বাঙলা বানান রীতি বইটি কেন পড়বেন? : জাফর সাদিক | Bangla Banan Riti By Zafar Sadiq

  • বাঙলা বানান রীতি
  • #১ বেস্টসেলার বাংলা ব্যাকরণ ও ভাষা শিক্ষা
  • লেখক : জাফর সাদিক
  • প্রকাশনী : ফাতিহ প্রকাশন
  • বিষয় : বাংলা ব্যাকরণ ও ভাষা শিক্ষা
  • পৃষ্ঠা : 90, কভার : পেপার ব্যাক, সংস্করণ : 1st Published, 2021


বাঙলা লিখতে গিয়ে সবচেয়ে বড় যে সমস্যায় পড়তে হয়, তা হলো এর বানান-রীতি। আর প্রচুর ভুল জানা ও সম্পাদনার অভাবে জর্জরিত শিক্ষা ব্যবস্থায় হাতেখড়ি মহাশয় যেন লুকিয়েই থাকেন। এই বইটি হতে পারে ওসব সমস্যার সহায়ক। আমি বানান বিভ্রাট অপছন্দ করলেও নিজেরই অজান্তে কিংবা জানার ভুলে কত শত ভুল যে হয়ে যায়, তার ইয়ত্তা নেই। 

লেখকের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস আশা করছি ধাপে ধাপে কাজে লাগবে। একবৈঠকে শেষ করার মতো বই হলেও বারবার রিভাইজ করার বহু অধ্যায় বইটিতে রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো প্র‍্যাক্টিস বা চর্চা জরুরি। বাঙলা মানে বাঙলাকে বাঙলাই হতে হবে। তাই অনুশীলনের বিকল্প নেই। এমন দুচার গ্রন্থ পাঠ করেও আপনি সহসাই বাঙলা বিশারদ হয়ে যাবেন এ কথা ভাববেন না। কিন্তু প্রচুর উপকার হবে, যখন আপনি আপনার ভেতরের জানা অজানার জগতকে ঘষামাজার সু্যোগ পাবেন। 

যে কোনো ভাষার কিছু নিয়মকানুন থাকে। বাঙলা ভাষার ক্ষেত্রেও রয়েছে। অন্য ভাষা শেখার জন্য চাই মাতৃভাষাকে আত্মস্থ করা। প্রতিটি শব্দের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। রয়েছে আলাদা অর্থ। তাই বানান বিভ্রাট অর্থ পরিবর্তন করে ভাষার মূলভাব নষ্ট করে। এর জন্য বাঙলা বানান রীতি জানা আবশ্যক। 

বইয়ের বিষয়বস্তু সম্পর্কে ইতিমধ্যে আপনারা ধারণা করতে পেরেছেন। সুচিপত্র থেকেও বোধগম্য হয় যে, বাঙলা ভাষায় ব্যবহৃত শব্দের বানান চর্চার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

মতামতঃ 

যুক্তবর্ণ অধ্যায় দিয়ে শুরু হওয়া বইটি শেষ করা হয়েছে *একজন ভালো লেখক হতে হলে কী কী করতে হবে* এই টিপস্ দিয়ে। এটি কোনো ব্যাকরণের বই নয়। লেখক জাফর সাদিকের পিতাও ছিলেন ভাষাবিষয়ক উস্তাদ। তাই তার হাতেখড়িও হয়েছিল ঘর থেকে। ঘরের আঙিনা পেরিয়ে পাঠকের হাতে তাই তুলে দিতে চেয়েছেন কারিশম্যাটিক বই। 

আমার মতো যারা ব্যাকরণ পড়তে পছন্দ করেন, তাদের জন্য বইয়ের অনেক অধ্যায় নতুন নাও মনে হতে পারে। কিন্তু সুচীপত্রের শিরোনামগুলো আপনাকে আগ্রহী করবে। এরপরেও আমি বলবো, নতুন করে আমি অনেক কিছু শিখেছি। এখনো অনেক পাঠক/লেখক জানেন না কী/কি, ব্যবহার/ব্যবহৃত, মাত্র, র/ড় এর মতো অনেক কিছুর ব্যবহারে কতখানি পার্থক্য রয়েছে। 

