ইলা শাবাবিল উম্মাহ বইটি কেন পড়বেন? লেখক মুহিব্বুল্লাহ খন্দকার | Ila Shababil Ummah boi

  • ইলা শাবাবিল উম্মাহ
  • লেখক : মুহিব্বুল্লাহ খন্দকার
  • প্রকাশনী : আয়ান প্রকাশন
  • বিষয় : আত্মশুদ্ধি ও অনুপ্রেরণা
  • পৃষ্ঠা : 48, কভার : পেপার ব্যাক, সংস্করণ : 1st Published, 2022
  • আইএসবিএন : 9789849599883, ভাষা : বাংলা




মাত্র ৪৮ পৃষ্ঠার এই বইতে উঠে এসেছে যুবকদের উদ্দেশ্যে বলা নবীজির (সা.) হাদীসগুলো। যা সর্বকালের সকল যুবকদের জন্য পাথেয় স্বরূপ। যেগুলো মেনে চললে ইহ-পরকালীন মুক্তি ও সফলতা মিলবে। দুনিয়ার জীবনে আসবে অনাবিল শান্তি, পরকালীন জীবনে অর্জিত হবে চিরস্থায়ী সুখের ঠিকানা জান্নাত।


বইটি যদিও যুবকদেরকে উদ্দেশ্য করে লেখা, তবুও বইটি সবার জন্য উপযোগী ও উপকারী। বিশেষ করে প্রথম অংশ সবার জন্যই প্রয়োজনীয়। প্রথম অংশে নবিজি (সা.) কর্তৃক তাঁর সাহাবাদের প্রতি, বিশেষ করে যুবক সাহাবাদের প্রতি দেওয়া উপদেশের কথাগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি তাতে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ যুক্ত করে দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় অংশে পাঠক সালাফে সালেহীনগণের পক্ষ থেকে যুবকদের প্রতি দেওয়া উপদেশগুলো পাবেন। বিশেষ করে যারা শিক্ষানবিশ। কলেজ-ভার্সিটি পড়ুয়াদের জন্য নতুন বই 'ইলা-শাবাবিল উম্মাহ'


দুনিয়ার বুকে শ্রেষ্ঠ মানুষ নবিজির হাদিস হলো সারগর্ভ কথায় ভরপুর। নবিজির একটি বাণী গোটা দুনিয়ার সব মানুষের উত্তম বাণীর চেয়েও উত্তম। তাঁর মুখনিঃসৃত কথামালা উম্মতের জন্য সোনার চেয়ে দামি। তাঁর কথামালার ওপর আমল করলে মহীয়ান রবের সন্তুষ্টি হাসিল হয়। এজীবন ও জীবন সুন্দর হয়। বড় কথা, নবিজির কথা মানা উম্মতের ওপর আবশ্যক। নবিজির কথা মানলেই আল্লাহর বিধানকে মানা হবে; নবিজির কথার বিরোধিতা করলে, আল্লাহর আদেশের অমান্য করা হবে।


নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অগুনতি কথামালা থেকে কয়েকটি কথা চয়ন করে এই বইটি সাজানো হয়েছে। যাপিত জীবনকে যেন আরো বর্ণিল রঙে রাঙাতে পারি সেজন্যই আমার এই সামান্য প্রয়াস। __মুহিব্বুল্লাহ খন্দকার।




ফুলের কথামালা


ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, 
একদিন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে ছিলাম। তিনি বললেন, ‘তরুণ শোনো, আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিখিয়ে দিচ্ছি—তুমি আল্লাহর (বিধিনিষেধের) রক্ষা করবে, তাহলে তিনিও তোমাকে রক্ষা করবেন। তুমি তাঁর সন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ রাখবে, তাহলে তাঁকে তুমি কাছে পাবে। তোমার কোনো কিছু চাওয়ার প্রয়োজন হলে তাঁর কাছে চাও; সাহায্য প্রার্থনা করতে হলে শুধু তাঁর কাছেই করো।


জেনে রাখো, যদি দুনিয়ার সব মানুষ তোমার কোনো উপকারের উদ্দেশ্যে একজোট হয় তাহলে ততটুকু উপকারই করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। অন্যদিকে যদি সবাই মিলে তোমার ক্ষতি করতে চায়, তাহলে ততটুকু ক্ষতিই করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। কলম তুলে নেয়া হয়েছে; লিখিত কাগজগুলোও শুকিয়ে গেছে।


