লেখক : কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক
প্রকাশনী : মাকতাবাতুল ফুরকান
বিষয় : সাহাবীদের জীবনী
কভার : হার্ড কভার
ভাষা : বাংলা
এই গ্রন্থের পাতায় পাতায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অতুলনীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী সাহাবায়ে কেরামের যে দৃষ্টিনন্দন মহত্ত্ব ফুটে উঠেছে, তা কাল্পনিক কিছু নয়―যদওি তা অলৌকিক প্রকৃতরি জন্য কাল্পনিক মনে হয়! মূলত সাহাবীদের ব্যক্তত্বি ও জীবন এমনই আশ্চর্যজনক ছিল। তারা সমুন্নত ও মহান র্মযাদায় অতি উচ্চে আরোহণ করেছিলেন―এটি লেখক কিংবা র্বণনাকারীর কোনো কারিশমা নয়, বরং তাদের আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও আত্মশুদ্ধির চরম পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার পরম আকাঙ্ক্ষা ও নিরলস পরিশ্রমের জন্যই তা সম্ভব হয়ছে। গ্রন্থটি কিছুতেই তাদের এই অসাধারণ ও উচ্চমার্গের সচ্চরিত্রকে পাঠকদের নিকট যথাযথভাবে উপস্থাপনের দাবি করে না; বরং এখানে সাদাসধিভোবে তাদের চিরায়ত জীবনীকেই তুলে ধরা হয়েছে।ইতহিাস সাক্ষী, সাহাবীদরে মতো মানুষ এ পৃথিবীতে কখনো জন্ম নেয়নি―যারা একটি ন্যায়পরায়ণ ও সমুচ্চ ইসলামী আর্দশকে লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করেছিলেন এবং এজন্য আত্মোৎর্সগ, অসাধারণ উদ্যম ও নির্ভয়ে নিজেদের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছিলেন
যায়েদ ইবনে সাবিত রা.
কুরআনের সংকলক
যদি আপনি পবিত্র কুরআন হাতে নিয়ে তিলাওয়াত শুরু করেন, আর প্রচণ্ড আগ্রহভরে ও নিখুঁতভাবে এর চিরসবুজ বিস্তৃত সৌন্দর্যের চারণভূমিতে বিচরণ করতে থাকেন—সূরার পর সূরা, আয়াতের পর আয়াত, তাহলে মনে রাখবেন, এই অপূর্ব ঐশীগ্রন্থের পরিপূর্ণ ও সার্থক সংকলনে যেসব মহান ব্যক্তিগণ সকল কৃতজ্ঞতা ও মূল্যায়ন পাওয়ার অধিকারী, তাদের মধ্যে একজন বরণীয় ব্যক্তি হলেন যায়েদ ইবনে সাবিত রাযিয়াল্লাহু আনহু।
পবিত্র কুরআনকে একটি গ্রন্থরূপে সংকলনের যে ইতিহাস, এর অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছেন এই মহান সাহাবী; তাকে ছাড়া এই ইতিহাস পাঠ অসম্ভব।
কুরআন সংকলন, সংরক্ষণ ও বিন্যাসে যেসব মহান ও বরকতময় সাহাবীদের স্মরণ অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে, তাদের গৌরব ও সম্মানের ফুলের পাপড়ি বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকলেও যায়েদ ইবনে সাবিত রাযিয়াল্লাহু আনহুর একক অবদান সৌরভ ও মহত্ত্বের বিবেচনায় শ্রেষ্ঠ ও অনস্বীকার্য।
***
তিনি ছিলেন মদীনার একজন সম্মানিত আনসার সাহাবী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হিজরত করে মদীনায় উপনীত হন, তখন যায়েদের বয়স ছিল মাত্র এগারো বছর। এই বালক তার গোত্রের লোকজনের সঙ্গেই ইসলামগ্রহণ করেন এবং তার ব্যাপারে আল্লাহর নিকট রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিশেষ দুআর প্রেক্ষিতে তিনি বরকতময় হয়ে ওঠেন।
তার পিতা তাকে বদর-যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য সঙ্গে নেন, কিন্তু বয়সের স্বল্পতা ও ক্ষীণকায় শরীরের কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে ফেরত পাঠান।
উহুদ-যুদ্ধের সময় ঘনিয়ে এলে যায়েদ রাযিয়াল্লাহু আনহু তার সমবয়সীদের একটি দলের সঙ্গে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট গমন করেন, যুদ্ধে শরীক করার জন্য রাসূলের নিকট সবিনয় অনুরোধ করেন। তার আত্মীয়-স্বজনরা ছিল আরও বেশি আগ্রহী, তারাও রাসূলের নিকট তার ব্যাপারে অনুনয়-বিনয় করে সুপারিশ করছেন এবং অনুমতির আশা পোষণ করছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্নেহমাখা দৃষ্টিতে এই বালক ঘোড়সাওয়ারের দিকে তাকালেন; মনে হলো—এই যুদ্ধেও তাকে শরীক করতে না পেরে দুঃখ প্রকাশ করছেন। যা-হোক, তাদের মধ্য থেকে একজন, রাফি ইবনে খাদীজ, রাসূলের নিকট অগ্রসর হয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তার বর্শার চমক দেখাল। