ব্লাডস্টোন নাজিম ঊদ দৌলা বই পিডিএফ | Bloodstone By Nazim Ud Dowla Books PDF Download

বই- ব্লাডস্টোন
লেখক - নাজিম ঊদ দৌলা  
জনরা : হিস্টোরিক্যাল থ্রিলার 



ঢাকার র‍্যাডিসন হোটেলে জাতিসঙ্ঘের একটা আ্যন্টিক জুয়েলারি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়। সেই প্রদর্শনীতে পৃথিবীর দুস্প্রাপ্য এবং দুর্লভ অলঙ্কার প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়।তার মাঝে আছে প্রাচীন কালের রাণী-সম্রাজ্ঞীদের ব্যাবহৃত গহনার সমাহার। এক একটি গহনার আ্যন্টিক ভ্যালু আকাশচুম্বী।ছিল ইংল্যান্ডের রানীর ব্যবহৃত একটা নেকলেস, সেই নেকলেসে লাগানো ছিল একটা বিশেষ পাথর সেই পাথরের নাম ছিল ঐতিহাসিক ব্লাডস্টোন বা রক্তপাথর। আর প্রদর্শনী চলাকালে দিন দুপুরে সবার সামনে থেকে চুরি হয়ে গেল সেই মহামূল্যবান ব্লাডস্টোন। প্রায় শত মানুষের সামনে দিয়ে চোর নির্বিঘ্নে হাতুড়ি দিয়ে বুলেটপ্রুফ গ্লাস ভেঙে নিয়ে গেছে ব্লাডস্টোন সহ রাণীর সেই নেকলেস।

ঘটনাস্থলে দ্রুত হাজির হলেন বাংলাদেশ পুলিশের গোয়েন্দা ইন্সপেক্টর মনসুর হালিম।এসেই জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে জানতে পারলেন উপস্থিত কেউ কিছু মনে করতে পারছেনা কি হয়েছিল তখন । যারা উপস্থিত ছিলেন ওখানে সবাই বলছেন তারা এক সেকেন্ড আগেও ব্লাডস্টোন দেখেছে কিন্তু এক সেকেন্ড পরেই দেখে সেফের কাচ ভাঙা এবং ব্লাডস্টোন উধাও। সিসিটিভির ভিডিওতে দেখা গেছে চোর আস্তে ধীরে গ্লাস ভেঙ্গে ব্লাডস্টোন নিয়ে গেছে সবার সামনে দিয়েই। সবাই তাকিয়ে দেখেছে কিন্তু কেউ কিচ্ছু মনে করতে পারছেনা। ইন্সপেক্টর মনসুর হালিম হঠাৎ খেয়াল করলেন ভাঙ্গা সেফের ভিতরে একটা চিরকুট রাখা, মনে হয় চোর ব্লাডস্টোন চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় রেখে গেছে। চিরকুটে শুধু এইটুকু লেখা ছিল "অ্যামিতিস তোমাকে ভালোবাসি"। 

চিরকুট পড়ে ডিবি ইন্সপেক্টর  মনসুর হালিমের মাথায় হাত।কে এই আ্যমিতিস? চোর কেনই বা তাকে ভালোবাসার কথা এই চিরকুটে জানিয়েছে। তবে কি আ্যমিতিসের সাথে কোন সম্পর্ক আছে ব্লাডস্টোনের। এসব জানতে মনসুর হালিম শরণাপন্ন  হলেন প্রফেসর ডাবল আর নামে খ্যাত ইতিহাসের  শিক্ষক ড.রুদ্র রাশেদের। দুজনের মিলিত তদন্তে  খুলতে শুরু করল প্রায় আড়াই হাজার বছর  আগের এক দুর্দান্ত রহস্যের  দুয়ার!

