Title আমি বীরাঙ্গনা বলছি বইটি পিডিএফ ডাউনলোড pdf
Author ড. নীলিমা ইব্রাহিম বই pdf
Publisher জাগৃতি প্রকাশনীর বই pdf
Quality পিডিএফ ডাউনলোড সম্পূর্ণ ফ্রিতে 💕
ISBN 9789848416082
Edition 6th Print, 2013
Number of Pages 160
Country বাংলাদেশ
Language বাংলা
ড. নিলীমা ইব্রাহিম এর লেখা বই – আমি বীরাঙ্গনা বলছি – এই বইটি নিয়ে আজ আমরা আলোচনা করবো। আমি বীরাঙ্গনা বলছি বইটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক একটি বই। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের হয়েছে ৫০ বছর! এতোগুলো বছর পরেও যুদ্ধে অবদান রাখা ও আত্মত্যাগ করা অনেকের গল্প আমরা জানিনা। আমি বীরাঙ্গনা বলছি বইটি pdf download করুন সম্পূর্ণ ফ্রিতে। এছাড়াও আমি বীরাঙ্গনা বলছি বইটি পিডিএফ ডাউনলোড ছাড়াও আমি বীরাঙ্গনা বলছি বইটির সম্পূর্ণ রিভিউ পড়ুন ⤵️
মুক্তিযুদ্ধের ভিড়ে, যুদ্ধের ভয়াবহতা ও পাশবিকতার ভিড়ে হয়তো কোথাও কোথাও আড়াল হয়ে যায় এই মানুষ গুলোর কথা; তাদের অবদান এবং তোদের আত্মত্যাগ এবং তাদের ওপর হয়ে যাওয়া নির্যাতন ও নির্যাতনের গল্প গুলো থেকে যায় সবার অজানা! এই অজানা গোষ্টির প্রতিনিধিত্ব করে আমাদের বীরাঙ্গনারা।
আমাদের বীরাঙ্গনাদের নিয়ে কথা বলেছেন ড. নিলীমা ইব্রাহিম। “আমি বীরাঙ্গনা বলছি ” ড. নিলীমা ইুব্রাহিমের এই উপন্যাস টি পড়ে আমরা জানতে পারি যে; মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে অবদানটা শুধুমাত্র আমাদের মুক্তিযোদ্ধা বা রাজনীতিবিদ যারা যুদ্ধের ছক কষেছেন তাদের ছিলোনা।
আমাদের মুক্তি যুদ্ধে অবদান ছিলো এদেশের অগণিত মা-বোনদের। যারা নিজেদের সম্ভ্রম ও ইজ্জত হারিয়েছেন পাকিস্তানি ঘাতক বাহীনির হাতে। একটা বাহিনী কি পরিমানে নির্মম ও পাশবিক হতে পারে, সেটা আমরা জানতে পারি “আমি বীরাঙ্গনা বলছি” এই বইটি পড়ে। এই বইটিতে ড. নিলীমা ইব্রাহিম, যুদ্ধ চলাকালীন সময় এমন কিছু মানুষকে নিয়ে কথা বলেছেন। যাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো পাক হানাদার বাহিনিদের ক্যাম্পে।
সেই সময় তাদের ওপর যে পাশবিত ও অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে; সেটা বিশ্বের ইতিহাসে সব থেকে বর্বরোচিত নির্যাতন গুলোর একটি এবং সব জায়গায় বলা হয় মৃত্যু হয়তো সবচেয়ে কঠিন পরিণতি; কিন্তু এই মানুষগুলোকে মারা যাওয়ারও কোনো সুযোগ দেওয়া হতো না।
তাদের ওপর নির্যাতন করো হতো দিনের পর দিন, রাতের পরে রাত ধর্ষন করা হতো এবং তাদের মধ্যে কেউ যদি সন্তান সম্ভাবা হয়ে যায়; তাহলে তাকে নির্মম ভাবে মেরে ফেলা হতো এবং তাদের মধ্যে সেই সময় যারা ছিলেন; তাদের মধ্যে অনেকেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন এবং যারা পরবর্তীতে ফেরৎ এসেছেন, তাদের অবস্থা ছিলো খুবই ভয়াবহ! এরকম কয়েক জন নারীকে নিয়ে লেখা হয় উপন্যাস “আমি বীরাঙ্গনা বলছি”।
এই উপন্যাসের মাধ্যমে ড. নীলিমা ইব্রাহিম সেই কয়েকজন নারীর মাধ্যমে আমাদের সমাজে বড় নির্যাতিত অংশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
আমি বীরাঙ্গনা বলছি – এই বই তে আমরা বিভিন্ন চরিত্র দেখব- মেহেরজান, মিনা, ফাতেমা এই চরিত্রগুলো; যে শুধু তাদের নির্যাতন ও নীগৃহিত হওয়ার ইতিহাস মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কিংবা পাক হানাদার বাহিনীর হাতে হয়েছে বিষয়টি এমন নয়।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে, আমাদের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরেও এই মানুষগুলো নিগৃহীত হয়েছে একই ভাবে।
