বিভীষিকা : হিমেল রহমান - বই রিভিউ | Bibhishika By Himel Rahman

Title বিভীষিকা
Author হিমেল রহমান
Publisher ভূমিপ্রকাশ
Quality হার্ডকভার
ISBN 9789849301805
Edition 1st Published, 2018
Number of Pages 88
Country বাংলাদেশ
Language বাংলা
Review Credit 💕 Sahadul Tanzim

বিভীষিকা : হিমেল রহমান - রিভিউ | Bibhishika By Himel Rahman

বিভীষিকা বইয়ের মূল গল্প : চরের বুকে ১৬ টি জেলে পরিবারের প্রায় ৫০ জন লোকের বসতি রুপশ্রীনগর গ্রাম। এক রাতে অদ্ভূত কোন কারণে পুরো গ্রামের সব মানুষ মারা যায়। প্রতিটি মানুষের মৃত্যু ঘটেছে একই সময়ে এবং বীভৎসভাবে। এর পরের ঘটনা স্থল ঢাকা। এই ঢাকার বুকেও পৈশাচিক ভাবে খুন হন এক ব্যক্তি। অবাক করা বিষয় হলো, ঢাকার বুকে ঐ ব্যক্তির খুনের সাথে মিল পাওয়া যায় রুপশ্রীনগরের মারা যাওয়া জেলে পরিবারগুলোর খুনের মাঝে। প্রত্যেকের কপালেই পাওয়া গেছে অদ্ভূত এক সিম্বল। 

খুনের রহস্য উদঘাটনে তদন্তে নামে ডিবির ইনভেস্টিগেটর রুহান। সাথে থাকে সহকারী আদিল। সূত্র খোঁজার মিশনে নেমে রুহান বুঝতে পারে এই খুনগুলো স্বাভাবিক কোন খুন নয়৷ আউট অফ দ্য বক্স চিন্তা করে এগোতে হবে৷ যুক্তির বাইরে গিয়ে ভাবতে হবে এই ভয়াল বিভীষিকার হাত থেকে দেশের মানুষকে নিরাপদ রাখতে হলে।

কথা বলছিলাম ভূমি প্রকাশ থেকে ২০১৮ সালে প্রকাশিত হওয়া হিমেল রহমানের প্রথম মৌলিক উপন্যাসিকা 'বিভীষিকা' নিয়ে। প্লট সম্পর্কে তো আইডিয়া পেলেন, এবার বলা যাক সবমিলিয়ে কেমন ছিলো এই বই পড়ার অনুভূতি।

৮৫ পৃষ্ঠার 'বিভীষিকা' বইটির কোর প্লটকে কোন স্পেসিফিক জনরায় ফেলতে হলে আমি বলবো এটি একটি আরবান ফ্যান্টাসি। কোর প্লটটি ভালো হলেও লেখক পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন এটার এক্সিকিউশনে। আমি কখনোই কোন বই পড়ার ক্ষেত্রে ভুল ধরার মেন্টালিটি নিয়ে বসি না। 

তবে এই বইটার একদম শুরুর পৃষ্ঠার বর্ণনাই আমাকে দূর্বল বর্ণনার হিন্ট দেয়। শুরুতেই এরকম দূর্বল বর্ণনা কিভাবে লেখক/সম্পাদক মন্ডলীর চোখ এড়িয়ে প্রিন্ট হলো সেটা এক মূহূর্ত আমার ভাবনায় আসলেও তা এড়িয়ে বইটাতে মনোনিবেশ করার চেষ্টা করি আমি। কিন্তু দ্বিতীয় অধ্যায়ের শুরুতেই একটা পত্রিকার রিপোর্ট আমার মনোনিবেশ আবার নষ্ট করে। রিপোর্টটা যে ভাবে লেখা হয়েছে তা পড়ে আসলে কোনভাবেই একটা পত্রিকার রিপোর্ট মনে হচ্ছিলো না। একটা লাইনের উদাহরণ দিই। 'পরদিন সকালে সাগর থেকে এক জেলে আসে তার পরিবারকে দেখতে', মূলত সেই জেলে তার পরিবার-পরিজন সহ পুরো গ্রামকে মৃত আবিষ্কার করে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই রিপোর্টে যে লোকটা প্রথম এই ঘটনার সাক্ষী হলো তার নাম আসে না। এমনকি তার অস্তিত্ব এই রিপোর্টেই শেষ। যেভাবে অ্যানোনিমাস ভাবে 'এক জেলে' লেখা হয়েছে রিপোর্টে কখনোই এভাবে লেখা থাকে না। অবশ্যই নাম উল্লেখ করা থাকে। 

