অনার্য দেব : আলী ওয়াহাব সৌহার্দ্য | Anarjo Deb : Ali Wahab Showhardo





বই : অনার্য দেব • আলী ওয়াহাব সৌহার্দ্য 
জনরা : কনটেমপোরারি মিথলজিক্যাল থ্রিলার।
প্রথম প্রকাশ : মার্চ ২০২২
প্রচ্ছদ : সাদিয়া ইসলাম ইফতি 
অলংকরণ : লেখক ও ফাইযাহ্ রাফসান রীনিতা 
প্রকাশনা : বাতিঘর প্রকাশনী 
মূল্য : ৬৮০ টাকা মাত্র
পৃষ্ঠা : ৫৯২
Review Credit 💕 Peal Roy Partha


স্পয়লার-ফ্রি রিভিউ⚊ ❛অনার্য দেব❜

   ❝ওরা কখনও জানবে না—কী নিশ্চিত মৃত্যুর তলোয়ারের তলে ছিল তাদের গর্দান, কী রক্ত হোলি, রক্তাক্ত আশুরা আর রক্তিম খড়গের নগ্ন নাগাল থেকে ফিরে এসেছে এক একজন মানু্ষ। জানলো না কারও রক্তের গহীনের গহীনে ঘুমন্ত প্রাচীন, প্রাগৈতিহাসিক সেই ত্রাণকর্তা আবার, আরও একবার পরাক্রম প্রাচীর হয়ে আগলে রাখল অনার্য জনপদ। নিচে কৈশিক জলিকার মতো শতপথ।❞ 

Quō vādis?

দ্বন্দ্ব থেকে দাঙ্গা। বিশ্বাসঘাতকতার সংজ্ঞা যৌক্তিকভাবে দিতে গেলে, ইতিহাসের আনাচেকানাচে তাকালে তা অহরহ দেখতে পাওয়া যায়। একেবারে শীর্ষ পর্যায়ে থাকা মনুষ্য রূপে আবির্ভাব হওয়া ঈশ্বরের সাথে এমন কাজ ঠিক মেনে নেওয়া যায় কি? আচ্ছা, ইতিহাস কী বলে? কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা? শান্ত পুকুরে কোনো এক বালকের ছুঁড়ে দেওয়া পাথরের কণা, যে আলোড়ন সৃষ্টি করে; সেই আলোড়ন পুরো পুকুরে ছড়িয়ে পড়ে। সামান্য এক পাথর—পুরো পুকুরের ঘুম ভাঙানোর শক্তি কীসের অর্থ বহন করে? তাই হয়তো গণিতবিদ ও আবহাওয়াবিদ ‘এডওয়ার্ড লরেঞ্জ’ একটি বিশেষ প্রশ্নের উত্থাপন করেছিলেন। সেখানে বলেছিলেন, ব্রাজিলে যদি কোনো একটি প্রজাপতি তার ডানা ঝাপটায়, তবে সেটা টেক্সাসে টর্নেডো হিসেবে প্রতিফলিত হবে কী করে? জবাব দিতে গিয়ে পরবর্তীতে তিনি সেটাকে প্রমাণিত করেন; যা বিজ্ঞানের ভাষায় বা তত্ত্বের নামানুসারে ‘বাটারফ্লাই ইফেক্ট’ নামে পরিচিত। তেমনই ‘ছোটো ছোটো বালু কণা, বিন্দু বিন্দু জল—গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল’—উচ্চ মাধ্যমিকে পড়া সেই সারাংশের প্রথম লাইনটি নিশ্চয়ই মনে আছে? থাকলে ভালো, কারণ এই বইয়ের সাথে এমন তত্ত্ব আর প্রবাদের যোগাযোগ কিন্তু অবিচ্ছেদ্য। 

❝অনুগামী অনুচরে লিপ্ত অনর্থে
প্রাচীনা সে নগরীর ধ্যান হলো ভঙ্গ
বহাইলো স্রোতঃস্বিনী নিষ্প্রাণ মর্ত্যে,
পবিত্র জলাধরে পড়িল কলঙ্ক।❞

কনটেমপোরারি ফিকশনের কোনো বই পড়তে নিলে, প্রথমত মনের যত ইতস্তত ভাব তা দূরীকরণ করতে হয়। এমন বইয়ে বিতর্কিত কথোপকথন আর যুক্তি দিয়ে মস্তিষ্ক সঞ্চালন খুব বেশি করা হয়। লেখককে পাগল ঠাওরানো এবং নিজের বিশ্বাসকে ধূলিসাৎ করার এমন প্রক্রিয়া সাহিত্য অঙ্গনে খুব একটা দেখা যায় না। ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের দ্বন্দ্ব, তার ভেতরে মিথের অজস্র ফাঁকফোকর, খোঁড়া যুক্তি দিয়ে লুকানো ইতিহাসের প্রোপাগাণ্ডার ছড়াছড়ি; এক অদ্ভুত পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। 

