Title | বাজি |
Author | নাবিল মুহতাসিম |
Publisher | বাতিঘর প্রকাশনী |
Quality | হার্ডকভার |
ISBN | 9789848729410 |
Edition | 1st Published, 2018 |
Number of Pages | 319 |
Country | বাংলাদেশ |
Language | বাংলা |
"এ বড় দারুণ বাজি, তারে কই বড় বাজিকর
যে তার রুমাল নাড়ে পরানের গহীন ভিতর।" - সৈয়দ শামসুল হক
বাজিকর বইয়ের সেই ইউক্রেন মিশনের ছয় মাস পরের কাহিনী নিয়ে বাজি বইয়ের মূল প্লট। হুইসলব্লোয়ার কার্ল হাসান সেভার্স বন্ধু সাব্বিরকে নিয়ে সিলেটের এক চা বাগানে বসে একটি ওয়েবসাইট খুলে ‘দ্য অক্টোপাস’ এর গোপন নথি ফাঁস করতে শুরু করেছে। তাদের থামাতে দ্য অক্টোপাস সমস্ত শক্তিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, নানান দেশের সেরা এজেন্টদের একের পর এক পাঠিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশে।
ভিনদেশি এজেন্টদের ঠেকাতে জাগিয়ে তোলা হয় সাড়ে চার বছর ধরে কোমায় পড়ে থাকা এজেন্ট বাবু'কে। বাবুকে জাগানোর মানে একটাই-আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে দেশের মাথায়। ফেল মেরে গেছে বাকি সব এজেন্ট।রহস্যময় এক সুপার জিনিয়াস স্ট্র্যাটেজিস্ট মাস্টার সিফাতের বুদ্ধি নিয়ে কাজ করতে হবে ওকে, যার স্ট্র্যাটেজিতে করা ইউক্রেন মিশন ব্যর্থ হয়েছিল ভয়ানকভাবে। অনেকগুলো প্রশ্ন উঁকি দিতে থাকে বাবুর মনে। কিন্তু তার আগে তাকে লড়তে হবে রাশিয়া , পাকিস্তান, আমেরিকা , ইংল্যান্ডসহ আরও নানান দেশের সেরা এজেন্টদের সাথে।
পাঠ- প্রতিক্রিয়াঃ
সুলেখক নাবিল মুহতাসিমের এসপিওনাজ থ্রিলারধর্মী বাজিকর ট্রিলোজির দ্বিতীয় বই বাজি। ট্রিলোজির প্রথম বাজিকর আমার বেশ ভালো লেগেছিল। তাই কয়েক দিনের ব্যবধানেই দ্বিতীয় বই বাজি পড়া শুরু করি। বাজির প্লট বাজিকরের থেকেও বেশি উত্তেজনাপূর্ণ ও বিস্তৃত। কাহিনী বেশ গতিশীলও , তরতর করে পাতার পর পাতা পড়ে যাচ্ছিলাম। প্রথম বইয়ে খুব কম সময়ের জন্য দৃশ্যপটে আসা বাবুই এই বইয়ের মূল চরিত্র। বাজিকরে বাবুকে খুব কম সময়ের জন্য দেখা গেলেও তার চরিত্রটা আগ্রহ জাগাতে পেরেছিল। কোমায় থাকা একটি বিশেষ এজেন্টের মিশনের গল্প যাকে শুধু দ্য এজেন্সির বাকিসব এজেন্ট ফেল মেরে গেলেই জাগিয়ে তোলা হয় – এটুকুই অনেক এক্সাইটিং মনে হচ্ছিলো। আর এমনিতেই বাজিকর ভালো লাগার কারণে বেশ উচ্চাশা নিয়েই বাজি শুরু করি। উচ্চাশা নিয়ে শুরু করা যে ভুল হয়নি তা প্রথম ৫০-৬০ পৃষ্ঠা পড়েই বুঝতে পারছিলাম। প্লট বিল্ডিং ও এক্সিকিউশন এক কথায় দুর্দান্ত। যেভাবে গল্পটা শুরু হয়েছে এবং বাঁকে বাঁকে কিছু ছোট বড় টুইস্ট এবং অনেকগুলো চরিত্রের আনোগানোয় এগিয়ে গিয়েছে তা চমৎকার লেগেছে। মূল প্লটের পাশাপাশি কিছু দারুণ সাবপ্লটও ছিল বইতে। তবে বইয়ের ব্যাক কভারে দেওয়া কাহিনী সংক্ষেপটা আমার কাছে অনেক বেশিই রিভিলিং মনে হয়েছে। ব্যাক কভারে এমন ভাবে কিছু প্রশ্ন করা হয়েছে যার কারণে কিছু টুইস্ট (যেগুলো একেবারেই অপ্রত্যাশিত হওয়ার কথা ছিল) দেখে খুব বেশি একটা শকড হয়নি। তাই কাহিনী সংক্ষেপ লেখার সময় আমি বেশি রিভিলিং পয়েন্টগুলো বাদ দিয়ে নিজের মতো করে লিখেছি। বইটা পড়তে যারা আগ্রহী ব্যাক কভারের লেখা এভোয়েড করতে বলবো।