পার্থক্য তখন নির্যাতিত হয়েছে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে এবং এদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে তারা লাঞ্ছিত হয়েছে; আমাদের দেশের নিজস্ব মানুষের দ্বারা এই সমাজ; এই পুরুষ শাষিত সমাজ এবং সমাজের মানসিকতা তাদেরকে মেনে নেয়নি।
তাদেরকে প্রতিটি ধাপে ধাপে অপমান করা হয়েছে। তাদের শুনতে হয়েছে নোংরা কথা এবং শেষ পর্যন্ত অনেকেই এই কথাগুলো ছাপিয়ে হয়েছেন সাবলম্বী।
তাদের সাবলম্বী হওয়ার গল্প আমরা পাব –
“আমি বীরাঙ্গনা বলছি” এই উপন্যাসটিতে। সমাজের সব দিক থাকে, একই কাতারে সবাইকে ফেলা যায় না।
সে রকম “আমি বীরাঙ্গনা বলছি” উপন্যাসে ড. নীলিমা ইব্রাহিম সবাইকে এক কাতারে না ফেলে; কিছু এমন মানুষেকে দেখিয়েছেন যারা শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং পরম মমতায় এই নারীগুলোকে গ্রহণ করেছেন! সেই পুরুষদের উদাহরন হচ্ছেন- নিয়েলসন, শফিক এরা।
আমাদের সমাজে সব ধরণের মানুষ থাকে, কিন্তু; সবকিছুকে ছাপিয়ে চোখে পড়ে মোটা দাগের মানুষের যে আচারণ এবং সেই জায়গা থেকে বলতে গেলে; এখন পর্যন্ত হয়তো আমরা বীরাঙ্গনাদেরকে মেনে নেওয়ার যে মানসিকতা, সেই মানসিকতার খুব বেশি বিকাশ ঘটাতে পারিনি।
মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বা মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত অন্যকিছুর যে পরিমানে সমাদরে গ্রহণ করা হয়; বীরাঙ্গনাদেরকে নিয়ে সে পরিমানে কথা আমরাদের সমাজে এখন পর্যন্ত হয় না। তাদের সম্মান ও আত্মত্যাগকে আমরা ঠিক কতটুকু মূল্যায়ন করতে পেরেছি এটা খুবই ভাববার বিষয়।
“আমি বীরাঙ্গনা বলছি” বইয়ের ভুমিকাতে ড. নীলিমা ইব্রাহিম কিছু কথা বলেছেন, সেই কথার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য ছিলো; উগ্রধর্মান্ধতা বা আমাদের সমাজের হঠাৎ করে অতিরিক্ত রক্ষণশীল হয়ে যাওয়ার প্রবণতা, সেটা নিয়ে। এই ধর্মান্ধতা আমাদেরকে পশ্চাৎপদ করে তুলেছে। এই ধর্মান্ধতার কবলেই অনেক খানি আমাদের সমস্ত দিকের উন্নতির যে অগ্রযাত্রা; সেই পথে প্রধান একটা বাধা। এই ধর্মান্ধতার কবলে পড়েছে আমাদের সমাজের অনেক মানুষ।
আশা করা যায় ধর্মান্ধতার এই করাল গ্রাস থেকে বের হয়ে এসে; সবাইকে মেনে নিয়ে সুন্দর দেশ গড়ার একটি মানসিকতায় আমরা এগিয়ে যাব।
ড. নীলিমা ইব্রাহিমের “আমি বীরাঙ্গনা বলছি” বইটাকে শুধু গ্রন্থে না রেখে বীরাঙ্গনাদের প্রকৃত সম্মান এবং তাদের মূল্যায়নের মাধ্যমে এই মানুষ গুলোর যে অবদান, সেই অবদানকে স্বীকৃতি দেব।
বীরাঙ্গনা শব্দটির সাথে আমরা কম-বেশি সবাই পরিচিত। কিন্তু শব্দটি দিয়ে কি বুঝানাে হয় তা অনেকেই জানিনা। বীরাঙ্গনা শব্দের আভিধানিক অর্থ বীর নারী। রাষ্ট্র শুধু বীরদের মনে রাখে বীরাঙ্গনাদের নয়। বীরাঙ্গনাদের প্রতি রাষ্ট্রের আচরন দেখলে মনে হয় শ্রদ্ধা, শোক, সম্মান-ফুল এসব শুধু বীরশ্রেষ্ঠ, বীরউত্তম আর বীরবিক্রমদের জন্য। বীরাঙ্গনাদের সবসময় এসব থেকে দূরে রাখা হয়েছে। নয় মাসে প্রায় ৩০ লক্ষ বাঙালিকে হত্যা করা হয়েছিল। তার মধ্যে ২০% ছিল আমাদের মা, বােন অথবা বৌ। মানে নারী। তাদের অনেকের বয়স ছিল ১২ বছরের নিচে। ২০% হিসাবে প্রায় ছয় লক্ষ নারী যুদ্ধে শহীদ হয়, আর চার লক্ষ হয় চরম নির্যাতিত। আমার প্রশ্ন হচ্ছে এই দশ লাখ নারী কেন মুক্তিযােদ্ধার স্বীকৃতি পাবে না?
