খলীফা উমরের খাদ্য দর্শন ✍️ আবুল হুসাইন আলেগাজী

হানায় ফানা (খাদ্য নিয়ে যারা প্রয়োজনের চেয়ে অধিক অর্থ ও সময় ব্যয় করে, তাদের ধবংস বুঝানোর জন্য এই বাক্যটি ব্যবহার করা হয় চট্টগ্রামে)।



দুনিয়াতে মানুষের সবচেয়ে বড় চাহিদা হলো পেটের চাহিদা। এরপর চেটের (অর্থাৎ, যৌনাঙ্গের) চাহিদা। শেষের চাহিদাটি পেটের চাহিদা নিয়ন্ত্রিত রেখে (রোজা রেখে) দমানো গেলেও প্রথম চাহিদাটি দমানোর কোনো উপায় দুনিয়ায় সৃষ্টি করেননি স্রষ্টা মহান আল্লাহ্। 
এই কারণে মহান আল্লাহ্ কোরআন মজীদের সর্বত্র মুমিনদেরকে নামাজের আদেশের পাশাপাশি জাকাত ও ইতআমের (খাবার দান) নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে কোনো মানুষ ক্ষুধায় কষ্ট না পায়। সূরা মুদ্দাসসিরে মানুষের জাহান্নামে যাবার যে চারটি কারণ উল্লেখিত হয়েছে, তন্মধ্যে প্রথমটি নামাজ ত্যাগ ও দ্বিতীয়টি মিসকীনকে খাবার না দেওয়া। 

সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ মোস্তফা (স:) এর দ্বিতীয় খলীফা (স্থলাভিষিক্ত) হযরত উমর (রা.) মাঝেমাঝে রাতে ছদ্মবেশে বের হয়ে মদীনার বিভিন্ন পল্লী ঘুরে বেড়াতেন। যদি শুনতেন কোনো গৃহবাসী খাদ্য নিয়ে সমস্যায় আছেন, তখন তিনি সাথে সাথে বাইতুল মাল থেকে খাদ্য পৌঁছিয়ে দিতেন। এমনকি অনেক সময় বিনয়বশত নিজেই কাঁধে করে গমের বস্তা পৌঁছিয়ে দিতেন। তিনি বলতেন, উমরের শাসনাধীন এলাকায় একটি পশুও যদি ক্ষুধায় মারা যায়, তাহলেও তাকে এর জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। এমন দায়িত্ববান শাসক হযরত উমরের অনেক কারামত ছিল। একদিন জুমার খুতবার সময় তাঁর সামনে হঠাৎ শামের একটি অভিযানের দৃশ্য ভেসে উঠে, যেটির নেতৃত্বে ছিলেন সারিয়া নামক একজন তাবেয়ী। শত্রুদের গতিবিধি দেখে তিনি 'ইয়া সারিয়া আল-জবল' (হে সারিয়া পাহাড়ের ওদিকে যাও) বলে তিনবার ডাক দিলেন। 

মসজিদে নববীতে উপস্থিত শ্রোতারা এই শব্দে বিস্ময়বোধ করেন। পরে জানা যায়, ওই সময় সারিয়া একটি গায়েবী আওয়াজ শুনে শত্রুদের থেকে আত্মরক্ষা করার জন্য পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। 