বাজি নাবিল মুহতাসিমের তৃতীয় মৌলিক বই। লেখকের আগের দুটো মৌলিক, ‘শ্বাপদ সনে’ ও বাজিকর আমার পড়া ছিল। দুই একটা ছোট খাট অভিযোগ থাকেলও বই দুটোতে লেখনী বেশ সাবলীলই লেগেছিলো। বাজিতে এসে নাবিল মুহতাসিমের লেখনী আরও সাবলীল, পরিণত ও গোছানো মনে হয়েছে। উন্নতির গ্রাফ প্রতি বইয়েই ঊর্ধ্বমুখী। বাজি ও শ্বাপদ সনের থেকে বর্ণনাভঙ্গীতে লেখকের নিজস্বতাটাও অনেক বেশি করে ফুটে উঠেছে এই বইয়ে। স্টোরিটেলিং বেশ ডিস্টিঙ্কটিভ।সমসাময়িক অনেক লেখক থেকেই এই জায়গায় নাবিল মুহতাসিম আলাদা। বইয়ের প্রতিটি ডিটেইলিং অনেক যত্নসহকারে এবং দক্ষভাবে করেছেন লেখক। বইয়ের ভেতরের জগতটাকে খুব সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারেন নাবিল মুহতাসিম এবং খুব কম সময়ের মধ্যেই পাঠককে সেখানে পুরোপুরিভাবে প্রবেশ করাতে পারেন।
বাজি বইয়ের পাতায় পাতায় প্রচুর একশন ছিল। একশন সিকুয়েন্স বর্ণনায় লেখকের মুনশিয়ানার কারণে মনে হচ্ছিলো যেন কোন দুর্দান্ত গ্রাফিক নভেল পড়ছি। খুব সহজে প্রতিটি দৃশ্যই ভিসুয়ালাইজ করতে পারছিলাম । বইতে একশন ও ড্রামার পরিমাণ কারো কাছে একটু বেশি বেশিও মনে হতে পারে। কিন্তু বইটাই এমন এবং আমি বেশ উপভোগ করেছি ব্যাপারগুলো। লেখকের চমৎকার বর্ণনার কারণে হাঁপিয়ে যাওয়ার বা বিরক্ত হওয়ার কোন সুযোগ ছিল না।
বাজি বইয়ের মূল চরিত্র বাবুকে দারুণ লেগেছে। প্রথম বইয়ের আহাদের মতো বাবু চরিত্রটিরও সাহসী ও শক্তিশালী এজেন্ট হওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য দিকগুলো সুন্দরভাবে উঠে এসেছে বইয়ে। বাবুর চরিত্রে দ্যা উইন্টার সোল্ডার ভাইবস পেয়েছি। দ্য এজেন্সির ডিরেক্টর আতিয়ার রহমান, মাস্টার সিফাত ও ট্রাভিস আরভাইনকেও বেশ ভালো লেগেছে। বাবুর সাথে মুখোমুখি হওয়া ভিনদেশী এজেন্টগুলোও আলাদা ছাপ রেখে যাচ্ছিলো, দৃশ্যপটে তারা যত কম সময়ের জন্যই আসুক না কেন ।
বাজি বইয়ের সমাপ্তিটাও আমার দারুণ লেগেছে। শেষ ৫০-৬০ পৃষ্ঠা একদম রকেট গতিতে এগিয়েছে। প্রথম থেকে শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত লেখক টানটান উত্তেজনা ধরে রাখতে পেরেছেন। দুই একটা সাবপ্লট অবশ্য অপূর্ণ রয়ে গেছে , একটা ট্রিলোজির দ্বিতীয় বইয়ের ক্ষেত্রে যেটা অস্বাভাবিক কিছু না। একদম শেষের ক্লিফহ্যাঙ্গারের কারণে ট্রিলোজির শেষ বই বাজিমাত শুরু করার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি।
বাজি বইয়ে বানান ভুল বা টাইপিং মিস্টেক খুব বেশি একটা চোখে পড়েনি। বাঁধাইও মোটামুটি ভালো। ডিলানের করা প্রচ্ছদটা দারুণ লেগেছে। (আমার দেওয়া ছবিতে অবশ্য প্রচ্ছদের রঙটা হালকা অন্যরকম দেখাচ্ছে)
সর্বোপরি , গতিশীল ও টানটান উত্তেজনাপূর্ণ একটি চমৎকার এসপিওনাজ থ্রিলার ‘বাজি’। এসপিওনাজ থ্রিলার হলেও ইমোশন ও 'ড্রামার' কমতি নেই বইতে। একশনও প্রচুর। এই ধরণের বই ভালো লাগলে বা মৌলিক এসপিওনাজ ,স্পাই থ্রিলারের স্বাদ নিতে চাইলে বাজিকর ট্রিলোজি পাঠকদের মিস দেওয়া উচিৎ হবে না। লেখক নাবিল মুহতাসিমের জন্য অনেক শুভ কামনা রইল।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....