হিমঘুম : বাপ্পী খান - বইটি কেন পড়বেন? | Himghum By Bappi Khan Books

◑নাম: হিমঘুম
◑লেখক: বাপ্পী খান
◑জনরা: রিভেঞ্জ থ্রিলার
◑প্রচ্ছদ: বাপ্পী খান
◑প্রকাশনী: বাতিঘর
◑প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০২২
◑পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৩৫১
◑মুদ্রিত মূল্য: ৪০০/-
Review & PhotoCredit 💕 Rafia Rahman





❝শীত আসছে। সাপেরা আড়ালে লুকাবে। হিমঘুমের সময় সমাগত... এখন সাপেরা শিকারে ব্যস্ত।❞


কাম, ক্রোধ, লোভ, মদ, মোহ ও মাৎসর্য— মানুষের ছটি শত্রু, ষড়রিপু। সহজাত দোষ যার জালে ফেঁসে যায় আমরা। অনিয়ন্ত্রিত আবেগ ডেকে আনে অনিবার্য বিপর্যয়...


● আখ্যান —


জীবন কতটা ঠুনকো আর মৃত্যু কতটা শক্তিশালী...


দেশের বিশিষ্ট মোটিভেশনাল স্পিকার শোয়েব তপনের রহস্যময় লাশ পাওয়া গেছে তার নির্জন শহরের বাসায়। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট চমকে দেয় ডক্টর আদনানকে। সাপের কামড়ে মারা গেছেন শোয়েব তপন! শহরে সাপ? তাও যেনতেন সাপ নয়... কিং... কিং কোবরা!


হোমিসাইড ক্যাপ্টেন কায়সার কবির রহস্যময় কেসের কিনারা করতে যখন হিমশিম খাচ্ছেন তখন পাওয়া যায় আরও একটি লাশ! এবারের গুপ্ত আততায়ী আর কেউ নয়... রাসেলস ভাইপার! একে একে মারা যেতে থাকে দেশের প্রভাবশালীরা! মৃত্যুর কারণ সাপের কামড়...
খুন নাকি দুর্ঘটনা? নীল বিষাক্ত আঁধার যেন ঘিরে ধরতে শুরু করেছে শহরকে...
অজানা আতঙ্কে বারবার কেঁপে উঠে কায়সার। সাপের হঠাৎ আক্রমণ কেন? পরবর্তী শিকার কে হবে? আর উধাওই বা হয়ে যাচ্ছে কীভাবে আততায়ী?
রহস্যময় রক্তাক্ত ছোবল জানান দেয় অতীতের গুপ্ত যড়যন্ত্রের! প্রতিশোধের নেশায় মত্ত প্রাণঘাতী সাপেরা...
কিন্তু সাপেরা কি পারে প্রতিশোধ নিতে?


● পর্যালোচনা ও প্রতিক্রিয়া —


সলিড একটা থ্রিলার কিন্তু প্রথম একশত পেজ পর্যন্ত বারবার মনে হয়েছে ভৌতিক আর অতিপ্রাকৃতিক কিছু বিষয় তো অবশ্যই রয়েছে। যেভাবে খুন হচ্ছে আর সাপ গায়েব! তবে আরও একটা কারণ আছে, অন্ধকার সিরিজের নাফিস আর সত্য-কলাম। তবে রহস্যের জট ছড়ানো শুরু হলে জাস্ট তব্দা খেয়ে গেছি। টুইস্টগুলো মারাত্মক!


রাজনীতি, মাদক, যড়যন্ত্র, সম্পর্কের টানাপোড়েন, খুন, লালসা বিষয়গুলোর উপর বেজড করে ঘটনা ঘটতে থাকে একের পর এক। ময়ালের কারণে মারা যায় সুজন তারপর থেকে কাহিনীর সূত্রপাত। ❝ময়াল❞- এর মানে কি জানা আছে? তবে বইয়ে ময়াল বলতে অন্য কিছুকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। প্রথমে চরিত্রগুলোকে আবছাভাবে দেখানো হয়েছে তারপর ধোঁয়াশা কেটে গেলেই খুন। কায়সার, আদনান, আরহাম, মাহফুজ, অনন্যা, রাজিবুলের টিমওয়ার্ক দারুণ ছিল। প্রথম ২৬০ পেজ পড়ার পর খুনি আর খুনের কারণ তো পরিষ্কার তাহলে বাকি ৯০ পেজে আছে কী? আসলে বইয়ে দুটা প্রতিশোধের গল্প আছে। প্রথমটা খুন-খুনির উপর থেকে পর্দা তুললেও শেষে ❝কিন্তু❞ রেখে দেয়। যার জবাব আছে পরেরটায়। তবে আমার কাছে প্রথমটাই বেশি ভালো লেগেছে। কিন্তু বইয়ের সেরা অংশ এর সমাপ্তি, এরথেকে তৃপ্তিদায়ক সমাপ্তি আর হতে পারে না। ❝অন্যায়ের প্রতিশোধ নেওয়া কি অন্যায়?❞- শেষ পর্যন্ত এই প্রশ্নটায় পাঠকের মনে ঘুরবে। ইউনিক প্লট সাথে ইউনিক অস্ত্র দিয়ে শিকার বধ। সেইসাথে ক্যাপ্টেন কায়সারের অভিযান যে শেষ হয়নি টুক করে লেখক কিন্তু এটাও বলে গেছেন।