এবার আসুন সেই মহান খলীফা উমরের খাদ্যদর্শন সম্পর্কিত একটি বয়ানে:
عَنْ مُجَاهِدٍ بْنِ جَبْرٍ  ، قَالَ: قَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ  :
أَيُّهَا النَّاسُ، إِيَّاكُمْ وَالْبِطْنَةَ مِنَ الطَّعَامِ، فَإِنَّهَا مَكْسَلَةٌ عَنِ الصَّلَاةِ، مُفْسِدَةٌ لِلِجَسَدِ، مُوَرِّثَةٌ لِلسَّقَمِ، وَأَنَّ اللَّهَ يُبْغِضُ الحبر السَّمِينَ، وَلَكِنَ عَلَيْكُمْ بِالْقَصْدِ فِي قُوتِكُمْ، فَإِنَّهُ أَدْنَى مِنَ الْإِصْلَاحِ، وَأَبْعَدُ مِنَ السَّرَفِ، وَأَقْوَى عَلَى عِبَادَةِ اللَّهِ ، وَإِنَّهُ لَنْ يَهْلِكَ عَبْدٌ حَتَّى يُؤْثِرَ شَهْوَتَهُ عَلَى دِينِهِ. (رواه ابن أبي الدنيا في "الجوع" (81) ، وفي "إصلاح المال" (333).
অর্থ: মুজাহিদ বিন জবর কর্তৃক বর্ণিত, উমর ইবনুল খত্তাব বলেছেন, "হে মানুষ! আপনারা উদরপূর্তি করে খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ, এটি নামাজের প্রতি অলসতার সৃষ্টি করে, শরীরকে অস্থির করে ও রোগ তৈরি করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মোটাদেহী আলিমদের অপছন্দ করেন। তাই আপনারা পরিমিত (অধিক বা কম নয় এমন) আহার করুন। কারণ, তা সুস্থতার জন্য সহায়ক, অপচয় নিরোধক ও আল্লাহর ইবাদতে শক্তি সঞ্চারক। নিশ্চয়ই কোনো বান্দা তখনই ধ্বংস হয়, যখন সে তার শাহওয়াতকে (প্রবৃত্তির চাহিদাকে) তার দীনের উপর প্রাধান্য দেয়।" [ইবনে আবিদ দুনিয়ার কিতাবুল জূ (৮১) ও কিতাবু ইসলাহিল মাল (৩৩৩)]।
-
এবার আসুন ফেটম্যান বিষয়ক দুইটি হাদীসে:
عن أَبي هريرة رضي اللَّه عنه ، عن رسول اللَّه صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم قال : « إِنَّهُ لَيأتِي الرَّجُلُ السَّمِينُ العْظِيمُ يَوْمَ الْقِيامةِ لا يزنُ عِنْد اللَّه جنَاحَ بعُوضَةٍ ». أخرجه البخارى (4/1759 ، رقم 4452) ، ومسلم (4/2147 ، رقم 2785) .
অর্থঃ হযরত আবু হুরাইরা (রা.) রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ “কেয়ামতের দিন বিশাল মোটাদেহী (অনেক) লোক উত্থিত হবে। কিন্তু আল্লাহর কাছে তাদের মূল্য একটি মশার পাখারও সমান হবে না।” [ছহীহ বোখারী (৪৪৫২) ও ছহীহ মুসলিম (২৭৮৫)]।
Meaning : Hazrat Abu Hurairah (May Allah be pleased with him) reported: Messenger of Allah (peace be upon him) said, “On the Day of Resurrection, there will be brought forth Huge fat man whose value to Allah will be less than that of the wing of a mosquito." [Sahih of Bukhari (4452) and Sahih Muslim (2785)]. 
-
عَنْ عِمرَانَ بنِ حُصينٍ رَضيَ الله عنهُمَا ، قَالَ : قَالَ رَسولُ الله صلَّى اللهُ علَيهِ وسلَّم : « خَيرُ أمَّتِيْ قَرنِيْ ، ثُمَّ الَّذِينَ يلُونَهُم ، ثُمَّ الَّذِينَ يلُونَهُم - قَالَ عِمرَانُ : فَلاَ أدْرِي أذَكَرَ بَعدَ قَرنِه قَرنَينِ أو ثَلاثًا - ثُمَّ إنَّ بعدَكُم قَومًا يشهَدُونَ ولاَ يُسْتشْهَدُونَ ، وَيَخُوْنُوْنَ وَلاَ يُؤْتَمَنُوْنَ ، وَينْذِرُوْنَ وَلاَ يُوْفُوْنَ ، وَيَظْهُرُ فِيْهِمْ السَّمْنُ » أخرجه البخارى (2/938 ، رقم 2508) ومسلم (4/1964 ، رقم 2535) .
অর্থঃ হযরত ইমরান বিন হুছাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “তেমাদের সর্বোত্তম লোকজন হচ্ছে আমার যুগের লোকেরা, অতঃপর তাদের পরবর্তী যুগের লোকেরা, অতঃপর তাদের পরবর্তী যুগের লোকেরা।” হযরত ইমরান বলেন, আমি জানি না, তিনি (নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর যুগের পর দুই যুগের কথা বলেছেন না তিন যুগের কথা বলেছেন। (নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন) “তোমাদের পরে এমন সব লোকের আগমন ঘটবে, যারা সাক্ষ্যের জন্য দাওয়াত না পাওয়া সত্ত্বেও সাক্ষ্য দিবে (যেমন, কোনো সভা-মজলিসে তাদেরকে না ডাকা সত্ত্বেও দুনিয়াবী লোভ বা লজ্জা-শরমের অভাবের কারণে তারা সেখানে উপস্থিত হবে), তারা খেয়ানত করবে, আমানত রক্ষা করবে না, মানত করবে, কিন্তু তা পূরণ করবে না এবং তাদের মেদ fatness বেড়ে যাবে।” [ছহীহ বোখারী (২৫০৮) ও ছহীহ মুসলিম (২৫৩৫)]।
Meaning : Hazrar Imran bin Husain (may Allah be pleased with him) reported: Allah's Messenger (ﷺ) said, 'The best of my followers are those living in my generation (i.e. my contemporaries). and then those who will follow the latter" `Imran added, "I do not remember whether he mentioned two or three generations after his generation, then the Prophet (ﷺ) added, 'There will come after you, people who will bear witness without being asked to do so, and will be treacherous and untrustworthy, and they will vow and never fulfill their vows, and fatness will appear among them." [Sahih of Bukhari (2508) and Sahih Muslim (2535)]. 
-
তার মানে, রকমারী খাবারসহ নানা দুনিয়াবী সুখের পিছনে হন্যে হয়ে ছুটা মানুষগুলো নির্বোধ এবং তাদের পরকালীন অবস্থা হবে আক্ষেপ ও যন্ত্রণার।
-
মহান আল্লাহ্ আমাদেরকে দুনিয়ার মজার পিছনে না দৌড়ে জান্নাতের সুখের পানে দৌড়ানোর তৌফিক দান করুন।
-
আবুল হুসাইন আলেগাজী
১৪.০৫.২০২২, সিলেট।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