স্বামী-স্ত্রী:
১। বিয়ের সময় একে অপরের প্রতি টান অনুভব না করা। এটা হয়ে থাকে পরিবারের চাপের কারণে বা সহজে বিয়ে হচ্ছে না, এখন এমন হালত যে কোনো রকম বিয়েটা হলেই হল! ম্যাক্সিমাম ক্ষেত্রে দেখা গেছে বিয়ের সময় আগ্রহ কাজ না করলে পরবর্তীতে সহজে অপর পক্ষের প্রতি মন বসে না।
২। নিজেদের মাঝে আচারব্যবহারে সম্মান, বিশ্বাস ও সহানুভূতি না থাকা, একে অপরের জন্য চোখ বন্ধ করে সেক্রিফাইজ বা কম্প্রোমাইজ করার মানসিকতা না রাখা।
৩। উগ্র মেজাজ এবং ইগো, কোনোভাবেই সবর বা ছাড় দেওয়ার বা হার মানার মানসিকতা না থাকা।
৪। সময় না দেওয়া, একে অপরের পছন্দ, চাওয়া পাওয়াকে গুরত্ব না দেওয়া
৫। একে অপরের হক আদায়ের ব্যপারে উদাসীন থাকা
৬। শারীরিক অক্ষমতা
৭। দ্বীনহীনতা
৮। নজরের হিফাজত না করা, পরিকিয়ায় লিপ্ত হওয়া, পর্ণ এডিক্টেড হওয়া, বা একে অপরকে সন্দেহ করা।
#পারিবারিক: (যদি যৌথ পরিবার হয়)
স্বামীর ভুল-
১। নিজ পরিবারে স্ত্রীর শক্ত অবস্থান তৈরি না করে দেওয়া।
২। মা ও বোনদের সাথে সম্পর্ক সুন্দর করতে ও তা বজায়ে রাখতে কোনো হিকমা বা ভূমিকা বা পালন না করা।
৩। স্ত্রীর উপর নিজ পরিবারের কারও দ্বারা জুলুম হতে থাকলে বা স্ত্রীর দ্বারা নিজ পরিবারের কারও উপর জুলুম হতে থাকলে নিরব থাকা।
৪। কোনো বিচার সামনে আসলে এক তরফা শুনেই বিচার করে ফেলা।
৫। স্ত্রীর ব্যক্তিগত কথাবার্তা বা স্ত্রীর সাথে হওয়া নিজের কথাবার্তা পরিবারের মা বোনদেরকে বলে দেওয়া আবার মা বোনদের সাথে হওয়া কথা স্ত্রীকে এসে বলে দেওয়া।
৬। মা বোনদের ব্যপারে স্ত্রীর গিবত বা স্ত্রীর ব্যপারে মা বোনদের গিবত শুনতে থাকা ও এসব বন্ধ না করা।
৭। স্ত্রীর উপর বাস্তবেই জুলুম হচ্ছে( শারীরিক, মানসিক, বাচ্চা হচ্ছে না, দেখতে খারাপ হয়ে যাচ্ছে, ডমিনেট করা হচ্ছে ইত্যাদি) অথচ স্বামী কোনো স্টেপ নিচ্ছে না, বরং সহ্য করে সংসার করে যেতে বলা।
৮। নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনে মা বোনদের অধিকার খাটতে দেওয়া, এক কথায় অনধিকার চর্চা করতে দেওয়া।
স্ত্রীর ভুল:
১। নিজের সংসারের প্রতি যত্নশীল না হওয়া, নিজের পড়াশোনা বা ক্যারিয়ার নিয়ে এতটাই ব্যস্ত থাকা যে নিজের সংসারেই নিজেকে মেহমান বানিয়ে রাখা।
২। সংসারের কাজগুলোকে ভালবেসে না করে বরং নিজের জন্য জুলুম ভাবা। যদিউ কাজগুলো এমন হয় যে শরিয়ত তাকে বাধ্য করে না করার জন্য।
৩। স্বামীর প্রতি সম্মানবোধ না থাকা, বদমেজাজি হওয়া, শোকর বা সবরকারি না হওয়া।
৪। স্বামীর মা-বাবার প্রতি সহানুভূতিশীল না হওয়া, মুরুব্বি হিসেবে তাদেরকে সম্মান না করা বা তাদের প্রতি উত্তম আচরণ না করা।
৫। শারীরিক সম্পর্কে অনাগ্রহ প্রকাশ করা, এক্ষেত্রে স্বামীর জন্য নিজেকে উত্তমভাবে তৈরি না রাখা।
৬। দ্বীনহীনতা, দুনিয়াদারি, বেপর্দা, পরকিয়া, বাচ্চাদের তারবিয়াতের ব্যপারে অমনোযোগী ইত্যাদি
৭। নিজের মা, বোনদেরকে নিজেদের মাঝে এক্সেস দেওয়া।
৮। নারীবাদিতা
সমস্যাগুলো খুব ছোটোখাটো লাগলেও এসব কারণেই অশান্তি হতে হতে এক পর্যায়ে রাগারাগি ও রাগের মাথায় তালাক পর্যন্ত হয়ে যায়!
বিয়েটা শুধু মাত্র বারান্দায় দাঁড়িয়ে একে অপরের দিকে চেয়ে চায়ে চুমুক দিয়ে রাত কাটানো না।
বিয়েটা শুধু বৃষ্টি পড়বে আর হাত ধরে রিকশায় ঘুরব টাইপ না।
বিয়েটা শুধু একে অপরকে জাগিয়ে এরপর একত্রে তাহাজ্জুদ পড়ব এমন না।
বিয়ে জীবনের সবচেয়ে কঠিন দায়িত্বটার নাম। কঠিন বাস্তবতার নাম!
