- বই : যুগলবন্দি • নাবিল মুহতাসিম ও কেপি ইমন
- জনরা : মিস্ট্রি অ্যাকশন থ্রিলার
- প্রথম প্রকাশ : এপ্রিল ২০২১
- প্রচ্ছদ : পার্থ প্রতীম দাস
- প্রকাশনা : বাতিঘর প্রকাশনী
- মুদ্রিত মূল্য : ২২০ টাকা মাত্র
- পৃষ্ঠা : ১৬০
- রিভিউ লিখেছেন 💕 Peal Roy Partha
এক মলাটে দুটো গল্পের ❛যুগলবন্দি❜
❛যুগল❜
❝ওর দোষ নেই। এমন পরিস্থিতিতে তো প্রথম নয় ও—এই যে বিবস্ত্র হয়ে পড়ে থাকা—নিজের সবচেয়ে দামী সম্পদ অন্যের হাতে তুলে দেবার অপেক্ষায় স্রেফ শুয়ে শুয়ে চেয়ে দেখা, এ তো ওর পুরোনো অভিজ্ঞতা। হায় রে, ট্রমার বাচ্চা ট্রমা! চামড়ার দাগের মতো শুকিয়ে গিয়ে অভিজ্ঞতা বাড়ায় না মনের ক্ষত, দগদগে হয়ে থেকে সারা জীবনের জন্য অথর্ব করে রাখে মানুষকে।❞
- ‘ইটস ওকে—ইটস ওকে—ইটস ওকে—’ রুমির বারবার বলা কথাটাকে যদি গ্রিক মিথের আর্কিমিডিসের ‘ইউরেকা’-এর সাথে বৈসাদৃশ্য খুঁজতে বসেন; তবে হতাশ হওয়ার আশংকা শতভাগ। কারণ আবিষ্কার আর নিজেকে বলবান হওয়ার নীরব জ্ঞান দানের মধ্যে তফাতটা বিস্তর। ‘বিভং’ উপন্যাসেও ‘বিভং, বিভং’ করে জপতে থাকা রুপুর সাথে রুমির ‘ইটস ওকে’ হয়তো কিঞ্চিৎ মেলানো সম্ভব। তবুও রুমির এই ‘ইটস ওকে’ বলার পেছনে গূঢ় এক রহস্য লুকিয়ে আছে। তাই তো উপন্যাসের শেষে এসে বারবার ওই একই বাক্য আওরে যাচ্ছে সে। কিন্তু কী সেই রহস্য?
❛যুগল❜ উপন্যাসের শুরুটা ঠিক যে লৌকিক সমীকরণের ওপর ভর করে হয়েছিল; শেষটা আর সেইভাবে হয়নি। ইদের পরের দিনের ঘটনা। বন্ধুদের সাথে পাঞ্জাবি পরে আড্ডা দিচ্ছিল রুমি। গার্গী শাড়ি পরে সেজেগুজে গিয়েছিল বান্ধবীর বিয়েতে। হুট করে কেন তারা দু'জন তেঁতুলিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো; সেই গল্প লুকিয়ে আছে এই ❛যুগল❜ উপন্যাসিকার অন্তরালে। লং ড্রাইভের কথোপকথনে উঠে আসে রুমির এজেন্সিতে কাটানো দিনগুলো আর করোনায় গৃহবন্দির লম্বা সময়ের কথা। গার্গী প্রথমে সাড়া না দিলেও, অন্তর্দর্শনে ঠিকই নিজের অতীতের স্মৃতিগুলো নাড়াচাড়া করতে থাকে সে। মেলাতে থাকে রুমির স্টোয়িসিজমের থিওরির সাথে নিজের করা কাজগুলোর বর্ণনা। স্টোয়িক রুমি আর অতীতের ক্ষত পুষে রাখা গার্গীর এই যাত্রা যে মুহূর্তে পালটে যাবে; ভাবেনি দু’জনের একজনও।
