লেখক : শাইখ ড. মাশআল আব্দুল আযিয আল-ফাল্লাহি
প্রকাশনী : মাকতাবাতুল হাসান
বিষয় : আত্মশুদ্ধি ও অনুপ্রেরণা
পৃষ্ঠা : 112, কভার : পেপার ব্যাক, সংস্করণ : 1st Published, 2022
আইএসবিএন : 9789848012857
কে কার দাস?
মানুষ অভ্যাসের দাস, নাকি অভ্যাস মানুষের – এই নিয়ে ছাত্রজীবনে অনেকবার বিতর্ক হতে দেখেছি এবং পরম উৎসাহে সেগুলোয় অংশ নিয়েছি। কিন্তু কোনো মীমাংসা কি হয়েছিল? এখন আর সেটা মনে করতে পারি না।
তবে, এতদিন পর এই বইয়ে এসে দেখলাম অভ্যাসকে একেবারে ছাতু-ভর্তা বানিয়ে ফেলা হয়েছে। অভ্যাসকে দেখানো হয়েছে দাউদ আলাইহিস সালামের হাতের সেই বিগলিত লোহার মতো, যেমন ইচ্ছা আকার দেওয়া যায়, মনের মতো করে গড়ে নেওয়া যায়। ফলে মানুষের জীবনে গড়ে তোলা যায় যেমন ভালো অভ্যাস, তেমনই আবার বেরিয়ে আসা যায় সব মন্দ অভ্যাসের দাসত্ব থেকে। তবে এর জন্য কিছু নিয়ম ও পদ্ধতির অনুসরণ করতে হয়। আগ্রহ ও সংকল্প থাকতে হয়। প্রতিজ্ঞা ও প্রতীক্ষা থাকতে হয়। কিছু সাময়িক কষ্ট ও যাতনা সইতে হয়। বাধা ও প্রতিবন্ধকতার সামনে দাঁড়িয়ে যেতে হয় সুউচ্চ পাহাড়ের মতো দৃঢ় ও অটল। লক্ষ্যের প্রতি রাখতে হয় তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। এসব কথাই লেখক এই বইয়ে বলেছেন অতি চমৎকারভাবে ধারাবাহিক বিন্যাসে, বিভিন্ন উদাহরণ ও দৃষ্টান্তের মাধ্যমে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে।
সেইসঙ্গে, বইটি পড়ার সুবাদে আমার মনে বারবার নাড়া দিয়ে যাচ্ছে কিছু কথা, আমরা যদি কেবল শারীরিক গঠনটাকেই প্রকৃত মানুষ না বলি, তাহলে মায়ের গর্ভ থেকে পৃথিবীতে মানুষের যে জন্মগ্রহণ, এটাই তার একমাত্র জন্য নয়। বরং এই জগতে তার বারবার জন্ম হয়। বারবার সে জেগে ওঠে। হঠাৎ কোনো এক ঘটনায় কিংবা একটি কথায় তার জীবন বদলে যায়। একটি
সম্পর্কের দোলায় কিংবা ভালোবাসার একটিমাত্র আলতো ছোঁয়ায় পরিবর্তন হয়ে যায় তার চলার গতিপথ। একটিমাত্র প্রতিজ্ঞায় খুলে যায় তার জীবনের স্বপ্নপূরণ ও সফলতার দ্বার। সেই জীবনের সঙ্গে তার আগের জীবনের কোনো মিল থাকে না। ইতিহাসের পাতায় চোখ বুলিয়ে দেখুন, কৌতূহলে ভরা এক ঐতিহাসিক ঘটনার মাধ্যমে কেমন অসাধারণ বদলে গেলেন উমর রা.। নবীজির দরবারে আসার আগের ও পরের উমর এক রইলেন না! আরও কত সাহাবি হঠাৎ এমন পরিবর্তন হয়ে গেলেন! এরপর ইতিহাসজুড়ে আরও কত মনীষী! এই নিকট অতীতেও রয়েছে এমন আরও বহু উদাহরণ। এমনকি আমাদের এই চারপাশের বর্তমানেও! এ কি তাদের নতুন জন্ম নয়!
কিন্তু মানুষ জানে না কোথায় লুকিয়ে আছে তার এই নতুন জন্মের স্বর্ণ-কাঠি!
