বই পুরুষনামা লেখিকা ফারহানা হোসেন | Purushnama By Farhana Hosen

বইঃ পুরুষনামা
লেখিকাঃ ফারহানা হোসেন
ধরনঃ সামাজিক উপন্যাস
প্রচ্ছদঃ শামীম আরেফীন
প্রকাশকঃ মাহদী আনাম
প্রকাশনঃ ঘাসফুল
অনলাইন পরিবেশকঃ রকমারি.কম
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৭৭
মুদ্রিত মূল্যঃ ২০০

ছবি : বই পুরুষনামা

Review Credit 💕 Shahanaj Riya  

পুরুষনামা

পুরুষ শব্দে রূঢ়তা আছে, আছে প্রেম, আছে দীনতা, আছে চিরাচরিত এক শাসকের ছবি। তবু পরিপূর্ণতা পেতে এ শব্দের প্রতিটি ধাপে নারী জড়িয়ে যায়। হয় পরিপূর্ণ, হয় নির্যাতিত, হয় স্নেহধন্য, হয় ছন্নছাড়া।

শুরুর কথা

উপন্যাস প্রেম আমরা স্বভাবতই উপন্যাসের নামের ব্যাপারে খুব আগ্রহ নিয়ে থাকি। কেন লেখক/লেখিকারা উপন্যাসের এই নাম দিলেন বা তাদের নামের সাথে উপন্যাস এর মিল খুজে বেড়াই। অবাক করার বিষয় হচ্ছে সিংহভাগ উপন্যাসের নামের সাথে এর প্লটের কোন মিল আমরা খুজে পাইনা! হয়ত লেখকদের কাছে সেটাই রহস্য। "পুরুষনামা" নাম টা দেখেই আমাদের ধারণা জন্মাবে এটি পুরুষদের নিয়ে লেখা কিছু অথবা সাধারণ কোন প্রেম! কিন্তু নয়!
পুরুষনামা এই সমাজের একটি বাস্তব সত্যের কথা বলে। কষ্টের কথা বলে৷ বৃদ্ধের আশ্রম সংক্ষেপে "বৃদ্ধাশ্রম"। সমাজের এই দিকটাকে লেখিকা খুব অল্প কথায় বাস্তব এক শিক্ষা উপহার দিতে চেয়েছেন!

বইয়ের কথা

কুটির যা সূর্যের আলো নামটি সংস্থার পরিচালকের স্ত্রীর দেওয়া, ওনার নাম সাবেরী আলম। ৫জন বৃদ্ধা মায়ের জীবন বৃত্তান্ত তুলে ধরা হয়েছে।যারা হচ্ছেন শারমিন যিনি দোতলার এক ঘরে থাকেন, সেলিনা যিনি নিচের কোনার ঘরে থাকেন, অপরাজিতা যিনি থাকেন পশ্চিম দিকের কোনার ঘরে, মাজেদা যিনি বেশি আলো আসা ঘরে থাকেন তার বাতের ব্যাথার কারণে আর সবশেষে তারানা বেগম যিনি থাকেন একতলায়। এছাড়াও আছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্শ্ব চরিত্র।যাদের মধ্যে ঝাড়ুদারনি রিতারানী অন্যতম। গল্পের পাঁচ জন মূল চরিত্র যাদের বৃদ্ধাশ্রমে আসার কারণ ও প্রত্যেকের জীবনের কথা নিয়েই পুরুষনামা। পুরুষদের বৈশিষ্ট্য গুলো সূক্ষ্ম ভাবে তুলে ধরতে লেখিকা সফল হয়েছেন। প্রতিটা শব্দ ই যেন প্রকাশ করে আমাদের মমতা,মায়াহীন সমাজকে! মানুষের জীবনে ঘটনাচক্রের কঠিন মুহূর্ত গুলো যেন চোখে ভেসে ওঠে লেখনী তে৷কুটিরে তারা কীভাবে আসলো, তাদের জীবন শুরু করলো এবং এর শেষ পরিণতি জানতে হলে অবশ্যই বইয়ের পাতায় খুজতে হবে!

তারানা বেগম

যার করুণ জীবনী আমার মনে বিশেষভাবে দাগ কেটে গিয়েছে। সিড়ির পাশের ঘরটায় তারানা বেগম থাকে। সে ছিলো অবিবাহিত। আপন মানুষদের দ্বারা প্রচন্ড রকম ভাবে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে কষ্ট পেয়ে সেও সবশেষে আশ্রয় নিয়েছিলো বৃদ্ধাশ্রমে। সে নিজের জীবনে চরম ভাবে ঠকেছিলো এক বিশ্বাস ঘাতকের কাছে তার ভালোবাসা বিলিয়ে দেওয়ার জন্য। মৃত্যুকেই সঙ্গী করে নিতে চেয়েছিলো কিন্তু আশ্রমের মানুষগুলোর কাছে একসময় সে নিজের সুখ খুজে নিয়েছিলো।

আমার কথা

উপন্যাসটি রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্পের মতই "শেষ হয়েও হইলো না শেষ " যেন আরেকটু জানতে ইচ্ছে করে! মনে হয় এখানেই শেষ নয়৷ তাই এটিকে আমি স্বার্থক ছোট গল্পও বলব!

