, একটা সম্প্রদায় তার নিজস্ব ধ্যানধারণা সঠিক মনে করে তাকেই আঁকড়ে ধরে থাকতে চায়, ঠিক যেভাবে যিশুখ্রিষ্টের আগনন সত্ত্বেও ইহুদিরা নুসা আলাইহিস সালামের প্রচারিত তাদের পুরাতন ধর্মবিশ্বাসে অটল থাকে। কিন্তু, 'ঈশ্বরের পুত্র যিশু' ক্রুশে আত্মাহুতি দিয়ে নানবকুলের জন্য মুক্তির পথ তৈরি করার ছয় শতাব্দী পরে একটা নতুন ধর্মের জন্ম খ্রিষ্টানদের কাছে কেবল একটা প্ররোচনা বলেই গণ্য হয়নি, বরং একটা অপমানজনক ব্যাপারও মনে হয়েছে।

ফলত তাদের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পেয়েছে হিংসাত্মকভাবে। এই প্রতিক্রিয়া ছিল বৈরিতায় পূর্ণ, যার দাবি ছিল মুহাম্মদ সা. একজন ভণ্ড নবী, যিনি যিশুখ্রিষ্টের শিক্ষাসমূহ ভুলভাবে নকল করে সংকলিত করেছিলেন। ইসলামের বিস্ময়কর দ্রুত বিস্তারে ভীত-শঙ্কিত হয়ে তারা বলেছে, ইসলাম হচ্ছে একটি মারমুখী এবং যুদ্ধপিপাসু ধর্ম, যার বিস্তৃতি মূলত ঘটেছিল সামরিক অভিযানের মাধ্যনে। যে অবিশ্বাস্য দ্রুত গতিতে ইসলামের প্রসার ঘটেছিল, তাদের মন একে এ ছাড়া অন্য কোনোভাবে ব্যাখ্যা করতে রাজি ছিল না। হেজাজ থেকে উদ্ভূত ইসলাম ৬৬৮ সালে কনস্টান্টিনোপল, ৭১০ সালে ভারত এবং ৭৩৩ সালে মধ্য ফ্রান্সে বিস্তার লাভ করেছিল। আসলে খ্রিষ্টজগত এই সত্যটা কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি যে ইসলাম ওই সমস্ত জনপদে এক উজ্জ্বল ত্রাণকর্তা হয়ে এসেছিল।

এভাবেই, ইসলামের নবী এবং ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ ও বৈরীভাব খ্রিষ্টান ইউরোপীয় মনোবৃত্তির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়ায়, যা বিবর্তিত হয়ে একপর্যায়ে তাদের অন্তরে জাগিয়ে তোলে Spirit of Crusades বা ক্রুসেডের চেতনা।

ক্রুসেড

১০১৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১২৪৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় দেড়শ বছর ধরে চলে ক্রুসেডের ধর্মযুদ্ধ। এই ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের মূলে দেখা যায় দুটি কারণ :

এক. ধর্মীয় ঈর্ষাপরায়ণতা, গোঁড়ামি ও অন্ধত্ব, যার কারণে গির্জার পুরোহিতগণ উত্তেজিত হয়ে ইউরোপের জনসাধারণের মধ্যে মুসলমানদের বিরুদ্ধে চরম ঘৃণা ও ক্ষোভের সঞ্চার করতে থাকে। পুরোহিতচক্র খ্রিষ্টান জাতিকে এই বলে ঐক্যবদ্ধ ও উত্তেজিত করে তোলে যে, কাফিরদের (মুসলমানদের) অধীনতা থেকে খ্রিষ্টান ভূমি অর্থাৎ ফিলিস্তিন ও বাইতুল মুকাদ্দাস মুক্ত করা তাদের প্রথম কর্তব্য। সুতরাং ক্রুসেড বাহিনীর মধ্যে অধিকাংশই ধর্মীয় উন্মাদনা ও গোঁড়ামির শিকার হয়ে ঘর-গেরস্ত ছেড়ে পাগলের ন্যায় যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে, আন্তরিকতা ও চরম বিশ্বাস নিয়ে। অথচ ময়দানে তারা পেয়েছে মৃত্যু, ধ্বংস, হত্যা, রক্তপাত ও প্রত্যাঘাত; এবং একদলের পর আরেক দলের মোকাবেলা করতে হয়েছে তাদের প্রতিনিয়ত।