-শামীম আহমাদ
মিরপুর, ঢাকা
ভূমিকা
সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য। দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর।
আল্লাহ তাআলা আপনাকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন মহৎ একটি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। তিনি বলেন, আমি জিন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা
আমার ইবাদত করবে।
[সুরা যারিয়াত, ৫৬]
আর সেই উদ্দেশ্যটি হলো— যার কারণে আপনি পৃথিবীতে এসেছেন—জীবনে আপনাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও মহান কর্তব্যের দায়িত্ব অর্পণ করা। অতএব, ইবাদত কেবল সেই পদ্ধতির নামই নয়, যা আপনি মসজিদে গিয়ে আদায় করে ফেলেন। বরং ইবাদত হলো এমন এক মহান, গুরুত্বপূর্ণ ও অবিরাম কর্মতৎপরতার নাম, যার মাধ্যমে আপনি নিজের সেই দায়িত্ব সম্পন্ন করেন, আল্লাহ তাআলা আপনাকে পৃথিবীতে পাঠানোর সময় যে দায়িত্ব আপনার ওপর অর্পণ করেছিলেন।
এই বইটি আপনার জন্যই। আমি এতে চেষ্টা করেছি আপনার জন্য একটি সিঁড়ি বানিয়ে দিতে, যা দিয়ে আপনি সফলতার শীর্ষ চূড়ায় উঠে যাবেন। চেষ্টা করেছি একটি বাহন এগিয়ে দিতে, যার মাধ্যমে আপনি এগিয়ে চলবেন সুউচ্চ মর্যাদার দিকে। আপনার মতো ব্যক্তির পক্ষেই সম্ভব সাফল্য ও মর্যাদাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসা।
এই বইটি পড়লে জানতে পারবেন, আপনার জীবনে অভ্যাসের
মূল্য কতখানি। জানতে পারবেন, ইতিবাচক অথবা নেতিবাচকভাবে কত ব্যাপক এবং বিস্ময়কর এর প্রভাব। আল্লাহর ইচ্ছায় বইটি আপনাকে জীবনের সেই বিরাট মর্যাদার উপযুক্ত করে তুলবে, যেটা আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। সুতরাং আপনি আপনার ঘুমের বিছানা থেকে জেগে উঠুন, রাতের অন্ধকারকে দূরে ঠেলে স্বাগত জানান সফলতার নতুন প্রভাতকে। যত কঠিন বিষয়ই আপনার সামনে আসুক, ভয় পাবেন না। সাহস নিয়ে কাজে লেগে পড়ুন, সফলতা আসবেই। ইনশাআল্লাহ। কারণ, এগুলো মরুভূমির সেই মরীচিকার মতো, পিপাসিত ব্যক্তি যাকে পানি মনে করে, অথচ সেটা কেবলই মরীচিকা!
এটি এমন এক বই, যা আপনাকে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ দেখাবে। এই অভ্যাসগুলোর মাধ্যমে আপনাকে একটি আলোকিত জীবনের প্রতি আহ্বান জানাবে। । বিশ্বাস, ভবিষ্যতে আপনিই
জাতিকে সফলতার পথ দেখাবেন, আপনিই হবেন তাদের আদর্শ। আল্লাহ তাআলা আপনাকে সঠিকভাবে পথচলার সক্ষমতা দিন। যারা জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য চেষ্টা পরিশ্রম করেছে, তাদের ইচ্ছা পূরণের কাজে আপনাকে সহযোগিতা করুন।
—ড. মাশআল ফালাহি, সৌদি আরব।
বই শুরুর আগে প্রথমেই একটি গল্প বলে নিই
একবার এক মহিলা তার বান্ধবীর নিকট এলো মাছ রান্না শেখার জন্য। সে লক্ষ করল যে, তার বান্ধবী মাছটিকে কড়াইয়ে তেলে দেওয়ার আগে মাছের মাথা ও লেজ কেটে নিচ্ছে। সে তার বান্ধবীকে এর কারণ জিজ্ঞেস করল। বান্ধবী তাকে বলল, এটা সে তার মায়ের থেকে শিখেছে। ফলে সে তার মায়ের নিকট ফোন করে জানতে চাইল। তিনি (এই বান্ধবীর মা) বললেন, এটা আমি আমার মায়ের থেকে শিখেছি। এবার এই বান্ধবী তার মায়ের মা, নানিকে ফোন করল। তখন তিনি বললেন, আমার এমনটি করার কারণ হলো, তখন আমার কড়াইটি ছিল ছোট। ফলে মাছটি যেন কড়াইয়ে এঁটে যায়, সেজন্য আমি মাছের মাথা ও লেজ কেটে নিতাম!!