বিশ্বে এমন বইয়ের সংখ্যা গণনার বাইরে থাকলেও মৌলিকে হাতে গোনা। যদিও প্রায় অনেক বইয়ে জোর করে তথ্য চাপিয়ে দেওয়া হয়। অর্থাৎ খেতে না চাইলেও খেতে হবে এমন। কিছু আছে অপক্ব; সদ্য ফোঁটা গোলাপের মতো। তবে এই আক্ষেপ পুরোপুরি ঘুচিয়ে দিতে লেখক ❛অনার্য দেব❜-এর মতো বিশাল কলেবরের এই উপাখ্যান অথবা বলা যায়—মিথ্যার চাদর সরিয়ে সত্যের সূর্যোদয় ঘটাতে যে অমানবিক পরিশ্রম করেছেন; তার জন্য সাধুবাদ জানাতে হয়। সত্যের সূর্য কতটা আলোকিত তার বিচার ভার একান্ত পাঠকের। বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের দোলাচালে দুলতে দুলতে বরং আলোচনা করি, অনার্য দেব কে আর কী তার রহস্য?

আর্য-অনার্য নিয়ে দ্বন্দ্ব নতুন কিছু না। নানান মতে, ব্রিটিশরা যখন ভারতবর্ষে আসে তখন স্থানীয়দের গৌরব আর বৈভব দেখে তারা হিংসালু হয়ে পড়ে। তখনই তারা নিজেদের শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করতে, গাত্র বর্ণের পার্থক্য দিয়ে ‘বর্ণবাদ’ প্রথা তৈরি করে। শুধু কি এইটুকু? আঠারো শতকের দিকে এই তত্ত্ব নিয়ে তোলপাড় হলেও এর গোড়াপত্তন হয় খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০-১১০০ অব্দের দিকে। যখন ককেশীয় মহাজাতি গোষ্ঠীর একটা অংশ প্রাচীন ভারতে প্রবেশ করে। সিন্ধু সভ্যতা শেষ হওয়ার পরপর। ভারতীয় পণ্ডিতরা বিশ্বাস করে—ভারতই আর্যদের আদি নিবাস, অন্য দিকে ইউরোপীয়ানরা দাবি করে ইউরোপ-ই প্রকৃত আর্যভূমি! কোনটা গ্রহন করবেন আপনি? এই জন্য, ‘বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর’ এই প্রবাদ বাক্যটি এমন বইয়ের জন্য যথোপযুক্ত। তর্কে নামতে হলে আগে বইটি পড়তে হবে, বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোকান আপাতত শাটারের পেছনে আবদ্ধ থাক। 

কেন পড়বেন ❛অনার্য দেব❜? 

পৃথিবীতে সম্ভবত ধর্ম নিয়ে ষড়যন্ত্র সবচেয়ে বেশি করা হয়। ধর্মের অনেক ধারাকে বিজ্ঞান অনুসরণ করে প্রমাণ করার তোড়জোড় চালানো হয়। দর্শনের সাদা পৃষ্ঠায় লাল-নীল কালিমা লেপনের উৎসবও পালন করতে দেখা যায়। ❛অনার্য দেব❜ উপন্যাসে যেসব দিক নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা করা হয়েছে তা হচ্ছে—ধর্ম! ধর্মের স্রষ্টা আর তাঁদের স্বরূপ। সনাতন ধর্ম নিয়ে যত বিতর্ক রয়েছে, লেখক প্রায় সবকিছু এই বইয়ে তুলে ধরেছেন। এছাড়া, হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা কেন হয়; এর পেছনে কারা কলকাঠি নাড়াচাড়ায় ব্যস্ত এবং কালারিজম নিয়ে কেন এত তর্ক—উক্ত বিষয়গুলো নিয়ে পুরো বইয়ে বিস্তর আলোচনা রয়েছে। 

শুধু আলোচনা অথবা কথোপকথনে কি উপন্যাসের সমাপ্তি লেখা? —না। এখানে গুপ্ত সংঘের মিশ্রনে গল্প আছে। কিছু অলৌকিক মিথস্ক্রিয়াও রয়েছে। বিশ্বাসের বস্তু যেমন আছে, অবিশ্বাস করার মতো নাটকীয় কাণ্ডকারখানাও রয়েছে। যার বেশিভাগ বেছে নেওয়ার দায়িত্ব একান্তই পাঠকের। তবে হিন্দু পুরাণ নিয়ে তর্কবিতর্ক বা ইতিহাসের যুক্তিতর্ক নিয়ে যদি আগ্রহ তুঙ্গে থাকে; তবে বইটি অবশ্যই পাঠ্য। আর্য আর অনার্য দেব নিয়ে কোন্দলের পাশাপাশি স্বস্তিকা চিহ্নের ধর্মীয় সামঞ্জস্য, সিন্ধু-মহেঞ্জদারো, ইন্দ ইউরোপীয়-গোড়া ইন্ডিয়ান ইতিহাস নিয়ে সংঘর্ষ, নাৎসি পার্টি, জঙ্গী সংগঠন, চেঙ্গিস খান, চাণক্য, জুডাস, ব্রুটাস, সাল্লাম বিন মিশকাম, সুর-অসুর, বেদ-পুরাণ ইত্যাদি যত আলোচিত কিংবা বিতর্কিত শিরোনাম আছে—সব নিয়ে ব্যাখা পাবেন এই ❛অনার্য দেব❜ উপন্যাসে।

