রামাদানে লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হওয়ার ১০টি ভূল কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো
অনেকেই শত চেষ্টার পরেও রামাদান মাসে প্রোডাক্টিভ থাকতে পারেন না। কিন্তু কেন? এখানে দশটি সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করা হল। রামাদান মাসে প্রোডাক্টিভ থাকতে চাইলে ব্যর্থতার সম্ভাব্য কারণগুলোও আগে থেকে জেনে নেয়া উচিত, যাতে একই ভুলের পুনরাবৃত্তি আমাদেরকে আর করতে না হয়।
১। অবাস্তব পরিকল্পনা
রামাদানে আমরা অনেক সময় নিজেদের সামর্থ্যের বাইরে পরিকল্পনা নিয়ে থাকি। এটা ঠিক যে, আমলের ব্যাপারে উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণ খারাপ কিছু না। বরং ঈমান-আমলের উত্তরোত্তর উন্নতির জন্য উচ্চাকাঙ্ক্ষা পোষণের পাশাপাশি প্রতিনয়ত চেষ্টা করে যেতে হবে। তবে আমাদের নিজেদের সামর্থ্যের ব্যাপারে বাস্তবসম্মত ধারণা রাখা অত্যন্ত জরুরী। এমন কোন পরিকল্পনা নেয়া উচিত নয় যা আমাদের মানসিক চাপ সৃষ্টি করবে। অবাস্তব লক্ষ্য নির্ধারণের পর যদি লক্ষ্য পূরণের পথে সামান্য পরিমাণও ঘাটতির সৃষ্টি হয় তবে আশাহত হয়ে যাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। তখন মাঝপথে এসে পুনঃপরিকল্পনা নেয়ার বদলে মনে হবেঃ ‘এবার আর হবে না! থাক! দেখা যাবে পরের বছর।'
২। রাধাদানে অনভ্যস্ততা
রামাদানের প্রথম কয়েকদিন আমাদের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। রোজকার অভ্যাস না থাকা সত্ত্বেও আমরা প্রতিদিন ফজরের আগে ঘুম থেকে উঠি। অন্য সময় যেখানে কালে-ভদ্রে সুন্নাত আদায় করি সেখানে রামাদানে ২০ রাকাত তারাবিহ আদায় করি। রামাদান ছাড়া দিনের পর দিন কুরআন না ধরলেও রামাদানে প্রতিদিন ১০-২০ পৃষ্ঠা করে তেলাওয়াত করা শুরু করি। প্রথম কয়েকদিন জোশের বশে করা হয়ে গেলেও আস্তে আস্তে এভাবে চালিয়ে যাওয়া কঠিন লাগতে শুরু করে, গতি হারিয়ে ফেলি আমরা। তারপর আবার ফিরে যাই নিজেদের চিরাচরিত অভ্যাসে।
৩| দৃঢ়তার অভাব
রামাদানের মাঝামাঝি পৌঁছার পরই আমাদের সংকল্পের টালমাটাল দশা দৃশ্যমান হতে শুরু করে। ফজরের পর আর ১০ পৃষ্ঠা করে তেলাওয়াত করা হয়ে ওঠে না; তারাবিহ পড়তে আলসেমি লাগতে শুরু করে; তাহাজ্জুদের পরিবর্তে কোনমতে ফজরের কিছু আগে উঠে সেহরিটা করা হয়। অতঃপর যখন আমাদের সবচেয়ে বেশি দৃঢ়তা প্রদর্শন জরুরী, তখনই আমরা ভেঙে পড়ি।
৪। জ্ঞানের অপর্যাপ্ততা
রামদানকে কাজে লাগানোর ব্যবহারিক জ্ঞানের অভাবও আমাদের ব্যর্থতার আরো একটি মূল কারণ। রামাদানের গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা না থাকা এবং এ মহিমান্বিত মাসকে সফল করার জন্য প্রয়োজনীয় মানসিক ও শারীরিক পূর্বপ্রস্তুতির অভাবে আমরা একটা সাফল্যমণ্ডিত রামাদান উপভোগ করতে ব্যর্থ হই।
৫। সামাজিক সমর্থনের অভাব
রামাদান অনেকটাই আমাদের ব্যক্তিগত লড়াই। কেউই পারতঃপক্ষে নিজের আত্মিক পরিবর্তন কিংবা রামাদানে করা আমলগুলো শেয়ার করতে চায় না। তাই তখন নিজেকে একা লড়তে হয়, নিজেই নিজের সাথে প্রতিযোগিতা চালিয়ে যেতে হয়।
৬। সময় ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতা
রামাদানের রুটিন অন্য সময় থেকে একটু আলাদা হওয়াই স্বাভাবিক। তাই কোন সময় কোন কাজটি করা হবে তা পূর্বেই চিন্তাভাবনা করে ঠিক করে রাখতে আমরা অনেকেই ব্যর্থ হই, যার ফলে আমাদের রামাদান অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
৭। অনিয়মিত ঘুম ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
রামাদানে ব্যর্থতার অপর একটি কারণ হচ্ছে ঘুম এবং খাবার দাবার গ্রহণেঅনিয়ম। এর ফলে আমাদের শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং আমরা পরিকল্পনামত কাজ করতে ব্যর্থ হই।
৮। ফিটনেসের অভাব
রামাদানে পরিকল্পনা মাফিক কাজ করতে হলে ফিটনেস ঠিক রাখার গুরুত্বও নিতান্ত কম নয়।
৯। আত্মিক সংযম হারিয়ে ফেলা
রামাদানের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে তাকওয়া অর্জন। আমরা ভুলে যাই স্বীয় নফসকে বাগে আনার এটাই মোক্ষম সময়। আর তাই মাঝপথেই আমরা গন্তব্যচ্যুত হয়ে পড়ি, ব্যর্থতায় ঢেকে যায় আরো একটি রামাদান।
১০। প্রশিক্ষণের অভাব
রামাদানের জন্য কেবল পরিকল্পনা গ্রহণই যথেষ্ট নয়, বরং প্রশিক্ষণ গ্রহণ জরুরী। রামাদানে নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে সাফল্য ছিনিয়ে নেয়াই বিশ্বাসীদের মূল লক্ষ্য। তাই এর জন্য সারা বছর ধরে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নেয়া উচিত।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....