আমরা আমাদের জীবনে সবচেয়ে ভয়াবহ যে বিষয়টির মুখোমুখি হই, তা হলো অভ্যাস, যা আমাদের চিন্তাভাবনাকে নিয়ন্ত্রণ করে, আমাদের কাজকর্মকে শাসন করে। এমনকি আমাদের ইবাদতে এবং অন্যদের সঙ্গে আমাদের আচার-আচরণের মাঝেও সে বিচারক হয়ে ওঠে। যেমন কুরআন কারিমে কাফেরদের ভাষায় বলা হয়েছে,
আমরা আমাদের বাপদাদাদেরকে একটা মতাদর্শের অনুসারী পেয়েছি। আমরা তাদের পদচ্ছাপ ধরে সঠিক পথেই চলছি। [সুরা যুখরুফ, ২২] Read More
অভ্যাসের সমস্যাবলি
অভ্যাসের সবচেয়ে বড় একটি সমস্যা হলো, এটা ব্যক্তির চিন্তা থেকে সৌন্দর্যের সকল দৃশ্য ছিনিয়ে নেয় এবং তার জীবনের সৃজনশীলতাকে ধ্বংস করে দেয়।
যে ব্যক্তি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রতিদিন খুনখারাবি ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের দৃশ্য দেখতে অভ্যস্ত হয়েছে, তার নিকট জীবন পরিণত হয়েছে এমন এক অন্ধকারের টুকরোয়, যেখানে সে কোনো আলো দেখার সুযোগ পায় না।
এমনইভাবে, যেসব মানুষ বিভিন্ন দুঃখদুর্দশা ও দাঙ্গাহাঙ্গামার মাঝে জীবন্যাপন করে তাদের মানসিক গঠনও এসব অবস্থা অনুযায়ী আকৃতি লাভ করতে শুরু করে। তারা কিছুতেই আর আনন্দ খুঁজে পায় না। সবকিছুই তাদের নিকট বিতৃষ্ণ হয়ে ওঠে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যতই সবকিছু সুন্দর আর চমৎকার হয়ে উঠুক না কেন।
আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে, যারা তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে দীর্ঘকাল জীবনযাপন করেছে, অথচ তারা তাদের সৌন্দর্যের দিকে ফিরেও তাকায়নি। অভ্যাসের বশে জীবনের সকল রূপ তার নিকট নতুনত্বহীন কিছু সাধারণ পরিচিত দৃশ্যে পরিণত হয়েছে। সে এমন কোনো বিষয় পায়নি, যেটা তাকে সেই ত্রীর ব্যাপারে আনন্দিত করতে পারে। পায়নি এমন জিনিস, প্রতিদিন স্ত্রীর সাক্ষাৎকে তার নিকট উপভোগ্য করে তুলতে পারে। যেটা
কাউকে হয়তো আল্লাহ তাআলা এমন কিছু সন্তান দিয়ে অনুগ্রহ করেছেন, যারা খুবই অমায়িক চরিত্রের অধিকারী। তাদের মেধা ও প্রতিভা দেখে সবাই তাদের প্রশংসা করে। স্নেহ করে। কিন্তু তাদের পিতাকে যদি তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন, তাহলে সে কখনই ভালো কিছু বলবে না। বরং দেখবেন, সন্তানদের সম্পর্কে আপনাকে একগাদা অভিযোগ শুনিয়ে দেবে।
এমনইভাবে, এই চিত্রগুলোই দেখবেন সেসব কর্মক্ষেত্রেও, যেগুলোর মাঝে আমরা নিজেদের জীবনের একটি বড় অংশ অতিবাহিত করি। কিন্তু অভ্যাস আমাদের থেকে সেগুলোর সৌন্দর্য ছিনিয়ে নেয়। অথচ কর্মস্থলগুলো এক হিসাবে আমাদের বাড়ির মতোই। কারণ, আমরা বাড়িতে যেমন অনেকটা সময় অবস্থান করি তেমনই দীর্ঘ একটি সময় কর্মস্থলেও ব্যয় করি। এমনকি এখান থেকেই আমরা আমাদের জীবিকা নির্বাহ করি। এ ছাড়াও মানুষের জীবনের উল্লেখযোগ্য একটা সময় এখানে অতিবাহিত হয়। এগুলোর মাঝে মানুষ তার ইচ্ছামতো চলাফেরা করতে পারে।