❝ইউহদে, ব্রুতে, এঙ্গিরে, সাল্লাম।❞

এই জনরায় এমন বই পড়লে, মৌলিকে দ্বিতীয় কোনো বই আপাতত না পড়লেও চলবে। অবশ্য জানার কোনো শেষ নেই, শেখার কোনো বয়স নেই।

◆ পাঠ প্রতিক্রিয়া ও পর্যালোচনা—

    প্রমান নেই, পাইনি, বিশ্বাস বা ধারণা। ❛অনার্য দেব❜ বইয়ে যতগুলো বিষয় এসেছে সব বিষয়ের শেষে বিশ্বাস বা ধারণার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অবশ্যই উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ লেখক দিয়েছেন বটে। এই দিকটা ইতিবাচক একইসাথে লেখকের কৌশল খাটানোর উপযুক্ত কারণ হিসেবে বিবেচনা করছি। ধর্ম হচ্ছে বিশ্বাসের জায়গা, সেখানে যদি কেউ অযাচিতভাবে আঘাত হানে সেটা কখনও সুফল বয়ে নিয়ে আসে না। তবে যুক্তি দিয়ে খণ্ডন প্রক্রিয়া সাধন করা অন্য বিষয়।  

ধর্মের থেকে বড়ো সম্ভবত মানব সভ্যতার সৃষ্টির রহস্য। হোমো সেপিয়েন্স অর্থাৎ আমাদের পূর্ব পুরুষদের জন্ম আজ থেকে দুই লক্ষ বছর পূর্বে আফ্রিকার কোনো এক স্থানে। আদতে আমরাই কি একমাত্র ‘হোমো’? এর বাইরে কি অন্য কোনো প্রজাতি ছিল না? তবে তারা কোথায়? ধর্ম আর বিজ্ঞান এখানে কী বলে? এই প্রজাতি আর পদ নিয়ে ❛অনার্য দেব❜ বইয়ে দারুণ কিছু কথোপকথন আর অধ্যায়ের প্রকটন হয়েছে। এর পূর্বে কিছু মিথলজিক্যাল বইয়ে ‘ইন্দ্র’ (সনাতন ধর্মে দেবরাজ ইন্দ্র, বৃষ্টি ও বজ্রের দেবতা) একটি পদ, যে ওই পদে বসবে তাকে ইন্দ্র বলে বিবেচিত করা হবে। তেমনই এই বইয়ে সেটা ডালপালা মেলে আরও বৃহত্ত্ব পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। একেবারে পিওর বাটারফ্লাই ইফেক্ট। ঘুরপাক সবচেয়ে বেশি সনাতন ধর্মকে ঘিরে হয়েছে। 

যাহোক, এই বই পড়ে জানার যেমন অনেক কিছু ছিল, অজানা তার চেয়ে বেশি ছিল। লেখক খুবই দক্ষভাবে প্রতিটি বিষয় যাচাই-বাছাই করে লিখেছেন। তথ্যের ঘাটতি এই বইয়ে দেখা যায়নি, তবে দর্শন বিচার একান্ত পাঠকের ভাবনা। খ্রিষ্টধর্মের ক্রুশবিদ্ধ করা যীশু আসলে কে? বৌদ্ধধর্মের বুদ্ধ কি আসলে বিষ্ণুর নবম অবতার? মহানবি (সা.)-কে উৎখাত করার পেছনে মূল হোতা কে? বৈষ্ণব ও শৈবদের মধ্যে দ্বন্দ্ব কেন লেগে থাকে? স্বস্তিকা চিহ্ন কি শুধু সনাতনের ধর্মের প্রতীক? এমন সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বসতে হবে ❛অনার্য দেব❜ উপন্যাসের সাদা পাতার সাগরের কালো কালির নৌকায়। 

এই বইয়ের লিখনপদ্ধতি বেশ শক্তপোক্ত, বাংলিশ সংলাপের কারণে মাঝেমধ্যে বিরক্ত তৈরি হতে পারে তবে সেটা দ্রুত কাটিয়ে ওঠা যায়। একজন পদার্থবিজ্ঞানী আর একজন নৃবিদ্যায় পারদর্শী প্রফেসরের কথোপকথনে এমন ভ্যারাইটি ভাব থাকাটা বাঞ্ছনীয়। তবে বর্ণনা শৈলী আর দর্শনের মিশেল এই বইকে অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। লেখকের দর্শন নিয়ে বলা কথাগুলোর তারিফ বারবার করলেও কম করা হবে। 