দ্বিতীয় কারণ হলো রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ বা সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব। ইউরোপের শাসকবর্গ ইসলামি রাষ্ট্রসমূহ এবং বিশেষ করে সিরিয়া ও এর পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র সম্পর্কে শুনেছিল যে, সেখানে ধনদৌলত, কলকারখানা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, সবুজ-শ্যামল ও উর্বর ভূমির ফসল নজিরবিহীন, যা ছিল ইউরোপে কল্পনাতীত। এমনিভাবে ইসলামি রাষ্ট্রসমূহে শান্তি-শৃঙ্খলা জীবনের নিরাপত্তা ও উচ্চতর সভ্যতা-সংস্কৃতির এমন সব কাহিনি তারা শুনেছিল, যা তারা কখনো স্বপ্নেও দেখেনি। সুতরাং ইউরোপীয় শাসকবর্গ ঈসা মসীহ আলইহিস সালামের নাম করে তাদের সৈন্যবাহিনীকে মুসলিমরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পরিচালিত করে। অথচ তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য রাজনৈতিক উচ্চাভিলায় ও মুসলমানদের ধনদৌলত লুটে নেওয়ার চরন লালসা; নোটকথা সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব। এ ছাড়া সত্যের সাহায্য করা তাদের মধ্যে আদৌ ছিল না। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছারই জয় হলো। দুই শতাব্দীর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরও ক্রুসেড-বাহিনী পরাজিত, লাঞ্ছিত ও রিক্তহস্তে তাদের ঘরে ফিরে গেল। যেসব এলাকা তারা জবরদখল করেছিল, তা বেদখল হলো। আর এ লোভাতুর হিংস্র বাহিনী আফসোস, নৈরাশ্য এবং ললাটে পরাজয় নিয়ে স্বদেশে ফিরে গেল।

কিন্তু, ক্রুসেডের ফল হয় তার বিপরীত। ক্রুসেড-পরবর্তী প্রতিক্রিয়াসমূহের মাঝে খ্রিষ্টান সনরনায়কদের Cultural Shock গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যে মুসলমানদের Saracen বা শয়তান আখ্যায়িত করত, তাদের নিজেদের চেয়ে উন্নততর এক সভ্যতার অধিকারী হিসেবে ক্রুসেডাররা দেখতে পেল, যেই শক্তিমান সভ্যতার মুখোমুখি হয়েছিল তারা৷ অনেক খ্রিষ্টান সমরনায়কের কাছেই পবিত্র ভূমির স্মৃতি বা অভিজ্ঞতা বেশ বিব্রতকর ছিল। তখনকার প্রকৃত বর্বর ইউরোপের কাছে অজানা এক পরিশোধিত এবং পরিশীলিত জীবনধারণ, শিক্ষার হার, চিকিৎসাবিজ্ঞান আর কুর্দি বীর সালাহুদ্দীনের চরিত্রে সমন্বিত বীরত্ব, করুণা, সহিষ্ণুতা ইত্য । স্মৃতি তাদের কাছে পীড়া হল। মধ্যপ্রাচ্যের পুণ্যভূমিতে দেখে যাওয়া সভ্যতা ছিল অনেকটা মুসলিম আন্দালুসিয়ার সভ্যতার মতোই, যে সভ্যতা তার খ্রিষ্টান প্রতিপক্ষকে লজ্জিত ও সঙ্কুচিত করেছিল এমন বোধ দিয়ে যে, যদি কেউ তখন বর্বর থেকে থাকে, তবে তা মুসলমানরা নয়, বরং ক্রুসেড লড়তে আসা খ্রিষ্টানরাই।

ক্রুসেডযুদ্ধে খুব কাছাকাছি থেকে ইসলানকে দেখার কারণে ইউরোপের জনসাধারণের অনেকের মধ্যে ইসলামের প্রতি আদর্শিক মুগ্ধতা তৈরি হয়। কিন্তু এদের সংখ্যা ছিল নিতান্ত মুষ্টিমেয়। সাধারণ খ্রিষ্টানরা তীব্র অপমান ও ঈর্যা নিয়েই ফিরেছিল। তাদের শাসকরা এই দৃঢ় প্রত্যয় নিয়েই ফিরেছিল যে, যত যুগ পরেই হোক, আর এজন্য যত প্রকার কষ্ট ও অর্থসম্পদ প্রয়োজন হোক, তাদের ইসলামি রাষ্ট্রের উপর জয় লাভ করতেই হবে। অবশ্য তারা ইসলামি রাষ্ট্রসমূহের উপর সামরিক দিক থেকে পরাজয়ের পর একথা নিঃসন্দেহে বুঝে নিয়েছিল যে, ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধের পরিবর্তে তাদের বিশ্বাস, শিক্ষা, সভ্যতা ও সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের গভীরতা পর্যালোচনা করে তাদের শিক্ষা ও সংস্কৃতির উপর নীরব হামলাই ব্যাপক কার্যকর ও ফলদায়ক হবে। সুতরাং ইউরোপীয় নবপ্রজন্মের মেধাবী একটি অংশ ইসলামি রাষ্ট্রের উপর তাদের সভ্যতা ও চিন্তাধারা অনুপ্রবেশের যুদ্ধে ব্যাপৃত হলো। আর এ থেকেই পাশ্চাত্যচিন্তাবিদদের বিভিন্ন দল অদ্যাবধি ইসলাম ও প্রাচ্য জ্ঞানবিজ্ঞান, সভ্যতা ও সংস্কৃতি কলংকিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।