পুরো নভেলাতে কয়েকটি চরিত্রের পরিচিত দেখানো হলেও মূলে ছিল রুমি আর গার্গী। অতীত কাহিনির সমন্বয়ে সমাপ্তিতে দুটো চরিত্রের অকস্মাৎ উপস্থিতি পুরো নভেলার ভোল পালটে দেয়। সহজ এক লৌকিক মিশন কখন যে অলৌকিকতার নাগপাশে বন্দি হয়ে যায়; তা লেখকের গল্পে বলার ঢঙে না ডুবলে আন্দাজ করা কঠিন। সাধারণ একটা কাহিনির পরিণতি যে লেখক এইভাবে দিবেন তা একেবারেই অকল্পনীয়। গল্পের কারণে কিছু তথ্য এবং পারিপার্শ্বিক আবহের সূক্ষ্ম বর্ণনা পুরো নভেলাকে দারুণ প্রভাবিত করেছে। শুরুটা ধীরগতির আর গতানুগতিক হলেও শেষটা দ্রুতগতির এবং দুর্দান্ত। ❛যুগল❜ নামের সার্থক রসায়ন লেখক দারুণভাবে দিয়েছেন।
──────
❛বন্দি❜
‘বন্দিত্বে খোলে যুক্তি আর যুক্তি দিয়ে মুক্তি’ —এই উক্তি পড়ে নিশ্চয় কোনো মনীষীর নাম খুঁজে বেড়াচ্ছেন? লাভ নেই। এই উক্তি আমার আর সেটার ধারণা এসেছে ❛বন্দি❜ নভেলা শেষ করে। কেপি ইমনের ‘ইরফান সিরিজ’ যারা পড়েছেন তাদের জন্য সুখবর। ইরফানকে লেখক এইবার টেনে নিয়ে এসেছেন সূদুর কঙ্গোতে। যেখানে হুতু-তুতসিদের মধ্যে চিরায়ত দ্বন্দ্বযুদ্ধ লেগে আছে বেশ কিছু বছর ধরে। ইরফান এই মিশনে একা না। হুতুদের হয়ে মার্সেনারি হিসেবে কাজ করা ভারতীয় বন্ধু প্যাটেলও তার সাথে আছে। দু’জন মিলে এই মিশনের সাথে জড়িয়ে পড়ে ওতপ্রোতভাবে; আর সেটার একমাত্র কারণ নিউ ইয়র্ক টাইম্সের সাংবাদিক অ্যাঞ্জেলার অপহরণ। যা করেছে তুতসি প্রধান। কিন্তু এই কাজ কি শুধু প্রতিশোধের মধ্যে সীমাবদ্ধ না-কি এর পেছনে আছে বড়ো কোনো ষড়যন্ত্র?
কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে ঠিকই সাপের দেখা পেয়েছে ইরফান আর প্যাটেল। অতএব তাদের এখন একটাই উদ্দেশ্যে—যে ভাবেই হোক অ্যাঞ্জেলাকে উদ্ধার করে আমেরিকায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া। তবে কাজটা মুখে বলা যতটা সহজ করা ততটাই কঠিন। তাও আবার কঙ্গোর তিন জেনারেলের নাকের ডগা দিয়ে পার হওয়া। কিন্তু ইরফান পিছিয়ে যাওয়ার ছোকরা না। অগত্যা প্যাটেলকেও ইরফানের সঙ্গী হতে হলো। দু’জন মিলে নেমে গেল এক অসম সাপে নেউলের লড়াইয়ে।