এই বইকে যদি পাঁচ ভাগে ভাগ করি, তাহলে আপনি যদি এর ২০% বোঝেন তবে এক তারা দিবেন আর যদি পুরো একশ শতাংশ পুরোপুরি নিজের মস্তিষ্কে ধারণ করতে পারেন তবে পাঁচ তারা দিতে কোনো কার্পণ্য করবেন না। এমন পূর্ণাঙ্গ আলোচনায় ঠাসা বই পড়েও আলাদা এক প্রশান্তি রয়েছে। মিথলজির সাথে ইতিহাসের মিশ্রণ, বিজ্ঞানের ধারা, পুরাণের কথা, দর্শনের মারপ্যাঁচ যদি একসাথে পড়ে বুঝতে কোনো দ্বিধাবোধ না থাকে তবে এই বই আপনার জন্য। সামসময়িক অনেক লেখকের উপন্যাস থেকে এই বইয়ের বিশালতা অনেক এগিয়ে। শুধু গল্পতে এই উপন্যাসের চাকা থেমে থাকেনি। কী বলে এই বইকে আখ্যায়িত করব, তেমন কোনো শব্দ আপাতত ব্যবহার না করি। লেখকের শ্রমের মূল্য যদি তুলনার নিক্তিতে মাপা হয়, সেটাকে অনেকটা অপমানিত করা হয় বলে—আমার মনে হয়।

    ● গল্পের শুরু এবং কিছু প্রশ্ন—

❝উত্তর দেখো চাহি
জানে নাহি পশ্চিম, দেখে নাহি প্রাচ্য। 
কোন মহারাজা গড়ে নাহি
হেন মহারাজ্য।❞

একটা হেঁয়ালির আড়ালে লুকিয়ে আছেন মহান অনার্য দেব, যার রাজ্যাভিষেক হয়েছিল খ্রিস্টের জন্মেরও হাজার বছর আগে। তিনি বদলে দিয়েছিলেন পশ্চিম থেকে প্রাচ্য, সমগ্র বিশ্বকে। কিন্তু কে এই অনার্য দেব?

সেই উত্তর খুঁজতে জায়েদ আরাফাত একটি ক্রিপ্টেক্স নিয়ে হাজির হয় প্রফেসর ইমেরিটাস দীপেশ কুমার বিশ্বাসের কাছে। যে প্রফেসর দুনিয়ার কাছে মৃত! কোথায় আর কীভাবে পেল জায়েদ তাঁর ঠিকানা? আর ক্রিপ্টেক্স, কী লেখা তাতে? অশোকলিপিতে কীসের ধাঁধায় বন্দি এটা? আর হলো কীভাবে জায়েদের মামা মাহমুদুল হাসানের সাথে এই ক্রিপ্টেক্সের সন্ধি? উত্তর অজানা। তার পূর্বে অতর্কিত হামলা! ক্রিপ্টেক্স ছিনিয়ে নিতে উদয় হলো এক ছায়ামূর্তি! ওদিকে প্রফেসরের সতর্কতা অবলম্বন করতে ‘ট্রেইটর’ খ্যাত অবসরপ্রাপ্ত আর্মি লেফটেন্যান্ট তাহেরকে স্মরণ করতে ভুলল না, কিন্তু কেন? 

‘দ্য টেম্পল আশ্রম’ থেকে ইলা শর্মার ফোন। প্রফেসর আর জায়েদকে তারা বাঁচাতে চায়। বাঁচতে হলে যেতে হবে ইন্ডিয়ায়। উপায় নেই দু’জনের কারও কাছে। কিন্তু মূল্যবান ক্রিপ্টেক্সের ফাঁদে পড়ে তারা এখন ফেরারি আসামি, দেশদ্রোহী এবং মোস্ট ওয়ান্টেড টেরোরিস্টের তালিকায় ঢুকে পড়েছে। একমাত্র তাহের বাঁচাতে পারে তাদের। উপায় না দেখে যেতে হলো তাহেরের সাথে। ঢুকতে হলো কুখ্যাত এক সন্ত্রাসী ডেরায়! তারপর?

দিল্লীতে শিবাজির ভাসনে উত্তাল জনগণ। গেরুয়া ঝাণ্ডাধারীরা ফুঁসছে অজানা এক আক্রোশে। বসে নেই বেলুচিস্তানের জঙ্গীরা। তারা কষে চলছে দিল্লী দখলের ছক। দুই গুপ্তসংঘের সদস্যরা কীসের নেশায় ঘুরছে? কী তাদের উদ্দেশ্যে? 

সব প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে মহাকাব্যিক এক যাত্রার সঙ্গী আপনাকে হতেই হবে। 

══════════════════════════

উপন্যাসের শুরু পূর্বকথা অনুসারে এক বৈদ্য আর শবদেহের মধ্যকার ঘটনা থেকে। তারপরে মূল পর্ব শুরু। অযাচিত কোনো বর্ণনা না দিয়ে লেখক সরাসরি কাহিনিতে ঢুকে পড়ে। খুব দ্রুতই দৃশ্যপট বদলে যেতে থাকে। পরিচিত হতে থাকে গল্পের মূল হোতাদের সাথে। বাংলাদেশের মাটিতে এই গল্পের স্থায়িত্ব খুবই সীমিত। পুরোটা জুড়ে রয়েছে ভারতের মুম্বাই আর দিল্লী। কাহিনির কারণে ঘুরে আসতে হয়েছে ইতালি, তুরষ্ক আর পাকিস্তান থেকে। তবে সে-সব ঘটে ধীরে সুস্থে। 