খেয়াল করে দেখে থাকবেন বইটির প্রচ্ছদেও উদাহরণ দেয়া আছে। তেমনি দেশের নামের বানানের ক্ষেত্রেও 'বাঙলাদেশ' ব্যবহার করা আমার কাছে রীতিমত সাহসী উদ্যোগ মনে হয়েছে। লেখক খুব সতর্কতার সাথে লিখেছেন। বানানের ক্ষেত্রে সজাগ দৃষ্টি রাখলে পাঠকেরা ভালো একটা ক্লাস করার সুযোগ পাবেন। 

কিছু শিরোনাম যেমন *ইন শা আল্লাহ*, *বাহারি রঙের ফল*, *ফুলজাতীয় জিনিস এবং কলমজাতীয় বস্তু*, *অংশদার*, *দেই-দিই.........*, *আল্লাহ হাফীয*, *আরবী ভাষায় এ কার বর্জন* - খুব চুম্বক শিরোনাম বলে মনে হয়েছে। 

সবচেয়ে ভালো লেগেছে। শেষ দুই অধ্যায়। তার মধ্যে *আরবী বাঙলা প্রতিবর্ণায়নীতি* অধ্যায়টি।  

লেখক খুব অল্পতে ও সহজে মূল কথাটি বোঝানোর ক্ষমতা রাখেন। আমার মতো পাঠকের তিনি ভালো শিক্ষক। আমি অল্পতে শিখতে পছন্দ করি। 

প্রকাশকের কথাটি বইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বাঙলা ভাষার ইতিহাসটা তিনি যেভাবে শুরু করে ইতি টেনেছেন, তা প্রশংসনীয়। আর এই আইডিয়াটাও নিঃসন্দেহে ভালো ছিল। কিন্তু লেখকের পরিচিতি অংশের দিকে আরো গুরুত্ব দেয়া উচিত ছিল। বানান-রীতি বইয়ের বানানে এক চুলও ছাড় দিলেও সেটা বেমানান। কারণ এর প্রতি ইঞ্চিও প্র‍্যাক্টিক্যাল শিক্ষা। *তিনার শব্দের স্থলে *তার লেখার অনুরোধ। সম্পাদনার মানেও যথেষ্ট পরিশ্রম ও যত্নের ছাপ রয়েছে। 

সর্বপরি, কিছু পারিভাষিক শব্দের ব্যবহারে লেখক যে মাসয়ালা দিয়েছেন, সেখানে বোদ্ধা পাঠকদের জন্যও যুক্তিখন্ডনের জায়গা রয়েছে। আশা করি, বিরাজমান বনাম বিদ্যমান এমন শিরোনামে পরবর্তী বইতে পাবো। তাছাড়া লেখক তার জানা সকল সহায়ক জ্ঞান আমাদের মাঝে বিলিয়ে দিবেন। 

যাদের চায়-চাই, অর্থাৎ য় ও ই এর ব্যবহারবিধিতে সমস্যা রয়েছে, তারা অবশ্যই বইটি পড়বেন।

বাঙালি হয়ে বাঙলা বানান না জানা খুবই লজ্জাস্কর। আর এই ভুলের ইতিহাস বহু পুরনো। মাতৃভাষা হলেও বাঙলাকে আমরা কঠিন করে ফেলেছি। শুদ্ধ বানান চর্চা তো আরও আগেই উঠে গেছে। যেখানে কিছু নিয়ম মনে রাখলেই সবটা সহজ হয়ে যায়, সেখানে এমন একটি গ্রন্থ হলে তো কথাই নেই। 

সময়োপযোগি গ্রন্থটির ধারাবাহিক আলোচনা ও নির্দেশিকা পাঠক হিসেবে আমাকে মুগ্ধ করেছে। গৎবাধা ব্যাকরণের নিয়মকানুন বহির্ভূত, সহজ যুক্তিসংগত উদাহরণ গ্রন্থটিকে সাবলীল করেছে। যোগ করেছে প্রাঞ্জলতা। আমি আশাবাদী। শুভকামনা নিরন্তর।