পেজ টার্নার গল্পে ছড়ি ঘোরাতে ওস্তাদ লেখন কেপি ইমন। এই নভেলটা সেটা আরও একবার প্রমাণ করে দিলো। শুরু থেকে গল্পটা দ্রুতগতিতে এগিয়েছে। যখন যেখানে গল্পের মোড় নেওয়া প্রয়োজন সেটা লেখক দক্ষ হাতে সামাল দিয়েছে। ❛বন্দি❜ পুরোপুরি অ্যাকশন প্যাক থ্রিলার। যেখানে মার্সেনারি হয়ে একটা দেশের কুচক্রী মহলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের গভীরতা আর বিশ্বের চোখে কালো পর্দার আড়ালে করা কাজের নিদারুণ সত্য উঠে এসেছে। সাবলীল বর্ণনাভঙ্গি আর শালীন-অশালীন সংলাপে ভরপুর নভেলা ❛বন্দি❜। স্বল্প সময়ের মধ্যে আঁটোসাটো এক কাহিনির মধ্যে ডুবে থাকতে চাইলে ❛বন্দি❜ আপনার জন্য। নামের সাথে গল্পের প্রেক্ষাপটেরও দারুণ মিল লক্ষণীয়। সব মিলিয়ে ভালো। ওহ হ্যাঁ, এমন নভেলাতে ফাইটিং লজিক কিছুটা কম খোঁজা ভালো। হিরোয়িক কাজকারবার উক্ত উপন্যাসিকায় রয়েছে; তবে সেটা অস্বীকার্য করলেও চলে।
──────
❛যুগলবন্দি❜
পুরো নভেলাটি বিচার করলে দুটো ভিন্ন আঙ্গিকের গল্পের দেখা মিলে। প্রথমটার সাথে যদিও দ্বিতীয় গল্পের কোনো মিল নেই শুধুমাত্র নামের সামঞ্জস্য ব্যতীত। আগামীতে হয়তো আলাদা দুটো কাহিনির চরিত্র এক সুতোয় এসে মিলে যাওয়ার শক্তপোক্ত কারণ আছে। আর এই কারণটি হলো, ❛যুগল❜-এ রুমি-গার্গী এজেন্সির হয়ে কাজ করা এবং ❛বন্দি❜-তে ইরফান-প্যাটেল মার্সেনারি হয়ে দেশের উদ্দেশ্যে প্রত্যাবর্তন করা। তারা কেন মার্সেনারির কাজ ফেলে দেশে ফিরবে সেই গল্প তো বই পড়ে জেনে নিবেন। আশা করছি আগামীতে এই দুই কাহিনির চার চরিত্রের ক্রসওভার দারুণ কোনো সিকোয়েন্সের মধ্যে দিয়ে হবে।
দুটো কাহিনির গল্প যেমন দু’রকম তেমনটা লিখনপদ্ধতিও। লেখকদ্বয় নিজেদের স্বতন্ত্রতা একেবারে আপন বাচ্চা কোলে নেওয়ার মতো আগলে রেখেছেন। নাম না দেখেও গল্পগুলো পড়লে পার্থক্য সহজে বোঝা যায়। নাবিল ভাইয়ের পারিপার্শ্বিক আবহের বিস্তারিত বর্ণনা সহজে চোখে পড়ার মতো। অন্য দিকে কেপি ভাইয়ের মারকাট ভঙ্গিমা। অবশ্যই কাহিনির ক্ষেত্রে।
তুলনার দিকে আমি কখনোই যাব না। দুটো গল্প আমার দু’রকম ভালো লেগেছে। তবে নিজের পছন্দের দিকটা উল্লেখ করলে ❛যুগল❜ এগিয়ে থাকবে কাহিনির গভীরতার জন্য। তথ্যের মিশেলে লেখা আবার বরাবর-ই পছন্দের। এটা সম্পূর্ণ নিজস্ব মতামত। কারও হয়তো দ্বিতীয় গল্পটা বেশি পছন্দ হবে মারদাঙ্গা অ্যাকশনের কারণে। যাহোক, ❛যুগলবন্দি❜ হালকা চালের হলেও তাৎপর্যপূর্ণ উপন্যাস বটে।
বইয়ে বানান বিভ্রাট রয়েছে। প্রথম নভেলায় কিছু জায়গায় সম্পাদনার অভাব লক্ষণীয় যা দ্বিতীয় গল্পে গরহাজির। এ-ছাড়া প্রচ্ছদ সাদামাটা। প্রোডাকশন দাম অনুযায়ী ঠিকঠাক। কাল্টের করণীয় কার্যাবলী আর যুদ্ধের অন্তরালে লুকিয়ে থাকা রহস্যের হদিস পেতে ❛যুগলবন্দি❜ অবশ্যই পাঠ্য।