তিনটি বিষয়ে একটু খটকা আছে। ১১০, ১১১ পেজে সজলের হাঁটা আর দৌঁড়ানোর উল্লেখ আছে কিন্তু এটা তো সম্ভব না যেহেতু সে পঙ্গু। ২৮০ পেজে বলা হয়েছে কায়সারদের, কয়েকদিন আগেই চরে ঘুরতে এসেছিল গালিব আহসানের স্ত্রীর ছোটবোন। কিন্তু এটা তো কয়েকবছর আগের ঘটনা! ৩৩৬, ৩৩৭ পেজে একবার বলা হয়েছে জসীমের লাশ পানিতে তো আবার নৌকায়! এটা ঠিক বুঝলাম না।


● লেখনশৈলী ও বর্ণনা —

প্রচুর খোঁজখবর নিয়ে যে লেখা হয়েছে ❝হিমঘুম❞ সহজেই বিষয়টা চোখে পড়ে। সহজ-সাবলীল উপস্থাপনা। বইয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কাহিনী চলেছে একই গতিতে। পুলিশি প্রসিডিওরগুলোর বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে তবে ফরেনসিক টার্মগুলোর তেমন নেই। সমাপ্তি অংশ যেভাবে টানা হয়েছে, এককথায় অদ্ভুত সুন্দর। পারিপার্শ্বিক আলোচনা খুঁটিনাটি করা হয়েছে। অনেকের কাছে এটা বোরিং লাগতে পারে কারণ কাহিনী লম্বা হয়েছে এরজন্য। এত হাই সিকিউরিটির ফাঁক গলে সাপরা কীভাবে শিকারের কাছে পৌঁছাচ্ছে এইটা আরও একটু খোলসা করলে ভালো হতো।


● চরিত্রায়ন —


বইয়ে বহু চরিত্রের উল্লেখ করা হয়েছে। তবে মূল চরিত্র কিন্তু সাপেরা। বিভিন্ন প্রজাতির, বিভিন্ন দেশের সাপের বর্ণনা রয়েছে। সাপের প্রকৃতি নিয়ে মোটামুটি বিস্তারিত আলোচনাই করা হয়েছে বইয়ে। সেইসাথে আছে সাপ নিয়ে প্রচলিত কুসংস্কার আর লৌকিক বিশ্বাস।


হোমিসাইড ক্যাপ্টেন কায়সার, কেসের শুরু থেকেই যুক্ত। পরবর্তীতে যোগ দেয় আরহাম। এই চরিত্র আমার কাছে বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে। তবে সজলের কথাও না বললে নয়। বইয়ের এমন এক চরিত্র যে বারবার দ্বিধায় ফেলে দিচ্ছিল। কলেবরে যেহেতু ছোট নয় ❝হিমঘুম❞, চরিত্রের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়।


● প্রোডাকশন —


সচারাচর বাতিঘরের প্রোডাকশন যেমন তেমনটাই এই বইয়েও। বাঁধাই, পেজ, হার্ডকভার, বইয়ের জ্যাকেটের মান ভালোই।


● বানান ও সম্পাদনা —


পরপর বাতিঘরের কয়েকটা বই পড়ে মনে হলো কিছু শব্দের সেম সমস্যা। নানা, নাকি, তত্ত্ব, উচ্ছ্বাস, নেই/নেয়, নাহলে, র/ড়, ঘড়/ঘর, আলোচ্ছ্বটা, চিৎকার এমন আরও কিছু শব্দ হয় ভেঙে গেছে নয়তো ভুল হয়েছে। কিছু জায়গায় মাহমুদ আর আরহামের বানানে ভুল আছে। বিরামচিহ্নেও টুকিটাকি কিছু ভুল আছে।


● প্রচ্ছদ ও নামলিপি —


চোখে পড়ার মতো একটা প্রচ্ছদ। সিম্পলের মধ্যে বেশ সুন্দর। কাহিনীর মূল হাতিয়ারই বলতে গেলে প্রচ্ছদে, দেখে কেমন জানি গা শিউরে ওঠে। নামলিপিও সুন্দর।
অভিযান পাবলিশার্সের প্রচ্ছদটাও দারুণ। সাপগুলো দেখতে কিউট লাগে। কালার বেশ ভাইব্রান্ট।


কিছু সমাপ্তি অসমাপ্ত তৃপ্তি দেয়। শুধু এটাই বলবো ভালো লেগেছে

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