মুক্তিযুদ্ধের সময় অবদানর জন্য দেশ ৬৭৬ জন মুক্তিযােদ্ধাকে নানা উপাধিতে ভূষিত করা হয়। এর মধ্যে মাত্র দু'জন ছিলেন নারী। কুড়িগ্রামের তারামন বিবি তার বীরপ্রতীক উপাধি পাওয়ার খবর। জানতে পারেন ঘটনার ২৪ বছর পর। স্বাধীনতার জন্য বাংলাদেশের নারীরা ত্যাগ করেছেন তাঁদের সর্বস্ব। এই ত্যাগের জন্য তার কোন কিছুই চায়নি। এ ত্যাগ কতটা মহৎ তা লিখে বুঝানাে যাবেনা। শুধু মুক্তিযােদ্ধা দিয়ে কখনই একটি দেশ স্বাধীন করা যায় না, বীরাঙ্গনাদেরও লাগে স্বাধীনতার জন্য। ড, নীলিমা ইব্রাহিমের আমি বীরাঙ্গনা বলছি বইটি পড়ে আমি বুঝতে পেরেছি এই বইটি না পড়লে আমি। কখনই স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারতাম না। বইটি পড়ে জানতে পারলাম রাষ্ট্র এসব বীর নারীদের পরিচয় দিতে লজ্জা পায়। কিন্তু বীরাঙ্গনারা কখনােই নিজেদের বীরাঙ্গনা বলে পরিচয় দিতে দ্বিধাবােধ করেননি বরং দৃপ্তকণ্ঠে বলেছেন হ্যা আমি বীরাঙ্গনা।
তাদের প্রগ্ন্য সম্মান দিতে না পারার জন্য একজন বাংলাদেশী হিসেবে এ লজ্জা রাখার জায়গা কোথায় আমার? বইটির সত্য ইতিহাস, বীরাঙ্গনাদের নিজের মুখে বলা কথাগুলাে আমাকে কষ্ট দিয়েছে প্রতি পাতায় পাতায়। আমার কাছে আমি বীরাঙ্গনা। বলছি বইটিকে শুধু একটি বই মনে হয়নি। মনে হয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসর অংশ।এখনাে অনেক বীরাঙ্গনা এই দেশটার জন্য নীরবে চোখের পানি ফেলে। নতুন প্রজন্ম থেকে শুরু করে সবারই বইটি পড়া উচিত।
আমি বীরাঙ্গনা বলছি pdf বই রিভিউ ২
বইয়ের নামঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি
লেখিকাঃ নীলিমা ইব্রাহিম
প্রকাশনীঃ জাগৃতি
প্রকাশনী মূল্যঃ ৩৪০টাকা।
আমি বীরাঙ্গনা বলছি" বইটিতে কয়েকজন বীরাঙ্গনার উপর অত্যাচার আর স্বাধীনতা পরবর্তী অবিচারের সেই নির্মম বর্ণনা চিত্রায়ন হয়েছে। বইটিতে নীলিমা ইব্রাহিম যাদের কথা বলেছেন, তারা সবাই সমাজে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছিলেন অসীম সাহসিকতায় আর পরম ধৈর্য দিয়ে। কিন্তু এমন অনেক বীরাঙ্গনা আছেন যারা স্বীকৃতি পাননি। সমাজের অবিচার তাদের তিল তিল করে মেরেছে। তাদের দুঃখ। গাঁথা অজানাই থেকে গেল। এ বইটির মাধ্যমে যেটুকু জানলাম তাতেই মর্মে মর্মে আঘাত পেয়েছি। মানুষ হয়ে মনুষ্যত্বের যে অবমাননা তাই আমাকে সবচেয়ে কষ্ট দিচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন নিজেও অপরাধী।