এই অসিয়তটি নবিজি তাঁর চাচাতো ভাই আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে করেছিলেন। নবিজি তাকে আকিদা ও তাওয়াক্কুলের নীতি শিক্ষা দিচ্ছিলেন। অথচ ইবনু আব্বাস তখন ছোট বাচ্চামাত্র।


মোটকথা, ছোট থাকতেই বাচ্চাদের তালিম দেয়া উত্তম। কারণ, তখন মন থাকে স্বচ্ছ; স্মৃতিতে গেঁথে যায় গভীরভাবে। তাই এসময় শিশুরা কুরআন শিক্ষা বা ইলম অর্জন করলে তা সহজে ভুলে যায় না। কেউ যদি বাল্যকালে ইলম হাসিল।


করা থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়, সে যেন বড় হয়ে যাবার পর এই অজুহাতে ইলম অর্জন করা থেকে বিরত না থাকে যে, সে এখন বড় হয়ে গেছে। বরং ইলম হাসিল করতে হবে যখনই সময় হয় তখনই। ইলম বৃদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহকে গভীরভাবে জানা যায়; উপরন্তু ইমান বৃদ্ধি পায়।


আল্লাহর বিধিনিষেধের রক্ষা করা হয় তাঁর আদেশাবলির বাস্তবায়ন ও নিষেধাবলির থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে; নবিজির অনুসরণের মাধ্যমে। এসব সংরক্ষণের বিনিময়ে আল্লাহ ঐ ব্যক্তির মনন, সম্পদ এবং বোধবুদ্ধিকে রক্ষা করবেন; দুনিয়া ও আখিরাতে উত্তম প্রতিদান দিবেন।


একটু খেয়াল করুন; নবিজি বলেছেন, সাহায্য স্রেফ আল্লাহর কাছেই চাইতে হবে। তাঁর কাছেই আবেদন জানাতে হবে। কোনো কিছুর কামনা তাঁর কাছেই করতে হবে শুধু। এটাই হলো তাওহিদের নীতিমালা।


ইসলামের রুকনগুলোর অন্যতম হলো, ইমান বিল ক্বদর বা তাকদিরের ভালোমন্দের প্রতি বিশ্বাস রাখা। আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোনো মাখলুক অন্যকোনো মাখলুককে সাহায্য করার ক্ষমতা রাখে না; কাউকে ক্ষতি করারও সামর্থ্য রাখে না। মহাশক্তিধর আল্লাহ কিয়ামত পর্যন্ত কী ঘটবে তার সবকিছু লাওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। কলম উঠিয়ে নিয়েছেন তিনি। তাই আল্লাহর যা ফয়সালা অবশ্যই তা প্রতিফলিত হবে।


নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

‘ভালো কাজ মারাত্মক আঘাত থেকে রক্ষা করে; গোপনে সাদাকা রবের ক্রোধ নিবারণ করে; আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় হায়াত বৃদ্ধি করে। প্রতিটি সুকাজই হলো সাদাকা। দুনিয়াতে ভালো লোকেরা আখিরাতেও ভালো লোক হবে; দুনিয়াতে খারাপ লোকেরা আখিরাতেও খারাপ লোক হবে। 

[২] সহিহুল জামি: ৩৭৯৬, মু'জামুল আওসাত-তাবারানি: ৬০৮৬


নবিজি আরো বলেন,

‘জান্নাতে প্রবেশকারী সর্বপ্রথম ব্যক্তি হবে ভালো কাজ
সম্পাদনকারী৷


ভালো কাজ বলতে এখানে কল্যাণজনক কাজ বোঝানো হয়েছে। মহাশক্তিধর আল্লাহ মানুষের প্রয়োজন পুরো করার জন্য কিছু মানুষকে বিশেষভাবে নির্ধারণ করে রাখেন। যাদের কাছে কল্যাণজনক কাজ পছন্দনীয় এবং অধিক কল্যাণজনক কাজ তাদের দ্বারা হয়। তারাই কিয়ামতের দিন নিরাপদ থাকবে; তারা যে কল্যাণজনক কাজ করেছে তার প্রতিদানস্বরূপ।