ওদিকে কোন তথ্য প্রমাণ ছাড়া একটা খবরের কাগজ কোন একটা ঘটনাকে 'ধারণা করা হচ্ছে, কোন অশুভ শক্তির প্রভাবে এমনটা হয়েছে। সত্যিই কি তাই? তাহলে কি সেই অলৌকিক শক্তি?' বলে উল্লেখ করে না। এই টাইপ রিপোর্ট লিখলেই জনমনে প্রশ্ন আসবে, ধারণাটা করেছে কে? কিসের বেসিসেই বা ধারণা করেছে? এই ব্যাপারটা চোখে পড়তেই নড়ে চড়ে বসি আমি। বলতে দ্বিধা নেই এরপর একটু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বইটা পড়া শুরু করি আমি। আর সে এক্সপেরিয়েন্স ভীষণ খারাপ কারণ লিখনশৈলী এতটাই দূর্বল হয়েছে যে, কেউ যদি চায় প্রতি দুটো পৃষ্ঠাতেই কোন না কোন ভুল খুঁজে বের করতে পারবে। আমি কয়েকটা ড্র-ব্যাকের উদাহরণ দেই।


১. ঢাকায় খুন হওয়া প্রথম ব্যক্তি জহির সাহেব হুট করেই আদনান সাহেবের বর্ণনায় হয়ে গেলেন 'আসাদ সাহেব'। আবার কয়েক পৃষ্ঠা পরে 'জহির সাহেব'। আবার কিছুদূর পর আসাদ সাহেব। এরকম নাম বিভ্রাট পড়ার সময় বিরক্তির উদ্রেক করে। একই সাথে এটাও বোঝায় যে লেখক/এডিটর প্যানেল খুব একটা টাইম দেননি বইটার সম্পাদনার পেছনে।


২. ডিটেকটিভ রুহান যখন আদনান সাহেবের বাসায় প্রথমবারের মত যায় তখন আদনান সাহেব ও রুহানের আচরণে মনে হয় তারা পরস্পরকে চেনে, যদিও কিভাবে চেনে, আদৌ চেনে কিনা তা পুরো বইতে কোথাও বলা হয়নি।


৩. ডিটেকটিভ রুহান সাহেব রুপশ্রীনগর ক্রাইম সিনে যান কোন একটা ক্লু পাবার আশায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, একটা সাধারণ পাঠক হিসেবে আমি ভেবেছিলাম, রুহান সাহেব সর্বপ্রথম দেখা করবেন গ্রামে লাশগুলো সবার আগে যে দেখেছে তার সাথে। কিন্তু তিনি তা তো করেনই নাই, ইভেন সেই লোকটা যে এক্সিস্ট করে সেটাও তার মাথায় নাই। এইটা কিভাবে সম্ভব?


৪. ডিবি এখানে দুটো আলাদা আলাদা খুনের তদন্ত করছে এবং রিপোর্টে যেভাবে খুনের পেছনে অলৌকিক কোন এনটিটির সম্ভবনা দেখানো হয়েছে, তাতে করে পুরো ডিবি এবং দেশের হুমড়ি খেয়ে পড়ার কথা এই খুনের রহস্য উদঘাটনে। কিন্তু ডিটেকটিভ সাহেব এবং পুরো ডিবি অফিস মনে হয় আমার মতই 'প্যারা নাই, চিল' মোটোতে বিশ্বাসী। পুরো বইতে রুহান, আদিল বাদে আর কোন ডিবি কর্মকর্তাদের কোন হদিস পাওয়া যায় না।


