- বইয়ের নামঃ- খুন
- লেখিকার নামঃ- মিনা শারমিন
- বইয়ের ধরণঃ- উপন্যাস (রহস্য)
- প্রকাশনীঃ- পরিবার পাবলিকেশন্স
- প্রথম প্রকাশঃ- ২০২১
- প্রচ্ছদ অলংকরণঃ- আইয়ুব আল আমিন
- পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ- ১৮১
~~~~~~~~"খুন" এর রহস্য উন্মোচন ~~~~~~~
"রহস্যময় মানুষ। রহস্যে ভরা জীবন।নিজের জীবনের ঢের শান-সৈকত ভেসেও মানুষ সুখী হতে পারে না। সুখ সে যেন এক অধরা পায়রারই নাম। যে স্বপ্নে ভেসে আসে আবার স্বপ্নেই ভেসে চলে যায় চোখের সীমানা পেরিয়ে। তার চলে যাবার স্বপ্নপথে সে কেবলই রেখে যায় কিছু জাগ্রত রহস্য। তবে জীবনের জাগ্রত রহস্যময়তাকে পুঁজি করেও জীবনের ভার আজীবন বয়ে বেড়ানো যায় না। একদিন সব রহস্যের কাছে যে মানুষকে হারতেই হয়।একজন মানব অবয়ব হয়ে এ হার তার সমাজের কাছে, আইনের কাছে, নিজের কাছে অথবা, জীবনের কাছে...!"
(খুনঃ- মিনা শারমিন)
জীবনের কাছে, নিজের কাছে এই যে হার, এই হার থেকেই কারো জীবনে নেমে আসে অনুশোচনার ঢেউ। কেউ হয়তো এই অনুশোচনার তীব্রতায় দগ্ধ হয়ে নিজেকে করে তোলে খাঁটি, নিরেট আবার, কেউ এই হারকে মেনে নিতে না পেরে নিজেকে করে তোলে লোভী, হিংসাপরায়ণ আর স্বার্থপর। আসলে স্বার্থ এমনই একটা ছোঁয়াছে ব্যাধি যা, মানুষের মনকে বিষিয়ে তোলে, মানবিক বিবেক বুদ্ধি লোপ পাইয়ে দেয়। লোভ থেকে লোভাতুর হয় স্বার্থান্বেষী মন। নিজের কুটিল লক্ষ্য পূরণে খুন এর মতো জঘন্য অপরাধ করতেও দ্বিধা করে না। একান্ত আপন,প্রিয়জনকেও তারা খুন করে অবলীলায়, নিঃসংকোচে। আমাদের এই ভদ্র সমাজের আধুনিকতার আড়ালেই বেশি সংঘটিত হয় এই খুন নামক ভয়ংকরতম অপরাধটি। তবে কিছু ঘটনার দৃশ্যপট সবার সামনে এলেও বেশির ভাগ গল্পই রয়ে যায় লোকচক্ষুর অন্তরালে। এমনই এক জানা, অজানা ঘটনার দোদুল্যমান রহস্যে আবৃত মিনা শারমিনের উপন্যাস "খুন"।
খুন শব্দটা শুনলেই আতংকে সারা গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। কেমন যেন অন্তর শিহরিত একটা ভীতি জড়ানো আবহ এসে নাড়া দেয় মনের কোনে। অথচ এই খুনের পিছনে লুকিয়ে থাকে অজস্র কাহিনী, কাহিনীর চরিত্রগুলোও থাকে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত, আপন একেবারে নিজস্ব। তবুও তারা স্বার্থের অঙ্গুলি হেলনে, সম্পত্তির মোহে নিজের আপন মানুষের জন্য করে মৃত্যু কামনা, লিপ্ত হয় নিজেদের আপনজনদের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে। তেমনি এক পারিবারিক দ্বন্দ্ব, সম্পত্তির মোহ, সন্দেহ, হিংসা, প্রেম, ভালোবাসার সংমিশ্রণের ধারায় সৃষ্টি করেছেন মিনা শারমিন তার "খুনি" উপন্যাসটি।
#লেখক_পরিচিতিঃ-
~~~~~~~~~~~~
লেখক মিনা শারমিন ফরিদপুর শহরের মেয়ে ওখানেই তার বেড়ে ওঠা। ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে হিসাব বিজ্ঞানে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। পেশায় তিনি একজন শিক্ষক এবং এক সন্তানের জননী। স্কুল জীবনের বেখায়ালী মনে লেখালেখির সূত্রপাত হলেও প্রকাশনায় এসেছেন ২০১৯ থেকে। ২০২০সালে পরিবার পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত গল্প সংকলন "প্রথম প্রেমের গল্প" তে প্রকাশিত হয় তার প্রথম গল্প। তারপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। "খুন" তার প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস।