❛যুগল❜
❝ওর দোষ নেই। এমন পরিস্থিতিতে তো প্রথম নয় ও—এই যে বিবস্ত্র হয়ে পড়ে থাকা—নিজের সবচেয়ে দামী সম্পদ অন্যের হাতে তুলে দেবার অপেক্ষায় স্রেফ শুয়ে শুয়ে চেয়ে দেখা, এ তো ওর পুরোনো অভিজ্ঞতা। হায় রে, ট্রমার বাচ্চা ট্রমা! চামড়ার দাগের মতো শুকিয়ে গিয়ে অভিজ্ঞতা বাড়ায় না মনের ক্ষত, দগদগে হয়ে থেকে সারা জীবনের জন্য অথর্ব করে রাখে মানুষকে।❞
- ‘ইটস ওকে—ইটস ওকে—ইটস ওকে—’ রুমির বারবার বলা কথাটাকে যদি গ্রিক মিথের আর্কিমিডিসের ‘ইউরেকা’-এর সাথে বৈসাদৃশ্য খুঁজতে বসেন; তবে হতাশ হওয়ার আশংকা শতভাগ। কারণ আবিষ্কার আর নিজেকে বলবান হওয়ার নীরব জ্ঞান দানের মধ্যে তফাতটা বিস্তর। ‘বিভং’ উপন্যাসেও ‘বিভং, বিভং’ করে জপতে থাকা রুপুর সাথে রুমির ‘ইটস ওকে’ হয়তো কিঞ্চিৎ মেলানো সম্ভব। তবুও রুমির এই ‘ইটস ওকে’ বলার পেছনে গূঢ় এক রহস্য লুকিয়ে আছে। তাই তো উপন্যাসের শেষে এসে বারবার ওই একই বাক্য আওরে যাচ্ছে সে। কিন্তু কী সেই রহস্য?
❛যুগল❜ উপন্যাসের শুরুটা ঠিক যে লৌকিক সমীকরণের ওপর ভর করে হয়েছিল; শেষটা আর সেইভাবে হয়নি। ইদের পরের দিনের ঘটনা। বন্ধুদের সাথে পাঞ্জাবি পরে আড্ডা দিচ্ছিল রুমি। গার্গী শাড়ি পরে সেজেগুজে গিয়েছিল বান্ধবীর বিয়েতে। হুট করে কেন তারা দু'জন তেঁতুলিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো; সেই গল্প লুকিয়ে আছে এই ❛যুগল❜ উপন্যাসিকার অন্তরালে। লং ড্রাইভের কথোপকথনে উঠে আসে রুমির এজেন্সিতে কাটানো দিনগুলো আর করোনায় গৃহবন্দির লম্বা সময়ের কথা। গার্গী প্রথমে সাড়া না দিলেও, অন্তর্দর্শনে ঠিকই নিজের অতীতের স্মৃতিগুলো নাড়াচাড়া করতে থাকে সে। মেলাতে থাকে রুমির স্টোয়িসিজমের থিওরির সাথে নিজের করা কাজগুলোর বর্ণনা। স্টোয়িক রুমি আর অতীতের ক্ষত পুষে রাখা গার্গীর এই যাত্রা যে মুহূর্তে পালটে যাবে; ভাবেনি দু’জনের একজনও।