অথচ আপনি যদি কারও সঙ্গে সামান্য সময় তার কর্মস্থলের বিষয়ে আলোচনায় বসেন, তাহলে দেখবেন, কর্মস্থলের হাজারো সমস্যার কথা আপনাকে শুনিয়ে দেবে। তার কথা শুনে মনে হবে, সে বোধ হয় এমন এক অন্ধকার জগতে বাস করছে যেখান থেকে মুক্তির কোনো উপায় নেই।
জীবন যখন অভ্যাসে বন্দি
আমরা নিজেরাই অনেক সময় ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের চারপাশের অবারিত সৌন্দর্যগুলোকে সীমিত করে ফেলি।
যেমন, আনন্দভ্রমণের জন্য আমরা যদি একটি নির্দিষ্ট শহরকে পছন্দ করি, তাহলে প্রতিবছর আমরা সেখানেই ভ্রমণ করি। আমাদের অবস্থা দেখে মনে হয়, পুরো জগতের মাঝে এটাই বুঝি একমাত্র দর্শনীয় স্থান। কখনো হয়তো এমন কিছু ঘটনা সামনে আসে, যেগুলো মানুষের সেই স্বাপ্নিক শহরে ভ্রমণের অন্তরায় হয়। তখন এই অভ্যাসের কারণে আমাদের কাছে আর অন্য কোনো জায়গা ভ্রমণের জন্য উপযোগী মনে হয় না। পৃথিবীর সব সৌন্দর্যই চোখের সামনে নিষ্প্রাণ-নির্জীব হয়ে দেখা দেয়। ফলে আমরা দুঃখকষ্টের মাঝে আবদ্ধ হয়ে পড়ি। বন্দি হয়ে থাকি নিজের ঘরে।
আমাদের মাঝে আপনি এমন ব্যক্তিও পাবেন, যে একটি নির্দিষ্ট হোটেলে খেতে অভ্যস্ত। অন্য কোনো হোটেলে সে খাবার খায় না। এমনকি দেখবেন সেই হোটেলে সে একটি নির্দিষ্ট খাবার খেতে অভ্যস্ত। আপনি সাধারণত তাকে এটা ছাড়া অন্য কোনো খাবার খেতে দেখবেন না। ফলে কখনো কখনো তাকে এই খাবারের জন্য দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে সেই হোটেলে যেতে হয়। অথচ তার যদি অন্য কোনো হোটেলে যাওয়ার অথবা অন্য কোনো খাবার খাওয়ার অভ্যাস থাকত, তাহলে তার এমন কষ্ট করতে হতো না।
এমনইভাবে কিছু মানুষকে দেখবেন তারা যখনই কোথাও ঘুরতে যায়, তখন সেখানে থাকার জন্য নির্দিষ্ট একটি হোটেলকেই সবসময় বেছে নেয়। নির্দিষ্ট বাজার ছাড়া অন্য কোনো বাজার থেকে তারা কখনই কেনাকাটা করে না। এমনকি তাদের পছন্দের যে ব্র্যান্ড, সেই ব্র্যান্ডের পোশাক ছাড়া অন্য কোনো পোশাক তারা পরে না। এই যে নির্দিষ্ট জিনিসের প্রতি তাদের এই আসক্তি বা
অভ্যস্ততা এটা তাদের কাছে খুবই স্বাভাবিক মনে হয়। অথচ সেই মুহূর্তে সে বুঝতেই পারে না যে, তারা আসলে এসবের মাঝে বন্দি হয়ে আছে। ফলে এগুলো ব্যতীত জীবনে সে কিছুতেই আর তৃপ্তি পায় না।
একবার এক বন্ধু তার বন্ধুকে তাদের শরীরচর্চার সেই পথ পরিবর্তনে রাজি করানোর চেষ্টা করল, যেখানে তারা দীর্ঘকাল ব্যায়াম করে আসছে। এর চেয়ে আরও বেশি ভালো জায়গা পাওয়ার কারণেই বন্ধুটি এই ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিল। অথচ সেই বন্ধু তার কথা প্রত্যাখ্যান করল এবং বহু অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও সে এই আগের স্থানেই থাকার সিদ্ধান্ত নিলো। কেননা, সে এই স্থানে অভ্যস্ত হয়ে গেছে।
একবার এক লোক হাদিস পাঠ করে জানল যে, ঈদের নামাজের ক্ষেত্রে সুন্নত হলো এক রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে যাওয়া এবং ভিন্ন রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরে আসা। কিন্তু অভ্যাসের বশে জানার পরও সেই লোক যে রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে গমন করে সেই রাস্তা দিয়েই বাড়ি ফিরে আসে।