প্রিয় কিছু লাইন

যে লাইনগুলো আমি মুগ্ধতা নিয়ে বারবার পড়েছি।
"হাফিজ শারমিন কে হাসতে হাসতে বলত এতো বড় নাম ধরে ডাকতে পারবো না।তোমাকে আমি মন বলে ডাকবো ঠিক আছে। শারমিনের ঠিক না থাকলেও পিছিয়ে পরার ছেলে নয় সে। বেণীতে হালকা টান দিয়ে বলতো মন মানে জানো?
মন হচ্ছে আকাশের মতো একটা জায়গা যেখানে মেঘ করে, রোদ উঠে, আবার বৃষ্টি হয়। তোমার মুখটা ঠিক অমন। এই ভালো, এই খারাপ, এই রাগ,এই খুশি, এই অভিমান, এই ভালোবাসা। কী যে মধুর ছিলো সেসব দিন! ভেবেই চোখ ভিজে উঠল শারমিনের।

প্রিয় উক্তি

~পুরুষ চিন্তাক্ষেত্রে বাবা, স্বামী বা প্রেমিক বা সন্তান সবক্ষেত্রে বিভিন্ন। বাবা হিসেবে কন্যার জন্য যতটা ছাড়,স্বামী, হিসাবে ততটাই পুরুষতান্ত্রিক, সীমাবদ্ধতা, প্রেমিক হিসেবে অসম্ভব হতাশ আর সন্তান হিসেবে অপ্রাপ্তির পাহাড়।


~শরীর আর মন যখন অন্যের দখলে চলে যায়, মানুষ উড়ে গেলে মায়াটা ফেলে যায়


~একসময় সে জেনেছে অপেক্ষার মৃত্যু হয়েছে। তবু নিশুতি রাতে বারান্দায় বসে একা একা সেই সময়গুলো মেলাবার কম চেষ্টা করেনি সে, মেলেনি কিছুই শূন্যতা ছাড়া।

বই নিয়ে ভালো-মন্দ কিছু দিক

উপন্যাসের প্লটটা বেশ ভালো ছিলো। কিন্তু কিছু জায়গায় টাইপিং মিস্টেক চোখে পরেছে।
অতীত আর বর্তমান এর ব্যাপার গুলো আরেকটু গোছালো হওয়া প্রয়োজন ছিলো। এই কয়েকটা দিক বাদ দিয়ে বিবেচনা করলে দেখা যায় সব দিক থেকে বইটি বেস্ট ছিলো।


💕ব্যাক্তিগত রেটিংঃ ৮/১০
(ভুলগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই)

পুরুষনামা বই রিভিউ ২

রিভিউ লেখকঃ রিয়াজুল রিফাত 
বই : পুরুষনামা
লেখিকা : ফারহানা হোসেন 
প্রকাশক : মাহ্দী আনাম
প্রকাশকাল : অমর একুশে বইমেলা ২০২০
জনরাঃ সামাজিক উপন্যাস 
মুদ্রিত মূল্য : ২০০৳
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৭৭

কাহিনী সংক্ষেপনঃ
উপন্যাসের শুরু টা হয়েছে শারমিন নামক এক মহিলার বৃদ্ধাশ্রমে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে। সে তার অতীত মনে করতে থাকে। টাকা-পয়সার অভাব ছিলো না তাদের। তার বাবা তাকে জেদী মেয়ে হতে বললেও তার স্ত্রীর ক্ষেত্রে ছিলেন এর ঘোর বিরোধী। এক জীবনে সব পেয়েও শেষ কালে আসতে হলো বৃদ্ধাশ্রমে।

পরবর্তী গল্পটা সেলিনার। মা ও ছোট ভাই মারা যাওয়ায় কারণে  সে ছোটবেলা থেকেই অবহেলিত ছিলো। তার জীবনের উপর এক ঝড় বয়ে যায়। 
তারপর আসে শিরীন, যার স্বামী জীবনসঙ্গী হিসেবে সবচেয়ে বাজে হলেও বাবা হিসেবে ছিলেন সবার সেরা।

অপরাজিতা প্রায়ই তার মাকে দেখতো যদিও তার মা মারা গেছেন বছর কয়েক আগে। তাই তিনিও বাড়ি ছেড়ে বৃদ্ধাশ্রমে চলে আসেন।

তারপরে আসে তারানা বেগম। পুরুষনামা বইয়ের এই অংশটুকু আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লেগেছে। মনে হয়েছে এই গল্পটা যেন চিরচেনা। এখানে সে তার পরিবার এবং ভালোবাসার মানুষ টার কাছে অসহায়। এই জীবনকে ঘৃণা করে সে-ও চলে আসে বৃদ্ধাশ্রমে।যে জীবনকে সে ঘৃণা করতে শুরু করে, সেই জীবনের শেষ পরিণতি কি হয়? এত গুলো মানুষ কি কারণে বৃদ্ধাশ্রমে এসেছে তা জানতে হলে ও তাদের জীবনে পুরুষরা কি ভূমিকা পালন করতে এসেছিলো তা জানতে হলে পুরুরষনামা বইটা পড়তে হবে। 

ব্যক্তিগত মতামতঃ উপন্যাসের প্লট টা ভালো লেগেছে। পুরুষদের বৈশিষ্ট্য গুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে তুলে ধরতে লেখিকা সফল হয়েছেন।বাচনভঙ্গি বেশ সাবলীল ছিলো। সামাজিক উপন্যাস এর এই বইটা ফারহানা হোসেন এর একটা মাস্টার পিস বই। 

প্রিয় লাইনঃ অসম্ভব বুদ্ধিমান মানুষের আশে পাশে থাকা খুব কষ্টের।

ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৯/১০

(এটা আমার প্রথম রিভিউ। আশা করি ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। পারলে ভুল গুলো ধরিয়ে দিয়ে রেটিং দিয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ)

বই পুরুষনামা PDF short link 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