প্রাচ্যবাদকে চেনা এবং তার ইসলাম-অধ্যয়নের প্রেক্ষিত প্রাচ্যবিদ্যাকে ইংরেজিতে বলা হয় orientalism. এই ভাষায় orientalism শব্দের প্রথম ব্যবহার হয় ১৭৭৯ সালে। আরবিতে এর জন্য ব্যবহৃত শব্দ হচ্ছে ‘ইসতিশরাক’। ইসতিশরাক ‘শিন' ‘রা' 'ক্বাফ' ধাতু থেকে উৎসারিত। এটা ‘বাবে ইসতিফআল'র মাসদার। বাবে ইসতিফআলের একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ‘তলব' তথা অন্বেযা। ইসতিশরাক শব্দের ‘সিন' সে তলবের মর্মই আদায় করছে। অতএব ইসতিশরাকের মর্ম দাঁড়ায় প্রাচ্য সম্পর্কে জানার ইচ্ছা। এককথায় প্রাচ্যবাদ বলতে যা বোঝায় তা হলো, প্রাচ্যের ভাষা, ধর্ম, সমাজ, সংস্কৃতি, শিল্প, সভ্যতা, ইতিহাস ইত্যাদি বিষয়ে পশ্চিমাদের জ্ঞানচর্চা ও গবেষণাকেন্দ্রিক চিন্তাধারা। আর প্রাচ্য বিষয়ে যিনি জ্ঞানচর্চা ও গবেষণা করেন, তাকে বলা হয় orientalist বা প্রাচ্যবিদ।

প্রাচ্যবাদ গবেষক মুসা আল হাফিজের ভাষায় প্রাচ্যবাদ মানে প্রাচ্যসংক্রান্ত বিদ্যা। কথাটি ব্যাপক ও বিশেষ দুই ধরনের অর্থ দিতে পারে। ব্যাপক অর্থে নিকট প্রাচ্য মধ্যপ্রাচ্য-দূরপ্রাচ্য তথা প্রাচ্যের যেকোনো স্থান, ভাষা, সাহিত্য, ধর্ম ও সংস্কৃতি নিয়ে পশ্চিনা গবেষণা। বিশেষ অর্থে মুসলিন প্রাচ্য ও তার ভাষা-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য, ধর্মতত্ত্ব, সমাজ সভ্যতা নিয়ে পশ্চিমাদের বিদ্যাচর্চা।

প্রাচ্য বিষয়ে প্রাচ্যবিদদের রচনা ও গবেষণা ছিল বহুমাত্রিক। ইসলাম, মুসলিম ও প্রাচ্যের জ্ঞানবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তাদের বয়েছে অবাধ বিচরণ ও অগাধ অধিকার। ১০৮৫ খ্রিষ্টাব্দ টলেডো নগরী বিক্রিত হওয়ার পর এই নগরী স্পেনের ভূখণ্ডে রোনান চার্চের প্রধান প্রাতিষ্ঠানিক কেন্দ্ররূপে নির্বাচিত হয় (১০৮৮ খ্রিষ্টাব্দ)। তার কয়েক দশক পর এই নগরী বিশেষভাবে আর্চবিশপ ডন রেনুনদো (কার্যকাল ১১২৫-৫৯ খ্রিষ্টাব্দ)-এর গৃহীত উদ্যোগের ফলে আরবিভাষায় রচিত বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিক ভাষ্যসমূহ ল্যাতিন ভাষায় অনুবাদের একটি প্রধানকেন্দ্রে পরিণত হয়।