পুরো নভেলাতে কয়েকটি চরিত্রের পরিচিত দেখানো হলেও মূলে ছিল রুমি আর গার্গী। অতীত কাহিনির সমন্বয়ে সমাপ্তিতে দুটো চরিত্রের অকস্মাৎ উপস্থিতি পুরো নভেলার ভোল পালটে দেয়। সহজ এক লৌকিক মিশন কখন যে অলৌকিকতার নাগপাশে বন্দি হয়ে যায়; তা লেখকের গল্পে বলার ঢঙে না ডুবলে আন্দাজ করা কঠিন। সাধারণ একটা কাহিনির পরিণতি যে লেখক এইভাবে দিবেন তা একেবারেই অকল্পনীয়। গল্পের কারণে কিছু তথ্য এবং পারিপার্শ্বিক আবহের সূক্ষ্ম বর্ণনা পুরো নভেলাকে দারুণ প্রভাবিত করেছে। শুরুটা ধীরগতির আর গতানুগতিক হলেও শেষটা দ্রুতগতির এবং দুর্দান্ত। ❛যুগল❜ নামের সার্থক রসায়ন লেখক দারুণভাবে দিয়েছেন।
──────
❛বন্দি❜
‘বন্দিত্বে খোলে যুক্তি আর যুক্তি দিয়ে মুক্তি’ —এই উক্তি পড়ে নিশ্চয় কোনো মনীষীর নাম খুঁজে বেড়াচ্ছেন? লাভ নেই। এই উক্তি আমার আর সেটার ধারণা এসেছে ❛বন্দি❜ নভেলা শেষ করে। কেপি ইমনের ‘ইরফান সিরিজ’ যারা পড়েছেন তাদের জন্য সুখবর। ইরফানকে লেখক এইবার টেনে নিয়ে এসেছেন সূদুর কঙ্গোতে। যেখানে হুতু-তুতসিদের মধ্যে চিরায়ত দ্বন্দ্বযুদ্ধ লেগে আছে বেশ কিছু বছর ধরে। ইরফান এই মিশনে একা না। হুতুদের হয়ে মার্সেনারি হিসেবে কাজ করা ভারতীয় বন্ধু প্যাটেলও তার সাথে আছে। দু’জন মিলে এই মিশনের সাথে জড়িয়ে পড়ে ওতপ্রোতভাবে; আর সেটার একমাত্র কারণ নিউ ইয়র্ক টাইম্সের সাংবাদিক অ্যাঞ্জেলার অপহরণ। যা করেছে তুতসি প্রধান। কিন্তু এই কাজ কি শুধু প্রতিশোধের মধ্যে সীমাবদ্ধ না-কি এর পেছনে আছে বড়ো কোনো ষড়যন্ত্র?
কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে ঠিকই সাপের দেখা পেয়েছে ইরফান আর প্যাটেল। অতএব তাদের এখন একটাই উদ্দেশ্যে—যে ভাবেই হোক অ্যাঞ্জেলাকে উদ্ধার করে আমেরিকায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া। তবে কাজটা মুখে বলা যতটা সহজ করা ততটাই কঠিন। তাও আবার কঙ্গোর তিন জেনারেলের নাকের ডগা দিয়ে পার হওয়া। কিন্তু ইরফান পিছিয়ে যাওয়ার ছোকরা না। অগত্যা প্যাটেলকেও ইরফানের সঙ্গী হতে হলো। দু’জন মিলে নেমে গেল এক অসম সাপে নেউলের লড়াইয়ে।
পেজ টার্নার গল্পে ছড়ি ঘোরাতে ওস্তাদ লেখন কেপি ইমন। এই নভেলটা সেটা আরও একবার প্রমাণ করে দিলো। শুরু থেকে গল্পটা দ্রুতগতিতে এগিয়েছে। যখন যেখানে গল্পের মোড় নেওয়া প্রয়োজন সেটা লেখক দক্ষ হাতে সামাল দিয়েছে। ❛বন্দি❜ পুরোপুরি অ্যাকশন প্যাক থ্রিলার। যেখানে মার্সেনারি হয়ে একটা দেশের কুচক্রী মহলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের গভীরতা আর বিশ্বের চোখে কালো পর্দার আড়ালে করা কাজের নিদারুণ সত্য উঠে