কি বনাম কীযে প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ/হাঁ বা না দ্বারা দিলেই যথেষ্ট, সেই প্রশ্নে ই-কার-যোগে ‘কি’ হবে। যেমন: আপনি কি ছাত্র? সে কি মাদরাসায় পড়ে? তিনি কি কুমিল্লায় আসবেন? প্রশ্ন তিনটার উত্তরে হাঁ বা না আসে।যে প্রশ্নের উত্তর হাঁ বা না দ্বারা দেওয়া যায় না, সেই প্রশ্নে ঈ-কার-যোগে ‘কী’ হবে। যেমন: আপনি কী ধরনের খাবার পছন্দ করেন? সে কী বলতে চায়? তিনি কী দিয়ে খাবার খাচ্ছেন? প্রশ্ন তিনটার উত্তরে হাঁ বা না আসে না।বিস্ময়সূচক অব্যয় যদি বাক্যের শেষ বসে, তবে তা ই-কার-যোগে ‘কি’ হবে। যেমন: তোমার কথা শুনে আমি বিপদে পড়ি আর কি! আরে ওর কথা আর বলবই-বা কি! তুমি আমার জন্যে এ জীবনে করেছটাই-বা কি!বিস্ময়সূচক অব্যয় যদি বাক্যের শুরুতে বসে, তবে তা ঈ-কার-যোগে ‘কী’ হবে। যেমন: কী এক মুশকিলে পড়লাম! কী মারাত্মক খুনি! কী ভয়াবহ অবস্থা....

প্রকাশকের কথা

বাংলা ভাষা বিকাশের ইতিহাস ১৩০০ বছর পুরনো। চর্যাপদ এ ভাষার আদি নিদর্শন। অষ্টম শতক থেকে বাংলায় রচিত সাহিত্যের বিশাল ভাণ্ডারের মধ্য দিয়ে অষ্টাদশ শতকের শেষে এসে বাংলা ভাষা তার বর্তমান রূপ পরিগ্রহণ করে। বাংলা ভাষার লিপি হল বাংলা লিপি।

বাংলা ভাষা (বাঙলা, বাঙ্গলা, তথা বাঙ্গালা নামেও পরিচিত) একটি ইন্দো-আর্য ভাষা, যা দক্ষিণ এশিয়ার বাঙালি জাতির প্রধান কথ্য ও লেখ্য ভাষা। মাতৃভাষীর সংখ্যায় বাংলা ইন্দো ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের পঞ্চম ও মোট ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনুসারে বাংলা বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম ভাষা। বাংলা সার্বভৌম ভাষাভিত্তিক জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা তথা সরকারি ভাষা।

এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসামের বরাক উপত্যকার সরকারি ভাষা। বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের প্রধান কথ্য ভাষা বাংলা। এছাড়া ভারতের ঝাড়খণ্ড, বিহার, মেঘালয়, মিজোরাম, উড়িষ্যা রাজ্যগুলোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাংলাভাষী জনগণ রয়েছে। ভারতে হিন্দির পরেই সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা বাংলা।

এই ভাষার মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এ দেশের ছাত্র সমাজ ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদী ছাত্র ও আন্দোলনকারীরা সংখ্যাগরিষ্ঠের মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষাকরণের দাবিতে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেন। ১৯৮৭ সালের বাংলা ভাষা প্রচলন আইন বাংলাদেশের সকল রাষ্ট্রীয় কাজে বাংলার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।১৯৫২ সালের ভাষা শহিদদের সংগ্রামের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারি দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।

বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। মাতৃভাষাকে যদি আমরা শুদ্ধভাবে পড়তে বলতে লিখতে চাই; তাহলে অবশ্যই নিয়মনিষ্ঠভাবে তার চর্চা না করে উপায় নেই। বাংলা ভাষাকে আমরা ভালোবাসি কিন্তু বাংলা ভাষা শুদ্ধভাবে পড়তে বলতে লেখতে আমরা আগ্রহী নই। অনেকে বাংলা ভাষাকে কঠিন ভাষা বলে আখ্যাত করে। আমি জানি না তারা বাংলা ভাষাকে কেন কঠিন ভাষা বলে আখ্যাত করে? কোনো ব্যক্তির জন্য শুভা পায়না তার মাতৃভাষাকে সে কঠিন ভাষা বলে আখ্যাত করবে। মাতৃভাষা থেকে সহজ অন্য কোন ভাষা হতে পারেনা। কারন জন্মের পর থেকেই একজন ব্যক্তি মাতৃভাষায় কথাবার্তা বলে বেড়ে উঠে।