কে এই আ্যমিতিস? সেটা জানতে হলে যেতে হবে খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ বছর পূর্বে। তার সাথে কি সম্পর্ক এই ব্লাডস্টোনের? একে একে আসতে থাকবে প্রাচীন মেসোপটেমিয়া সভ্যতার ব্যাবিলনের সম্রাট নেবুচাদনেজার থেকে শুরু করে তার তৈরি করা ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান এর রহস্য। সম্রাট অ্যালেকজান্ডারের বিশ্বজয়ের ইতিহাস,ও তার মৃত্যু রহস্য। ১৫৮০ খ্রিস্টাব্দে চন্ডিক্যান রাজ্যের রাজা প্রতাপাদিত্যর নিষ্ঠুরতার কাহিনী।দৃশ্যপটে একে একে আসতে থাকে আফগান সেনাপতি আফতাব খান, তার পুত্র সেনাপতি মাহতাব খান ও তার প্রিয়তমা রাজকন্যা অরুণাবতীর কথা। আসে কান্দাহারের সুলতান আসকরী মীর্জা এবং কাবুল সুলতান কামরান মীর্জা কর্তৃক মুঘল সম্রাট হুমায়ুনকে বিতাড়িত করার ঘটনা।আবার মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের ভারতবর্ষ জয়ের ঘটনা। তারপর ঘটনা প্রবাহে উপস্থিত হয় ইতালির অষ্টাদশ শতাব্দীর সেরা বেহালাবাদক নিকোলো পাগানিনির। আর তার বিস্ময়কর সুর আবিস্কারের কথা।
 
ইতিহাসের এই হাজার হাজার বছরের পার্থক্য থাকার পরেও ইতিহাসের এইসব উল্লেখিত ঘটনাগুলোর সাথে ব্লাডস্টোনের কি সম্পর্কে?  জড়িত হলে কিভাবে জড়িত তা জানতে হলে আপনাকে পড়তে হবে "ব্লাডস্টোন"। প্রফেসর রুদ্রের সহযোগিতায় ডিবি অফিসার মনসুর হালিম কি পেরেছিলেন রহস্যময় ব্লাডস্টোনের চোর কে ধরতে? পারবে কি এতসব রহস্যের সমাধান করতে? জানতে পারবে কি এই পাথরের আসল মালিকানা কোন দেশের?
আসলেই কি ব্লাডস্টোন কোনো অভিশাপ? কি এর সমাধান? আর কিভাবেই বা তৈরি হয়েছিলো এই মহামূল্যবান ব্লাডস্টোন? জানতে হলে পড়তে হবে লেখক নাজিম উদ দৌলা'র ব্লাডস্টোন। 

পাঠ প্রতিক্রিয়া -
প্রথমে ভালো দিক বলি, যারা ইতিহাস পড়তে পছন্দ করেন তাদের জন্য এই বইটা ভালো লাগবেই।ব্লাডস্টোন একটা ঐতিহাসিক থ্রিলার। ঐতিহাসিক থ্রিলারের মানে হল ইতিহাসকে আশ্রিত করে কল্পনার মিশেলে লেখা থ্রিলার। আলাদা আলাদা সময়ের হাজার বছরের কাহিনীর সাথে ব্লাডস্টোন কে জড়ানোতে লেখক মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছে।

খারাপ দিক-আমি কিছু জায়গায় খেই হারিয়ে ফেলেছি টাইমলাইন নিয়ে, মনে হচ্ছে টাইমলাইন কিছুটা এলোমেলো হয়ে গেছে। আর কিছু ব্যাপার একদম নিতে পারিনি যেমন, মাহতাব খান আর তার প্রেমিকা অরুণাবতীর প্রেমকাহিনী একদম বাংলা সিনেমার কাহিনি কপি পেস্ট করা হয়েছে মনে হচ্ছিল।
আবার পুলিশ হেডকোয়ার্টারের কনফারেন্স কক্ষের সেই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, সেনা প্রধান, পুলিশ প্রধান, র‍্যাব পধানের উপস্থিতি একেবারেই বেখাপ্পা লেগেছে। আবার অঞ্জন পাল কে শেষ মুহুর্তে অঞ্জন দত্ত বানিয়ে দেওয়াটাও বিরক্ত লেগেছে।

সবশেষে একটা কথা বলব পুরো বইটা পড়ার পর যে দুইটা সাধারণ লাইন মাথার ভিতরে ঘুরতে থাকে তা হল
"অ্যামিতিস, তোমাকে ভালোবাসি" আর যখন উত্তরে বলা হয় "আ্যমিতিসও আপনাকে ভালোবাসে সম্রাট "

হ্যাপি রিডিং...।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