বইটিতে লেখিকা বলার চেষ্টা করেছেন এই সমাজের হাতে গােনা কিছু মানুষ এইসব বীর নারীদের আজ সম্মান দিতে প্রস্তুত কিন্তু বেশিরভাগই পারবে না বীরাঙ্গনাদের মন থেকে যথার্থ সম্মান দিতে। লেখিকা প্রমাণস্বরূপ বলেছেন, "আজ যদি একটি মেয়ে ধর্ষিত হয় তবে সমাজ মেয়েটির দোষ খুঁজতে উঠে পড়ে লেগে যায়। যেন কোন দোষ থাকলেই মেয়েটিকে ধর্ষণ করাটা ন্যায্য। "আরও একটি ঘটনা বলি যেটা আমাকে খুব বেশি আঘাত দিয়েছে। বইটিতে দেখা যায় দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক একটি নাটক মঞ্জস্থ করা হয়। একটি মেয়েকে গ্রামের রাজাকারের সহায়তায় পাকিস্তানি হানাদাররা ধরে নিয়ে যায়। তারপর যুদ্ধ শেষ হলেও মেয়েটির জীবনের যুদ্ধ শেষ হয় না।
খুব দুঃখের সাথে জানাচ্ছি, নাটকটি মঞ্চস্থ করার সময় মেয়েটির দিকে যে ধরণের মন্তব্য ছুড়ে দেয়া হয়েছে।এমনইভাবে সেই বীরাঙ্গনাদের বেদনা বিধুর জীবনের কিছু প্রতিচ্ছবি লেখিকা তুলে এনেছেন তার এ বইটিতে। বইটি পড়ে নিজের বিবেককে আরেকটু জাগ্রত করতে পারলাম। সকলেরই এ বীরাঙ্গনাদের কষ্টে ভরা জীবনের কাহিনীগুলাে জানার্থে বইটি সংগ্রহ করে পড়া উচিত এবং তা একবার হলেও।
আমি বীরাঙ্গনা বলছি pdf বই রিভিউ ৩
আমি বীরাঙ্গনা বলছি.. এমন একটা বই নিয়ে যেটাকে অনেকেই হয়ত বিসিএসের বাংলার এমসিকিউ হিসেবে অন্য অনেক মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বইয়ের নামের মধ্যে শুধুমাত্র নাম কে ওয়াস্তে খেয়াল করে...পড়ার উপযােগী কোন বই হিসেবে নয়! বইটির নাম মেলা আগে দেখলেও সত্যি বলতে পড়ার সৌভাগ্য । এতদিন পরে এসে হয়েছে। কিছুটা দুর্ভাগ্যই বলতে হয়; সময়ের হিসাব খুটিয়ে খুটিয়ে রাখলেও এই ক্ষেত্রে বেশ দেরি করে ফেলেছি। আমি বীরাঙ্গনা বলছি পড়তে শুরু করেছিলাম স্বাদ পরিবর্তনের অংশ। হিসেবে কিন্তু পড়া শেষ করার পর এটা আমার পড়া বেস্ট বইগুলাের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। অনেকে ইতিমধ্যে হয়ত পড়েও ফেলেছেন. কিন্তু আমার ক্ষেত্রে এই অসাধারণ বইটা পড়া হলাে এতটা কলি। গিয়ে!