এসেছে। সাবলীল বর্ণনাভঙ্গি আর শালীন-অশালীন সংলাপে ভরপুর নভেলা ❛বন্দি❜। স্বল্প সময়ের মধ্যে আঁটোসাটো এক কাহিনির মধ্যে ডুবে থাকতে চাইলে ❛বন্দি❜ আপনার জন্য। নামের সাথে গল্পের প্রেক্ষাপটেরও দারুণ মিল লক্ষণীয়। সব মিলিয়ে ভালো। ওহ হ্যাঁ, এমন নভেলাতে ফাইটিং লজিক কিছুটা কম খোঁজা ভালো। হিরোয়িক কাজকারবার উক্ত উপন্যাসিকায় রয়েছে; তবে সেটা অস্বীকার্য করলেও চলে।
──────
❛যুগলবন্দি❜
পুরো নভেলাটি বিচার করলে দুটো ভিন্ন আঙ্গিকের গল্পের দেখা মিলে। প্রথমটার সাথে যদিও দ্বিতীয় গল্পের কোনো মিল নেই শুধুমাত্র নামের সামঞ্জস্য ব্যতীত। আগামীতে হয়তো আলাদা দুটো কাহিনির চরিত্র এক সুতোয় এসে মিলে যাওয়ার শক্তপোক্ত কারণ আছে। আর এই কারণটি হলো, ❛যুগল❜-এ রুমি-গার্গী এজেন্সির হয়ে কাজ করা এবং ❛বন্দি❜-তে ইরফান-প্যাটেল মার্সেনারি হয়ে দেশের উদ্দেশ্যে প্রত্যাবর্তন করা। তারা কেন মার্সেনারির কাজ ফেলে দেশে ফিরবে সেই গল্প তো বই পড়ে জেনে নিবেন। আশা করছি আগামীতে এই দুই কাহিনির চার চরিত্রের ক্রসওভার দারুণ কোনো সিকোয়েন্সের মধ্যে দিয়ে হবে।
দুটো কাহিনির গল্প যেমন দু’রকম তেমনটা লিখনপদ্ধতিও। লেখকদ্বয় নিজেদের স্বতন্ত্রতা একেবারে আপন বাচ্চা কোলে নেওয়ার মতো আগলে রেখেছেন। নাম না দেখেও গল্পগুলো পড়লে পার্থক্য সহজে বোঝা যায়। নাবিল ভাইয়ের পারিপার্শ্বিক আবহের বিস্তারিত বর্ণনা সহজে চোখে পড়ার মতো। অন্য দিকে কেপি ভাইয়ের মারকাট ভঙ্গিমা। অবশ্যই কাহিনির ক্ষেত্রে।
তুলনার দিকে আমি কখনোই যাব না। দুটো গল্প আমার দু’রকম ভালো লেগেছে। তবে নিজের পছন্দের দিকটা উল্লেখ করলে ❛যুগল❜ এগিয়ে থাকবে কাহিনির গভীরতার জন্য। তথ্যের মিশেলে লেখা আবার বরাবর-ই পছন্দের। এটা সম্পূর্ণ নিজস্ব মতামত। কারও হয়তো দ্বিতীয় গল্পটা বেশি পছন্দ হবে মারদাঙ্গা অ্যাকশনের কারণে। যাহোক, ❛যুগলবন্দি❜ হালকা চালের হলেও তাৎপর্যপূর্ণ উপন্যাস বটে।
বইয়ে বানান বিভ্রাট রয়েছে। প্রথম নভেলায় কিছু জায়গায় সম্পাদনার অভাব লক্ষণীয় যা দ্বিতীয় গল্পে গরহাজির। এ-ছাড়া প্রচ্ছদ সাদামাটা। প্রোডাকশন দাম অনুযায়ী ঠিকঠাক। কাল্টের করণীয় কার্যাবলী আর যুদ্ধের অন্তরালে লুকিয়ে থাকা রহস্যের হদিস পেতে ❛যুগলবন্দি❜ অবশ্যই পাঠ্য।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....