কাহিনির মূল ফোকাসে থাকে ক্রিপ্টেক্স। যা রক্ষা করার দায়িত্বে থাকে জায়েদ আর প্রফেসর দীপেশ বিশ্বাস। কিন্তু শত্রুদের থেকে এত সহজে নিস্তার তারা পায় না। সাত দিনের একটা ক্যায়োসকে ঘিরে এই উপন্যাস চলতে থাকে। এই সাত দিনে উপমহাদেশের যত ইতিহাস আর তত্ত্ব সবই প্রফেসর আর জায়েদের কথোপকথন এবং কিছু বাকি চরিত্রদের মাধ্যমে প্রকাশিত হতে থাকে। 

শুরুটা দারুণ। ঝরঝরে বর্ণনা আর পোক্ত লেখনশৈলীতে ভরপুর। 

    ● গল্প বুনট » লিখনপদ্ধতি » বর্ণনা শৈলী—

লেখকের কাহিনি সাজানো অমায়িক। কোনো প্যাঁচ নেই। কমপ্লেক্স তৈরি হওয়ার মতো কোনো অবস্থা তিনি তৈরি করেননি। লেখক গল্প বুননে পারদর্শী, না-হয় এত এত তথ্যের সম্মিলনে নতুন নতুন শব্দের মিশেলে বাক্য গঠন তৈরি করা চাট্টিখানি কোনো কথা নয়। ওনার দূরদর্শি চিন্তাভাবনা কতটা প্রখর এই বই যারা পড়েছেন বা পড়বেন তা সহজেই বুঝতে পারবেন। 

লিখনপদ্ধতিতে সব রকম লেখার ছোঁয়া রয়েছে। সংলাপ নিয়ে একটু আলোকপাত করি; যেহেতু উপন্যাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে পার্থক্যটা একটু চোখে লাগে। সংলাপের উদাহরণ টানতে গেলে চরিত্ররা আসবে, তাদের আচরণ আর ভাষা নিয়ে লেখককে আলাদা স্টাডি করাটা স্বাভাবিক। তবে কিছু চরিত্র বাদ দিলে প্রায়ই চরিত্রের ভাষা-শৈলী একই রকম মনে হয়েছে কিছু কিছু জায়গায়। স্বকীয়তা যে ছিল না তা বলব না, তবে দেশের গণ্ডি পার হওয়া বাংলা ভাষার টান আর ধরন কিছুটা আলাদা দেখালে ভালো হতো। বিশেষ করে ভারতীয় বাংলা ভাষার সুরে। এই দিকটা আরেকটু পোক্ত করা যেত। 

এমনিতে হিন্দি, উর্দু, ইংরেজি এবং বাংলা; সব ভাষার মিশ্রণ এই বইয়ে রয়েছে। ভয় পাওয়ার দরকার নেই, লেখা সব বাংলাতে হয়েছে। মাঝেমধ্যে কিছু সংলাপে ইংরেজ বলাটা কিছুটা কমালে আরও আকর্ষণীয় হতো। তবে সংলাপগুলো দারুণ আর বেশ তাৎপর্যবহ, ভাষার মিক্সারের জন্য স্বাদে এসেছে ভিন্নত্ব। 

বর্ণনা শৈলী প্রাঞ্জল। বিশেষ করে দর্শন অংশে এই সাবলীল ভাবটা অনেক সহযোগিতা করেছে। নতুন কোনো পাঠক এই বই পড়লে, খুবই ভালোভাবে কানেক্ট করতে পারবে। বিরক্ত লাগবে কোন ঘটনা নিয়ে আলোকপাত হচ্ছে সেটা না বুঝলে। বোদ্ধা পাঠকদের এই বই পেজ টার্নার। এখানে নতুন আর বোদ্দা পাঠক নিয়ে বৈষম্য করছি না; এই বই এমনিতে সব ক্যাটাগরির পাঠকের জন্য না। দর্শনের কথোপকথন আর গোঁড়া ধর্মবিশ্বাসী পাঠকদের জন্য তো একেবারেই না। লেখক উক্ত উপন্যাসে শব্দ নিয়ে রীতিমতো হোলি খেলেছেন; যা শব্দ প্রেমী পাঠকদের নতুন বা অপ্রচলিত শব্দের চাহিদা যোগানে অনুপম আনন্দ দিবে।  

যদি শুধু জানার আগ্রহ আর লেখকের দর্শনের সাথে পরিচিত হতে ইচ্ছুক হলে, তবেই বইটি নিয়ে বসুন।

উক্ত উপন্যাসে অ্যাকশন দৃশ্যের কমতি নেই, আছে সম্মুখ সম্মেলনের বিস্ফারিত ভাষণ। ধাঁধা ও চিহ্ন সমাধানের বিষয়টিও রয়েছে। এই উপন্যাসে বৈজ্ঞানিক একটি থিওরি যা গল্পে বিরানির মধ্যে এলাচির স্বাদ এনে দিলেও, পরবর্তীতে সেটা মানিয়ে যায়। গালাগালি যেমন আছে, তেমনই কিছু স্যাটায়ার দৃশ্য আর সংলাপও সাজানো রয়েছে।

নৈসর্গিক দৃশ্য ও স্থাপত্য নিয়ে অবতারণা করতে লেখক পিছু হাঁটেননি। কী দারুণ বর্ণনা! ভ্যাটিকান সিটির ঐতিহাসিক সিস্টিন চ্যাপেল, মঙ্গোলিয়ায় আদিবাসীদের বুর্খান খালদুন থেকে পাকিস্তানে অবস্থিত তক্ষশীলার দৃশ্যায়ন; সবকিছু বেশ উপভোগ্য ছিল। 