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলল, 'আপনি তো দেখতেই পাচ্ছেন, আমি একজন দক্ষ বর্শা নিক্ষেপকারী। আমি এটি দিয়ে খুব ভালোভাবেই লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারি। দয়া করে আমাকে মুজাহিদদের কাতারে অন্তর্ভুক্ত করেন!' রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই উদীয়মান উদ্যমী ও সাহসী যুবককে উজ্জ্বল হাসিতে স্বাগত জানালেন এবং তাকে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার অনুমতি প্রদান করলেন। তখন তার সমবয়সীদের ধমনীতে রক্ত যেন ফিনকি দিয়ে উঠল।
তার দেখাদেখি দ্বিতীয় আরেকজন, সামুরা ইবনে জুন্দুব, এগিয়ে এলো। সে এসে তার ছোট, কিন্তু পেশিবহুল শক্তিশালী হাত দুটি প্রদর্শন করল। এতে তার পরিবারের লোকেরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলল, 'সামুরা রাফীকে পরাজিত করতে সক্ষম।' রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্মিত হেসে তাকেও স্বাগত জানালেন এবং যুদ্ধে শরীক হওয়ার অনুমতি দিলেন।
সামুরা এবং রাফি—উভয়ের বয়সই পনেরো ছাড়িয়েছে। তাদের শারীরিক গঠনও পৌরুষের আকৃতি লাভ করেছে। এখনো এই বালকদলের ছয়জনের ভাগ্য নির্ধারিত হয়নি; যাদের মধ্যে যায়েদ ইবনে সাবিত এবং
আব্দুল্লাহ ইবনে উমরও রয়েছেন। তারা নিজেদের শক্তি-সামর্থ্য প্রমাণ করতে সর্বস্ব উজাড় করে এগিয়ে গেল; প্রথমধাপে সবিনয় অনুরোধ করল; দ্বিতীয়ধাপে কান্নাকাটি করে আকুতি জানাল এবং তৃতীয়ধাপে তারা তাদের ক্ষুদ্র শরীরের শক্তি প্রদর্শন করার চেষ্টা করল। যা হোক, তারা আসলে বয়সে খুবই ছোট এবং তাদের শারীরিক গঠনও যুদ্ধের জন্য যথাযথ নয়; এজন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের ‘পরবর্তী যুদ্ধে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হবে’ বলে প্রতিশ্রুতি দিলেন।
এভাবে যায়েদ ইবনে সাবিত রাযিয়াল্লাহু আনহু আল্লাহর পথে সক্রিয় মুজাহিদ হিসেবে পঞ্চম হিজরীতে খন্দকের যুদ্ধে প্রথম অংশগ্রহণ করার সুযোগ লাভ করেন।
একজন বিশ্বস্ত ও ঈমানদার হিসেবে খুব দ্রুত এবং বিস্ময়করভাবে তার ব্যক্তিসত্তা গড়ে ওঠে। তিনি কেবল পারদর্শী যোদ্ধা হিসেবেই বেড়ে ওঠেননি, বরং তার মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে বুদ্ধিমত্তা ও প্রখর মেধার উন্মেষও ঘটতে থাকে। তিনি কুরআনের ওহীর ধারাবাহিকতা অনুসরণ করতেন, মুখস্থ করতেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশে তা লিপিবদ্ধ করতেন; এভাবে তিনি নিজেকে জ্ঞান ও প্রজ্ঞার সম্ভারে সাজিয়ে তুললেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বহির্বিশ্বে ইসলাম প্রচারের সিদ্ধান্ত নিলেন এবং আশেপাশের রাজ্যের রাজা-বাদশার নিকট তার বার্তা পাঠাতে শুরু করেন, তখন তিনি যায়েদ রাযিয়াল্লাহু আনহুকে সেসব দেশের কয়েকটি ভাষা শেখার দায়িত্ব দেন। যায়েদ রাযিয়াল্লাহু আনহু খুব দ্রুতই সেসব ভাষা শিখে ফেলেন।
এভাবে যায়েদ রাযিয়াল্লাহু আনহুর ব্যক্তিত্ব আরও উজ্জ্বলতর হতে থাকে এবং নবগঠিত মুসলিম সমাজে এক সম্মানজনক আসনে উন্নীত হন। সহসাই অন্যান্য মুসলিমদের সম্মান ও গৌরবের কারণ হয়ে ওঠেন।
ইমাম শাবী রহ. বর্ণনা করেন, একদিন যায়েদ রাযিয়াল্লাহু আনহু ঘোড়ায় চড়তে যাবেন, এমন সময় ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু তার জিনটি ধরে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেন। যায়েদ রাযিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘আপনি হচ্ছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে
আরো পড়তে অথবা দেখতে অনুগ্রহ করে Hardcopy ক্রয় করুন। we Respect Every AuthorHardwork-boipaw team।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....