Cluny-এর বেনেডেক্টাইন মঠের অধ্যক্ষ Peter the Venerable (1094-1১৫৬ খ্রিষ্টাব্দ) ১১৪২ খ্রিষ্টাব্দে যখন স্পেন সফর করেন, তখন এই দুই ব্যক্তি কিছু সংখ্যক ইসলামি পাঠ্যগ্রন্থ আরবি হতে ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদের একটি প্রস্তাবনার বিষয়ে আলোচনা করেন এবং Peter the Venerable আরবি জ্যোতির্বিজ্ঞানশাস্ত্রের উপর কর্মরত Robert of Ketton (Chester) ও Hermann of Delmatia-কে পবিত্র কুরআনসহ পাঁচটি ইসলামি পাঠ্যগ্রন্থ ল্যাতিন ভাষায় অনুবাদের দায়িত্ব অর্পণ করেন। Robert ১১৪৩ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ পবিত্র কুরআনের অনুবাদ সমাপ্ত করতে সক্ষম হন।

Peter the Venerable স্বয়ং এই সকল অনুবাদকর্মের অতিরিক্ত দুটি ভাষ্য রচনা করেন, যার একটি হচ্ছে অধিকতর বর্ণনামূলক Summa totius haeresis Saracenorum এবং অপরটি হচ্ছে কূটতার্কিক প্রকৃতিসম্পন্ন Liber contra sectam sive hacresim saracenorum. এই সকল ভাষ্য সামগ্রিকভাবে Cluniac Corpus অথবা টলেডো সংগ্রহ নামে পরিচিতি লাভ করে।

রোল্ড লল (Raymond Lull) ইউরোপে প্রাচ্যগবেষণার পথিকৃৎরূপে বিবেচিত হয়ে আসছেন। শান্তিপূর্ণ আলোচনা অনুষ্ঠান ও যুক্তিসম্মত বিতর্কের মাধ্যমে মুসলিম জনগোষ্ঠীর নিকট খ্রিষ্টীয় সত্য উপস্থাপনের মানসে তিনি মের্জোকা দ্বীপের মিরামার নামক স্থানে ভবিষ্যতের খ্রিষ্টান মিশনারিগোষ্ঠীর জন্য একটি আরবি বিদ্যায়তন প্রতিষ্ঠিত করেন, যা ১২৭৬ হতে ১২৯৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত চালু ছিল। তার সুপারিশ অনুসারে ১৩১১ সালে the Council of Vienna সে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তার মাধ্যমে আরবিভাষার অধ্যয়ন অধিকতর নিয়মিত পর্যায়ে একটি প্রতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে৷ উক্ত সিদ্ধান্তে গৃহীত হয়— পাঁচটি নির্বাচিত ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয় (বোন, বোলোগনা, প্যারিস, অক্সফোর্ড, স্যালামানকা)-এর প্রতিটিতে প্রাচ্যভাষা শিক্ষাদানের জন্য দুজন করে পণ্ডিত নিযুক্ত করা হবে।

সিসিলিতে বহু যুগ ধরে আরবীয় কালবি শাসকবংশ ক্ষমতাসীন ছিল (১০২ ১০১১ খ্রিষ্টাব্দ)। প্রথম রজার (মৃত্যু ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দ) কর্তৃক বিজিত হওয়ার পর তা মুসলিমদের সংস্পর্শে আসার একটি মিলনক্ষেত্রে পরিণত হয়। তার পুত্র দ্বিতীয় রজার (শাসনকাল ১১৩০-৫৪ খ্রিষ্টাব্দ) এবং দ্বিতীয় পৌত্র Hohenstaufen-ভর ফ্রেডারিক (রাজত্বকাল ১২১৫-৫০ খ্রিষ্টাব্দ) এবং পরবর্তীকালে Manfred ও Charles of Anjou কেবল আরবি-ল্যাতিন ভাষায় অনুবাদকর্মের জন্য অনুবাদক নিযুক্ত করেননি, একইসঙ্গে তারা স্বয়ং আরব-মুসলিমপ্রথা ও আচার-আচরণ বিষয়ে Read More

Buy Hardcover From Wafilife - No1 Islamic Book Shop In Bangladesh

🤚প্রাচ্যবাদ ও ইসলাম - মুসা আল হাফিজ বইটি PDF Download Free চাহিয়া দয়াকরে লেখকদের নিরুৎসাহিত করিবেন না প্লিজ। এটি একটি সম্পূর্ণ নতুন বই তাই বইটি wafilife থেকে এখনি সংগ্রহ করুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