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসবে...এই ভিত্তিক গল্প অনেকভাবে আমরা ফিকশনের মাধ্যমে জেনেছি, দেখেছি... তাহলে অন্য কোন বই না, এটাই এত মনে ধরলাে কেন? এই বই মনে ধরার অন্যতম কারণ, ড. নীলিমা ইব্রাহিমের বইয়ের চরিত্রগুলাে বাস্তব, জলজ্যান্ত...সাতজন বীরাঙ্গনার হাহাকার, আক্ষেপ এবং অভিমান আছে এতে। এবার প্রশ্ন আসবে সব বাদ দিয়ে ড. নীলিমা ইব্রাহিম এই বীরাঙ্গনা নিয়েই লিখেছিলেন কেন! বইয়ের ভূমিকাতে উল্লেখ করেছেন তিনি, ধানমন্ডির নারী পুনর্বাসন কেন্দ্রে। বীরাঙ্গনাদের যুদ্ধ পরবর্তীকালীন অবস্থা সরেজমিনে দেখতে গিয়ে লেখিকা এমন অনেক ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিলেন যা পরবর্তীকালে তাঁর মনে ভীষণ প্রভাব ফেলেছিলাে। ব্যাক্তিগতভাবে তিনি যেসব বীরাঙ্গনাদের সাথে কথা বলেছিলেন তাদের স্মৃতি এবং অভিজ্ঞতার আলােকেই রচিত আমি বীরাঙ্গনা বলছি।
বইটা দুই খন্ডে লিখেছিলেন তিনি যার প্রথমটা ১৯৯৪ সালে এবং দ্বিতীয়টা ১৯৯৭ সালে বেরিয়েছিল। তৃতীয় খন্ড লেখার চিন্তা করলেও শারীরিক অসুস্থতা এবং অভিমানের কারণে পরে সেটা আর সম্পূর্ণ করেননি। আমি বীরাঙ্গনা বলছি একটি প্রামাণ্য গ্রন্থ যেখানে জাতির সবথেকে উপেক্ষিত অংশ বীরাঙ্গনা এবং তাদের করুণ গল্পগুলােকে নিজস্ব আঙ্গিকে তুলে ধরেছেন ড. নীলিমা ইব্রাহিম। বইয়ের শুরুর দিকের কিছু অংশ তুলে দিলাম, শব্দগুলাে খেয়াল করে দেখুন অনেক চাপা অভিমান যেন ব্যক্ত করা হয়েছে।
এ জীবনে সবকিছুর স্পর্শই আমি পেয়েছি কখনও মৃদু কোমল স্পর্শ বা আঘাত আবার কখনাে অশনি পতনের দাবদাহ। সেকথা, আমার সে অনুভূতির গভিরতাকে কখনও দ্বিতীয় ব্যাক্তির শ্রবণগােচর করবাে এমন সাহস আমার ছিল না।
কারণ এ সাহস প্রকাশের শিক্ষা শৈশব থেকে কখনও পেয়ে আসিনি। নামতা পড়ার মতাে শুধু আউড়িয়েছি আমি মেয়ে, আমাকে সব সইতে হবে; আমি হবাে ধরিত্রীর মতাে সর্বংসহায়। প্রতিবাদের একটিই পথ, সীতার মতাে অগ্নিপরীক্ষা বা পাতাল প্রবেশ। সীতা ছিলেন দেবী। তাই ও'দুটোর কোনটারই সদ্ব্যব্যবহার আমি করতে পারি নি। যখন চারিদিকে শুধু ছিঃ ছিঃ ধ্বনি শুনেছি, সমাজপতি এবং অতি আপনজন বলেছেন, 'মরতে পারলি না হতভাগী, আমাদের মারবার জন্য এই কালােমুখ নিয়ে ফিরে এসেছিস? তাদের মুখ ফুটে বলতে পারি নি, না মরতে আর পারলাম কই? তার পথও তাে তােমরা করে দিলে না। বাঁচাবার জন্য হাত বাড়াও নি, মরবার পথেও তাে সহায়তা করেনি। না সে কথা মুখে বলতে পেরেছাে, না কাজে পরিণত করবার মতাে সৎসাহস সেদিন তােমাদের ছিল, আজও নেই, ভবিষ্যতের কথা ভবিতব্যই জানেন।"
তারা, মেহেরুন্নেসা, রিনা, শেফা, ময়না, ফতী পাগলী এবং আমিনার মাধ্যমে লেখিকা বীরাঙ্গনাদের। সামগ্রিক অবস্থার একটা ক্ষুদ্র চিত্র তুলে ধরেছেন। বীরাঙ্গনা শুধু যেন উপাধিই ছিল না, তাদের সামাজিক অবস্থান পরিবর্তনের একটা নিয়ামকও ছিল। ধানমন্ডির নারী পুনর্বাসন কেন্দ্রে যখন তারা ছিল, তাদের। মধ্যে অনেকেরই পরিবার তাদের সাথে দেখা করতে আসত কিন্তু তাদেরকে কখনও নিজেদের সাথে নিয়ে যাবার কথা বলত না কিংবা নিয়ে যেত না। অনেকের তাে পরিবার তাদের বলেই দিয়েছিল যেন তারা যােগাযােগ না করে। কারও কারও সংসার সারা জীবনের মতাে ভেঙে গেছিলাে। মনে মনে একটু প্রেক্ষাপটটা কল্পনা করুন তাে, অনুভব করতে পারছেন? দুঃখের কথা তাে এটাই...আমরা তাদেরকে অনুভব করতে পারি না।