৫. ধরেন আপনি সহকারী ইনভেস্টিগেটর আদিল। আপনাকে দায়িত্ব দেয়া হলো, কৌশলে এই কেসের একজন সন্দেহভাজনের সন্তানের সাথে তার স্কুলে দেখা করে খানিকটা তথ্য নেয়ার। বাচ্চাটি একটি মেয়ে বাচ্চা এবং পড়ে ক্লাস সিক্সে। আপনার প্রশ্নের প্যাটার্ন কি রকম হবে? 'বাবু, তুমি কোন ক্লাসে পড়ো?' এরকম তাইতো? এ প্রশ্নের উত্তরে যদি বাচ্চাটি বলে, 'ওহ! এসব দিয়ে আপনার কাজ কি? ওসব তো হুদাই কথাবার্তা। আমার কাছে কি জানতে চান?' কেমন লাগবে তখন? যেমনই লাগুক, ডিবির একজন ডিটেকটিভকে দেখে ক্লাস সিক্সে পড়া একটা বাচ্চার এরকম রেস্পন্স কি বিশ্বাসযোগ্য? আমার তো বিশ্বাস হয়নি।

তবে চরিত্রায়নে ক্লাসে সিক্সে পড়া তিন্নিকেও ছাড়িয়ে গেছেন আদিল সাহেব। এরকম উত্তর শোনার পরে সে প্রশ্ন করে, 'তুমি কি জহির সাহেবের লাশ দেখতে গিয়েছিলে?' মানে যেখানে সন্দেহ করা হচ্ছে কোন অলৌকিক সত্ত্বার দ্বারা জহির সাহেব খুন হয়েছেন এবং তার লাশটি যথেষ্ট বীভৎস, তখন একটা ক্লাস সিক্সে পড়া বাচ্চাকে এই প্রশ্ন করাটা কতটা যুক্তিযুক্ত?

তো এই পর্যায়ে এসে আমি আসলে ভুল খোঁজা বাদ দিয়ে দেই। কারণ ততক্ষণে আমি বুঝতে পেরেছি, লেখক তো নিজের ভুলগুলো ধরতে পারেনইনি, সম্পাদকরাও এক্ষেত্রে নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে গেছেন (যদি কোন সম্পাদক এই প্রজেক্টে থেকে থাকে)। এছাড়াও বইতে চরিত্রায়ন, ক্লাইম্যাক্স সৃষ্টি ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই লেখকের অপরিপক্কতা প্রকাশ পেয়েছে। নতুন লেখকের বই আমি খুব আগ্রহ সহকারে পড়ি কিন্তু এই বইটি আমি যে আগ্রহ নিয়ে শুরু করেছিলাম বই অর্ধেক হবার আগেই আমার সে আগ্রহ হারিয়ে গেছে।

অনেকে বলতে পারেন, নতুন লেখক, সাপোর্ট দেয়া উচিত। তাদের বলতে চাই, অবশ্যই সাপোর্ট দেয়া উচিত। তবে সেটা কোন ল্যাকিংস থাকলে তা ধরিয়ে দিয়ে। ভুল ত্রুটি না ধরিয়ে দিয়ে তাকে আরো ভুল করার সুযোগ দেয়াটা কোনভাবেই তার সাপোর্টে আসবে না।

তো এই ছিলো, ১৬০ টাকা মুদ্রিত মূল্যের হিমেল রহমানের লেখা মৌলিক বই 'বিভীষিকা' নিয়ে আমার অনুভূতি। অনেক নেগেটিভ কিছু বললেও বইটা নিয়ে একটা পজিটিভ কথা বলতে চাই। লেখকের কল্পনাশক্তি তথা প্লট নির্বাচন ভালো ছিলো। লিখনশৈলীর উন্নতি করতে পারলে হয়তো ভবিষ্যতে একজন ভালো লেখক হিসেবে তাকে আমরা পেলেও পেতে পারি।

Buy This Book Hardcopy

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