নাম: আস্তাকুঁড়
লেখক: মাসুম বিল্লাহ
জনরা: কিশোর গোয়েন্দা থ্রিলার
প্রচ্ছদ: মাসুম বিল্লাহ
প্রকাশনী: তরফদার
প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি, ২০২২
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১১২
মুদ্রিত মূল্য: ৩৫০/-
© Review Credit 💕 Rafia Rahman
'আস্তাকুঁড়' - মূলত একটি কিশোর গোয়েন্দা উপন্যাস আবার বলা যায় আস্তাকুঁড় ডিটেকটিভ থ্রিলারধর্মী একটি বই, অত্যন্ত চমৎকার এই বইটি রচনা করেছেন লেখক : মাসুম বিল্লাহ। আস্তাকুঁড় লেখক : মাসুম বিল্লাহ এর রচিত প্রথম উপন্যাস। যেনে রাখা ভালো যে _ আস্তাকুঁড় বইটি pdf download এখনো অফিশিয়ালি পাবলিস্ট করা হয়নি। বইটিতে মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১১২ এবং 'আস্তাকুঁড়' বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ এ তাই আস্তাকুঁড় by মাসুম বিল্লাহ বইটি সম্পর্কে আরও জানতে নিচের Rafia Rahman এর লিখিত রিভিউটি পড়তে পারেন।
ঘটনার প্রেক্ষাপট শুরু হয়েছে এভাবে,
এলাকায় হঠাৎ ভুতের গল্প রটে যাওয়ায় ভুত দেখার আগ্রহ জন্মে মাহির আর শুভর। সে ভুতের কারণে একে একে নিরুদ্দেশ হয়ে যাচ্ছে এলাকার মানুষ। ভুত দেখার আগ্রহই কাল হয়ে দাঁড়ায়। তারা এমন ভাবে ঘটনার সাথে জড়িয়ে যায় যে, অপরাধীকে ধরিয়ে দিতে না পারলে তাদের ঘাড়েই চলে আসবে মূল অপবাদ। এমন অবস্থায় নিজেদের বাঁচার তাগিদেই সত্য খুঁজে বের করার জন্য নেমে যেতে হয়। সাধারণ মানুষ থেকে হয়ে উঠে গোয়েন্দা।
গল্পের নাম ‘আস্তাকুঁড়’ কারণ একটা আস্তাকুঁড়কে ঘিরে পুরো বই। ‘আস্তাকুঁড়’ বাংলা শব্দ। যারা এর অর্থ জানেন না তাদের জন্য বলছি, ‘আস্তাকুঁড়’ হচ্ছে ময়লার স্তুপ, বা যেখানে ময়লা ফেলা হয়। কেবল ক্রাইম, ডিটেকটিভগিরিই নয়, পাশাপাশি গল্পে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি ‘আস্তাকুঁড়’ বা আপনার এলাকার ময়লার সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি। আমার পড়ালেখা পরিবেশ নিয়ে হওয়ায়, আমার অর্জিত জ্ঞান ছড়িয়ে দেয়ার একটা সুন্দর মাধ্যম মনে হলো এই গল্প।
Crime Thriller
আমাদের চারিপাশে থাকা চিরচেনা মানুষগুলো কতই না আপন। কিন্তু এই হাসিখুশি চেহারার আড়ালে যে নৃশংস কেউ লুকিয়ে নেই নিশ্চিত হয়ে কি বলা যায়...
● আখ্যান —
পহেলা বৈশাখে শুভ হঠাৎই পেয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু মাহিরকে। বন্ধুর সাথে দেখা করে জানতে পারে এক আজব ঘটনা। কিছুদিন আগে আস্তাকুঁড়ের ফার্মে রহস্যজনকভাবে পাওয়া গেছে মৃত গরুর লাশ। গলার ভিতরে চিঁড়ে ফালাফালা হয়ে গেছে! গুঞ্জন উঠে অশরীরীরা হানা দিয়েছে এলাকায়! তারপর এলাকাবাসী গায়েব হওয়া শুরু হয়। আস্তাকুঁড় থেকে আসার পথে যেন হাওয়ায় মিলিয়ে যায়...
দিনের ব্যবধারে উধাও হয়ে যাচ্ছে একে একে তাও কেউ এগিয়ে আসছে না। পুলিশও নির্বিকার! এলাকাবাসীদের রক্ষা করতে বন্ধুকে নিয়ে নিখোঁজদের সন্ধানে নেমে পড়ে মাহির। অশরীরীরা হানা দিয়েছে নাকি আস্তাকুঁড়ে কোনো সংগঠন গুজবের আড়ালে কাজ হাসিল করতে তৎপর? কিন্তু ফেঁসে যায় তারাই! পারবে কি মাহির-শুভ নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করে রহস্যের কিনারা করতে? আর কারাইবা করছে উধাও? কেন?