বুক ফুলিয়ে আমরা বলতে পছন্দ করি আমি রক্ষা করব, আমি পাশে থাকব..কিন্তু কাজের সময় আমরা নিরব দর্শক কিংবা কাপুরুষ হয়ে যায়। সম্ভমও হারিয়েছে তারা, সমাজের কাছে লজ্জার বিষয়ও হয়েছে তারাই। জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপী গরীয়সী..এর অর্থ হলাে জননী এবং জন্মভূমি স্বৰ্গ অপেক্ষা পবিত্র। আমরা জন্মভূমিকে রক্ষা করতে পারলেও জননীকে পারিনি। এবং প্রাপ্য সম্মানের জায়গায় কলঙ্কিনী' অ্যাখ্যায়িত করেছি। বিশ্বকবি হয়ত আক্ষেপের সুরে ভবিতব্যের কথা আগেই বলে গেছিলেন, 'সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করনি।' বইটাতে এমন কিছু প্রশ্ন আছে যার উত্তর কেউ দিতে পারবে না, উত্তর দেয়া হয়ত সম্ভবও না। সামাজিক প্রেক্ষাপটেই বলি বীরদেরকে মানুষ যেভাবে সদর্পেগ্রহণকড়ে, বীরাঙ্গনাদের কথা মানুষ উল্লেখ করতে যেন কুণ্ঠাবােধ করে।
বীরাঙ্গনারা যেন সমাজের লজ্জা, কলঙ্ক কিংবা জাদুঘরে রাখার মতাে বিষয়। 'ও.. বীরাঙ্গনা,এখনও বেঁচে আছে-ভ্রু কুঁচকে দেখে অনেকেই শ্রদ্ধার চোখে নয়! যুদ্ধের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই সম্মানের সাথে সামনে আসলেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা লােকচক্ষুর আড়ালেই থেকে যায়। আমরা হলাম বিবেকমান জাতি আর এটা আমাদের বিবেকের দৃষ্টান্ত, বীরাঙ্গনারা নষ্টা, পাপিষ্ঠা...তাদের কথা উল্লেখ করাও পাপ! তারা একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত শত্রু শিবিরে অত্যাচারিত, নির্যাতিত হয়েছিলেন, কিন্তু পরবর্তীকালে সমাজ সংসারের হাতে তারা বারবার নিহত হয়েছেন। তাদের বেঁচে থাকাটাই যেন অখন্ডনীয় পাপ। গল্পটা সেসব মানুষেরই...যাদের সত্ত্বাকে উপেক্ষা করে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। বইয়ে উল্লেখকৃত আক্ষেপের কিছু দৃষ্টান্ত দেখুন....
"আমি নিজে সচেতন ও দৃঢ় বিশ্বাসী যে আমি একজন বীরাঙ্গনা। আমার রাষ্ট্র আমাকে স্বীকৃতি দিয়েছে, আমার পিতামাতা হাত বাড়িয়ে আমাকে বুকে নিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সমাজের জুলুমবাজির ভয়ে আমি তাদের ঘরে যেতে পারি নি। তবে আপনারা বিশ্বাস করতে পারেন আপনাদের দৃষ্টিতে আমি বীরাঙ্গনা না হলেও নিঃসন্দেহে বারাঙ্গনা নই।"
বুদ্ধি হবার পর থেকে খুব সামান্যই বই পড়া হয়েছে। সেসবের মধ্যে কিছু কিছু বই মুগ্ধ করেছে, কিছু কিছু বই স্বপ্ন দেখিয়েছে, আবার কিছু বই চরম বিরক্তও করেছে। কিন্তু..এই প্রথম কোন বই মনের গভিরে গিয়ে বিঁধেছে। কষ্ট লেগেছে..তারপরেও পড়ছি...আচ্ছত্রের মতাে। বেশিক্ষণ পড়তে গেলে নিজের। অজান্তেই ফুপিয়েছি। তারপরেও আমি বীরাঙ্গনা বলছি'র আবহ থেকে মুক্ত হতে পারিনি।
ভাল লাগলে কমেন্ট করবেন।
Ami Birangona Bolchhi PDF Download
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....