#প্রচ্ছদ_ও_নামকরণঃ-
~~~~~~~~~~~~~
"খুন" উপন্যাসটি পড়ার পরে মনে হয়েছে এর কাহিনী বিস্তার, বিশ্লেষণ এবং চরিত্র চিত্রনের ধারায় প্রচ্ছদটির রং তুলির আঁচড় গল্পের সাথে একদম মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। "আইয়ুব আল আমিন " সাহেব যথার্থ বুদ্ধিমত্তার সাথেই ঘটনা প্রবাহের প্রতিচ্ছবি প্রচ্ছদ আকারে অলংকরণ করেছেন।
বইয়ের ভিতরকার কাহিনী বিন্যাস, চরিত্র সৃজন ও পরিচালনা সব মিলিয়ে নামকরণটাও যথার্থ মনে হয়েছে। সব থেকে বেশি মন কেড়েছে উৎসর্গ পত্রটি। নিজের আত্মজকে উৎসর্গ করার যে মানসিক উদ্যোগ, মনোবল এবং সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছেন তা যে কতটা সঠিক, উৎসর্গ পাতাটি পড়লেই পাঠক বুঝতে পারবেন। সাবধান পাঠক,একটু ধৈর্য নিয়েই উৎসর্গ পাতাটি পড়বেন, তা না হলে হয়তো কোন বেভুল সময়ে আপনাদের বিবশ মনের অন্তরালে চোখের পাতাও ভিজে উঠতে পারে।
#বই_নিয়ে_কিছু_কথাঃ-
~~~~~~~~~~~~~~
গোটা উপন্যাসের কাহিনী সম্পত্তিকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে। এই কাহিনীতে প্রেম, ভালোবাসা, স্নেহ, মমতা স্বার্থের কাছে হেরে গিয়ে লোভ, স্বার্থপরতা, হিংসা, বিদ্বেষের বহ্নিশিখা জ্বল, জ্বল করে জ্বলে উঠেছে।আসলে স্বার্থপরতা থেকে জন্ম নেওয়া লোভ মানুষকে যে কতটা নীচে নামাতে পারে তা মিনা শারমিনের "খুন" উপন্যাসটি না পড়লে বুঝতেই পারবেন না পাঠক।
নিঃসন্তান দম্পতি মোস্তাক তাহমিনা দত্তক নিয়েছিলেন গল্পের নায়ক বা কথক নাবিলকে। অন্য চরিত্র ফারিয়া ছিল তাহমিনার বোনের মেয়ে। পিতৃ, মাতৃহীন ফারিয়াকে মোশতাক তাহমিনাই মানুষ করে তোলেন। নাবিল ভালোবাসে সুন্দরী সোহানাকে, অথচ তাহমিনা মৃত্যুর আগে নাবিলের বিয়ে ঠিক করে রেখেছিলেন ফারিয়ার সংগে এবং একটি শর্ত জুড়ে দিয়েছিলেন নাবিল, ফারিয়াকে বিয়ে না করলে সম্পত্তির ভাগ তো পাবেই না বরং হবে ত্যাজ্য বা পরিত্যাক্ত।
একদিকে অঢেল সম্পত্তি, অন্যদিকে ভালোবাসার সাথীকে হারানোর শংকা। সম্পত্তির মোহে অন্ধ নাবিল তার মনুষ্যত্বকে টেনে হিঁচড়ে ছিটকে ফেলে দিয়ে বিসর্জন দিয়েছে ভালোবাসার। নিজের সম্মতি ও পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে করেছে ফারিয়াকে। শুরু হয় নাবিলের জীবনের অপরাধ করার শুভ সূচনা। সম্পত্তির মোহে একটার পর একটা ভুলই নাবিলকে অপরাধ করার ইন্ধন জুগিয়েছে। সে স্ত্রীকে খুন করতে চেয়েছে বার বার অথচ, নিজে ভালোবাসা আর বাস্তবতার কাছে খুন হয়েছে অসংখ্য বার। একটা মানুষকে খুন করার মতো কূটবুদ্ধি তার কখনোই ছিল না, বরং তার পরিকল্পনায় ছিল একধরনের অপরিপক্কতা ও ছেলেমানুষী। তাই তো তাকে প্রতিনিয়ত খুন হতে হয়েছে ফারিয়ার হঠকারিতার কাছে আর সোহানার ভালোবাসার কাছে। হয়তো সে কারণেই নাবিল সোহানাকে বলেছিল,
"আজ আকাশে মেঘ নেই! তবুও জীবন মেঘে ঢেকে যাচ্ছি তুমি...আমি!"