● পর্যালোচনা ও প্রতিক্রিয়া —
হালকা ধাঁচের গোয়েন্দা সিরিজ। প্রথম বই ❝আস্তাকুঁড়❞ আর দ্বিতীয় বই ❝নক্তচারী❞। গোয়েন্দা সিরিজ তবে বইয়ের দুই কেন্দ্রীয় চরিত্র কেউই গোয়েন্দা নয়। ঝোঁকের বশে গোয়েন্দাগিরি শুরু করে কিন্তু ফেঁসে যায় গ্যাড়াকলে।
Bram Stoker Book Bangla Anubad PDF
এলাকায় হতে থাকা নিখোঁজ ব্যক্তিদের নিয়ে উঠা উড়ো কথায় আগ্রহী হয়ে উঠে মাহির সাথে যোগ হয় বন্ধু শুভ। এককালের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সাথে মেসমেট তারপরও দুই বন্ধুর মধ্যে ব্রোবন্ডিং জমে নাই। একে অপরকে ❝তুমি❞ বলে সম্বোধন করা সাথে ফরমাল বিহেভিয়ার। যেন সদ্যই পরিচিত! কাহিনীর প্লট হলো ঢাকার এক এলাকার আস্তাকুঁড় নিয়ে যেখানে হঠাৎ করেই নিখোঁজ হওয়া শুরু করেছে এলাকাবাসী। আস্তাকুঁড়ে ঢুকতে তো দেখা যায় তবে আর বের হয়ে আসে না! কোথায় যাচ্ছে এলাকাবাসী এরই খোঁজে নামে দুই বন্ধু। আস্তাকুঁড়ের ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমটা দারুণ লেগেছে। এলাকাবাসীকে দুটি ঝুড়ি দেওয়া হয় একটায় পচনশীল আর অন্যটায় পলিথিন জাতীয় জিনিস রাখতে হবে। নির্দিষ্ট সময় পর আস্তাকুঁড়ের লোকেরা এসে নিয়ে যাবে। কিন্তু যদি ভুল হয় তাহলে নিজে যেয়ে দিয়ে আসতে হবে সাথে পানিশমেন্টও আছে। ওয়েল ফার্নিশড ম্যানেজমেন্ট কিন্তু বিনিময়ে এলাকাবাসী থেকে কিছুই নেয় না। মাহিরের মতো আমারও প্রশ্ন বিনামূল্যের এই সেবা আসলে সম্ভব হচ্ছে কী করে? কিন্তু বইয়ে এর কোনো জবাব নেই। নিখোঁজ রহস্যের পিছে প্রথমে যে থিওরী দাড় করানো হয়েছিল সেটাই আমার কাছে বেশি যুক্তিসঙ্গত লেগেছে। আর সেটা হলে থ্রিল আর অ্যাকশনের পরিমাণ বেশি হতো। শেষটা কেমন যেন অগোছালো। পুলিশের চরিত্রগুলোকে এত দূর্বল দেখানো হয়েছে! ন্যাশনাল একটা কেস কিন্তু পুলিশ কিছুই করতে পারে নাই তারউপর যাকে সাসপেক্ট হিসেবে সন্দেহ করছে সেই কেস সল্ভ করে দিবে এই আশায় বসে আছে। আবার হুট করেই সমাপ্তি টানা। শেষে যেয়ে আদোও জড়িতরা ধরা পড়েছে কিনা এনিয়ে পরিষ্কারভাবে কিছু বলা হয়নি। পরবর্তী বইয়ে বলা হয়েছে কিনা... যদিও শুনেছি স্ট্যান্ড অ্যালোন।
● লেখনশৈলী ও বর্ণনা —
ইউনিক প্লটের উপর লেখা বই তবে উপস্থাপনা পরিষ্কার হয়নি। অধিকাংশ সময়ই শুধুই সংলাপ, পারিপার্শ্বিক বর্ণনা তুলনামূলক কম। আবার অনুসন্ধান ছাড়ায় জাস্ট অনুমানের উপর ভিত্তি করে কেস অলমোস্ট সল্ভ। তবে মাঝামাঝি আর শেষ অংশে অল্প কিছু অনুসন্ধান দেখানো হয়েছে। শেষ অংশ দারুণ কিছু হতে পারতো, নিখোঁজ রহস্যের কারণ এমন করেই সাজানো তবে কল্পপট তেমন ফুটে উঠেনি যথার্থ আলোচনার অভাবে।
● চরিত্রায়ন —