তারা নিজেদের পরিবার-পরিজন এবং অন্যান্য মানুষেরও উপকার করে, তাদের কল্যাণে কাজ করে। নিশ্চয়ই তাদের এই কাজের প্রতিদান আল্লাহ নষ্ট করবেন না, যদি তারা এই কাজ আল্লাহর খুশির জন্য করে থাকে।


ভালো কাজ মানুষকে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করে; যেমন, অপমৃত্যু। আর দান সাদাকা হলো পানির মতো; পানি যেমন আগুনকে নিভিয়ে দেয়, তেমনি গুনাহের আগুনকে দান-সাদাকা নিভিয়ে দেয়।


আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা—নৈকট্য লাভের জন্য সর্বোত্তম কাজ। মহীয়ান আল্লাহ বলেন,


“আর আল্লাহ যে সম্পর্ক অটুট রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, যারা তা


অটুট রাখে এবং তাদের রবকে ভয় করে; আর কঠোর হিসাবের


আশঙ্কা রাখে।”


আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার কারণে হায়াত বৃদ্ধি পায়; রিজিকে প্রশস্ততা আসে।


নিশ্চয়ই যারা ভালো কাজ করে, কিয়ামতের দিন তাদেরকে সব মানুষের সামনে সম্মানিত করা হবে; মানুষেরাও তাকে চিনতে পারবে। তাদের গুণাবলিতে ডাকা হবে; তাদের জন্য জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হবে। তারপর তাদের থেকেই সর্বপ্রথম মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে।


[৩] যয়িফ হাদিস, আত তারগিব: ৫৩০ [৪] সূরা রা'দ: ২১


অন্যদিকে, জঘন্য কাজ যারা করেছে জাহান্নামের আগুনে তারা কাবাবের চেয়ে বিশ্রীভাবে পুড়বে। মানুষেরা তাদের চেহারার কারণে চিনতে পারবে; যা লজ্জিত ও অপমানিত অবস্থায় নত হয়ে যাবে।


যে আমল জান্নাতে নিয়ে যাবে


মুআজ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদিন আমি নিবেদন করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমাকে এমন আমল বলে দিন, যা আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে; জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে।' নবিজি বললেন, 'তুমি বেশ কঠিন কাজ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে। তবে এটা তার পক্ষে সহজ হবে, যার পক্ষে মহান আল্লাহ সহজ করে দিবেন। (কাজগুলো হলো) তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে; তাঁর সাথে কাউকে শরিক করবে না। নামাজ পড়বে, যাকাত দিবে, রামাদানের রোযা রাখবে এবং কাবাঘরের হজ করবে।' এরপর তিনি বললেন, 'তোমাকে কল্যাণের দুয়ারগুলো বলে দিব না? রোযা ঢালের মতন। সাদাকা গুনাহ মুছে দেয়; যেভাবে পানি আগুনকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। (আরেকটি কল্যাণের দুয়ার হলো) মাঝ রাতের নামাজ বা তাহাজ্জুদের নামাজ।' এরপর তিনি এই আয়াত দুটি পড়লেন—


তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে আলাদা হয়। তারা ভয় ও আশা নিয়ে তাদের রবকে ডাকে। আর আমি তাদেরকে যে রিজিক দান করেছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে। কেউই জানে না তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কী জিনিস লুকিয়ে রাখা হয়েছে, তারা যা করত তার বিনিময়স্বরূপ।


তারপর নবিজি বললেন, “আমি তোমাকে সব বিষয়ের (দ্বিনের) মাথা, খুঁটি, চূড়ার কথা বাতলে দিব না কি?” আমি বললাম, 'অবশ্যই বলে দিন ইয়া রাসুলাল্লাহ।' তিনি বললেন, 'দ্বিনের মাথা হচ্ছে ইসলাম, এর খুঁটি হচ্ছে নামাজ এবং এর চূড়া হচ্ছে জিহাদ।' এরপর তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, “আমি তোমাকে এসবের মূল সম্বন্ধে বলে দিব না কি?” আমি বললাম, “অবশ্যই বলে দিন ইয়া রাসুলাল্লাহ।' তখন তিনি নিজ জিহ্বাকে ধরে বললেন, “এই (জিহ্বাকে) সংযত