অন্যদিকে নাবিলের স্ত্রী ফারিহা, পারিবারিক আত্মীয়তাকে কাজে লাগিয়ে, পরিবারের প্রাধান্যতাকে হাতিয়ার বানিয়ে অপরাধ করার মানসিকতাকে করেছে আরো দৃঢ় ও মজবুত। নাবিলের ভুল পদক্ষেপের সূত্র ধরে নিজেকে করছে শক্তিশালী, পরিচয় দিয়েছে একজন ঘৃণ্য মানসিকতার মানুষ হিসেবে। লোভ তাকে কতটা নীচে নামিয়েছে যে, সে নাবিলের ভালোবাসা সোহানাকে বিয়ে দিয়েছে তারই ভালোবাসা রাহাতের সাথে। সোহানাকে কষ্ট দিয়ে নাবিলকে তিল তিল করে ঠেলে দিয়েছে অপরাধের দিকে।
সোহানা! গল্পের তৃতীয় চরিত্র সোহানা হলেও সারা বই জুড়ে সোহানার চরিত্রটাই প্রাধান্য পেয়েছে তার ভালোবাসা,আত্মত্যাগ আর অন্তর্দহণে। সে নাবিলকে ভালোবাসতো অন্ধের মতো অথচ কয়েকজন লোভীর জন্য ভালোবাসা শব্দটা তার জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছিল আর সেখানে জায়গা নিয়েছিল বিভৎসতা আর নোংরামী। যাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে চেয়েছিল তার কাছ থেকে পেয়েছে শুধু অবহেলা নির্যাতন। এমন কি নাবিল ও ফারিয়ার সম্পত্তি ভাগের নোংরা খেলায় শেষ পর্যন্ত জীবনও দিতে হয়েছে তাকে। এত কিছুর পরও সে নাবিলকে ভালোবেসেছে একান্তভাবেই। নাবিলের সামান্য বিপদেও মন কেমন করে উঠেছে তার। সোহানা বলেই প্রচন্ড অভিমানে ডায়েরির পাতায় লিখতে পেরেছিল,
"আমার জীবন তোমার জীবন নয়! তবুও, তোমার দামী খেলনাগুলোই আজও আমার আঁকড়ে থাকার পৃথিবী, সর্বস্ব বিসর্জিতেই নারী তুমি, জ্বালানীচাপা শ্মশানঘাটের এক বলিময় তুচ্ছার্ঘ... নারীর বোকামী আর দুর্বলতা কচলিয়ে... চিরদিনই জিতে যাও পুরুষ তোমরা... বিনিময়ে হার আর কলঙ্কে ডুবে তিলে তিলে খুন হয় নারী নামক মৃত সোহানারা।"
পরবর্তী চরিত্র রাহাত। শান্ত,শিষ্ট, ভদ্রবেশে উপন্যাসে তার আগমন ঘটলেও ঘটনার প্রবহমানতায় তার পরিনতি ঘটে একজন বড়ো মাপের ক্রিমিনাল বা অপরাধী হিসেবে। ফারিহাকে ভালোবাসলেও নীরবে ফারিহার মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খেতে চেয়েছিল সে। কারণ তার ভিতরও ছিল প্রচুর পরিমানে সম্পদের আকর্ষণ এবং তা পাবার তীব্র আকাংখা। তাইতো সে নাবিল ফারিয়ার বিয়ে মেনে নিয়েছিল এবং স্বীয় ইচ্ছা চরিতার্থ করার জন্য নাবিলের ভালোবাসা সোহানাকে বিয়ে করেছিল। মেয়েটিকে সে কোনদিন স্ত্রীর মর্যাদা দেয়নি বরং দিয়েছে শুধু নির্যাতন, করছে অবহেলা।