    ● যেমন ছিল গল্পের চরিত্ররা—

মূল চরিত্র যে শুধু জায়েদ আর প্রফেসর ছিল তেমন না। ট্রেইটর তাহেরের ভূমিকা এই উপন্যাসে অকল্পনীয় ছিল। একেবারে মন জয় করে নেওয়ার মতো। বাদ নেই কুখ্যাত সন্ত্রাসী, জঙ্গী, ধর্ম ব্যবসায়ী-সহ অনেকে। সব কয়টি চরিত্র তাদের জায়গা থেকে অনবদ্য। লেখক প্রতিটি চরিত্র খুবই দক্ষতার সাথে বইয়ের বাঁকে বাঁকে প্রতিস্থাপন করেছেন। 

এমন কিছু চরিত্র লেখক এই গল্পে নিয়ে এসেছেন, যাদের অস্তিত্ব বাস্তবে রয়েছে। সেদিক থেকে ভাবলে, বেশ সাহসিক এক পদক্ষেপ তিনি নিয়েছেন। কিছু ঘটনা আর অজানা সত্যের মিশ্রণ আর গণমাধ্যমগুলো সে-সব ঘটনাকে কীভাবে প্রচার করে; তাও স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি।

এই উপন্যাসের সবচেয়ে বেশি আলোকপাত করা চরিত্র অনার্য দেব। সেই অনার্য দেবের আদি থেকে অন্ত উপস্থাপনে কোনো ঢিলেমি লেখক করেননি। যত ধরনের তথ্য দিয়ে এই চরিত্রকে ক্ল্যারিফাই করা যায় করেছেন। কিছু ভুল ধারণাকে সঠিকভাবে দেখানোর কাজটা অত্যন্ত সহজভাবে বোঝানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করতে তিনি দ্বিধাবোধ করেননি। ধাপে ধাপে সে-সকল বিষয় উন্মোচন করতে যে হ্যাপা পোহাতে হয়েছে—তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। 

অনার্য দেবের প্রতিদ্বন্দ্বী আর্য দেব নিয়ে লেখক এক একটা বোম ব্লাস্ট করেছেন; যা পড়ে বেশ মজা লাগল। শুধু তাই না, এই আর্য দেবের সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে কম আলোচনা এই বইয়ে হয়নি। পক্ষপাতিত্বের একটা দিক লেখকও যে বেছে নিয়েছেন তা স্পষ্ট বোঝা যায়। এক্ষেত্রে লেখককে একটা চ্যালেঞ্জ দিতে পারি, এই বইয়ের প্রেক্ষাপটের ঠিক উলটো কাজটা লেখক যদি করে দেখান, অর্থাৎ আর্য দেবকে নিয়ে; তাহলে ‘পক্ষপাতিত্ব’ করার ট্যাগটা তুলে নিতে পারি। 

    ● শেষের গল্প বলা প্রয়োজন—

এমন ঘরনার বইগুলোতে হুটহাট বা তাড়াহুড়োয় শেষ করার একটা মেলা বসে থাকে। ❛অনার্য দেব❜ এই আক্ষেপের বিপ্লব ঘটাতে পেরেছে। ‘যেখানে শেষ, সেখানে শুরু’ কথাটি এই বইয়ের ক্ষেত্রে পুরোপুরি জায়েজ। মূল কাহিনি যেখানে সমাপ্তি হয় আদতে সেখান থেকে এই বইয়ের রহস্য উন্মোচনের আয়োজন শুরু হয়। কপালে ভাঁজ পড়ল মনে হলো? 

অনার্য দেবের কাহিনি মূলত চলতে থাকা গল্পের পরবর্তী রূপ। লেখক উক্ত বইয়ে তিনটি কবিতা টাইপ ধাঁধা রাখেন। যে-ই ধাঁধাগুলোর সমাধানে একটি বিশেষ ঘটনার দ্বার খুলে যেতে থাকে। কিন্তু শেষে গিয়ে সব ওলটপালট হয়ে যায়। তিন কবিতার নায়ক কিন্তু একজনই। এখন কীভাবে, সেটা তো বই পড়ে জানতে হবে। 

সব মিলিয়ে বলব, যে ক্ষুধা নিয়ে বইটি পড়তে বসেছি তা পুরোপুরি মিটে আরও বেশি খাওয়া হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। মস্তিষ্ক-মনন কোনো দিক থেকে অপূর্ণতার কমতি লেখক রাখেননি। এমন বই নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা অনেক করা যায় ইচ্ছা হলে; তেমনই বারবার পড়তেও অসুবিধা নেই। সংগ্রহে রাখার মতো একখানা বই। 

বইয়ের সাসপেন্স আর টুইস্ট নিয়ে যদি একটু বলি, খুব অবাক করার মতো কিছু নেই। তবে শেষে এসে একটা ধাক্কা পাঠক অবশ্যই খাবে। শেষের ব্লাডলাইনের টুইস্টে আরও বিস্তারিত আনা যেত। যুক্তিসঙ্গত লাগেনি। গল্পের সাথে ফ্যাক্ট মেলাতে গিয়ে লেখক হয়তো এমন এক সন্ধি করার ফাঁদ বেছে নিয়েছেন, যা না দেখালেও উপন্যাস দিব্যি হিট খেত।  