এক মহিলা দীর্ঘদিন যাবৎ পুরোনো ডিজাইনের স্বর্ণালংকার ব্যবহার করে আসছিল। একবার তার স্বামী এগুলোর পরিবর্তে তাকে আরও উন্নত ও আধুনিক ডিজাইনের কিছু স্বর্ণালংকার কিনে দিতে চাইল। কিন্তু বেচারা স্বামী এতে সফল হলো না। কারণ, তার স্ত্রী দীর্ঘদিন যে স্বর্ণালংকার ব্যবহার করে অভ্যস্ত, তা পরিবর্তন করতে কিছুতেই রাজি হয়নি।
এক ব্যক্তি সবসময় মসজিদে ঘুমানোর পোশাক পরে উপস্থিত হতেন। কিন্তু একদিন যখন তিনি অন্য পোশাক পরে মসজিদে এলেন, সবাই ভাবল নিশ্চয়ই তার মাঝে কোনো সমস্যা হয়েছে।
আরেক ব্যক্তি সন্তানপ্রতিপালনের ক্ষেত্রে প্রহার করাকেই সবচেয়ে উপকারী মনে করত। এমনকি নিজের ছেলের শরীরে প্রহারের কালো কুৎসিত দাগগুলো দেখা সত্ত্বেও তার মায়া হতো না। কারণ, এটা তার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছিল।
একবার এক ব্যক্তির সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত একটি ঘটনা ঘটে গেল। এরপর থেকে সে সবার ব্যাপারেই মন্দ ধারণা পোষণ করত। ধীরে ধীরে এই মন্দ ধারণা করাটা তার একটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়।
আরেক ব্যক্তি, সবসময় তার কাজে দেরি করে আসত। কখনই নির্দিষ্ট সময়ে কোথাও যেতে পারত না। অবশেষে এটাই তার দীর্ঘদিনের একটি বৈশিষ্ট্য হয়ে যায়।
এই অভ্যাসগুলো কখনো কখনো একটি সামাজিক প্রচলনে পরিণত হয়ে যায়। যেমন, কোনো কোনো অঞ্চলে দেখা যায়, সেখানকার লোকেরা তাদের মেয়েকে নিজেদের গোত্র বা গোষ্ঠীর বাইরে অন্য কোথাও বিয়ে দেয় না। আবার অনেক জায়গায় বিভিন্ন কুসংস্কার ও মন্দ বিষয়কে বিয়ের ক্ষেত্রে সামাজিক রীতি বানিয়ে নেওয়া হয়। এমনইভাবে, আপনি যখন একজন মেহমানকে সম্মান করবেন, ভালোভাবে আপ্যায়ন করবেন, তখন সে ধরেই নেয় যে, আপনাকেও তার এমন আপ্যায়ন করতে হবে। এটাও একধরনের রীতি হয়ে গেছে এখন। ফলে অনেক সময় মানুষকে কষ্টের মধ্যে পড়ে যেতে হয়। সামর্থ্য না থাকায় বিষয়টা তার জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।
একটি ঘটনা
একবার এক বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে গল্প করছিলাম। একপর্যায়ে তিনি আমাকে তার জীবনের একটি ঘটনা বললেন। তিনি একদিন কাবা শরিফে জুমার নামাজ আদায় করতে গেলেন। তার পাশে তখন একজন নওমুসলিম এসে বসলেন। কিছুক্ষণ পর নওমুসলিম ভাইটি তার নিকট আবেদন জানান যে, খুতবা শেষে তিনি যেন খুতবার অর্থ তাকে বলে দেন। ফলে তিনি তাকে এর অর্থ বলে দিলেন। সেইসঙ্গে আরও বিভিন্ন কথাবার্তা বললেন। একপর্যায়ে তারা জানতে পারলেন যে, তারা দুজনই একই হোটেলে অবস্থান করছেন। পরে তারা দুজন একসঙ্গে রাতের খাবার খেতে গেলেন।