[৫] সূরা সিজদা: ১৬-১৭


লেখক কথন


বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।


সব তারিফ স্রেফ মহাশক্তিধর আল্লাহর জন্য। সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি এক, তাঁর কোনো শরিক নেই। আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসুল। অজস্র সালাত ও সালাম ঝরুক তাঁর ওপর এবং তাঁর পরিবার ও সাথিবর্গের ওপর।


যৌবনকাল মানবজীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই সময়টিতে কাজ করবার শক্তি ও সামর্থ্য থাকে। চলাফেরা করতে সহজ হওয়ার কারণে কাজ করতে উদ্যমী হয়। অঙ্গপ্রতঙ্গ অটুট থাকে, ইন্দ্রিয়শক্তি সঠিকভাবে কাজ করে। পক্ষান্তরে, একজন মানুষ যখন বৃদ্ধ হয়ে যায়, তখন তার ইন্দ্রিয়শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে, অঙ্গপ্রতঙ্গ নিস্তেজ হয়ে আসে। ফলে সে কাজকর্মে উদ্যমী হয় না, সাহস হারিয়ে ফেলে।


শাশ্বত ধর্ম ইসলাম মানবজীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ অংশ যৌবনকালকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছে। জীবনের এই গুরুত্ববহ অধ্যায়ের মর্যাদা ও মূল্য বোঝাতে বর্ণিত হয়েছে হাদিসে নববি ও কুরআনি আয়াত। আমাদের প্রিয়নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই সময়টিকে উত্তম কাজে ব্যয় করার প্রতি উৎসাহিত করেছেন; অসৎ কাজে ব্যয় করে বরকতপূর্ণ এ সময়টাকে নষ্ট না করার প্রতি সতর্কবাণী করেছেন।


আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ব্যক্তিকে নসিহত করে বললেন,


‘পাঁচটি জিনিসকে পাঁচটি জিনিসের পূর্বে গনিমত মনে করো। যৌবনকে বার্ধক্যের পূর্বে, সুস্থতাকে অসুস্থতার পূর্বে, ধনাঢ্যতাকে দরিদ্রতার পূর্বে, অবসরতাকে ব্যস্ততার পূর্বে এবং জীবনকে মৃত্যুর পূর্বে।গম


[১] মুস্তাদরাক লিল হাকিম: ৭৮৪৬


নবিজির উক্তি, ‘জীবনকে মৃত্যুর পূর্বে’ এর মাঝেই মূলত যৌবনকাল অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। উপরন্তু যৌবনকালের অনেক গুরুত্ব ও মর্যাদা থাকার কারণে আলাদাভাবে নবিজি আবার এর কথা উল্লেখ করেছেন। তাই প্রত্যেক ব্যক্তিকেই যৌবনকালটা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পার করতে হবে। বরকতময় এ সময়কে তুচ্ছ মনে করে কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না।


আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি


ওয়াসাল্লাম বলেছেন,


‘কোনো বনি আদমের পা কিয়ামতের দিন তার রবের সামনে থেকে এক চুল পরিমান নড়বে না যতক্ষণ না তাকে পাঁচটি প্রশ্ন করা হয়। তার জীবন সম্পর্কে; তা সে কোথায়, কোন কাজে কাটিয়েছে। যৌবনকাল সম্পর্কে; সে তার যৌবনকালকে কোন কাজে ব্যয় করেছে। তার মাল সম্পর্কে; সে তা কোথা থেকে ও কীভাবে উপার্জন করেছে। সে তার মালকে কোথায় ব্যয় করেছে। ইলম কতটুকু অর্জন করেছে; সে ইলম অনুযায়ী কতটুকু আমল করেছে।


কিয়ামতের দিন মানুষের কাছে তার জীবন সম্পর্কে দুটি প্রশ্ন করা হবে। প্রথমত, সাধারণভাবে তার পুরো জীবন সম্পর্কে। দ্বিতীয়ত, বিশেষভাবে তার যৌবনকাল সম্পর্কে। যদিও তা পুরো জীবন সম্পর্কে প্রশ্ন করার মাঝেই অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়, তারপরও আবার বিশেষভাবে যৌবনকাল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। এ জন্যই যুবকদেরকে এ সময়টাকে বিশেষ গুরুত্বের সাথে নেওয়া উচিত। সবসময় মনে রাখতে হবে, কিয়ামত দিবসে আমাকে আমার যৌবনকালের আমল সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।