আপনি যদি স্ত্রীর হক আদায় করতে না পারেন, এক মুরুব্বির আমানতকে নিজের ঘরে এনে তাকে সম্মানের সাথে রাখতে না পারেন, বিশাল এক পরিবারের কাজের মানুষ হিসেবে এনে রাখেন, তার উপর হওয়া জুলুমে চুপ থাকেন, মা বোনের কথায় স্ত্রীকে চালান, তার প্রতি যত্নশীল না হোন, তার সুবিধা অসুবিধা না দেখেন, বাচ্চাদের প্রতি যত্নশীল বাবা না হোন, একজন সাচ্চা পুরুষ না হতে পারেন, মিনমিনা টাইপের হোন তবে শুধু শুধু কেন একজনের জীবন কষ্টে ভরে দিতে, এক জোড়া মজলুমের হাত রব্বের দরবারে তুলে দিতে বিয়ে করবেন? রোজা রাখেন সেটা আরও উত্তম হবে।
আর আপনি যদি নিজের পরিবারের মানুষদেরকে রান্না করে খাওয়াতে না চান, নিজের বাচ্চাদের পালতে হিমশিম খেয়ে যান, স্বামীর পরিবারের মানুষদেরকে আপন করে নিতে না পারেন, শুধু মাত্র আমার অধিকার, আমার যোগ্যতা, আমার হাতখরচ, আমার আরাম আয়েশ নিয়ে ভাবেন তো আরেকটা পরিবারে যাওয়ার দরকার কী? বাবার বাড়িতেই তো আপনি নবাবজাদি, ওখানেই থাকেন।
আর আপনি যদি ভাবেন আপনার পুত্র এখনো বাচ্চা, সংসারের দায়িত্ব নিতে পারবে না, আপনাকে সব বুঝিয়ে শুনিয়ে দিতে হবে, একটা ছেলে ও একটা মেয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে, কিন্তু সব চলবে আপনার মর্জিমাফিক, ছেলের উছিলায় একজন কম বয়সী, কাজে অপটু বুয়া ঘরে আনবেন, আর উঠতে বসতে তার ভুল ধরবেন, ছেলেকে সেই বুয়া নিয়ে শান্তিতে থাকতে দিবেন না, বেডরুমের দরজা লাগাতে দিবেন না তবে আপনার সেই বাচ্চা ছেলেকে আল্লাহর ওয়াস্তে বিবাহ করায়েন না। একজন খাদিমা নিয়ে এসে আপনার সাথেই রাখবেন।
আপনি যখন স্বামী, আপনার যদি পুরুষত্ব থাকে, গাম্ভীর্যতা থাকে, হিকমাওয়ালা ভাবেন নিজেকে, আল্লাহর এক বান্দির উপর জুলুম হবে না, তার হক যথাযথ ভাবে আপনি আদায় করতে পারবেন, ছেলে হিসেবে মায়ের, ভাই হিসেবে বোনের, স্বামী হিসেবে স্ত্রীর, বাবা হিসেবে সন্তানের যথাযথ হক আদায় করতে পারেন, সবার মাঝে হিকমার সহিত সুন্দর বন্ধন গড়ে তুলতে পারেন, জুলুমের সামনে ঢাল হতে পারেন, ইনসাফ ওয়ালা হতে পারেন, হক বিচার করতে পারেন তবেই বিয়ে করুন।
আপনি যখন স্ত্রী, প্রচুর সবরওয়ালী, স্বামী, সন্তান ও পরিবারের সবার প্রতি মমতাময়ী খেদমদগার হতে পারেন, নিজের সংসারের সব কিছুই একান্ত নিজের ভেবে তাতে ডুবে যেতে পারেন, সংসার সুন্দর ভাবে চালাতে ও টিকিয়ে রাখতে মরিয়া টাইপ হতে পারেন, সাংসারিক কাজগুলোকে ইবাদাত ভেবে বা ইবাদাতে রূপান্তর করে করতে পারেন, যতই ঝড়ঝাপটা আসুক স্বামীস্ত্রী একত্রে ঢাল হয়ে সংসার টিকিয়ে রাখব সুন্দর ভাবে এমন মানসিকতা থাকে, স্বার্থপরতা না থাকে, নারীবাদী রোগে আক্রান্ত না থাকেন তবেই বিয়ে করুন।
আর আপনি যখন পুত্রের গার্জিয়ান, যদি ভাবেন ছেলে যথেষ্ট বুঝদার হয়েছে, এবার বিয়ে করে নিজের মত সংসার করুক, নিজের বউ বাচ্চা নিয়ে ভাল থাকুক, ছেলের বউকে তার বউ হিসেবে আদর স্নেহ করতে পারেন, তার থেকে মহব্বতে মহব্বতে কাটাকাটি করে খেদমত নিতে পারার হিকমা থাকে, তাদেরকে তাদের মত ছেড়ে দেওয়ার মানসিকতা থাকে, তাদের মাঝে হাড্ডি হওয়াটা অপছন্দ হয়ে থাকে তবেই ছেলের জন্য তার যোগ্য এমন পাত্রী নিয়ে আসুন।
অন্যথায় যে যার জায়গায় যেমনে আছেন অমনে ভাল থাকেন। হুদাই ঝামেলার দরকার কি!
© যায়নাব আল গাজী
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....