এরপর এই ব্যক্তি নিজের ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, হোটেলের টেবিলে রাতের খাবার ছিল উন্মুক্ত (যে-যার ইচ্ছামতো খাবার নেওয়ার সুযোগ রয়েছে)। ফলে নিজের পছন্দ ও অভ্যাসের কারণে ভুলেই গেলাম যে, তিনি একজন নওমুসলিম। তার সঙ্গে বসে এমনভাবে খাবার খাওয়া উচিত, যাতে সে আমার কাছ থেকে ইসলামের অনুপম কিছু আদর্শ সম্পর্কে জানতে পারে। এতএব, আমি উদাসীন হয়ে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন প্রকার খাবার নিলাম। তবে আমার সেই নওমুসলিম সঙ্গী নিজের পরিমাণ অনুপাতে খাবার নিলেন। এরপর আমরা একসঙ্গে খেতে বসলাম। খাবার খাওয়ার মাঝখানে হঠাৎ আমার সেই আদর্শের কথা স্মরণে এলো। দেখলাম আমি যে খাবার গ্রহণ করেছি, সেটা পরিমাণে অনেক বেশি। এখন আমি যদি অবশিষ্ট খাবার ফেলে দিই, তাহলে এটা এই নওমুসলিম ভাইয়ের কাছে একটা খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। ফলে আমি সবটুকু খেয়ে ফেলার প্রবল চেষ্টা করলাম, কিন্তু কোনোভাবেই সেটা সম্ভব হলো না। অবশেষে আমার এই নওমুসলিম সঙ্গী বিষয়টা বুঝতে পেরে আমার খাবারে শরিক হলেন! Read more
অভ্যাসের দাসত্ব
আমরা যখন কাজ করতে করতে হাঁপিয়ে উঠি, তখন একটু অবসরের প্রয়োজন হয়। প্রয়োজন হয় শরীরটাকে একটু বিশ্রাম দেওয়ার। এজন্য অনেককেই দেখবেন, পরিবারের সবাইকে নিয়ে তারা গ্রীষ্মের ছুটিতে দূরে কোথাও ঘুরতে চলে যায়। নিত্যদিনের কাজকর্ম থেকে বিরতি নিয়ে আনন্দভ্রমণে সময় কাটায়। বিনোদনের মাধ্যমে হৃদয়টাকে একটু প্রফুল্ল করতে জোর প্রচেষ্টা চালায়।
হ্যাঁ, আমাদের কর্মময় জীবনে এসবের প্রয়োজন অবশ্যই আছে। তবে কখনো কখনো এটা এমন এক অভ্যাসে পরিণত হয়, যার ফলে এর আসল উদ্দেশ্যই আর ঠিক থাকে না। ফলে দেখা যায়, অনেক সময় আমরা যেখানে যেতে চাচ্ছি সেখানে যাওয়াটা সম্ভব হচ্ছে না। সেটা আর্থিক কারণেও হতে পারে বা অন্য কোনো কারণে। তারপরও আমরা নির্দিষ্ট সময়েই সেখানে যাওয়ার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠি
এটা সেসব উদ্দেশ্যের জন্য নয়, যেগুলো প্রথমে আমাদের ভ্রমণের চিন্তা সৃষ্টি করেছিল। বরং এটার কারণ হলো যে, আমাদের চারপাশের সকলেই সেখানে গিয়েছে, সুতরাং আমাদেরও সেখানে যাওয়া চাই। অথচ ওই সময়ে অনেকেই ঋণে জর্জরিত হতে পারে এবং আমাদের নিকট অন্য অনেক দায়িত্ব থাকতে পারে। এতৎসত্ত্বেও কবল অভ্যাসের কারণে আরও ঋণ-কর্জ করে ভ্রমণে বের হয়ে যাই। ফলে আমাদের ঋণের বোঝা আরও বেড়ে যায়।
আমাদের মুখোমুখি হওয়া আরেকটি সমস্যা হলো, যখনই আমাদের জীবনে কাজ ও দায়িত্ব বাড়ে, তখন আমাদের অভ্যাসগুলোও বেড়ে যায়।
বিয়ের বিষয়টাই লক্ষ করুন। চাইলে এক রাতেই এর সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ফেলা যায়। কিন্তু কিছু মানুষ বিষয়টাকে (পানচিনি, গায়ে হলুদ ইত্যাদির Read More
আপনি নন অভ্যাসের দাস বইটির হার্ডকপি ক্রয় করতে এখানে ক্লিক করুন। আপনি নন অভ্যাসের দাস একটি নতুন বই তাই আপনি নন অভ্যাসের দাস বইটি PDF Download Free চাহিয়া লেখককে নিরুৎসাহিত করবেন না। তাছাড়াও আপনি নন অভ্যাসের দাস বইয়ের PDF Version এর কোনো রকম অনুমতি নেই। তাই আপনি নন অভ্যাসের দাস অরিজিনাল কপি ক্রয় করুন
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....