    ● খুচরা আলাপ—

❛অনার্য দেব❜ উপন্যাসে আকর্ষণীয় দিক নিয়ে লিখতে গেলে এই লেখা শেষ হওয়ার না। কত কত বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যায় বলেন? এই বই পুরোটা যেন একটা প্রত্নতত্ত্ব এলাকা। আর আমি ভিজিট করতে আসা কোনো এক নৃতাত্ত্বিক। এক পাশ খুঁড়তে গেলে তো অন্য পাশ দিয়ে খরগোশের মতো তথ্য এসে উঁকি দেয়। অনবরত এই চাকা যেন ঘুরছে তো ঘুরছে... সময়ের চাকা কি কখনও থেমে থাকে?

বর্তমানে হট টপিক কি বলতে পারবেন? ধর্ম ব্যাবসা? রাজনীতি? সিক্রেট সোসাইটি? বিশ্বযুদ্ধ? ওয়ার্মহোল? অ্যান্টিমেটার? ওয়েট... কী এই অ্যান্টিমেটার? কখনও নাম শুনেছেন? কাজ কী জানেন? ওয়ার্মহোলের দিয়ে যে টাইম ট্রাভেল করা যায়; এই আবিষ্কারের ফর্মুলা নিয়ে কখনও ভেবেছেন? আপাতত বিজ্ঞানের দিকে না যায়। সিক্রেট সোসাইটি নিয়ে এই বইয়ে ভালো রসদ রয়েছে। তাই এই নিয়ে সামান্য বকবক করি। তবে হালের ক্রেজ ইলুমিনাতি, ফ্রিম্যাসন্স বা আশোকের নবরত্ন তো মোটেই না।

একেবারে আনকোরা বলব না; কখনও হয়তো শুনেননি এমন সব গুপ্তসংঘের নাম তিনি অকপটে নিজ উপন্যাসে ব্যবহার করেছেন। তারা এক একটা যেন কিলবিল করা রাঘব-পোকা। একবার ধরলে আর যেন ছাড়ে না। এদের না শেষ; কিন্তু আছে শুরু। খুবই প্রাচীন সেই ইতিহাস। শুরুর ইতিহাস আবার সবার থাকে, যেমনটা আছে এই সৃষ্টির, ধর্মের, মানুষের। এই বিশ্বে বর্ণ নিয়ে যত ফ্যাসাদ। লেখক তাই মন খুলে এই বৈষম্য নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা করেছেন। একেবারে দিল খুলকে। 

বিশেষ বা আলোচিত কোনো ব্যক্তির নাম ও কামের উল্লেখ করা সম্ভবত বাদ দেয়নি লেখক। যাকে যেমন ভাবে পেরেছে ব্যবহার করেছেন। তবে খুবই মার্জিত ভাবে। এমন নয় যে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে হাহাকার করে উঠেছে। তবে একজনকে ঠিকই করেছেন... নাম বললে মাইন্ড করতে পারেন। 

লেখক বলেছেন, এই বই পড়ার পর গুপ্তসংঘ নিয়ে আর কোনো সঙ্কট থাকবে না। পরিচিতির ক্ষেত্রে না থাকলেও, কাজের দিক থেকে থেকে যেতে পারে। লুকানো এখন কিছুই নেই, সবকিছু আমাদের চোখের সম্মুখে জ্বলজ্বল করছে। শুধু তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে দেখার বাকি। ❛অনার্য দেব❜ বিজ্ঞানকে না নাড়াতে পারলেও, ইতিহাস ও ধর্মের পুরো শ্রাদ্ধানুষ্ঠান অবশ্যই করেছে। সাধু, সাধু, সাধু।

সম্রাট আশোককে তো এই বইয়ে আচ্ছা মতো নিকৃন্তন করা হয়েছে। যেখানে অন্যান্য লেখকরা তাঁকে তোষামোদের জোয়ার স্নান করিয়েছে। চাণক্য অথবা কৌটিল্যকে যে মর্যাদা অন্যান্য লেখক ফুটিয়ে তুলতে পারেনি, ❛অনার্য দেব❜ উপন্যাসে সেটা খুব ভালোভাবে করেছেন লেখক। সব মিলিয়ে উপভোগ্য আর আমি লিখতে লিখতে ক্লান্ত।

◆ লেখক নিয়ে কিছু কথা—

    লেখকের প্রথম প্রকাশিত বই ‘মেটামরফিক নিশীথে’ গত বছর পড়তে গিয়ে খুঁজে পাইনি। পরবর্তীতে আর নিব নিব করে নেওয়া হয়নি। তবে আমার জন্য ❛অনার্য দেব❜ ছিল এই বইমেলায় সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত বই। গত বছর থেকে এই বইয়ের অপেক্ষা আর আপডেট জানার জন্য প্রায় এদিক-সেদিক চেকা-চেকি করতাম। অবশেষে বই প্রকাশিত হলো, কিন্তু নানান সমস্যার কারণে বইমেলায় এই বই নেওয়া না হলেও; হাল ছাড়িনি। অবশেষে নিলাম আর পড়েও শেষ করলাম! 