বাংলা ভাষা লেখাতে মানুষ বানানের ভুল বহুকাল আগে থেকে করে আসছে। বাংলা বানানের সমস্যার ভয়াবহতা উপলব্ধি করে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৩৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করলে রাজশেখর বসুকে সভাপতি ও চারুচন্দ্র ভট্টাচার্যকে সম্পাদক করে বাংলা বানানের নীতিমালা প্রণয়নের জন্য একটি সমিতি পর্যন্ত গঠন করে ছিলেন।

কিন্তু কি লাভ; দেশের এমনই দুর্ভাগ্য যে পত্র পত্রিকায়, সাময়িকীতে, বইপুস্তক, টেলিফোন, বিজ্ঞাপনে ইত্যাদি ক্ষেত্রে অজস্র বানানভুল ও ভাষার অপপ্রয়োগ নিত্য চোখে পড়ার মত। আর মানুষ সে ভুল বানান-রীতিকে অনুসরণ করে প্রতিনিয়ত শুদ্ধ বানান পড়া বলা লেখা হতে নিজেদের দূরত্ব তৈরি করে চলছে। তাদের আমি বিনীত অনুরোধ করব ; আপনারা শুদ্ধ বানান লিখুন এবং মানুষের মাঝে শুদ্ধ বানান ও শুদ্ধ ভাষার প্রচার করুন।

লেখক জাফর সাদিক ভাই বইটিতে সাধারণ মানুষজনদের জন্য শুদ্ধ বানান লেখার ও শব্দের শুদ্ধ প্রয়োগের নিয়মকানুন নিয়ে আলোকপাত করেছেন। যারা বাংলা ভাষাকে শুদ্ধ ও নির্ভুল লিখতে চান; শব্দের শুদ্ধ প্রয়োগ করতে চান বইটি তাদের জন্য।

শুদ্ধ বানান ও শব্দের শুদ্ধ প্রয়োগের স্বপক্ষের বই বাঙলা বানান-রীতি। এই বইটি পড়ে একজন ব্যক্তিও যদি শুদ্ধ বানান ও শব্দের শুদ্ধ প্রয়োগ শিখতে পারেন, তাতেই লেখক, সম্পাদক, গ্রাফিক্স ডিজাইনার, প্রকাশক এবং বইয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের পরিশ্রম সার্থক হবে, ইন শা আল্লাহ।

বাংলাভাষী পাঠকদের হাতে দুর্দান্ত এই বইটি তুলে দিতে পেরে ফাতিহ পরিবার আনন্দিত। আল্লাহ যেন আমাদের ভুলত্রুটি মাফ করে দেন। আমাদের কাজগুলোতে বরকত দান করুন। আমীন ইয়া রাব্বুল আলামিন। জান্নাতের ফুলবাগিচায় আমরা যেন সাথী হতে পারি।

প্রকাশক
মোহাম্মদ সাগর ইসলাম

বই- বাঙলা বানান-রীতি
লিখেছেন- জাফর সাদিক
প্রকাশক- ফাতিহ প্রকাশন
মুদ্রিত মূল্য- ১৪৩টাকা

Comments

Popular posts from this blog

সিক্রেটস অব জায়োনিজম Full PDF : লেখক হেনরি ফোর্ড | Secrets of Jainism Bangla Anubad PDF

[PDF] সীরাহ মুহাম্মদ প্রথম খন্ড এবং দ্বিতীয় খণ্ড রেইনড্রপস পিডিএফ - Sirah Muhammad (sa:) First & Last Raindrops

গাযওয়াতুল হিন্দ বই pdf - প্রফেসর ড. ইসমাতুল্লাহ | Gazwatul Hind by Professor Dr. Ismatullah