মূলত উপন্যাসের প্রধান চরিত্র তিনটি তবুও অন্যান্য চরিত্রগুলোও ফেলনা নয়। তারা এসেছে কাহিনীর প্রয়োজনে, বর্ননা বিন্যাসে। প্রধান চরিত্র তিনটির দোদুল্যমান জীবন, ভালোবাসা, হিংসাপরায়নতা, চাওয়া পাওয়া, ইচ্ছা অনিচ্ছার বেড়াজালে আটকে এইসব চরিত্রগুলো সৃষ্টি করছে এক ঘূর্ণিবলয়। যার কেন্দ্রে ছিল মোশতাক সাহেবের অঢেল সম্পত্তি। এই ঘূর্ণিবলয়ের কবল থেকে কেউই নিস্তার পায়নি। তবে একটা কথাই বলতে পারি লেখক মিনা শারমিন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে চরিত্রগুলোকে সাবলীলভাবে ভাবে, সুনিপুণ কৌশলে পরিচালনা করেছেন।
"লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু " এ প্রবাদটি শতভাগ
সত্য হয়ে ধরা দিয়েছে "খুন" উপন্যাসটিতে। লোভের আকাংখা চরিতার্থ করার জন্য যেমন বিসর্জন দিতে হয়েছে ভালোবাসার, তেমনি ভালোবাসা পিপাসু মানুষগুলোর জীবন চলে গেছে অকাতরে। ভালোবাসার এই পরাজয় লেখককেও ভাসিয়ে নিয়ে গেছে দুঃখের অতলে। তাইতো তার কলম থেকে ঝরে পরে,
"ভালোবাসা যে একবারই আসে জীবনে মরণে
এমনি শত শত পরাজয়ের নীলাঙ্গন পেরিয়ে...!"
ভালোবাসার অন্তরালে কোথাও লুকানো আছে ব্যাথা, বেদনা আবার কোথাও লুকানো আছে হিংসা, বিদ্বেষ, লোভ, লালসা। এর সব কিছুর সমন্বয়ে লেখক মিনা শারমিন যে দক্ষতার মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন তা জানতে হলে, বুঝতে হলে পাঠক আপনাকে অবশ্যই পড়তে হবে বইটি।
#পাঠ_প্রতিক্রিয়াঃ-
~~~~~~~~~~~
"খুন" কেবলই একটি পরিবার ভিত্তিক বা কতগুলো চরিত্রের গল্প নয়। আমাদের সমাজে ঘটে যাওয়া নিত্যদিনের কিছু ঘটনার বিন্যাসের দারুণ চিত্রকল্প লেখক তুলে ধরেছেন তার উপন্যাসের ক্যানভাসে। পরিবেশ পরিস্থিতির যাতাকলে পৃষ্ঠ হয়ে মানুষ কি ভাবে বদলে যেতে পারে পাঠক তা আপনারা এই বইটি পড়লেই অনুধাবন করতে পারবেন। খুন উপন্যাসের চরিত্রগুলো থেকে আমরা অনেক কিছুই শিখতে পারি। যেমন ভালোবাসায় অধিক আবেগ থাকতে নেই যা পরবর্তীতে ক্ষতির কারণ হতে পারে, অপরাধ যতই নিঁখুত ভাবে করা হোক না কেন, সত্য একদিন প্রকাশ পাবেই, অন্যের ক্ষতি করতে চাইলে নিজের ক্ষতি অসম্ভাবিত, অপরাধী যতই চালাক হোক না কেন ধরা তাকে পড়তেই হবে, এইসব শিক্ষনীয় বিষয়গুলো মিনা শারমিন তার উপন্যাসের কাহিনী, ধারা বর্ননা, চরিত্র চিত্রায়ণের মাধ্যমে খুব সাবলীলভাবে সহজ বাচনভঙ্গির অপূর্ব উপস্থাপনের সাহায্যে তুলে ধরেছেন।
"খুন উপন্যাসে অনেক চরিত্রের সমাবেশ ঘটিয়েছেন উপন্যাসিক মিনা শারমিন। একই সঙ্গে ঘটনার তীব্র মায়াজালের ঘনঘটা আর টানটান উত্তেজনায় পরিপূর্ণ উপন্যাস খুন, পাঠ শেষে মনেই হয় না মিনা শারমিনের প্রথম উপন্যাস পাঠ করছি।"