সদ্য গোয়েন্দা খেতাব পাওয়া দুই বন্ধুই মূল চরিত্র। মাহির, দারুণ রাধুনি। রান্না করা তার জন্য রিফ্রেশমেন্ট। বইয়ে রান্না করতে করতে কেসে কাজ করতে দেখা গেছে। তবে মাহিরের প্রফেশনাল লাইফ নিয়ে কিছু বলা হয়নি। শুভ, ছোটখাটো রাইটার সাথে টুকিটাকি কিছু টিউশন করায়; গল্পকথকও। নারানদা, আস্তাকুঁড়ের ম্যানেজার। এসআই সাহেব, কেসের দ্বায়িত্বরত অফিসার। কেস সল্ভ করতে চান তবে বিগড়ে যাওয়ার ভয়ে তেমন কিছুই করেন না।
● প্রোডাকশন —
বইয়ের বাঁধাইয়ের মান ভালো, টাইটফিটিং তবে স্মুথ। পেজ উল্টিয়ে পড়া গেছে আরামে। পেজ, হার্ডকভার আর জ্যাকেটের মানও ভালোই।
● বানান ও সম্পাদনা —
বানান ভুল আর টাইপিং মিস্টেকের মহোৎসব যেন বইয়ে। সবচেয়ে বেশি ভুল করা শব্দ ❝মেস❞; প্রায় ১৫+ বার লেখা ❝ম্যাস❞, দু'তিনবার খালি মেস লেখা।
ধরুন কোনোদিন আমার মেসে খাবার নেই, নির্দিধায় কোনো বন্ধুকে জানিয়ে দিতাম তার ম্যাসে(মেসে) খাবার ব্যবস্থা করার জন্য। পৃষ্ঠা- ৩২
কার- এর ব্যবহারে বেশ কিছু ভুল আছে বিশেষ করে ❝ো❞, ❝ি❞, ❝ে❞ সাথে স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণেও।
হচ্ছ(হচ্ছে), হয়ত(হয়তো), কথায়(কোথায়), আচ্চা(আচ্ছা), সন্দেহর(সন্দেহ), আচে(আছে), ওয়ার্ডার(অর্ডার), পাসে(পাশে), খাবার(খাওয়ার), আমার(আবার), জীবণ(জীবন), ইচ্চা(ইচ্ছা), করলমা(করলাম), নিবের(নিবেন), লাসটা(লাশটা), লাস(লাশ), দুই(তুই), দিয়(দিয়ে)। পৃষ্ঠা- ১৫, ২০, ২৭, ৪৩, ৪৬, ৬৭, ৭২, ৭৮, ৮৩, ৮৪, ৮৬, ৯৫, ৯৬, ৯৮, ৯৯, ১০০, ১০১
কিন্তু শব্দ আর লাইন ভেঙে গেছে।
সন্দেহ জনক(সন্দেহজনক), দিন গুলো(দিনগুলো), মাদক সেবি(মাদকসেবি)। পৃষ্ঠা- ২৯, ৩০, ১০৬
একই শব্দের পুনরাবৃত্তি।
আমরা কাছের কাছের একটা রেস্টুরেন্ট থেকে খাওয়া শেষ করে, আমি বাসায় চলে এলাম। পৃষ্ঠা- ৫৫
যেদিন এই আপনারা, আমরা থেকে থেকে উঠে এক লাইনে দাঁড়াতে পারবেন সেদিন ঐ ধরনের বড় বড়ো কথা বলবে(বলবেন)। পৃষ্ঠা- ৮৫
Dr. Rageb Sarjani Bangla Anubad
বিরামচিহ্নের ব্যবহারেও সমস্যা আছে।
'জামিল সাহেব নিখোঁজ?(।)' মাহির উত্তর দিল। পৃষ্ঠা- ৫৬
এমন আরও আছে বিশেষ করে ❝দাঁড়ি❞, ❝প্রশ্নবোধক চিহ্ন❞, ❝কমা❞, ❝উদ্ধৃতি চিহ্ন❞- তে।
● প্রচ্ছদ ও নামলিপি —
প্রচ্ছদে ফুটে উঠেছে আস্তাকুঁড়ের দৃশ্য। তবে হন্টেড হাউজ না দিয়ে কারখানা বা ফার্ম দিলে গল্পের সাথে রিলেটেড হতো। প্রচ্ছদ আর নামলিপি মোটামুটি লেগেছে।
মাহিরের রান্না করার অদ্ভুত ট্যালেন্টই আমার কাছে নিখোঁজ রহস্যের থেকেও ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে। শুরু ভালো হলেও সমাপ্তি আশানুরূপ হয়নি।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....