অনেক দিনের অপেক্ষায় পাওয়া কোনো বস্তুকে আরও অপেক্ষায় রাখা আমার ধাতে সই না। তাই হাতে পাওয়া মাত্র পড়া শুরু করে দিলাম। আর অবশেষে শেষ করে প্রতিক্রিয়া জানালাম। দারুণ সময় কেটেছে বইটির সাথে। নাওয়াখাওয়াও মনে হয় কিছু সময়ের জন্য ভুলে ছিলাম। লেখকের সার্থকতা হয়তো এইখানে। পাঠক হিসেবে আমার সর্বোচ্চ মনোযোগ কেড়ে নিতে তিনি সক্ষম।

ওনার পরিশ্রম সফল হোক এই দোয়া করছি। মৌলিকে এমন বিষয় নিয়ে বই লেখা অনেক ধৈর্য আর সাহসের কাজ। তিনি সেটা করে দেখিয়েছেন। আগামীতে এমন বই যেন আরও লিখেন; তেমন একটা আশ্বাস লেখক থেকে আবারও চাই। শুভকামনা রইল।

    ● বানান ও সম্পাদনা—

কোনো-কে ‘কোন’, কি/কী বিভ্রাট, হ্রস্ব-ই কার ও দীর্ঘ-ই কারের ওলটপালট, লক্ষ-কে লক্ষ্য, জানেন না জানেই? এ-কার (ে) এর বদলে '☨' চিহ্ন, পরা-কে (পরিধান) পড়া, জানাশোনা-কে জানাকোনা; এমন বেশ কিছু বানান ভুল আর টাইপোর দেখা গিয়েছে। 

পশু আর পাশু’র এর মধ্যে লেখক না গুলিয়ে ফেললে ভালো হতো। বারবার পশু-পশু বলে, পাশু-কে জোর করে পশু বানানোর প্রয়োজনীয়তা ছিল না। ইচ্ছাকৃত ভুল কি-না জানি না।

সম্পাদনার তথ্যের দিক থেকে যাচাই করার মতো কোনো রেফারেন্স যেহেতু দেওয়া হয়নি তাই আলাদা করে তেমন কিছু নিয়ে বলার নেই। কারণ দর্শন আর সমাধানের সমীকরণ ব্যতীত অন্যান্য সব ঘটনা প্রায় জানা। তবে শেষের দিকে কন্যা সন্তান না পুত্র সন্তানকে হাতে তুলে দেওয়া আর একজন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের ব্যাকস্টোরি আরেকটু খোলাসা করে দেখানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছি। স্পয়লারের কারণে এড়িয়ে যেতে হচ্ছে বিষয়গুলো।  

    ● প্রচ্ছদ » নামলিপি » অলংকরণ—

প্রচ্ছদের বিষয়টা পুরো বইয়ের কনসেপ্ট লুকিয়ে রাখতে দারুণ কাজ করেছে। ফ্রন্টে যা দেখাচ্ছে আসলে তা নয়। তবে ব্যাকে যে ক্রিপ্টেক্স দেখানো হয়েছে, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নামলিপিতে এই বইয়ের মাহাত্ম্য লুকানো আছে। চাইলে খুঁজে দেখতে পারেন। ক্লু দিলাম একটা। 

অলংকরণগুলো পুরো বইয়ে আলাদা শোভা বর্ধন করেছে। প্রতিটি বিষয় আরও সহজভাবে বিচারের জন্য অলংকরণের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি ছিল। 

    ● মলাট » বাঁধাই » পৃষ্ঠা—

প্রকাশনার দিক থেকে বাতিঘর প্রকাশনীর বই নিয়ে অভিযোগের কমতি নেই। তবে এই বইটি যেন অভিযোগের বোঝা অনেকটা কমিয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে বাঁধাই পুরো মাখন। মলাট চকচক না করলেও দেখে অনেক ভালো লাগছে। পৃষ্ঠা বেশ ভালো আর সবচেয়ে ভালো হলো খুলে আরাম করে পড়া যায়। লাইন গ্যাপ, ফন্ট স্পেস চোখে আরাম দেয়। বাহ্যিক প্রোডাকশন এমন দামে সেরা, অভ্যন্তরীণ নিয়ে সন্তুষ্ট। এখন পর্যন্ত পড়া বাতিঘরের টপনচ বই। দামে, মানে, গুণে।

Comments

Popular posts from this blog

সিক্রেটস অব জায়োনিজম Full PDF : লেখক হেনরি ফোর্ড | Secrets of Jainism Bangla Anubad PDF

[PDF] সীরাহ মুহাম্মদ প্রথম খন্ড এবং দ্বিতীয় খণ্ড রেইনড্রপস পিডিএফ - Sirah Muhammad (sa:) First & Last Raindrops

গাযওয়াতুল হিন্দ বই pdf - প্রফেসর ড. ইসমাতুল্লাহ | Gazwatul Hind by Professor Dr. Ismatullah