কথাগুলো আমার নয়, খুন উপন্যাসের ফ্লাপে বলেছেন সাহিত্যিক মনি হায়দার। বইটি পড়ার পরে আমারও মনে হয়েছে তিনি যথার্থই বলেছেন। উপন্যাসটির কাহিনী বর্ননা, বিশ্লেষণ, চরিত্রের সমন্বয় সাধন, চরিত্রের সাথে কাহিনীর সামঞ্জস্যতা সব মিলিয়ে একবারের জন্যও মনে হয়নি "খুন" লেখক মিনা শারমিনের প্রথম লেখা উপন্যাস। পুরো উপন্যাস জুড়েই টানটান উত্তেজনা, রহস্যময়তা আর টেনশনের সমন্বয় বাধ্য করছে আমাকে শেষ পর্যন্ত পড়ে যেতে। পাঠক আমি একটুও বাড়িয়ে বলছি না, আপনারা পড়তে গেলেই বুঝতে পারবেন বইটির আকর্ষণ কতটা জোড়ালো। সংগে বেশ কিছু অজানা তথ্যও আপনারা জানতে পারবেন এবং লেখকের হাত ধরে একটি বারের জন্য হলেও মাধব কুন্ড ঘুরে আসতে পারবেন।
বইটি পড়তে যেয়ে কিছু জায়গায় বানান জনিত
বেশ কিছু সমস্যা দেখা গিয়েছে। একই বানানের বিভিন্ন জায়গায় প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্নতা চোখে পড়ছে। এ ব্যাপারে লেখককে আরো একটু সতর্ক হতে হতো। তবে লেখকের সাবলীল ভাষা ব্যবহার, বর্ননার প্রক্রিয়া, চরিত্র বিন্যাস, ঘটনার আকর্ষিকতা খুব বিচক্ষণভাবে সুনিপুন দক্ষতায় মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন।
খুন এমনই একটি শব্দ যা মানুষকে আতংকিত করে তোলে। এই আতংকের আস্বাদনে পাঠকের অনুধাবন করতে মোটেও বেগ পেতে হয় না যে বইটি একটি থ্রিলার ধর্মী উপন্যাস। কিন্তু খুন পড়ার পড়ে আমার মনে হলো এই উপন্যাসটিকে শুধু মাত্র থ্রিলারে আবদ্ধ করা যায় না। এই উপন্যাসে হোক না তা ব্যার্থ তবুও প্রেম ভালোবাসা রয়েছে, আরো রয়েছে দুঃখ, বেদনা, সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক উপাদানে সমৃদ্ধ। সেই সাথে রয়েছে লোভ লালসা, অবহেলা, অমানবিকতা ও কুটিল ষড়যন্ত্রের তীব্র রূপরেখা যা গল্পের চরিত্রগুলো ছাপিয়ে পাঠকের মনকে নাড়া দেয় গভীরভাবে, জীবনকে উপলব্ধি করতে শেখায় নিখুঁত ও নিগুঢ় ভাবে। পরিশেষে বলবো প্রিয় পাঠক বইটা আপনারা পড়তে পারেন, আমার বিশ্বাস আপনারা ঠকবেন না।
উপন্যাসের শুরুটা লেখক মিনা শারমিন যে ভাবে করেছিলেন আমি না হয় বইটি পড়ার ভার আপনাদের উপর ছেড়ে দিয়ে তারই দেখানো পথে তারই লেখা দিয়ে শেষ করলাম। কারণ আমার মনে হয়েছে এই কয়টি লাইনের মধ্যেই "খুন" উপন্যাসটির অন্তর্নিহিত ভাবধারা লুকিয়ে আছে।
"হারিয়ে খোঁজা মানুষগুলি
জীবন পেয়ালার ধোঁয়াতে ভাসে
চুমুকে চুমুকে উগরে বুলি
বোধবিহীন কাঁদে-হাসে।
গিঁট ছাড়া বাঁধনগুলোও
গেঁথে নেওয়ার ছিপ রেখে যায়
থমকে যাওয়া জীবনকেও
পিঁপড়ে হয়ে ভাসতে শেখায়।"
ধন্যবাদ জানাই লেখক মিনা শারমিনকে। আগামীতে। এমন সুন্দর সুন্দর লেখা বেড়িয়ে আসুক তার কলম থেকে।আমরা পাঠকেরা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলি।
ধন্যবাদ পাঠক আপনাদেরকেও।
সাধনা সাহা
(১৮/০৫/২০২২)
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....