এ কারণেই নবিজি যুবকদেরকে যৌবনকালের সময়কে যথাযথ ব্যবহার এবং সঠিকভাবে কাজে লাগানোর প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন, অনুপ্রাণিত করেছেন। যা উল্লিখিত হাদিস হতে আমরা জানতে পারি। যুবকদের ব্যাপারে নবিজি আহলুল ইলম, দাঈ এবং মুবাল্লিগদেরকেও অসিয়ত করে গেছেন। কেননা উম্মাহর যুবকরা পরিচর্যা, পরিশুদ্ধি, কোমল আচরণ, সহানুভূতি এবং ভালোবাসার প্রতি মুখাপেক্ষী। তাদের সাথে যদি সহানুভূতিশীল আচরণের মাধ্যমে মন জয় করা যায়, তাহলে বাতিলপন্থি ও হারামের তল্পিবাহকরা তাদের ভ্রান্ত চিন্তা, ভ্রষ্ট আকিদার


[২] তিরমিজি: ২৪১৬, শায়খ আলবানি এটিকে সহিহ বলেছেন। সিলসিলাহ আস সহিহাহ: ৯৪৬


যৌবনকালকে কাজে লাগানো


আবুল আহওয়াস বলেন, আবু ইসহাক” বলেছেন,


‘হে যুবসমাজ, যৌবনকালকে গনিমত মনে করে সঠিকভাবে কাজে লাগাও। খুব কম রাতই আমার এমন অতিবাহিত হয়েছে, যে রাতে আমি এক হাজার আয়াত কুরআন তিলাওয়াত করিনি। আমি এক রাকাতে সুরা বাকারা তিলাওয়াত করে থাকি। আশহুরুল হুরুম বা নিষিদ্ধ মাসগুলোসহ প্রতি মাসে তিনদিন এবং সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা পালন করে থাকি।' এরপর তিনি তিলাওয়াত করেন, 'আর তুমি তোমার রবের নিয়ামত বর্ণনা করো। মে


আবু ইসহাক রাহিমাহুল্লাহর ‘প্রতিরাতে আমি এক হাজার আয়াত কুরআন তিলাওয়াত করে থাকি' এ কথার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, এক হাজার অথবা তার কাছাকাছি সংখ্যার প্রতি ইঙ্গিত প্রদান করা, নির্দিষ্ট সংখ্যা বা কোনো সংখ্যার ভেতর সীমাবদ্ধকরণ উদ্দেশ্য নয়। হিসাব বলে, তিনি প্রতি সপ্তাহে একবার কুরআন খতম করতেন। প্রতি সপ্তাহে একবার কুরআন শরিফ খতম করা অধিকাংশ সালাফদের নিত্য আমল ছিল। আদতে সালাফরা অন্যের প্রতি নেক আমলের উৎসাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে নিজের আমলের কথা উল্লেখ করতেন। হাকিম আবু আবদিল্লাহ নিসাপুরী রাহিমাহুল্লাহ তার মুস্তাদরাকে বর্ণনা করেছেন, 'আমর ইবনু মায়মুন কোনো মুসলিম ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ হলে বলতেন, গত রাতে আল্লাহ আমাকে এত রাকাত সালাত আদায় এবং অমুক অমুক নেককাজ করার তাওফিক দিয়েছেন। গ


আবু আবদিল্লাহ হাকিম উপর্যুক্ত আসারদুটি তার বই মুস্তাদরাকে আনার পর বলেন, 'আমর ইবনু উবায়দুল্লাহ আস-সাবিয়ি ও আমর ইবনু মায়মুন আল আওদিকে আল্লাহ রহম করুন। তারা এমন অসিয়ত বর্ণনা করেছেন এজন্য যেন তা যুবকদেরকে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল হতে অনুপ্রাণিত করে।


আসার দুটিতে সালাফদের আদর্শের হালকা নমুনা দেখানো হয়েছে। যেন যুবকরা এই মাকাম পেতে আগ্রহী হয়। এর মাধ্যমে তারা যেন নেক আমলে


[১] তিনি হলেন আমর সাবিয়ি।


[২] মুস্তাদরাক: ৩৯৪৭


[৩] মুস্তাদরাক লিল হাকিম: ৪৮



অথবা


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